শিরোনাম
ডা. জান্নাতুল ফেরদৌস বৃষ্টির স্বপ্ন আকাশ ছোঁয়া
প্রকাশ : ০৫ অক্টোবর ২০২১, ১৭:০৪
ডা. জান্নাতুল ফেরদৌস বৃষ্টির স্বপ্ন আকাশ ছোঁয়া
উজ্জ্বল এ গমেজ
প্রিন্ট অ-অ+

দাঁত ও মুখের সমস্যা ভোগেননি এমন মানুষ পাওয়া দুষ্কর। আর এই মুখের সুস্থতা ও সৌন্দর্য রক্ষায় যারা গুরুদায়িত্ব পালন করেন তারা হলেন দন্ত চিকিৎসক বা ডেন্টিস্ট। বিশ্বব্যাপী ডেন্টিস্টি স্মার্ট এবং আভিজাত্যপূর্ণ পেশা। শুধু বাংলাদেশ নয় বিশ্বব্যাপী একটি সম্ভাবনাময় ও উচ্চ আয়ের পেশাও এটি। প্রায় ১৮ কোটি মানুষের বাংলাদেশে পেশাটির সম্ভাবনাও অফুরান। বিশেষ করে নারীদের জন্য খুবই চমৎকার এবং নিরাপদ একটা সম্ভাবনাময় প্রফেশন। একজন নারী এই প্রফেশনে স্বাধীন ভাবে কাজ করে উন্নত মানের একটা লাইফ লিড করতে পারেন। সেসাথে দুহাতে করতে পারেন মানুষের সেবা।


অনেকটা উচ্ছ্বসিত হয়ে আত্মবিশ্বাসের সাথে কথাগুলো বললেন ডা. জান্নাতুল ফেরদৌস’স বিশেষায়িত ডেন্টাল ক্লিনিকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান কনসালট্যান্ট ডেন্টাল সার্জন ডা. জান্নাতুল ফেরদৌস।


সম্প্রতি ডা. জান্নাতুল ফেরদৌস’স ডেন্টাল ক্লিনিকে বিবার্তার সাথে আড্ডা দেন ডা. জান্নাতুল ফেরদৌস। দীর্ঘ আলাপে উঠে আসে তার জীবনের গল্প। শৈশবের সেই উচ্ছ্বল, চঞ্চল, প্রাণবন্ত ছোট মেয়েটি আজ কীভাবে হয়ে উঠলেন ডেন্টিস্ট। কীভাবে প্রতিষ্ঠা করলেন তার স্বপ্নের পৃথিবী ডেন্টাল ক্লিনিক।


ডা. জান্নাতুল ফেরদৌস। ডাক নাম বৃষ্টি। বাবা মো. আব্দুল কুদ্দুস এবং মা গুলশান আরা। দুজনই পেশায় শিক্ষক। মা নিজের গড়া কিন্ডারগার্টেন স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা। বাবা এখন অবসরে। দুই ভাই-বোনের মধ্যে ভাই পেশায় ডাক্তার।



মেহেরপুর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি এবং মেহেরপুর সরকারি মহিলা কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেছেন। মার্কস মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কলেজ থেকে বিডিএস পাস করেন। পরে তিনি ঢাকা ডেন্টাল কলেজ থেকে ওরাল এবং ম্যাক্সিলোফেসিয়াল সার্জারি পিজিটি শেষ করেন। দেশে প্রাতিষ্ঠানিক পড়ার পরে ডেন্টাল বিষয়ে বিশেষভাবে প্রশিক্ষণের জন্য যান ভারতে। সেখানে দিল্লি থেকে লেজার ডেন্টাল ও ব্যথামুক্ত রুটক্যানাল সার্জারির উপর বিশেষ প্রশিক্ষণ নেন। জাপান থেকে ইমপ্ল্যান্ট সার্জারির উপর বিশেষ প্রশিক্ষণও গ্রহণ করেছেন এই তরুণ দন্তচিকিৎসক।


কথায় কথায় বৃষ্টি কিছুক্ষণের জন্য হারিয়ে যান শৈশবের স্মৃতিময় দিনগুলোতে। স্মৃতি চারণ করে বৃষ্টি বলেন, ছোটবেলায় ছাত্রী হিসেবে অনেক মেধাবি ছিলাম। ক্লাস ওয়ান থেকে টেন পর্যন্ত সব সময়ই ক্লাসে প্রথম হয়েছি। পঞ্চম এবং অষ্টম শ্রেণিতে পেয়েছি বৃত্তি। ক্লাস টু থেকে নিজের এলাকাতে যতগুলো প্রতিভা বিকাশের প্রতিযোগিতা হতো সবগুলোতে প্রথম হয়েছি। উপজেলা, জেলা ও বিভাগীয় সব প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে শতাধিক পুরস্কার পেয়েছি। প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের বিষয়গুলো ছিল কবিতা আবৃত্তি, উপস্থিত বক্তৃতা, উপস্থিত রচনা প্রতিযোগিতা ইত্যাদি। স্কুল থেকে কলেজ জীবনে সব ধরনের সাংস্কৃতিক প্রোগ্রামে খুব অ্যাক্টিভ ছিলাম। উপস্থিত রচনা প্রতিযোগিতায় সব সময় আমি প্রথম হই দেখে একদিন স্কুলের এক শিক্ষক মাকে বলেন, তুমি তোমার মেয়েকে বাংলায় অনার্স করবা। কারণ তোমার মেয়ে বাংলায় অনেক ভাল। অনেক ভাল রচনা লিখে। ওর লেখার হাত ভীষণ ভাল।


জন্মগতভাবেই নেতৃত্বের গুণটা পেয়েছেন বৃষ্টি। স্কুলে ক্লাস ওয়ান থেকেই টেন পর্যন্ত ক্লাস ক্যাপ্টেন হওয়া। ক্লাসের যেকোন কালচারাল কার্যক্রম নিজে দায়িত্ব নিয়ে পরিচালনা করতে ভীষণ ভাল লাগতো তার। যেকোন কালচারাল অনুষ্ঠানে প্রেজেনটেশনের কাজটা নিখুঁতভাবে করতেন। ছোটবেলা থেকেই মানুষের কল্যাণে জন্য কোনো কাজ করতে পারলে মনে অন্যরকম একটা ভাললাগা কাজ করতো তারা।



বৃষ্টি আর পাঁচটা কিশোরীর চেয়ে একটু আলাদা ছিলেন। সবসময় একটু ভিন্নভাবে সব কিছু চিন্তা করতেন। যেমন- সব জায়গায় সব কিছুতে আমাকে ফার্স্ট হতে হবে, কোয়ালিফাইড হতে হবে, আমাকে অনেক বড় হতে হবে, নিজেকে অনেক বড় জায়গায় নিয়ে যেতে হবে। এবিষয়গুলো তার মাথায় সব সময় কাজ করতো। বৃষ্টি বলেন, মা আমার অনুপ্রেরণার উৎস। আমার জীবনের মেন্টর। ছোটবেলা থেকেই সবসময় আমাকে গাইড করতেন। স্বপ্ন দেখাতেন। তুমি এভাবে চলো। এভাবে পড়ো। এ পথে এগিয়ে যাও। এই ক্যারিয়ারটা সম্ভাবনাময়। এ পথে হাঁটলে তোমার জীবন হবে সুন্দর। মায়ের আদর্শ ও পরামর্শে আমি স্বপ্ন দেখি ডেন্টিস্ট হওয়ার।


মায়ের খুব ভক্ত বৃষ্টি বললেন, মাকে দেখেই কাজ করার সাহস পাই। আমার মা এলাকার শিশুদের লেখাপড়ার কথা চিন্তা করে গড়ে তুলেছেন কিন্ডারগার্টেন স্কুল। প্রায় ৩শ’ ছেলে-মেয়ে পড়ালেখা করে। মা ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা।


দুচোখ ভরা স্বপ্ন নিয়ে এইচএসসি পাস করে মেডিকেলে ভর্তির জন্য যাদুর নগরী ঢাকায় আসেন বৃষ্টি। মায়ের ইচ্ছায় ভর্তি হন রাজধানীর মিরপুরে মার্কস মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কলেজে। সেখানে ডেন্টাল পড়াশোনা শেষ করেন।


ভাই তখন সবেমাত্র বিডিএস শেষ করেছেন। নিজেও পড়েন মেডিকেলের ফার্স্ট ইয়ারে। ছোটবেলা থেকেই তার স্টেজ পারফরমেন্স খুবই ভাল ছিল। জেলা ও বিভাগীয় পর্যায়ে সুনাম ও জনপ্রিয়তা ছিল ভীষণ। সেই সুবাদে অসংখ্য প্রোগ্রাম করা সুযোগ পান। সে সুযোগটা কাজে লাগাতে তখন তার মাথায় আসে টিভির জন্য একটা স্বাস্থ্যবিষয়ক প্রোগ্রাম নির্মাণ করার। ওই সময় টিভি চ্যানেলগুলোতে স্বাস্থ্যবিষয়ক প্রোগ্রাম হতো হাতে গোনা দুচারটে। তাদের প্রোগ্রামটা হবে সাধারণ মানুষের লাইফস্টাইল নিয়ে। পুরো প্রোগ্রামের পরিকল্পনা, স্ক্রিপ্ট লেখা, পথে ঘুরে ঘুরে ভিডিও শ্যুট করা, সবকিছু ক্লাসের ফাঁকে ফাঁকে করেন দুজনে। বৃষ্টির উপস্থাপনায় পরিচালিত প্রোগ্রামটা দিগন্ত টিভিতে সম্প্রচার করা হয়। ভীষণ হিট হয় প্রোগ্রামটা। তখন ইউকে-তে একটা বাংলা টিভি চ্যানেলেও প্রোগ্রামটা নিয়ে সম্প্রচার করা হয়। প্রোগ্রামের কিছু কিছু সংলাপ মানুষের মনে এমন করে দাগ কাটে যে তখন ওই প্রোগ্রামটার পুরো দায়িত্ব দেয়া হয় বৃষ্টিকে।



প্রোগ্রামটা এত বেশি জনপ্রিয়তা পায় যে তখন বিভিন্ন টেভি চ্যানেল থেকে উপস্থাপনার জন্য ডাক আসতে শুরু করে বৃষ্টির। আরো স্বাস্থ্যবিষয়ক প্রোগ্রাম ডিজাইন করার অফার আসতে থাকে। তখন দুজনে মিলে নিজেদের একটা হেলথ বেইজড অ্যাজেন্সি প্রতিষ্ঠা করেন। ভাইয়ের সহযোগিতায় বৃষ্টির হাত ধরে অনেক টিভি চ্যানেলে স্বাস্থ্যবিষয়ক নতুন নতুন প্রোগ্রাম চালু হয়েছে। সেসাথে মেডিকেলে পড়ার সময়েই প্রায় অধিকাংশ টিভি চ্যানেলে স্বাস্থ্যবিষয়ক প্রোগ্রামে উপস্থাপনার কাজ করেন তিনি।


দেশের টিভি চ্যানেলে উপস্থাপনার পাশাপাশি আন্তর্জাতিক লেভেলে কাজ করার চিন্তা করেন বৃষ্টি। ব্রিটিশ কাউন্সিল থেকে ইংরেজি প্রেজেন্টেশনের বিষয়ে বিশেষ প্রশিক্ষণও নেন। এরপর চিন্তা করেন আরো উন্নত ও আন্তর্জাতিক লেভেলে নতুন কিছু করতে হবে। তখন জানতে পারেন দেশে ফার্মাসিটিকেলসের যে প্রোগ্রামগুলো হয়, সেখানে যে ইংরেজিতে ভাল, প্রেজেন্টার ও টিভিতে ফেসভ্যালু আছে এমন ডাক্তারদের খোঁজা হয়। তখন আন্তর্জাতিক কনফারেন্সগুলোতে অংশগ্রহণ করা শুরু করেন। এর মধ্য দিয়ে আন্তর্জাতিক ডেন্টাল ডাক্তারদের সাথে যোগাযোগ তৈরি হয়। বিশেষ করে দিল্লি, চেন্নাই, মাদ্রাজের বেশ কয়েকজন আন্তর্জাতিকমানসম্পন্ন ডাক্তারের সাথে কাজ করার সুযোগ হয়।


আন্তর্জাতিক ডেন্টাল ডাক্তারদের সাথে কনফারেন্সগুলোতে অংশ নিয়ে বুঝতে পারেন উন্নত দেশগুলিতে ডেন্টাল ডাক্তারগুলো এতবেশি স্মার্ট, এতবেশি স্ট্রং, ওয়ার্ল্ডে ডেন্টিট্রি পেশায় এতবেশি লাক্সারিয়াস যেটা আমাদের দেশে কেউ এর গুরুত্বটা বুঝতেছে না।



দেশে ডেন্টিট্রি প্রফেশনের পড়াশোনা শেষ করে উপলব্ধি করেন আরো ‍উন্নত প্রশিক্ষণ নিতে হবে তার। নিজেকে আরো বেশি দক্ষ ও যোগ্য করে তুলতে শেখার নেশায় পাড়ি জমান ইন্ডিয়াতে। লক্ষ্য আন্তর্জাতিক মানের প্রশিক্ষণ নেয়া। প্রথমে ইন্ডিয়ার অ্যাডভান্স ডেন্টাল স্টুডিও এবং অ্যাপোলো হসপিটাল থেকে ডেন্টালের বিষয়ে বিশেষ প্রশিক্ষণ নেন। পরে যান চেন্নাইয়ের অ্যাপোলো হসপিটালে। শেষে দিল্লীর ফরটিস হাসপাতালে ডেন্টাল সার্জন হিসেবে কাজ করেন। প্রামাণ করেন নিজের যোগ্যতাকে। দক্ষতার সাথে কাজ করার সুবাদে এর স্বীকৃতিও মেলে তার। নিজের মেধা, যোগ্যতা ও দক্ষতার কারণে দিল্লি ইনস্টিটিউট অব হেলথ সায়েন্স অ্যান্ড রিসার্চের ক্লিনিক্যাল প্রতিষ্ঠানে পুরো বাংলাদেশের পক্ষে প্রতিনিধিত্ব করার দায়িত্ব পান। বর্তমানে দিল্লির ওই মেডিকেল গবেষণা প্রতিষ্ঠানের ডিরেক্টর হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন স্বপ্নবাজ এই ডেন্টিস্ট।


প্রশিক্ষণ নিয়ে দেশে ফেরেন বৃষ্টি। এবার তার নিজের স্বপ্ন বাস্তবায়নের পালা। ডেন্টাল বিষয় নিয়ে পড়াশোনা করার সময় স্বপ্ন দেখতেন একদিন দেশে ডেন্টিট্রি প্রফেশনকে ডিফারেন্ট অ্যাঙ্গেলে প্রেজেন্ট করবেন। দেশের মানুষকে আন্তর্জাতিক মানের ও স্ট্যান্ডার্ডে চিকিৎসাসেবা দিবেন। আর সে স্বপ্ন পূরণে ডেন্টাল চিকিৎসায় প্রযুক্তি সফল উন্নত দেশগুলোর সাথে তাল মিলিয়ে বাংলাদেশেও ডেন্টালে সর্বাধুনিক চিকিৎসা দেয়ার লক্ষ্যে উন্নত যন্ত্রপাতি ও আধুনিক চিকিৎসা সেবা দিতে চালু করেন ডা. জান্নাতুল ফেরদৌস’স বিশেষায়িত ডেন্টাল ক্লিনিক। ক্লিনিকটি রাজধানীর শ্যামলীস্থ শ্যামলী স্কয়ারের পাশে শ্যামলী সিনেমা কমপ্লেক্সে লেভেল-৩তে অবস্থিত।


ক্লিনিকটা দেখতে অনেকটা ফাইভস্টার হোটেলের লবির মতো। ক্লিনিকে ঢুকতেই রয়েছে ড্রয়িং রুমের মতো বসার বিশাল জায়গা। দুই পাশে বসানো রয়েছে আত্যাধুনিক ডিজাইনের দুটি সোফা। বসার রুমটি সাজানো-গুছানো। পাশে রিসিপসন টেবিল। শ্যামলী সিনেমা কমপ্লেক্সের তৃতীয় তলায় প্রধান সড়কের পাশে উন্নত থাইগ্লাস দিয়ে মুড়ানো ডেন্টাল ক্লিনিকটি। উপর থেকে নীচে তিন সড়কের গাড়ি চলাচলের দৃশ্য দেখা যায়। রাতে রঙিন আলোতে উপর থেকে বাইরের দৃশ্য হয়ে উঠে আরো মনোমুগ্ধকর। ভেতরের পরিবেশটা ভীষণ সুন্দর। শীততপ নিয়ন্ত্রিত। টিপটপ, পরিপাটি, সাজানো-গুছানো। চেম্বারটি সাজানো হয়েছে অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে অত্যাধুনিক ও উন্নত প্রযুক্তির যন্ত্রপাতি দিয়ে। এক দিকে সারিবদ্ধভাবে রাখা হয়েছে চিকিৎসার যন্ত্রপাতির টেবিল, রোগী পরীক্ষা-নিরীক্ষার বিশেষ টেবিল। পাশে রয়েছে গেস্টদের বসার আলাদা কফি টেবিল। চারটি চেয়ার। টেবিলে রাখা তাজা ফুল। অন্যপাশে বসার জন্য রাখা আছে সোফা। তার পাশে রয়েছে রোগীর সাথে বসে কথা বলে প্রেসক্রিশন লেখার জন্য আলাদা ডাক্তারের টেবিল।


এত সুন্দর করে ছবির মতো ক্লিনিকটি সাজানোর কারণ জানালেন বৃষ্টি। তার ভাষ্য, ডেন্টিট্রি একটা যেমন-তেমন প্রফেশন এই ধারণা আমি ভেঙে দিতে চাই। সারাবিশ্বে এটা একটা লাক্সারিয়াস প্রফেশন। ডেন্টিস্টদের লাইফস্টাইল খুবই ‍উন্নত। তারা খুব স্মার্ট। অনেক অ্যাডভান্সড। উন্নত দেশগুলিতে ডেন্টাল ক্লিনিকগুলোর পরিবেশ খুবই সুন্দর, মনোমুগ্ধকর। রোগীরা ক্লিনিকে এসে যেনো ফাইভস্টার হোটেলের মতো সুন্দর একটা পরিবেশের আমেজ এবং মানসিকভাবে স্বস্তি ও প্রশান্তি পান সেটার উপরে বিশেষভাবে নজর দেয়া হয়ে থাকে। আমাদের দেশের ডেন্টাল চেম্বারগুলো বিভিন্ন স্টাইলে তৈরি করা হয়ে থাকলেও এর অবকাঠামো, লোকেশন, পরিবেশ এবং চেম্বারের ভেতরের পরিবেশের বৈচিত্র্যতার কথা খুব কমই চিন্তা করা হয়ে থাকে। আমি প্রচলিত ট্রেন্টের বাইরে এসে ডেন্টাল চিকিৎসায় নতুন কিছু চালু করতে নিজের রুচি ও পছন্দের মতো করে সাজিয়েছি চেম্বারটি। আমার চিন্তা হলো, একজন রোগী চেম্বারে চিকিৎসা নিতে এসে যদি তার পরিবেশই পছন্দ না হয়, স্বচ্ছন্দবোধ না করে, তাহলে সে চেম্বার কারার মাঝে কোন সার্থকতা নেই।


চমৎকার গুছানো ব্যক্তিত্বসম্পন্ন একজন নারী বৃষ্টি। পোশাক-আশাকে সব সময় টিপটপ, পরিপাটি ও স্মার্ট থাকতে ভীষণ পছন্দ করেন তিনি। খুব সুন্দর করে গুছিয়ে কথা বলেন। বন্ধুবাৎসল্য ও মিশুক। অতিথি পরায়ন। আন্তরিক ও অমায়িক তার ব্যবহার। ব্যক্তি মানুষ হিসেবে হৃদয়হরণকারী ভালো গুণগুলো দিয়ে রোগীদের দীর্ঘ সময়ে নিয়ে দেখেন। কথা বলেন। হৃদয় দিয়ে রোগীদের মনের কষ্টগুলো উপলব্ধি করেন। সমস্যা অনুসারে সমাধানের পথ খুঁজেন। এভাবে আকর্ষণীয় ব্যক্তিত্ব, মার্জিত ও আন্তরিক ব্যবহার এবং ভালোবাসাপূর্ণ চিকিৎসাসেবা দিয়ে রোগীদের হৃদয়ে স্থান করে নেন তিনি। রোগীরা কথা বলেই অনেকটা প্রশান্তি পান মনে। যে রোগী একবার তার চেম্বারে আসেন তিনিই আর পাঁচটা রোগীকে ডা. জান্নাতুল ফেরদৌস’স ডেন্টালের সেবার মান ও বৃষ্টির প্রশংসার কথা বলেন।


বৃষ্টি বলেন, আমার এখানে রোগীর চিকিৎসাসেবা মানের সাথে কোনো কম্প্রোমাইজ করি না। প্রত্যেকজন রোগীকে সময় নিয়ে, অত্যন্ত যত্নসহকারে ও আন্তরিকতার সাথে দেখা হয়। সেবার মান আন্তর্জাতিক স্ট্যান্ডার্ড মেনন্টেন করার চেষ্টা করি। যেকোনো রোগীকে চিকিৎসা দেয়ার পর রোগীর চেয়ে আমার টেনসন ও কাসার্ন থাকে বেশি। যতক্ষণ পর্যন্ত রোগীটা পুরো সুস্থ না হচ্ছে ততক্ষণ পর্যন্ত আমি নিজে রোগীর সাথে পার্সোনালি যোগাযোগ করি। খোঁজখবর নেই।


বৃষ্টির চিকিৎসাসেবার প্রশংসা করে তার ফেসবুকে দেয়া এক পোস্টে এক রোগীর সন্তান লিখেছেন, ডেন্টিস্ট হিসেবে আপনি অসাধারণ। খুবই আন্তরিক একজন মানুষ। রোগীর সাথে আপনার বন্ধুসুলভ আচরণ, মিষ্টভাষী ব্যবহার, রোগীর প্রতি মায়া-মমতা এবং যত্ন সহকারে রোগীর চিকিৎসা সেবা, সত্যি খুবই মনোমুগ্ধকর। ইনশাআল্লাহ আপনার চিকিৎসা সেবায় আম্মা সুস্থ হয়ে উঠবেন। আপনার সু-স্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ু কামনা করি।


ডা. জান্নাতুল ফেরদৌস’স ডেন্টালে সারা সপ্তাহে প্রতিদিন শিফট অনুসারে ৭-৮ জনের মতো ডেন্টিস্ট ডাক্তার সুলভ মুল্যে সব ধরনের ডেন্টাল চিকিৎসাসেবা দিয়ে থাকেন। যেমন, অত্যাধুনিক ডিজিটাল এক্সরে, মুখের দুর্গন্ধ, মাড়ি ফোলা, মাড়ি দিয়ে রক্ত পড়া রোগের যাবতীয় চিকিৎসা, অত্যাধুনিক রুট ক্যানাল চিকিৎসা, নকল দাঁত প্রতিস্থাপন, ক্যাপ ও ব্রীজ, আঁকাবাকা দাঁতের জন্য অর্থোডন্টিক চিকিৎসা, লেজার ফিলিং, আক্কেল দাঁতসহ সব ধরনের দাঁত অপসারণ, ডেন্টাল ইমপ্ল্যান্ট, দাঁত সাদাকরণ, স্কেলিং এবং পলিশিং, ছোটদের দাঁতের চিকিৎসা, স্মাইল ডিজাইনিং, দাঁতের কসমেটিক চিকিৎসাসহ ডেন্টাল জুয়েলারি করা হয় এই ক্লিনিকে। প্রতিদিন সকাল ১১টা থেকে রাত ১০.৩০ মিনিট পর্যন্ত সব ধরনের রোগীর চিকিৎসা দেয়া হয়।



ডা. জান্নাতুল ফেরদৌস’স ডেন্টালকে একটা পরিবার মনে করেন বৃষ্টি। তার ভাষ্য, ডা. জান্নাতুল ফেরদৌস’স ডেন্টাল হলো একটা পরিবার। আর সব রোগীরা হলেন এই পরিবারের সদস্য। পরিবারের সবার মধ্যে যেমন শ্রদ্ধা-সম্মান, আদর, স্নেহ-মায়া, মমতার বন্ধন থাকে, ঠিক তেমনি আমাদের এই চেম্বারের সবার মধ্যে এমন একটা সম্পর্কের বন্ধন রয়েছে।


চেম্বারে চিকিৎসা দেয়ার পদ্ধতিও একটু ভিন্ন ধরনের। শীততপ নিয়ন্ত্রিত স্নিগ্ধ ও আরামদায়ক পরিবেশে রোগীকে চিকিৎসা দেয়া হয়। দাঁতের ব্যথা-যন্ত্রণা থেকে মুক্ত করে কিছুক্ষণের রোগীর মন-মানসিকতাকে একটু উৎফুল্ল করতে ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক হিসেবে হালকা ভলিউমে বাজানো হয় রবীন্দ্রসংগীত। কখনো বো বাজানো হয় কাউন্সিংয়ের জন্য ব্যবহার করা কোনো ইংরেজি মিউজিক। গানের সুমিষ্ট সুর-তাল-লয়-ছন্দে একাকার হয়ে যাওয়া পরিবেশে কখন যে চিকিৎসার সময়টা কেটে যায় যেনো রোগীরা বুঝতেই পারেন না।


নিজের চেম্বার সামলিয়ে বিভিন্ন টিভি চ্যানেলে কাজ করছেন নারী স্বাস্থ্য নিয়ে। ‘ডাক্তারের চেম্বার থেকে’, ‘সুস্থ নারী সবল দেশ’, ‘সুচিকিৎসা’ সহ অনেক অনুষ্ঠানের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। এছাড়াও কাজ করেছেন কয়েকটি বিজ্ঞাপনেও। করোনার কারণে উপস্থাপনার কাজ অনেকটা কমিয়ে দিয়েছেন। তবে যখন যে টিভি চ্যানেল থেকে আমন্ত্রণ করা হয় না কেন, চেম্বারে কাজের ফাঁকে ফাঁকে জুম অনলাইনে সব প্রোগ্রামে অংশগ্রহণ করছেন।


জীবনের প্রাপ্তি বিষয়ে বৃষ্টি বলেন, আমার জীবনের সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি হলো যেদিন আমি ডাক্তার হলাম। প্রথমে আমার এক বন্ধু যখন কল করে বলতেছিল, হ্যালো ডা. জান্নাতুল ফেরদৌস, তখন মনের অনুভূতিটা ছিল অন্যরকম এক ভাললাগার। পরের দিন আমার টিভিতে একটা স্বাস্থ্য-বিষয়ক প্রোগ্রাম ছিল। টিভি প্রোগ্রামে সাধারণত বলতাম যে, আসসালামু আলাইকুম দর্শক, আপনাদের সাথে আছি আমি জান্নাতুল ফেরদৌস। তখন প্রথম দিন বললাম যে, আমি ডা. জান্নাতুল ফেরদৌস। ওই অনুভূতিটা ছিল স্বর্গীয়। ভিন্ন রকমের অনুভূতি। অন্যদিকে, টিভি চ্যানেলগুলো থেকেও কল করে বলছিল, আপা, আমরা তো মিষ্টি খাওয়ার জন্য বসে আছি। আজকে তো স্কল চেঞ্জ হয়ে গেছে। আপনি এখন ডাক্তার হয়ে গেছেন। আমার জীবনে আরেকটা বড় আর্জন আছে। সেটি হলো ক্লাস টেনে পড়ার সময় স্কুল থেকে ১০টা পুরস্কার দেয়া হয়েছিল একদিনে। উপস্থিত বক্তৃতা, কবিতা আবৃত্তি, রচনা প্রতিযোগিতা, বির্তক প্রতিযোগতিা, সেরা ক্লাস ক্যাপ্টেন, সেরা ক্লাস ছাত্রী, সেরা স্কুল ছাত্রী সবমিলে ১০টি পুরস্কার দেয়া হয়।


দেশে ডেন্টিস্ট্রি প্রফেশনের সম্ভাবনা বিষয়ে তার ভাষ্য, এটা একটা লাক্সারিয়াস এবং স্মার্ট প্রফেশন। বিশেষ করে নারীদের জন্য খুবই চমৎকার এবং নিরাপদ একটা সম্ভাবনাময় প্রফেশন। একজন নারী এই প্রফেশনে কাজ করে স্বাধীন ভাবে উন্নত মানের একটা লাইফ লিড করতে পারেন। এই প্রফেশনে নিজের মতো করে মানুষের সেবা কাজ করা যায়। নিজের মনের মতো করে সাম্রাজ্য তৈরি করা যায়। যেমন আমি নিজের মতো করে একটা সাম্রাজ্য তৈরি করেছি। এখানে নিজের মতো করে স্বাধীন ভাবে কাজ করছি। কোন প্রেসার নেই। অন্য হাসপাতালে ডিউটিতে যেতে হচ্ছে না। আমি স্বাধীন।


ভ্রমণবিষয়ক ব্লগ দেখতে ভীষণ ভালোলাগে বৃষ্টির। এটা তার পছন্দের একটা জায়গা। তিনি বলেন, অবসরে শুধু ট্রাভেল ব্লগ দেখি। এটা আমার একটা নেশা। যখনই কিছু সময় পাই তখন অনলাইনে সারা পৃথিবীতে শুধু ঘুরে বেড়াই। কোথায় ভ্রমণের আকর্ষণীয় কী কী জায়গা আছে। যেমন, আজকে প্যারিস দেখছি তো কাল দেখছি সিঙ্গাপুর। পরের দিন আবার দেখছি অস্ট্রেলিয়া বা জাপান। ভাবি যে একদিন সুযোগ হলে ওই দেশে যাবো। আগে থেকেই একটু দেখে রাখি।


একজন ডেন্টস্ট হিসেবে ভবিষ্যতে অনেক বড় কিছু করার স্বপ্ন দেখেন স্বপ্নবাজ এই ডাক্তার। আল্লাহ যদি তাকে সুস্থ রাখেন, আর এভাবে পরিশ্রম করার সামর্থ্য থাকে, তাহলে সে স্বপ্ন বাস্তবায়নে কাজ করার পরিকল্পনা রয়েছে তার। কী সেই পরিকল্পনা? সেটি এখন পাঠকদের জানাতে নারাজ তিনি। তবে দেশের ডেন্টিস্ট্রি সেক্টরের জন্য অনেক বড় কিছু করার পরিকল্পনা রয়েছে তার। সময় হলে সেটি সবাইকে জানানো হবে বলে জানান তিনি। সে স্বপ্ন পূরণে প্রতিনিয়ত লড়াই করে যাচ্ছেন বৃষ্টি। এর জন্য সবার দোয়া চেয়েছেন তিনি।


বিবার্তা/গমেজ/শাহিন

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com