অস্থির জনজীবনে প্রশান্তির বৃষ্টি, বরেন্দ্র কৃষিতে আনলো স্বস্তি
প্রকাশ : ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১৯:৩৬
অস্থির জনজীবনে প্রশান্তির বৃষ্টি, বরেন্দ্র কৃষিতে আনলো স্বস্তি
রাজশাহী (বিশেষ) প্রতিনিধি
প্রিন্ট অ-অ+

রাজশাহীসহ বরেন্দ্র অঞ্চলে বর্তমানে খরিপ-২ মৌসুমের রোপা আমন ধানের চাষাবাদ চলছে। এ মৌসুমে ধান ও অন্যান্য ফসলের বীজতলা তৈরি এবং পরিচর্যার কাজ পুরোদমে চলছে। তবে গত কয়েকদিনের তীব্র গরম ও বিরূপ আবহাওয়া কৃষি কার্যক্রমকে ব্যাহত করেছে। এর সঙ্গে চলমান লোডশেডিংয়ের কারণে সেচকাজে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয়ে কৃষকদের মধ্যে শঙ্কা দেখা দিয়েছিল। তীব্র গরম ও তাপদাহের পর অবশেষে দেখা মিলেছে প্রশান্তির বৃষ্টি। কাঠফাটা রোদ ও গরমের মধ্যে বৃষ্টির ফোঁটা জনমনে এনে দেয় স্বস্তি।


বৃষ্টির অভাবে প্রচণ্ড গরমে রাজশাহীর জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে উঠেছিল। শিশু ও বৃদ্ধদের মধ্যে অসুস্থতার হার উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়ে যায়। দীর্ঘ লোডশেডিংয়ের কারণে সেচ ব্যবস্থা ব্যাহত হওয়ায় ফসলের উৎপাদন নিয়ে কৃষকরা দুশ্চিন্তায় পড়েন। বিদ্যুৎবিহীন অবস্থায় কৃষিকাজ করতে না পারায় ফসলের ক্ষতির আশঙ্কা বাড়ছিল। ঠিক সেই সময় ১৩ সেপ্টেম্বরের(শুক্রবার) স্বস্তিদায়ক বৃষ্টি রাজশাহী অঞ্চলের কৃষি ও জনজীবনে আশীর্বাদ হয়ে আসে। দীর্ঘদিনের তীব্র গরম ও লোডশেডিং থেকে মুক্তি পেয়ে এই বৃষ্টিতে কৃষকরা স্বস্তি লাভ করেন।


রাজশাহী আবহাওয়া অফিসের তথ্য অনুযায়ী, গত ১৩ সেপ্টেম্বর (শুক্রবার)সকাল পৌনে ১০টা থেকে সন্ধ্যা ৬ টা পর্যন্ত ৭২ দশমিক ২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়। এদিন সর্বোচ্চ তাপমাত্রা দুপুর ৩ টায় ছিল ৩৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ২৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আজ সকাল ৬ টা পর্যন্ত ৭৫ দশমিক ৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়। এখন পর্যন্ত রাজশাহীতে মোট বৃষ্টিপাতের রেকর্ড করা হয় দশমিক ২ মিলিমিটার।


রাজশাহী আবহাওয়া অফিসের পর্যবেক্ষক মো. গাউসুজ্জামান বলেন, বৃষ্টির কারণে তাপমাত্রা কিছুটা কমেছে এবং ভ্যাপসা গরমও কেটে গেছে। বিরতিহীনভাবে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত বৃষ্টিপাত হয়েছে, যা কৃষির জন্য খুবই উপকারী। আগামী দিনগুলোতেও অনেক বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। কৃষকরা আশাবাদী যে, এই বৃষ্টির ফলে তাদের উৎপাদন আরও ভালো হবে এবং সেচের খরচ কমে যাবে।


রাজশাহী অঞ্চলের প্রধান অর্থকরী ফসল ধান ও কপির চাষাবাদে এই বৃষ্টি একটি বড় ধরনের ইতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। বিশেষ করে লোডশেডিংয়ের কারণে সেচের খরচ বেড়ে যাওয়ায় কৃষকরা উদ্বিগ্ন ছিল। বৃষ্টির ফলে সেচের খরচ অনেকটা কমে এসেছে।


দুর্গাপুর উপজেলার চৌবাড়িয়া গ্রামের কৃষক মজিবর রহমান বলেন, আমরা অনেকদিন ধরে এই বৃষ্টির জন্য অপেক্ষা করছিলাম। বীজতলার জন্য খুব প্রয়োজনীয় পানি পাওয়া যাচ্ছিল না। তবে আজকের বৃষ্টিতে সেই সংকট অনেকটাই কেটে গেছে। ধানের বীজতলা রোপণ করার সঠিক সময় এটা। এই বৃষ্টির কারণে আমাদের বীজতলার জন্য আর চিন্তা করতে হবে না। আশা করছি, এবার ফসলের ভালো ফলন পাবো।


পুঠিয়া উপজেলার বলিহার গ্রামের কৃষক শরিফুল ইসলাম বলেন, গত কয়েক সপ্তাহ ধরে খরার মতো অবস্থা ছিল। আমরা প্রতিদিন আকাশের দিকে তাকিয়ে ছিলাম, কখন বৃষ্টি আসবে। আজকের বৃষ্টিতে আল্লাহর রহমত হয়েছে। বীজতলা তৈরির জন্য যে পরিমাণ পানির প্রয়োজন ছিল, তা একদিনেই পূরণ হয়ে গেছে। এখন আমরা ধানের চারা রোপণের জন্য পুরোপুরি প্রস্তুত। এই বৃষ্টি না হলে আমাদের কাজ আরও পিছিয়ে যেত, তাই এটাই সঠিক সময়ে এসেছে।


অন্যদিকে বাঘা উপজেলার পাকুরিয়া গ্রামের কৃষক আবদুল হক বলেন, আমরা এই মৌসুমের শুরু থেকেই বৃষ্টির অপেক্ষায় ছিলাম। অনেকেই বীজতলা তৈরিতে পিছিয়ে পড়ছিল, কারণ পর্যাপ্ত পানি ছিল না। কিন্তু আজকের এই বৃষ্টি আমাদের জন্য অনেক বড় আশীর্বাদ। এখন বীজতলা তৈরি করতে আর কোনো সমস্যা হবে না। আমি মনে করি, এভাবে বৃষ্টি হলে আমরা ভালোভাবে চাষাবাদ করতে পারবো, আর এই বছর ফসলের ফলনও অনেক ভালো হবে।


রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মোছা. উম্মে ছালমা জানান, এই বৃষ্টি রোপা আমনের জন্য বিশেষভাবে উপকারী হয়েছে। তাছাড়া অন্যান্য শাকসবজির উৎপাদনও ভালো হবে। তীব্র রোদে ফসলের পাতাগুলো নিস্তেজ হয়ে যাচ্ছিলো, যা এই বৃষ্টির কারণে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে এসেছে।


শুধু কৃষিক্ষেত্রেই নয়, এই বৃষ্টি রাজশাহীর নাগরিকদের জীবনেও স্বস্তি এনে দিয়েছে। দীর্ঘদিনের তীব্র গরমে মানুষজন অসুস্থ হয়ে পড়ছিলেন, বিশেষ করে শিশু ও বৃদ্ধরা। বৃষ্টির ফলে তাপমাত্রা কমে যাওয়ায় মানুষের মধ্যে স্বস্তি ফিরেছে। তবে বৃষ্টির কারণে রাজশাহী শহরের কিছু নিম্নাঞ্চলে, যেমন উপশহর, নিউমার্কেট, সপুরা, সাহেববাজার এবং বর্ণালী এলাকায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। এতে সাময়িক দুর্ভোগ দেখা দিলেও, বৃষ্টির প্রভাবে সামগ্রিকভাবে কৃষি ও জনস্বাস্থ্যে ইতিবাচক পরিবর্তন হয়েছে।


নগরীর উপশহর এলাকার বাসিন্দা শাহিনুর রহমান বলেন, আজকের বৃষ্টির কারণে আমাদের এলাকায় কিছুটা জলাবদ্ধতা হয়েছে, যা কিছুটা সমস্যা সৃষ্টি করেছে। তবে, এটি সাময়িক। এই বৃষ্টি কৃষি ও জনস্বাস্থ্যের জন্য খুবই ইতিবাচক। কৃষকদের জন্য এটি বড় ধরনের সহায়তা, কারণ বীজতলা তৈরিতে প্রয়োজনীয় পানি সরবরাহ করেছে। আমি মনে করি, সাময়িক দুর্ভোগ সত্ত্বেও এই বৃষ্টির উপকারিতা অনেক বড়।


নিউমার্কেট এলাকার বাসিন্দা রূপালী দাস বলেন, বৃষ্টির কারণে নিউমার্কেট এবং আশপাশের এলাকায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে, যা কিছুটা ভোগান্তির কারণ হয়েছে। রাস্তার পানি জমে গেছে এবং চলাচল কঠিন হয়ে পড়েছে।


বিবার্তা/বাবর/জেনি/এমজে

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2024 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com