
রাজশাহীর তানোরে নিখোঁজের ২০ দিন পর প্রেমিক চিত্তরঞ্জন পাল (২৭) এর বস্তাবন্দি মস্তকবিহীন গলিত লাশের হাড়হাড্ডি উদ্ধার করেছে থানা পুলিশ। নিহত চিত্তরঞ্জনের বাড়ি তানোর পৌর এলাকার পূর্ব রায়তান বড়শো (হাবিবনগর পালপাড়া গ্রামে। সে মনোরঞ্জন পালের পুত্র।
১৭ মে, শনিবার সকাল ৭ টার দিকে তানোর পৌর এলাকার হাবিবনগর গ্রামে বা নিহতের বাড়ির ৭০০ গজ দূরে শীবনদীর কচুরিপনার ভিতর থেকে মস্তকবিহীন গলিত বস্তাবন্দি লাশের হাড়-হাড্ডি উদ্ধার করা হয়।
ছেলের মস্তক ছিন্ন গলিত লাশ দেখে পাগলপারা হয়ে পড়েছে পিতা,মাতা। মাঝে মধ্যে চিৎকার দিয়ে অজ্ঞান হয়ে পড়ছেন। এলাকায় এমন লাশ দেখে বিস্ময় প্রকাশ করেন স্থানীয়রা। কেউ কেউ বলছেন কলকাতা টিভি চ্যানেলে ক্রাইম এলার্ট দেখে এমন নৃশংস খুন করেছে বলে ধারণা করছেন স্থানীয়রা। তবে মেয়ে ও তার ভাইয়ের শাস্তির দাবিতে সোচ্চার হয়ে উঠেছেন স্থানীয়রা।
জানা গেছে, তানোর পৌর এলাকার পূর্ব রায়তান বড়শো (হাবিবনগর পালপাড়া গ্রামের চিত্তরঞ্জন পালের সাথে একই গ্রামের কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থী কামনা রানীর সাথে দীর্ঘ প্রায় ৫/৬ বছর ধরে প্রেমের সম্পর্ক চলছিল। কামনা রানী স্বপন পালের মেয়ে। প্রেমের সম্পর্কের কারণে ছেলে বিয়ের প্রস্তাব দিলে মেয়ে রাজি থাকলেও তার ভাই ও পিতা রাজি ছিল না এবং মেয়ের ভাই একাধারে ছেলেকে হুমকি ধামকি দিত।
এরই এক পর্যায়ে গত এপ্রিল মাসের ২৭ তারিখ রোববার ভোরে ছেলে চিত্তরঞ্জন পাল নিখোঁজ হন। ওই দিন তার পিতা ছেলের সন্ধান চেয়ে থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন। যার জিডি নম্বর ১৩৫৩ তারিখ ২৭/৪/২০২৫। তারপর দিন সোমবার মেয়ে কামনা রানী তার ভাইকে নিয়ে চিকিৎসার কথা বলে বাড়ি থেকে বের হয়ে যান। তারপর থেকে তাদেরও কোন খোঁজ নাই।
তবে জিডির প্রেক্ষিতে গত ৩ মে তারিখে ওসি আফজাল হোসেনের সাথে মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানিয়েছিলেন, ছেলে চিত্তরঞ্জনের কোন খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। কিন্তু মেয়ে ও তার ভায় ঢাকার বাড্ডা এলাকায় আছে। কিন্তু ওই সময় তাদের কে রহস্য জনক কারনে আইনের আওতায় আনা হয় নি। এটা নিয়ে সৃষ্টি হয়েছে রহস্য।
ছেলের পিতা মনোরঞ্জন পাল গত ৩ মে তারিখে জানিয়েছিলেন, থানা পুলিশের কাছে ধরনা দিতেই আছি। পুলিশ বলছে ছেলের খোঁজ নেই। মেয়ে ও তার ভাই বাড্ডা এলাকায় আছে। আমার ছেলে রাজশাহী সিটি কলেজ থেকে বিএসসি অনার্স পাশ করেছে। আমার একটাই ছেলে। শনিবার আমার ছেলের বস্তাবন্দি মস্তকবিহীন গলিত লাশের হাড় হাড্ডি উদ্ধার করা হয়েছে।
আমার ছেলের তো কোন অপরাধ ছিল না। শুধু প্রেম করার অপরাধে তাকে জবাই করে হত্যা করা হয়েছে। হত্যার পর বস্তায় ভরে বিলের কচুরিপানার মধ্যে রাখা হয়েছে। কোন বিবেকবান মানুষ এধরনের কাজ করতে পাওে না। পুলিশ ঘটনাটি নিয়ে নানা তালবাহানা করেছিল। প্রথম থেকে মেয়ের পরিবারের সদস্যদের আইনের আওতায় আনা হলে আরো আগে ঘটনার মূল রহস্য বের হত। তিনি আরো জানান, গত ২৬ এপ্রিল শনিবার ছেলে আমি একসাথে রাতের খাবার খেয়ে ছাদে ঘুমাতে যায়। গভীর রাতে আমি রুমে চলে আসি। কিন্তু ভোরে ছাদে গিয়ে দেখি ছেলে নাই।
থানার অফিসার ইনচার্জ ওসি আফজাল হোসেন জানান, হাবিবনগর গ্রামের পূর্ব দিকে সকালের দিকে প্রচুর দুর্গন্ধ বের হয়। স্থানীয়রা কচুরিপানার ভিতর থেকে গন্ধে আসছে বলে থানা পুলিশ কে খবর দেয়। থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে স্থানীয়দের সহায়তায় কচুরিপানা পরিষ্কার করে বস্তা থেকে গন্ধ বের হয়। বস্তা খুলে মস্তকবিহীন গলিত লাশের হাড় হাড্ডি উদ্ধার করা হয়।
ধারণা করা হচ্ছে জবাই করে হত্যার পর বস্তায় ভরে বিলের কচুরিপানা ভিতরে লাশ রাখা হয়। পুলিশের সার্কেল এএসপি মির্জা আব্দুস সালাম ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। গলিত লাশের হাড় হাড্ডি ময়তা তদন্তের জন্য রামেক হাসপাতালে পাঠানো হবে এবং মামলা দায়ের করা হবে। মেয়ে ও তার ভাই সহ সবাই পলাতক আছে বলেও জানান তিনি।
প্রসঙ্গত, এঘটনায় গত ৪ মে বিভিন্ন পত্রিকা ও অনলাইন পোর্টালে প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয় এবং ফেসবুকে ছেলের পিতা মনোরঞ্জন পালের ভিডিও বক্তব্য প্রকাশিত হয়।
বিবার্তা/মোস্তাফিজুর/এসএস
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]