দৌলতপুরে
পদ্মায় অস্বাভাবিক হারে পানি বৃদ্ধি : প্রায় অর্ধলক্ষ মানুষ পানিবন্দি
প্রকাশ : ১৩ আগস্ট ২০২৫, ১৭:৫৬
পদ্মায় অস্বাভাবিক হারে পানি বৃদ্ধি : প্রায় অর্ধলক্ষ মানুষ পানিবন্দি
কুষ্টিয়া প্রতিনিধি
প্রিন্ট অ-অ+

কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে পদ্মা নদীতে অস্বাভাবিক হারে পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলে প্রতিদিনই নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হচ্ছে। ইতোমধ্যে পানিবন্দী হয়ে পড়েছে চরাঞ্চলের দুই ইউনিয়নের প্রায় অর্ধলক্ষ মানুষ। বন্ধ হয়েছে শিক্ষ প্রতিষ্ঠানের পাঠদান কার্যক্রম। তলিয়ে গেছে ফসলি জমি।


পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্য মতে, পদ্মার পানি বিপদসীমার ৯০ সেন্টিমিটার নীচে অবস্থান করেছে। এভাবে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকলে আগামী দুই একদিনের মধ্যেই বিপদসীমা অতিক্রম করতে পারে বলে পানি উন্নয়ন বোর্ড ও নদী তীরবর্তী এলাকার মানুষের ধারণা।


ভারী বৃষ্টিপাত ও ফারাক্কার বিরুপ প্রভাবে ভারতের উজান থেকে নেমে আসা পানির কারণে পদ্মায় পানি বাড়ছে। গত ১০দিনে অব্যাহতভাবে পদ্মার পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। প্রতিদিন গড়ে ১০ থেকে ১৫ সেন্টিমিটার পর্যন্ত পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। আজ বুধবার দুপুর ১২টা পর্যন্ত উপজেলার রামকৃষ্ণপুর ইউনিয়নের ভাগজোত পয়েন্টে পানির উচ্চতা ছিল ১৪ দশমিক ৭২ সেন্টিমিটার। এই পয়েন্টের বিপদসীমা হলো ১৫ দশমিক ৭০ সেন্টিমিটার। বিপদসীমার ৯৮ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। একই অবস্থা পদ্মা নদীর হার্ডিঞ্জ ব্রীজ পয়েন্টে পানির উচ্চতা ছিল ১২ দশমিক ৯০ সেন্টিমিটার, যা বিপদসীমার ৯৮ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। এই পয়েন্টে বিপদসীমা ধরা হয়েছে ১৩ দশমিক ৮০ সেন্টিমিটার।


দৌলতপুরের মুল ভূ-খন্ড থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়া চিলমারী ও রামকৃষ্ণপুর ইউনিয়নের অধিকাংশ রাস্তা পানিতে তলিয়ে গেছে। ফলে পানিবন্দী হয়ে পড়েছে প্রায় অর্ধলক্ষ মানুষ। এভাবে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকলে দু’একদিনের মধ্যেই এসব এলাকার বাড়িঘরে পানি ঢুকে পড়ার আশংকা রয়েছেন এলাকাবাবাসী। এদিকে বন্যাকবলিত চিলমারী ও রামকৃষ্ণপুর ইউনিয়নের চরাঞ্চলের ৫শতাধিক হেক্টর জমির মরিচ, সবজি, কলা, ভুট্টা, ধান ও পাটসহ বিভিন্ন ধরনের ফসলের ক্ষেত তলিয়ে যাওয়ায় ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন কৃষকরা।


চিলমারী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান প্রকৌশলী আব্দুল মান্নান বলেন, চরাঞ্চলের যোগাযোগের রাস্তায় পানি ঢুকে পড়ায় চিলমারী ইউনিয়ন মূল ভূ-খন্ড থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। প্রতিদিন নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। এভাবে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকলে চরাঞ্চলের গ্রামগুলো প্লাবিত হয়ে পড়বে।


রামকৃষ্ণপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সিরাজ মন্ডল বলেন, তার ইউনিয়নের নদীর ওপারের অন্তত ৩০ হাজার মানুষের বসবাস, যার অধিকাংশই পানিবন্দী। ঘরবাড়িতে এখনও পানি ওঠেনি, তবে মাঠের আবাদি ফসল বিশেষ করে মরিচক্ষেত, সবজি, পাট ও ধান ডুবে গেছে।


দৌলতপুর উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মুশতাক আহম্মেদ বলেন, বন্যা কবলিত এলাকা পরিদর্শন করে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার জন্য চিলমারী ও রামকৃষ্ণপুর ইউনিয়নের ১৩টি বিদ্যালয়ের পাঠদান বন্ধ রাখা হয়েছে। তবে বিদ্যালয়গুলো খোলা থাকবে যাতে বন্যাকবলিত মানুষ সেখানে আশ্রয় নিতে পারেন।


দৌলতপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. নুরুল ইসলাম জানান, চরাঞ্চলের ৫ শতাধিক হেক্টর জমির মরিচ, রোপা আউশ, কলা, বিভিন্ন ধরনের সবজি ও ভুট্টা বন্যার পানিতে নষ্ট হয়েছে। নিচু এলাকার কিছু বাড়িতেও পানি প্রবেশ করেছে।


দৌলতপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) আব্দুল হাই সিদ্দিকী বলেন, পদ্মা নদীতে পানি বেড়ে যাওয়ায় উপজেলার ৪টি ইউনিয়নের মানুষ ক্ষতির মুখে পড়েছে। বিশেষ করে চিলমারী ও রামকৃষ্ণপুর ইউনিয়ন মূল ভূ-খন্ড থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সার্বক্ষণিক বন্যা পরিস্থিতির উপর নজর রাখা হচ্ছে। বন্যায় ঝুঁকিপূর্ণ পরিবারকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া, শুকনো খাবারসহ দুর্যোগ মোকাবিলায় প্রস্তুতি রয়েছে।


বিবার্তা/শরীফুল/এসএস

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2024 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com