'রাজনৈতিক সরকার যে সিদ্ধান্ত নিতে পারে, অন্তর্বর্তী সরকার একই সিদ্ধান্ত নিতে পারে'
প্রকাশ : ২৫ নভেম্বর ২০২৫, ২১:৩৭
'রাজনৈতিক সরকার যে সিদ্ধান্ত নিতে পারে, অন্তর্বর্তী সরকার একই সিদ্ধান্ত নিতে পারে'
বিবার্তা প্রতিবেদক
প্রিন্ট অ-অ+

রাজনৈতিক সরকার যে সিদ্ধান্ত নিতে পারে, এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকার একই সিদ্ধান্ত নিতে পারে বলে মনে করেন অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান। সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে মঙ্গলবার (২৫ নভেম্বর) দুপুরে নিজ কার্যালয়ে এ কথা বলেন তিনি।


চট্টগ্রাম বন্দরের নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল (এনসিটি) পরিচালনায় বিদেশি কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি–সম্পর্কিত প্রক্রিয়া নিয়ে করা রিটের ওপর চূড়ান্ত শুনানি শেষে আজ হাইকোর্ট আগামী ৪ ডিসেম্বর রায়ের জন্য দিন ধার্য করেন।


ওই মামলার শুনানিতে অ্যাটর্নি জেনারেল কী বলেছেন, তা নিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন তিনি। ‘ব্যারিস্টার কায়সার কামাল এবং তাঁদের (রিট আবেদনকারী) কাউন্সিল কিছুক্ষণ আগে ব্রিফ করেছেন, তাঁরা বলেছেন তারেক রহমান যেটা বলেছেন গতকালও ওনাদের কনসার্ন (উদ্বেগ) হবে যে রাজনৈতিক দল এসে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিক, সে ক্ষেত্রে যুক্তি খণ্ডাবেন কীভাবে’—এমন প্রশ্নে অ্যাটর্নি জেনারেল আসাদুজ্জামান বলেন, ‘এটা ওনাদের সাবমিশন ওনারা বলেছেন। আমাদের কথা যদি পলিটিক্যাল গভর্নমেন্ট (রাজনৈতিক সরকার) যে সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন, এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকার একই সিদ্ধান্ত নিতে পারেন।’


অনির্বাচিত অন্তর্বর্তী সরকারের বন্দর কিংবা এলডিসি থেকে উত্তরণের মতো বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার এখতিয়ার নেই বলে মনে করেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। চট্টগ্রাম বন্দরের লালদিয়া কনটেইনার টার্মিনাল নির্মাণ–পরিচালনা এবং ঢাকার পানগাঁও নৌ টার্মিনাল পরিচালনার ভার বিদেশি কোম্পানিকে দেওয়া নিয়ে আলোচনা–সমালোচনার মধ্যে গতকাল সোমবার এক ফেসবুক পোস্টে এই প্রতিক্রিয়া জানান তিনি। তারেক রহমান বলেছেন, ‘একটি দেশ যেই সরকারকে নির্বাচিত করেনি, সেই সরকার দেশের দীর্ঘমেয়াদি ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করে দিতে পারে না।’


চট্টগ্রাম বন্দরের নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল (এনসিটি) পরিচালনায় চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সংযুক্ত আরব আমিরাতের ডিপি ওয়ার্ল্ডের চুক্তি–সম্পর্কিত প্রক্রিয়া নিয়ে ওই রিটটি করা হয়েছিল। আদালতে রিট আবেদনের পক্ষে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন, আহসানুল করিম ও কায়সার কামাল শুনানিতে অংশ নেন। সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী মো. আনোয়ার হোসেন। রাষ্ট্রপক্ষে অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান ও অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল অনীক আর হক শুনানি করেন।


‘সরকারের জনবিচ্ছিন্ন, জনবিরোধী কোনো এজেন্ডা নেই’


রাজনৈতিক ঐকমত্য হচ্ছে ওই চুক্তির বিরুদ্ধে—এমন প্রশ্নে অ্যাটর্নি জেনারেল আসাদুজ্জামান সাংবাদিকদের বলেন, ‘চট্টগ্রাম বন্দর হলো বাংলাদেশের অর্থনীতির লাইফলাইন। সেই লাইফলাইনে আমরা কত বেশি স্বচ্ছতা আনতে পারব, এটা একটা পাবলিক পলিসি। সেই পলিসি ধরেই সরকার এগোচ্ছে। সরকারের জনবিচ্ছিন্ন, জনবিরোধী কোনো এজেন্ডা নেই।’


শুনানির বিষয়ে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘আমরা যা করেছি সংবিধানের মধ্য থেকে, আইনের মধ্য থেকে ও পিপিপির মধ্য থেকে করেছি। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার যে দায়িত্ব পালন করছেন, এই সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ইজ ফাংশনিং। প্রধানমন্ত্রী যে কাজগুলো করতে পারতেন, এই প্রধান উপদেষ্টা এবং এই ক্যাবিনেট (উপদেষ্টা পরিষদ) একই কাজ ওনারা করতে পারেন, যা হচ্ছে সাংবিধানিক স্কিম। এটা বলতে গিয়ে সংবিধানের চতুর্থ শিডিউলের ক্লজ ২ ও ৪ পড়ে শুনিয়েছি। নব্বইয়ের গণ–অভ্যুত্থানের পরের প্রেক্ষাপট টেনে এনেছি।’


অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘পৃথিবীর ইতিহাসে রাষ্ট্র পরিচালনায় বিজয়ী শক্তি নির্ধারণ করে—তার নেতা কে, তার সরকার কে, সে কীভাবে পরিচালিত হবে। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে অর্জিত এই বাংলাদেশের বিজয়ী শক্তি নির্ধারণ করেছিল আমার সংবিধান কেমন হবে, নেতা কে হবে, আমার দেশ কীভাবে পরিচালিত হবে। ঠিক একইভাবে এই সময়ে এসে আবার নির্ধারিত হয়েছে, আমরা কীভাবে চলব। তারই ধারাবাহিকতায় এই সরকার পরিচালিত হচ্ছে। এখানে কোনো ব্যত্যয় নেই। কোনো সন্দেহ নেই। কোনো অস্পষ্টতা নেই—এটা আমরা বলেছি।’


‘এখনো কোনো সিদ্ধান্তই হয়নি’


অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘একটি কোম্পানির সঙ্গে প্রাথমিকভাবে কথাবার্তা চলছে। এটা নিয়ে গোটা জাতির সামনে জনস্বার্থে মামলা করে বিভ্রান্তিমূলক একটি তথ্য উপস্থাপন করা হয়েছে। সেটি হলো চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে দেওয়া হচ্ছে। আমরা আদালতকে বলেছি, এই রিট কয়েকটি কারণে খারিজ হবে। ইতিপূর্বে এ বিষয়ক রিট সরাসরি খারিজ হয়েছে—একই পয়েন্টের ওপরে গ্রহণ করা হলে সেটি দ্বৈত নীতি হবে। রিট তখনই হয় যদি কার্যকারণ তৈরি হওয়ার মতো চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত থাকে। এই ইস্যুতে এখনো কোনো সিদ্ধান্তই হয়নি। খুবই প্রাথমিক পর্যায়ে। এই প্রাথমিক পর্যায়ে সুপ্রিম কোর্টের অনেক রায় আছে যে প্রিম্যাচিউর স্টেজে (অপরিণত পর্যায়ে) জুডিশিয়াল রিভিউ গ্রহণ করার সুযোগ নেই।’


‘এই মুহূর্তে সরকার প্রক্রিয়া গ্রহণ করতে পারে না’


শুনানিতে কী বলেছেন, তা নিয়ে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন রিট আবেদনকারীপক্ষের আইনজীবীরাও। রিট আবেদনকারীপক্ষের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী আহসানুল করিম সাংবাদিকদের বলেন, ২০২৩ সালে সরকার নীতিগতভাবে ডিপি ওয়ার্ল্ডকে চুক্তির জন্য অনুমোদন দিয়ে গেছে। পরবর্তী সময়ে এই সরকার এসে চুক্তির কার্যক্রমকে এগিয়ে নিচ্ছে। চলমান প্রক্রিয়া—এটাকে চ্যালেঞ্জ করা হয়েছিল। চ্যালেঞ্জ করার কারণ হচ্ছে সরকারি-বেসরকারি অংশীদারত্ব (পিপিপি) অ্যাক্টের অধীন কোনো বিদ্যমান কাঠামো যেগুলো আছে, তা বিদেশিদের কাছে দেওয়া যাবে না। পোর্টটি বর্তমানে প্রতিষ্ঠিত, যেখান থেকে বাংলাদেশ সরকার ৬০০ কোটি টাকার মতো রাজস্ব পাচ্ছে। সামনে আরও বাড়বে বলে ধারণা করা যায়। যেহেতু পিপিপি অ্যাক্টে বিদ্যমান কোনো কাঠামোর ওপর কোনো অপারেশন (পরিচালনা) করা যায় না, সরকার ডিপি ওয়ার্ল্ডকে হাতে দেওয়ার জন্য যে প্রক্রিয়া করছে, এটা অবৈধ ও আইন দ্বারা নিষিদ্ধ। আইনে নতুন নিয়মে অন্তত ১ হাজার ২০০ কোটি টাকার কথা বলা হয়েছে। সেখানে ডিপি ওয়ার্ল্ড ২০০ কোটি টাকার প্রস্তাব দিয়েছে, যেটি আইন অনুযায়ী সমর্থিত নয়।


আহসানুল করিম আরও বলেন, ‘আইনে আছে, প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে বোর্ড অব গভর্নরস গঠিত হবে। বোর্ড অব গভর্নরস কে হবে? রুলস অব বিজনেসে যেভাবে বলা দেওয়া আছে সেভাবে হবে। সে ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রীর সমন্বয়ে গঠিত হবে। কিন্তু এখন সংসদ নেই। আমাদের বক্তব্য ছিল, যেহেতু সংসদ নেই, প্রধানমন্ত্রী নেই, মন্ত্রী নেই সুতরাং এই মুহূর্তে এই সরকার কোনো ধরনের প্রক্রিয়া গ্রহণ করতে পারে না।’


বিবার্তা/এসএস

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2024 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com