শৈশবে খেলাধুলা করতেই ভীষণ পছন্দ করতেন তিনি। জীবন নিয়ে তেমন কোনো বড় স্বপ্ন ছিলো না তার। অন্য পাঁচটা সাধারণ কিশোরের মতোই তারও স্বপ্ন ছিলো গ্র্যাজুয়েশন শেষ করে একটা সরকারি চাকরি করার। চাকরির জন্য বেশ কয়েক জায়গায় চেষ্টাও করেছেন। তবে চাকরি তো সোনার হরিণ। চাইলেই তো আর চাকরি পাওয়া যায় না। দিনকে দিন চেষ্টা করতে করতে এক সময় হতাশ হয়ে পড়েন তিনি। কিন্তু নানান প্রতিকূলতার মধ্য দিয়ে জীবনের প্লট যায় বদলে। তখন ফ্রিল্যান্সিং করার সিদ্ধান্ত নেন। আজ তিনি একজন সফল ফ্রিল্যান্সার।
বলছিলাম খান আইটির প্রতিষ্ঠাতা এবং সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন (এসইও) ও অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিংয়ের ট্রেইনার মো. ফারুক খানের কথা। বর্তমানে তিনি লোকাল ও ইন্টারন্যাশনাল মার্কেটে বিভিন্ন কোম্পানির সাথে একদল দক্ষ কর্মীবাহিনী নিয়ে সফলভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। একই সাথে অর্গানিক এসইও এক্সপার্ট হিসেবে অনলাইনে এসইওবিষয়ক ট্রেনিং পরিচালনা করছেন।
দুই বোন ও এক ভাইয়ের মধ্যে সবার ছোট ফারুক খান। বাবা মো. শাহজাহান খান এবং মা পারভীন আক্তার। স্ত্রী নাইমা আক্তার তিশা ও নয় বছরের মেয়ে আয়েশা ও তিন বছরের ছেলে আবদুল্লাহকে নিয়ে সুখী পরিবার তার।
ছোটবেলায় মাদ্রাসায় প্রাথমিক শিক্ষা নিয়ে হাই স্কুল শুরু করেন খুলনা সেন্ট যোসেফ হাই স্কুলে। মিশনারী স্কুলের নৈতিক ও মানবিক মূল্যবোধ গঠনমূলক শিক্ষা তাকে অন্যরকমভাবে তৈরি করেছে। ছেলের পড়াশুনার প্রতি নিষ্ঠা ও মনোযোগ দেখে বাবা-বা কখনো কোনো নির্দিষ্ট কিছু হওয়ার বিষয়ে চাপ দেননি। তারা চাইতেন ছেলে লেখাপড়া শেষে একটা সম্মানজনক পেশা বেছে নেবে।
ওই স্বাধীনতার মূল্য দিয়েছেন ফারুক খান। নিজে থেকেই বেছে নিলেন কম্পিউটার সায়েন্সকে। হলেন কম্পিউটার প্রকৌশলী। গ্র্যাজুয়েশন শেষ করে জীবনের প্রয়োজনে একটা সরকারি চাকরির জন্য অনেক চেষ্টা করেন। ভাগ্যের চাকার পরিবর্তন আর সামান্য কিছুটা স্রোতের টানেই বলা চলে মুক্ত পেশা তথা ফ্রিল্যান্সিং করার সিদ্ধান্ত নেন তিনি। এ বিষয়ে তার ভাষ্য, ঢাকায় এসে বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটিতে পড়ার সময় এক বন্ধুর মুখে ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের মাধ্যমে ফ্রিল্যান্সিং করে অনলাইনে আয় করার বিষয়ে প্রথম শুনি।
তবে পড়ালেখার চাপের কারণে তখন আর ফ্রিল্যান্সিং নিয়ে চিন্তা করা হয়ে উঠেনি। গ্র্যাজুয়েশনের পর যখন চাকরি করার কথা ভাবছি, তখন দেখি বেশ কয়েকজন বন্ধু ঘরে বসে অনলাইনে ফ্রিল্যান্সিং করে টাকা আয় করছে। তাদের দেখে ফ্রিল্যান্সিং করার উৎসাহ পাই। সিদ্ধান্ত নেই চাকরি না করে ফ্রিল্যান্সিং করার। কিন্তু কিছুই জানি না। বন্ধুদের সরল মনে ফ্রিল্যান্সিং বিষয়ে জিজ্ঞাসা করলে সবাই কেমন যেনো এড়িয়ে গেলো। কেউ তেমনভাবে সাহায্য করতে আসেনি।
শুরুতেই মনে একটা ধাক্কা লাগে। অনেকটা হতাশ হয়ে পড়ি। পরে এলাকার ছোট ভাই ইসমাইল হোসেন আমাকে বলেন, আপনি যেহেতু ফ্রিল্যান্সিং সেক্টরে একদম নতুন, তাই আপনি এসইও নিয়ে কাজ শুরু করতে পারেন। তখন তিনি কয়েকটি এসইও শেখার ভিডিও লিংক এবং পিডিএফ ফাইল দেন। সেগুলো নিয়ে পড়াশোনা করি।
এসইও নিয়ে ৩ মাস ইউটিউবে ভিডিও দেখেও অনলাইনে পড়াশোনার পর তেমন বেশি দূর যেতে পারেননি ফারুক। পরে অনলাইনে খোঁজখবর নেন কোথায় ফ্রিল্যান্সিং ট্রেনিং পাওয়া যাবে। ঢাকার ‘বেসিস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট (বিআইটিএম) ফ্রিল্যান্সিং প্রশিক্ষণ কেন্দ্র’ নামের একটা ট্রেনিং সেন্টারের খোঁজও পেয়ে যান।
২০১৪ সালে ওই টেনিং সেন্টারে এসইওর একটি কোর্সে ভর্তি হন তিনি। থাকতেন খুলনায়। সপ্তাহে দুইদিন। শুক্র ও শনিবার ঢাকায় এসে এসইও ট্রেনিং করতেন। ফারুক বলেন, প্রতি বৃহস্পতিবার রাতে খুলনা থেকে ঢাকায় আসতাম। সকালে এসে কারওয়ান বাজারে চায়ের দোকানে বসে থাকতাম। ৯টায় অফিস খুললে সাথে সাথেই ঢুকে যেতাম। এভাবে প্রতিটা ক্লাস করে আমাদের ব্যাচের ২৭ জন ছাত্রের মধ্যে আমি এসইওতে নিজের দক্ষতা প্রমান করতে সক্ষম হই, সফলভাবে কোর্সটি সম্পন্ন করতে সক্ষম হই।
প্রাতিষ্ঠানিক ট্রেনিং শেষ করে এবার তার অনলাইন মার্কেটপ্লেসে কাজের পালা। তিনি বলেন, এসইওর ট্রেনিংটা যখন শেষ হয়, তখন নিজেকে একটা ভার্চুয়াল জ্ঞানের সাগরের মধ্যে আবিষ্কার করি। অনেকটা দিশেহারা হওয়ার মতো অবস্থা। যদিও হাতে একটা ট্রেনিংয়ের গাইডলাইন ছিলো। তবুও বুঝতে পারছিলাম না কোনো জায়গা থেকে, কীভাবে শুরু করবো, ক্লায়েন্টদের সাথে কীভাবে যোগাযোগ করবো ইত্যাদি।
পরে আপওয়ার্কে একটি একাউন্ট খুলি এবং কাজ পাওয়ার চেষ্টা করতে থাকি। তিন মাস অপেক্ষার পর ২০ ডলারের কাজ পাই। তবে কাজের সঠিক জ্ঞানের অভাব থাকার কারণে প্রথম কাজটির ওই ২০ ডলার ও তুলতে পারিনি। পরে ওই একাউন্টটি বন্ধ করে দেয়া হয়। আবারো একটি হোঁচট খাই; আবারো কিছুটা হতাশ হয়ে পড়ি। পরে ফাইভারে নতুন একটি একাউন্ট খুলি। সেখানেও ২০ ডলারের একটি কাজ পাই। সেটাও করি। কিন্তু একই কারণে ওই টাকাও উঠাতে পারিনি। তবে থেমে থাকিনি। এবারও আপওয়ার্কে একাউন্ট খুলি। সেখানে বেশ কিছুদিন কাজ করি। পরে লোকাল ও ইন্টারন্যাশনাল ক্লায়েন্টদের সাথে বেশি কিছু কাজ করি। এভাবেই এগিয়ে যায় আমার ফ্রিল্যান্সিংয়ের কাজ।
ওই সময় দেশে ফ্রিল্যান্সারদের কাজ করার জন্য সবচেয়ে বড় সমস্যা ছিলো ইন্টারনেট। নিজের অভিজ্ঞতা থেকে মো. ফারুক বললেন, তখন খুলনায় থেকেই সিটিসেল মোবাইলে ইন্টারনেট প্যাকেজ ব্যবহার করে জুম প্লাটফর্মে লোকাল ও ইন্টারন্যাশনাল ক্লায়েন্টদের সাথে যোগাযাগ করেছি। আর ওই সময় একটা বড় সমস্যা ছিলো। সেটা হলো তরুণ ফ্রিল্যান্সারদের কাজের সাহায্যের জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণ রিসোর্স ছিলো না। কাজ করতে গিয়ে যেকোনো সমস্যায় পড়লে সাথে সাথে ওই সমস্যার সমাধানের জন্য কাউকে পাওয়া যেতো না।
সবাই যার যার মতো কাজ নিয়ে ব্যস্ত থাকতেন। এমনকি ইউটিউব ও সোশ্যাল মিডিয়াতেও পর্যাপ্ত পরিমাণে সমস্যা সমাধানের গ্রুপ কিংবা রিসোর্স ছিলো না। নিজে নিজে ভুল করে শিখতে হয়েছে। আর এখনকার মতো এত বেশি ফ্রিল্যান্সিং ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা ছিলো না। অনলাইনে তো ট্রেনিং হতোই না। কেউ ফ্রিল্যান্সিং ট্রেনিং করতে চাইলে তাকে ঢাকায় আসতে হতো। এখন তো একজন এসইওর ট্রেনিং করে, প্রায় সাথে সাথেই চাকরির জন্য বিডি জবস, জবস বিডি, প্রথম আলো জবসসহ এরকম আরো অসংখ্য জবস সাইটে চাকরির জন্য আবেদন করে অল্পদিনের মধ্যেই একটা চাকরি পেয়ে যাচ্ছেন। তখন এসব এর কোন সুযোগই ছিলো না। এসইওর বিষয়ে তখন কেউ তেমন সিরিয়াস ছিলেন না। অনেকটা আক্ষেপ করেই নিজের কষ্টের অভিজ্ঞতা তুলে ধরলেন তিনি।
বর্তমানে উনার একটি ভার্চুয়াল এসইও এজেন্সি রয়েছে। নাম খান আইটি (Khan IT)। এই প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে তিনি দেশের বিভিন্ন নামিদামি ব্র্যান্ডের সাথে সফলতার সাথে এসইওর কাজ করেছেন। অনেক প্রতিষ্ঠানের সাথে এখনও করে যাচ্ছেন। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি কোম্পানীর নাম হলো- কেয়া কসমেটিকস, ইসলামী ব্যাংক, ইফাদ গ্রুপ। বর্তমানে তিনি কাজ করছেন WALTON, HATIL Furniture সহ বেশ কিছু লোকাল কোম্পানি এবং ই-কমার্সের সাথে।এছাড়াও ফারুকের এসইও বিষয়ে নিজস্ব একটা ওয়েবসাইট রয়েছে। যে কেউ চাইলে ঘুরে আসতে পারেন এই ঠিকানায়।
আন্তর্জাতিক অনলাইন মার্কেটপ্লেস রেখে লোকাল এসইও এর প্রতি বেশি নজর দেয়ার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, দেখুন, কাজ নিয়ে সবার একটা ভাল লাগার বিষয় থাকে। আপনি হয়তো জেনে থাকবেন যে, এসইও কিন্তু ছোটখাটো একটা সেকশন না। এটার অনেকগুলো সেকশন আছে। বিগত ছয় বছর ধরে কাজ করতে করতে আমার কেন যেন লোকাল এসইও নিয়ে কাজ করার প্রতি একটি ভাল লাগা তৈরি হয়েছে। তবে লোকাল এসইও মানে আবার এটা না যে, শুধু বাংলাদেশের মধ্যে কাজ করা; লোকাল এসইও মানে পৃথিবীর যেকোনো দেশের লোকাল বিজনেসগুলো নিয়ে কাজ করা। আমি এ পর্যন্ত যতগুলো কাজ করেছি তার মধ্যে ৭০-৮০% লোকাল এসইওর কাজ করেছি।
যারা এসইওতে ফ্রিল্যান্সিং করে আন্তর্জাতিক অনলাইন মার্কেটপ্লেস থেকে কাজ করার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন তাদের উদ্দেশে ফারুক খান বলেন, আপনি যদি আন্তর্জাতিক অনলাইন মার্কেটপ্লেসে এসইও কাজ করতে চান তাহলে দেখবেন সেখানে লোকাল এসইওভিত্তিক কাজের সংখ্যাই বেশি। লোকাল এসইও নিয়ে যারা কাজ করতে চান তাদের জন্য এ সেক্টরটি খুবই সম্ভাবনাময় একটা জায়গা। যেহেতু এটির ক্ষেত্রে লোকেশনভিত্তিক কম্পিটিশনটিই মূলত প্রধান, তাই তুলনামূলকভাবে ইন্টারন্যাশনাল কম্পিটিশন নিয়ে আপনার খুব একটা মাথা ঘামাতে হবে না। এটি আপনাকে নিজের কনফিডেন্স লেভেল ডেভেলপ করতে সাহায্য করবে, পাশাপাশি খুব দ্রুত নিজের একটি পোর্টফোলিও দাঁড় করাতেও পারবেন। বর্তমানে অনেক দেশীয় কোম্পানি সরাসরি লোকাল এসইও এক্সপার্টদের হায়ার করে নিজেদের কাজ করিয়ে থাকে।
মো. ফারুককে এসইও ইন্ডাস্ট্রিতে আসার জন্য প্রথমে পরামর্শ এবং অনুপ্রেরণা দেন নিজের এলাকার ফ্রিল্যান্সার ছোট ভাই ইসমাইল হোসেন। পরে নিজের চেষ্টা কঠোর পরিশ্রম আর অধ্যবসায় দিয়ে বাস্তবতার সাথে যুদ্ধ করে ধীরে ধীরে এই ইন্ডাস্ট্রিতে আসেন তিনি। আজ ফ্রিল্যান্সার হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পেছনে ইসমাইলের অবদানের জন্য তাকে আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জানান এই ফ্রিল্যান্সার। এরপর তার এ অবস্থানে আসার পেছনে আরো যারা বিশেষভাবে ভূমিকা রেখেছেন এবং সবসময় আর্থিক ও মানসিক সাপোর্ট দিয়েছেন তারা হলেন তার মা ও স্ত্রী।
তিনি বলেন, আমি যখন ঢাকায় এসে এসইওর ট্রেনিং শুরু করি তখন ক্লাসের অ্যাসাইনমেন্ট করার জন্য কোনো ল্যাপটপ ছিলো না। তখন মায়ের কাছে কিছু টাকা ছিলো। সে টাকা দিয়ে আমাকে তিনি একটি ল্যাপটপ কিনে দেন। সেটা দিয়ে আমি কোর্স সুন্দর ও সফলভাবে শেষ করি। এখনো সেই ল্যাপটপটি আমি যত্ন সহকারে রেখে দিয়েছি। অন্যদিকে আমার স্ত্রী (তিশা) জীবনের খারাপ সময়গুলোতে আর্থিক ও মানসিক সাপোর্ট দিয়ে আমার পাশে থেকেছে। তাদের সাহায্য ছাড়া হয়তো এগিয়ে যাওয়া সম্ভব হতো না।
জীবনের টার্নিং পয়েন্ট বিষয়ে মো. ফারুক খান বলেন, ডিপ্লোমা শেষ করে গ্রাজুয়েশন করার আগেই বিয়ে করে ফেলি। পরিবারে বাবাই ছিলো একমাত্র উপার্জনকারী। সংসারে ছিলো টানাপোড়েন। নিজেই চলতে পারি না, আবার স্ত্রী। গ্রাজুয়েশন করে আমরা দুজনে ভাগ্যান্বেষণে চলে আসি রাজধানী ঢাকায়। এসে প্রশিক্ষক হিসেবে ফ্রিল্যান্সিং প্রশিক্ষক হিসেবে যোগ দেই বিআইটিএম ফ্রিল্যান্সিং প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে। সেখানে এসইও এবং অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিংয়ের ট্রেইনার হিসেবে শিক্ষকতা করি ৩ (তিন) বছর। ওই সময়ে তিন হাজার ছাত্র-ছাত্রীকে আমি প্রশিক্ষণ দিয়েছি। একই সাথে নিজের অনলাইন প্লাটফর্ম এসইও স্কুলবিডির মাধ্যমে বিভিন্ন কোম্পানিকে সার্ভিস দিয়েছিলাম। অ্যামাজন অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং নিয়েও বেশি কাজ করি।
মো. ফারুকের ভাষায় জীবনে সাফল্যের সংজ্ঞা হলো, নির্দিষ্ট কোনো লক্ষ্যে পৌঁছানো নয়। কেউ যদি ব্যাংকে এক কোটি টাকা জমানোর টার্গেট নেন এবং কঠিন অধ্যবসায়ের ফলে তা তিনি জমিয়ে ফেলেন, সেটা তার সফলতা না। তখন তার আরো টাকা আয়ের নেশা জাগাবে। অন্য একটা টার্গেট নেবেন তিনি। সাফল্য হলো-পরিবার-পরিজন নিয়ে সুন্দরভাবে বেঁচে থাকার জন্য যা আয় করার দরকার তা যদি কেউ করতে সক্ষম হন সেটা হবে তার জন্য সফলতা। তিনি বলেন, আমার কাছে সাফল্য হলো, পরিবারের সবাইকে নিয়ে সুখে থাকা, শান্তিতে থাকা এবং সবাইকে ভাল রাখা।
জীবনের অর্জন বিষয়ে তিনি বলেন, আমার প্রথম অর্জন হলো, ২০১২ সালে বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটিতে পড়ার সময় স্টুডেন্ট অব দ্য ইয়ার হয়েছিলাম। তখন আবার মাইক্রোসফটের স্টুডেন্ট পার্টনার হিসেবে কাজ করেছিলাম এক বছর। এর স্বীকৃতি হিসেবে সার্টিফিকেটও পেয়েছি। বিআইটিএম-তে প্রশিক্ষণ নেয়ার পরে ভাল রেজাল্ট করার সুবাদে পুনরায় এখানে শিক্ষকতা করার সুযোগ পেয়েছি।
ফ্রিল্যান্সিংয়ের যোগ্যতা বিষয়ে ফারুকের ভাষ্য, ফ্রিল্যান্সিং যারা করবেন তাদের অবশ্যই কম করে দুটা যোগ্যতা থাকতে হবে, ইংরেজিতে লেখা, বোঝা ও যোগাযোগ করার দক্ষতা। দ্বিতীয়ত অবশ্যই তাকে ধৈর্যশীল হতে হবে। ফ্রিল্যান্সিং করার জন্য কম করেও হলে তিন থেকে ছয় মাস ধৈর্য নিয়ে একটা রুটিন করে নিয়মিত অনলাইনে সময় দিতে হবে। প্রথমে কাজ করার জন্য নিজেকে তৈরি করতে হবে। ফ্রিল্যান্সিংয়ের জন্য খুঁটিনাটি কারিগরি বিষয়গুলো ভাল করে আয়ত্ত করে নিজেকে দক্ষ করতে হবে। কাজের কোয়ালিটি ভাল করতে হলে দক্ষতার কোনো বিকল্প নেই।
ফ্রিল্যান্সিং কাজ আবেদন করার পরে কাজ পেয়ে যদি ক্লায়েন্টের পছন্দমতো কাজ ডেলিভারি দিতে না পারেন, তাহলে আপনার কাজ আর ক্লায়েন্টরা নেবে না। তাই সময় নিয়ে আগে নিজেকে প্রস্তুত করুন। পরে কাজে হাত দিন। এটা এক মাসের বা তিন মাসের কোনো প্রশিক্ষণ না। যতক্ষণ পর্যন্ত নিজেকে প্রস্তুত না করতে পারেন ততদিন শিখে যেতেই হবে। এর জন্য যা যা করার দরকার, তাই করুন।
ফ্রিল্যান্সিংয়ের সব চেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো, ইংরেজি কমিউনিকেশন গ্যাপ। ফারুক বলেন, আমার অভিজ্ঞতায় দেখেছি যে ফ্রিল্যান্সিং করার সময় বায়ারদের সাথে কমিউনিকেশন করার বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাদের সাথে কথা বলার সময় সঠিক ও শুদ্ধভাবে কথা বলতে পারলে বায়াররা তাদের কাজ দেয়ার ব্যাপারে আরো বেশি আগ্রহী হন। কারণ তারা কি চাচ্ছেন আর আমি কিভাবে কাজটা করে দিতে পারবো এটাই তাদের সঠিকভাবে বোঝাতে না পারলে তো কাজ পাওয়া সম্ভব না। এক্ষেত্রে কমিউনিকেশন স্কিলটা খুব গুরুত্বপূর্ণ।
দ্বিতীয় চ্যালেঞ্জটা হলো পুরো জ্ঞানের অভাব। আমাদের বেশিরভাগ স্টুডেন্টদের থাকে আধা শিক্ষা জ্ঞান। এটা অনেক ভয়ংকর বিষয়। কারণ আজকে একজন একটা বিষয়ে শিখছেন, পাশের একজন যদি বলে এটা থেকে ওইটাতে আরো বেশি আয় করা সম্ভব, তাহলে তিনি আবার আগেরটা রেখে এটাতে চলে যাচ্ছেন। এটা ঠিক নয়। তাহলে দিন শেষে কোনোটাই আর করা হবে না।
আগের থেকে দেশের ফ্রিল্যান্সিংয়ের অবস্থা অনেক উন্নত হয়েছে উল্লেখ করে ফারুক বলেন, এই প্লাটফর্মে এখন সারা দেশের লাখ লাখ তরুণ-তরুণী কাজ করছেন। অনেকেই এটাকেই জীবিকার প্রধান অবলম্বন হিসেবে নিয়েছেন। অনেক সফল ফ্রিল্যান্সার বাংলাদেশে রয়েছেন। এখনও প্রতিনিয়ত তৈরি হচ্ছে।
নিজের স্বপ্ন বিষয়ে মো. ফারুক বলেন, আমার এমন একটা ট্রেনিং প্লাটফর্ম করার ইচ্ছা যেখানে স্টুডেন্টরা আসবেন ও প্রশিক্ষণ নেবেন। দেশে অনেক মেধাবী তরুণ-তরুণী আছে। অনেকে জানে না ঘরে বসে শুধু একটা ল্যাপটপ এবং ইন্টারনেটের সাহায্যে কী করে অনলাইন থেকে টাকা আয় করতে হয়। এসব মেধাবী তরুণদের জন্য ইচ্ছে আছে অনলাইনে ফ্রিল্যান্সিং প্রশিক্ষণ দেয়ার। দেশের বেকারদের সম্পদে পরিণত করতে অনলাইন ট্রেনিং প্রোগ্রামটা চালিয়ে নেয়ার ইচ্ছে রয়েছে।
বিবার্তা/গমেজ/শাহিন/জহির/এমও
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]