ছোটবেলায় গ্রামে যখন দেখতেন কেউ ডাক্তার হয়ে মানুষের চিকিৎসাসেবা করছেন, তখন তার মনে হতো ডাক্তার হবো। যখন কেউ শিক্ষকতায় ভালো করছেন, তখন মনে হতো ডাক্তার না শিক্ষকই হবো। অন্যদিকে পারিবার থেকেও সবাই চাইতো তিনি যেন ডাক্তার হন। সায়েন্স বিভাগ থেকে এসএসসি পাস করেন।
একটা সময়ে এসে মনে হলো সায়েন্স বিষয়টা তার চিন্তার সাথে যায় না। কারণ পড়ে মনে কোনো আনন্দ পান না। তখন এইচএসসিতে কমার্স নিয়ে পড়াশোনা শুরু করেন। বুঝতে পারেন এটাই তার জন্য উপযুক্ত বিষয়। এটা তার চিন্তার সাথে যায়। মাঝে কেটে যায় বেশ কিছু সময়। পরে হন অনলাইন ব্যবসায়ী ও উদ্যোক্তা। আজ তিনি নিজের একটা আলাদা পরিচয় তৈরি করতে পেরেছেন।
বলছিলাম অনলাইন ব্যবসায়ী ও উদ্যোক্তা ‘টেস্টবিডি’-এর প্রতিষ্ঠাতা এবং কর্ণধার সালমা নেহার কথা। জীবনে সবাই সফল হতে চান। নিজের মতো করে কিছু করতে চাওয়ার স্বপ্ন মনের গভীরে অনেকেই লালন করেন। কিন্তু এই মানুষগুলোই স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে গিয়ে টাকা নেই, পরিবারে ব্যবসা করতে দেবে না, আমার দ্বারা ব্যবসা হবে না, আমি কী পারব? আমার জিনিস কে কিনবে? এসব নানান কথা ভেবে এক ধাপ এগিয়ে তিন ধাপ পিছিয়ে যান। কিন্তু সালমা নেহা পিছপা হননি। তাই তিনি আজ সফল।
এই সফলতা তার এক দিনে আসেনি। এর পেছনে রয়েছে নানান কাঠখড় পোড়ানোর কথা। জীবনের বাঁকে বাঁকে রয়েছে চড়াই-উৎরাই পেরোনোর গল্প।
সালমা নেহার জন্ম ও বেড়ে ওঠা কিশোরগঞ্জে। বাবা ছিলেন ব্যবসায়ী। মা গৃহিণী। তিন ভাই ও তিন বোনের মধ্যে সবার ছোট নেহা। সবার ছোট বলে তিনি ছিলেন ভীষণ আদরের।
কিশোরগঞ্জে মাধ্যমিকের পর উচ্চ মাধ্যমিকে পড়াশোনার জন্য চলে আসেন রাজধানী ঢাকায়। তেজগাঁও কলেজ থেকে অ্যাকাউন্টটিং বিভাগে স্নাতকোত্তর শেষ করেন। কলেজে পড়ার সময় পরিবারের সবাইকে দেখতেন সকালে অফিসে যায়, আসে সন্ধ্যার সময়। পরিবারের কোনো অনুষ্ঠান, বিশেষ দিবস, কোনো কিছুতেই তাদের চিন্তা নেই। মাথা ব্যথা নেই। সবাই কেমন যেন যন্ত্রের মতো জীবনযাপন করছে। তার চিন্তা ছিল চাকরি, পরিবার, সংসার সবকিছু মিলিয়ে মানুষের জীবন। আমি কেন চাকরির জন্য সবকিছু সেক্রিফাইস করবো। তখন মনে হলো যে আমি চাকরি করবো না। নিজে থেকে কিছু করবো। এমন কিছু করবো যাতে নিজে ভালো থেকে আরো ১৫-২০ জন বেকার, অসহায় নারীর কর্মসংস্থান করতে পারি।
বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় পড়ার ফাঁকে ফাঁকে নিজের স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য পথ খুঁজতে থাকেন। সময় পেলেই সংবাদপত্রে বিভিন্ন সফল উদ্যেক্তাদের জীবনের গল্প পড়েন। সফল উদ্যোক্তাদের জীবনী দেখেন টিভিতে, ইউটিউবে, অনলাইনে, ফেসবুকে। দেখতেন কত মানুষ বিভিন্ন পণ্য নিয়ে উদ্যোক্তা হয়েছেন। স্বাধীনভাবে কাজ করছেন। তাদের প্রতিষ্ঠানে অনেকে কাজ করছেন। কিন্তু সুনির্দিষ্টভাবে দেশিপণ্যের উদ্যোক্তা ছিল না।
নেহা বলেন, তখন আমার মনে হলো যে আমি উদ্যোক্তা হবো। চাকরি করলে অন্যের অধীনে থেকে প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময়ের জন্য ৯-৫টা কাজ করতে হবে। আর উদ্যোক্তারা স্বাধীন। নিজের ব্যবসা। মালিক হয়ে নিজের মতো করে প্রতিষ্ঠানের উন্নয়নে কাজ করবো।
দুচোখ ভড়া স্বপ্ন ছিল বড় ব্যবসায়ী হবেন। কিন্তু বিধি বাম। পরিবার ছিল ভীষণ রক্ষণশীল। কোনো মেয়ে ব্যবসা করবে এটা ভাবনার মধ্যেই ছিল না কারো। যেহেতু বাবা ছিল না। কেউ যদি কিছু বলে ফেলে। এই ভয়ে পরিবার থেকে ব্যবসার কোনো সুযোগ ছিল না। তাই ব্যবসা করা তো দূরের কথা, শুধু সায়েন্স ব্যাকগ্রাউন্ড থেকে কমার্স ব্যাকগ্রাউন্ডটা বদল করেন আত্মপ্রত্যয়ী এই নারী।