শিরোনাম
রোজীর প্রতারণার ফাঁদে নিঃস্ব অনেকেই
প্রকাশ : ১২ সেপ্টেম্বর ২০২১, ১৮:১৬
রোজীর প্রতারণার ফাঁদে নিঃস্ব অনেকেই
বিবার্তা প্রতিবেদক
প্রিন্ট অ-অ+

উম্মে ফাতেমা রোজী (৩৫) একজন অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী। গ্রামের বাড়ি ঝালকাঠি। মাঝে মধ্যে দেশে এসে টার্গেট করে কয়েকটি পরিবারের সঙ্গে গড়ে তোলেন সখ্য। সেই সম্পর্কের জেরে বাংলাদেশিদের কম খরচে পরিবারসহ অস্ট্রেলিয়ায় নিয়ে যাওয়ার প্রলোভন দেখান তিনি। এরপর ভুয়া ভিসা ও জাল কাগজপত্র তৈরি করে ভুক্তভোগীদের কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেন তিনি।


রোজী অস্ট্রেলিয়ায় বসে সবকিছুর কলকাঠি নাড়লেও দেশে তার একটি প্রতারক চক্র রয়েছে। যারা টাকা-পয়সাসহ রোজীর কথামতো যাবতীয় সহযোগিতা করে থাকে। এ পর্যন্ত সাত জন ভুক্তভোগী পাওয়া গেছে, যারা রোজীকে টাকা দিয়ে প্রতারিত হয়েছেন।


তেমনি একজন ভুক্তভোগী সুপ্রিম কোর্টের অ্যাডভোকেট এমএবিএম খায়রুল ইসলাম (৪৭)। তিনি সপরিবারে অস্ট্রেলিয়ায় যাওয়ার জন্য উম্মে ফাতেমা রোজীকে ৭৫ লাখ ৩৮ হাজার টাকা দিয়ে প্রতারণার শিকার হন। প্রতারিত হওয়ার পর তিনি অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী উম্মে ফাতেমা রোজীর বিরুদ্ধে মামলা করেন।


মামলার তদন্ত করতে গিয়ে রোজীর সহযোগী চক্রের দু’জনকে গ্রেফতার করেছে অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। গ্রেফতারকৃতরা হলেন, মো. সাইমুন ইসলাম (২৬) ও আশফাকুজ্জামান খন্দকার (২৬)।


তবে চক্রের মূল হোতা রোজী এখনও অস্ট্রেলিয়ায়। দেশে ফিরিয়ে এনে রোজীর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানায় সিআইডি।


রবিবার (১২ সেপ্টেম্বর) দুপুরে মালিবাগস্থ সিআইডি কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সিআইডির অতিরিক্ত ডিআইজি ইমাম হোসেন বলেন, দীর্ঘদিন ধরে অস্ট্রেলিয়ান Relative Sponsor migration subclass (855) permanent residence জাল ভিসা প্রস্তুত করে বাংলাদেশি নিরীহ লোকদের অস্ট্রেলিয়ায় পাঠানোর কথা বলে লাখ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছেন প্রবাসী উম্মে ফাতেমা রোজী।


রোজী মাঝে মধ্যে দেশে এসে প্রতারণার ফাঁদ পাততেন। দেশে এসে উচ্চবিত্তদের টার্গেট করে আত্মীয়ের ভিসায় অস্ট্রেলিয়া নিয়ে যাবেন বলে প্রলোভন দেখান। সপরিবারে গেলে (স্বামী-স্ত্রী) ২৩ লাখ আর একা গেলে ১৮ লাখ বলে অফার দিতেন তিনি।


রোজী অস্ট্রেলিয়া ইমিগ্রেশনের কনস্যুলার জেনারেল হিসেবে মিথ্যা পরিচয় দেন। এ ছাড়াও তিনি অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী স্কট মরিসনের কাছ থেকে পুরস্কৃত হন ও পুরস্কারের ছবি ভুক্তভোগীদের দেখান। এতে ভুক্তভোগীরা তাকে বিশ্বাস করতে থাকেন। এরপর অস্ট্রেলিয়ার ইমিগ্রেশনমন্ত্রী এলেক্স হাউকির সঙ্গে সুসম্পর্ক রয়েছে বলেও জানান। পরে ধাপে ধাপে কাগজপত্র ও ভিসার কথা বলে টাকা নিতে থাকেন।


রোজীর এমন প্রলোভনে পড়ে একাধিক বাংলাদেশি প্রতারিত হয়েছেন। সিআইডির এই কর্মকর্তা বলেন, এমন ফাঁদে পরে স্ত্রী-সন্তানসহ পরিবারের আট সদস্যসহ অস্ট্রেলিয়ায় যেতে চেয়েছিলেন সুপ্রিম কোর্টের অ্যাডভোকেট এম এ বি এম খায়রুল ইসলাম। এজন্য দুটি ব্যাংক অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে ৭৫ লাখ ৩৮ হাজার টাকা রোজীর অ্যাকাউন্টে দেন। এরপর কাগজপত্র ও ভিসা হাতে পেয়ে সেগুলো যাচাই-বাছাই করে দেখতে পান সবগুলোই ভুয়া এবং জাল। এভাবে প্রতারণা করে রোজী একাধিক মানুষের কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন।


রোজীকে দেশে ফিরিয়ে আনার বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে সিআইডির অতিরিক্ত ডিআইজি ইমাম হোসেন বলেন, আমরা আশা করছি তাকে দ্রুতই দেশে ফিরিয়ে আনতে পারবো। এরপর জিজ্ঞাসাবাদ করে আরও বিস্তারিত তার থেকে জানা যাবে।


ঢাকা মেট্রো (পূর্ব) বিশেষ পুলিশ সুপার কানিজ ফাতিমা বলেন, ‘বাংলাদেশে গ্রেফতার দুজনের কাছ থেকে জাল ভিসা প্রস্তুত কাজে ব্যবহৃত একটি কম্পিউটার, অস্ট্রেলিয়ার জাল ভিসা গ্রান্ট নোটিশ সাতটি, ফ্রি চিকিৎসার হেলথ মেডিকেয়ার কার্ড ৫টি ও অস্ট্রেলিয়ার বিমানের টিকিট ৬টি জব্দ করা হয়েছে।’


বিবার্তা/খলিল/আরকে

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com