
ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন গঠিত অন্তর্বর্তী সরকারের শপথ বৈধতা ঘোষণা করেছে আপিল বিভাগ। এর পর অন্তর্বর্তী সরকারের শপথ, গঠন ও আগামী সংসদ নিয়ে নিয়ে প্রশ্ন তোলা সুযোগ নেই বলে জানিয়েছেন, অ্যাটর্নি জেনারেল মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান।
বৃহস্পতিবার (৪ ডিসেম্বর) প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন সাত সদস্যের আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ ও নিয়মিত বেঞ্চে এ বিষয়ে আদেশ দেন।
এর আগে বুধবার (৩ ডিসেম্বর) অন্তর্বর্তী সরকার গঠন ও শপথ বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের কাছে পাঠানো রেফারেন্স এবং মতামত প্রক্রিয়া চ্যালেঞ্জ করে করা রিট খারিজের বিরুদ্ধে লিভ টু আপিল সংক্রান্ত বিষয়ে আদেশ দেওয়ার জন্য আজকের দিন ধার্য করেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ।
লিভ টু আপিলের শুনানি শেষে প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের সাত সদস্যের বেঞ্চ আদেশের দিন ধার্য করেন।
এদিন লিভ টু আপিলের পক্ষে আপিলকারী সিনিয়র আইনজীবী মোহাম্মদ মহসিন রশিদ নিজে শুনানি করেন। অন্যদিকে ইন্টারভেনার (পক্ষ) হিসেবে যুক্ত হওয়া লেখক ফিরোজ আহমেদের পক্ষে শুনানি করেন সিনিয়র আইনজীবী ড. শরীফ ভূঁইয়া। ইন্টারভেনার হয়ে আরও শুনানি করেন বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের এক্সিকিউটিভ কমিটির চেয়ারম্যান সিনিয়র আইনজীবী ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল ও সিনিয়র আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির। আর রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান ও অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল ব্যারিস্টার অনীক আর হক।
২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর রাষ্ট্রপতি সংবিধানের ১০৬ অনুচ্ছেদ অনুসারে অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের কাছে মতামত চান। সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের মতামতের ভিত্তিতে অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয় এবং উপদেষ্টারা শপথ নেন।
এই প্রক্রিয়া চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী মোহাম্মদ মহসিন রশিদ হাইকোর্টে রিট দায়ের করেন। অন্তর্বর্তী সরকার গঠন ও শপথ বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের কাছে পাঠানো রাষ্ট্রপতির রেফারেন্স ও মতামত প্রক্রিয়া নিয়ে গত বছরের ডিসেম্বরে রিট আবেদনটি করেন আইনজীবী মহসিন রশিদ।
আবেদনের যুক্তিতে তিনি বলেন, যে বিষয় (অন্তর্বর্তী সরকার বা তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা) সংবিধানে নেই, সে বিষয়ে রেফারেন্স চাওয়া যায় না। সংবিধানের ১০৬ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, রেফারেন্সের ক্ষেত্রে সুপ্রিম কোর্টের রুলস অনুসরণ করতে হয়, কিন্তু তা করা হয়নি।
সেই রিটের শুনানি শেষে হাইকোর্টের বিচারপতি ফাতেমা নজীব ও বিচারপতি শিকদার মাহমুদুর রাজীর সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ রিটটি সরাসরি খারিজ করে দেন। ওই আদেশের বিরুদ্ধে পরে তিনি লিভ টু আপিল করেন।
রিট খারিজের আদেশে হাইকোর্ট বলেছিলেন, এক ব্যতিক্রমী পরিস্থিতিতে রাষ্ট্রপতি সংবিধানের ১০৬ অনুচ্ছেদ অনুসারে সুপ্রিম কোর্টের উপদেশমূলক মতামত গ্রহণ করেছেন এবং সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নিয়েছেন। তাই এটি আইনি দলিল ও জনগণের ইচ্ছার সমর্থনপুষ্ট।
আদালত আরও উল্লেখ করেন, ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থান বাংলাদেশের ইতিহাসের অংশ এবং আগামী বহু বছর জনগণ তা স্মরণে রাখবে।
সংবিধানের ১০৬ অনুচ্ছেদে ‘সুপ্রিম কোর্টের উপদেষ্টামূলক এখতিয়ার’-এর কথা বলা আছে। এতে বলা হয়, রাষ্ট্রপতির কাছে যদি মনে হয় জনগুরুত্বপূর্ণ কোনো আইনি প্রশ্ন সৃষ্টি হয়েছে বা হতে পারে এবং এ বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের মতামত নেওয়া প্রয়োজন, তাহলে তিনি প্রশ্নটি আপিল বিভাগের কাছে পাঠাতে পারবেন। আপিল বিভাগ উপযুক্ত শুনানির পর রাষ্ট্রপতিকে মতামত জানাতে পারবেন।
বিবার্তা/এমবি
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]