
পার্বত্য জেলা বান্দরবানের আলীকদম উপজেলায় ‘আলীকদম কলেজ’-এর নাম ব্যবহার করে এক অসহায় কৃষক পরিবাারের দীর্ঘ ৪০ বছরের ভোগদখলীয় জায়গা খাস দেখিয়ে জবর দখল চেষ্টার অভিযোগ পাওয়া গেছে। ভূমি অফিসের সার্ভেয়ার মাগ্য মার্মাসহ স্থানীয় চার ব্যক্তির বিরুদ্ধে এ অভিযোগ করেন ভুক্তভোগী অসহায় বাবুল মিয়ারা।
শুধু তাই নয়, মাগ্য মার্মারা জায়গা দখলে ব্যর্থ হয়ে ঘরবাড়ি আগুনে পুড়িয়ে দেওয়াসহ বিভিন্ন মামলায় ফাঁসিয়ে দিবে বলেও হুমকি দেন। এসব অভিযোগের প্রেক্ষিতে বাবুল মিয়ারা বান্দরবান চীপ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে সাধারণ ডায়েরীর আবেদন করেন।
অপরদিকে জায়গা জবর দখলসহ গোপনে নামজারি করার হাত থেকে রক্ষা পেতে জেলা প্রশাসক ও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যানের হস্তক্ষেপ কামনা করেন ভুক্তভোগী অসহায় কৃষক পরিবারের সদস্যরা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ১৯৮০-৮১ সালে আলীকদম উপজেলার সিরাজ কারবারী পাড়ার বাসিন্দা কৃষক সিরাজ মিয়া ২৮৯ নং চৈক্ষ্যং মৌজার আর/৭নং চৌহদ্দী মূলে ৪ একর ৫০ শতক দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণীর জায়গা বন্দোবস্তি পায়। পাশাপাশি ১৯৮৯ ইং সনে জনৈক কাহ্লাপ্রæ মার্মার কাছ থেকেও ক্রয় করেন আরো দুই একর তৃতীয় শ্রেণীর জায়গা। সর্বমোট ৬ একর ৫০ শতক জমিতে তিনি তৎসময় থেকে ফলদ বনজ বাগানসহ বসতঘর সৃজন করে শান্তিপূর্ণভাবে ভোগ করেন। ২০০৭ সালে সিরাজ মিয়া মারা যাওয়ার পর এ জায়গা ৪জন ওয়ারিশের নামে নামজারি হয়। এ জায়গা ছাড়া তাদের আর কোন জায়গা নেই। ওয়ারিশরা হলেন- সিরাজ মিয়ার স্ত্রী জমিলা বেগম, ছেলে মো. বাবুল মিয়া, মেয়ে আমেনা বেগম ও কুলসুমা বেগম।
অভিযোগ উঠেছে, গত ৭ ফেব্রুয়ারি বাবুল মিয়াদেরকে জায়গা থেকে ঘরবাড়ি সরিয়ে নিতে বলেন আলীকদম উপজেলার সহকারি কমিশনার (ভূমি) কার্যালয়ের সার্ভেয়ার মাগ্য মার্মাসহ স্থানীয় মো. এরশাদ মিয়া, মো. ফারুকরা। এরপর হঠাৎ ১৯ ফেব্রুয়ারি দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে অভিযুক্তরা পিলার নিয়ে বাবুল মিয়াদের জায়গা জবর দখল করতে গেলে প্রতিরোধের মুখে ব্যর্থ হন। পরে এ ঘটনায় বিজ্ঞ সিনিয়র সহকারী জজ আদালতে চিরস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা চেয়ে অপর ৪০/২০২৫ মামলা দায়ের করেন সিরাজ মিয়ার ওয়ারিশ বাবুল মিয়া। আবেদনের প্রেক্ষিতে আদালত নালিশী জায়গার উপর স্থিতাবস্থার আদেশ দেন।
আদেশ পাওয়ার পরও অভিযুক্তরা কৌশল পাল্টিয়ে আলীকদম কলেজ এর নামে জায়গা নেওয়ার নাম করে স্থানীয় হেডম্যানের সাথে লিয়াজো করে একটি প্রতিবেদন নেন। এ প্রতিবেদন নিয়ে প্রতিপক্ষরা গোপনে বন্দোবস্তি করার পায়তারা করছেন। অভিযুক্তরা যেন জায়গা জবর দখল বা কোন ধরণের বেআইনী ভাবে পদক্ষেপ সহ বন্দোবস্তি করতে না পারেন, সেজন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বান্দরবান জেলা প্রশাসক বরাবরে আবেদন করেন সিরাজ মিয়ার ওয়ারিশরা। গত ৮ এপ্রিল জেলা প্রশাসকের কার্যালয় আবেদনটি গ্রহণ করেন।
ভুক্তভোগী কৃষক বাবুল মিয়া, জমিলা বেগম, আমেনা বেগম ও কুলসুমা বেগম একসূরে বলেন, আলীকদম কলেজের জন্য যতটুকু জায়গা প্রয়োজন তার অতিরিক্ত জায়গা দখলে রয়েছে। এরপরেও কেন যে সার্ভেয়ার মাগ্য মার্মা ও এরশাদ মিয়ারা আমাদের ৪০ বছরের ভোগ দখলীয় জায়গা জবর দখলের জন্য বিভিন্ন পায়তারা করছেন তা বোধগম্য নয়। তারা জায়গা দখল করতে না পেরে আমাদের বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে হয়রানিও করছেন। শুধু তায় নয়, জায়গা ছেড়ে না দিলে মাদক মামলাসহ বিভিন্ন মামলায় জড়িয়ে হয়রানি করার হুমকি দিচ্ছেন অভিযুক্তরা। এসব ঘটনার প্রতিকার চেয়ে আমরা বান্দরবান জেলা প্রশাসক বরাবরে আবেদনের পাশাপাশি চীপ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে অভিযোগ করেছি।
এ বিষয়ে স্থানীয় মো. রফিক, হাবিবুর রহমান কালু ও নাছির উদ্দিন জানান, এতদিন জানতাম ও দেখে আসছিলাম জায়গা সিরাজ মিয়ার ওয়ারিশদের। সম্প্রতি সার্ভেয়ার মাগ্য মার্মাসহ এরশাদ মিয়ারা ওই জায়গা খাস দাবী করে জবর দখলের চেষ্টা করছেন। যা অমানবিক ও মোটেও কাম্য নয়।
তবে অভিযোগ অস্বীকার করে সার্ভেয়ার মাগ্য মার্মা বলেন, আমরা বাবুল মিয়াদের জায়গা জবর দখলের চেষ্টা করছিনা। বরং বাবুল মিয়ারাই সাড়ে চার একর কাগজ দেখিয়ে ১৫-১৬ একর জায়গা জবর দখল করে রেখেছেন। আমরা কলেজ মসজিদ নির্মানের জন্য ৫০ শতক খাস জায়গা নির্ধারণ করে পিলার স্থাপন করেছিলাম। কিন্তু বাবুল মিয়ারা ওই জায়গা ঘেরাবেড়া দিয়ে তাদের দখলে নেন। এমনকি ওই সময় দখলে বাধা দিলে বাবুল মিয়ারা আমাদের উপর হামলাও করেছেন। হামলার ঘটনায় আমরা মামলা করেছি।
এ বিষয়ে মোবাইল ফোনে জানতে চাইলে বিরক্তি প্রকাশ করে বান্দরবান জেলা প্রশাসক শামীম আরা রিনি বলেন, প্রতিদিনেই ত অনেক অভিযোগ পাই। সব অভিযোগ আমি মুখস্ত করে রেখেছি নাকি। বাবুল মিয়ার অভিযোগের বিষয়ে জানতে হলে, সরাসরি আমার কার্যালয়ে আসতে হবে। মোবাইল ফোনে সব তথ্য বলা যায় না।
বিবার্তা/আরমান/এসএস
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]