ভিসা জটিলতায়
হিলি ইমিগ্রেশনে কমেছে পাসপোর্টধারী যাত্রী পারাপার, কমেছে রাজস্ব
প্রকাশ : ০৯ মে ২০২৫, ১৭:০৮
হিলি ইমিগ্রেশনে কমেছে পাসপোর্টধারী যাত্রী পারাপার, কমেছে রাজস্ব
হিলি, দিনাজপুর প্রতিনিধি
প্রিন্ট অ-অ+

ভারতীয় ভিসা জটিলতার কারণে তিনভাগের একভাগে নেমে এসেছে দিনাজপুরের হিলি ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট দিয়ে ভারত-বাংলাদেশে পাসপোর্টধারী যাত্রী পারাপার। ফলে সরকারের রাজস্ব আয় ও অনেক অংশে কমেছে। বেকার হয়ে পড়েছে চেকপোস্টে কর্মরত শতাধিক শ্রমিকেরা। তবে হিলি স্থলবন্দর দিয়ে পণ্য আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম স্বাভাবিক রয়েছে।


এদিকে ভুক্তভোগীরা বলছেন, গত ৫ আগস্ট দেশের পট পরিবর্তনের পর ভারত বাংলাদেশ দুই দেশের মধ্যে সম্পর্কে টানা পড়েন সৃষ্টি হয়। আর তখন থেকেই ভারত সরকার বাংলাদেশিদের ভিসা দেওয়া বন্ধ করে দেয়।


শুক্রবার (৯ মে) সরেজমিনে দেখা গেছে, শত-শত পাসপোর্ট যাত্রীর পদচারণায় মুখরিত সেই চিরচেনা হিলি চেকপোস্ট রোডটি এখন বৈশাখের তপ্ত রৌদ্রে খাঁ খাঁ অবস্থা।


খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ভিসা জটিলতায় হিলি ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট দিয়ে কমেছে পাসপোর্ট যাত্রী পারাপারের সংখ্যা। আগে প্রতিদিন ৫০০ থেকে ৬০০ পাসপোর্ট যাত্রী যাতায়াত করলেও বর্তমানে তার সংখ্যা কমে দাঁড়িয়েছে ১০০তে।


আগে প্রতিদিন এই ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট থেকে সরকার ২ থেকে আড়াই লাখ টাকা রাজস্ব পেলেও বর্তমানে তার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৫০ থেকে ৬০ হাজারে। অন্যদিকে শ্রমিকরা প্রতিদিন ৫০০ থেকে ১০০০ টাকায় আয় করলেও এখন অনেক খালি হাতে ফিরতে হচ্ছে তাদের।


ভারতে চিকিৎসা সেবা নিতে যাওয়া একজন পাসপোর্ট যাত্রী জানান, হিলি চেকপোস্ট দিয়ে আগে প্রতিদিন ৫০০-৬০০ যাত্রী চলাচল করতো। এখন সেই চিত্র আর নাই। চেকপোস্টে এসে দেখছি ফাঁকা। আমি খুব কষ্ট করে ঢাকা থেকে মেডিকেল ভিসা পেয়েছি। একান্তই জরুরী হওয়ায় ভারতে চিকিৎসার জন্য যেতে হচ্ছে। আগে থেকে সেখানে ডাক্তার দেখিয়ে আসছিলাম। তাই আবার চেক আপের জন্য যেতে হচ্ছে।


আর একজন ভুক্তভোগী বলেন, শত শত যাত্রী ভারতে ঘুরতে বা আত্মীয়-স্বজনের সাথে দেখা করতে যেতেন। এখন ভিসা বন্ধ থাকায় যেতে পারছেন না। প্রতিবেশী দেশের এমন বৈরী ভিসা-নীতি হওয়া ঠিক না। দ্রুত বাংলাদেশের সঙ্গে ভারত ভালো সম্পর্ক স্থাপন করবে বলে তিনি আশা করেন।


চেকপোস্টে কর্মরত কয়েকজন শ্রমিক বলেন, কয়েক মাস ধরে কাঙ্ক্ষিত কাজ নেই। আগে চেকপোস্টে যাত্রীদের প্রচণ্ড ভীর থাকতো। কাজ করে ভালো ভাবে সংসার চালানো যেত। এখন পরিবার-পরিজন নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছি। কাজ না থাকায় অনেক শ্রমিক চলে গেছে।


হিলি স্থলবন্দরের আমদানি-রপ্তানিকারক গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক মোঃ নাজমুল হক বলেন, বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের ব্যবসা চালু রয়েছে। তাই ব্যবসা সংক্রান্ত বিষয়ে আমাদের প্রায় ভারতে যেতে হয়। কিন্তু ৫ আগস্টে পট পরিবর্তনের পর আমাদের ভিসা দেওয়া হচ্ছে না। কয়েকবার আবেদন করেও ভিসা পাওয়া যায়নি। রপ্তানিকারকদের মোবাইলে ভিডিও বা ছবি দেখে পণ্যগুলো ভারত থেকে আমদানি করতে হচ্ছে। তাতে পণ্যের মান সঠিক হয় না। এতে আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি। কিছু সংখ্যক ব্যবসায়ীর আগের ভিসা থাকায় শুধু তারাই ভারতে যেতে পারছেন। ভারতের হাইকমিশনারকে ভিসার ব্যাপারে বলেও কোন সদুত্তর পাইনি। আমরা দ্রুত ভিসা চালুর দাবি জানাচ্ছি।


হিলি স্থল শুল্ক স্টেশনের রাজস্ব কর্মকর্তা মোঃ শফিউল আলম বলেন, যাত্রী সংখ্যা শূন্যের কোটায় নেমে এসেছে। ফলে সরকারের রাজস্ব আয়ও কমেছে। পট পরিবর্তনের আগে এই চেকপোস্ট ব্যবহার করে শত শত যাত্রী দুই দেশে আসা-যাওয়া করতেন। ভারত ভিসা বন্ধ রাখায় এই অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে।


হিলি ইমিগ্রেশন চেকপোস্টের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোঃ আরিফুল ইসলাম বলেন, গত বছরের ৫ আগস্টের আগে ইস্যু করা বিভিন্ন ক্যাটাগরির ভারতীয় ভিসা নিয়ে পাসপোর্ট যাত্রীরা হিলি ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট দিয়ে চলাচল করেছেন। কিন্তু সেই সংখ্যা তুলনামূলক অনেক কমে এসেছে। আর এতে সরকারের রাজস্ব আয়ও অনেক কমেছে।


বিবার্তা/রব্বানী/এসএস

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2024 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com