খাবারে চেতনানাশক ওষুধ মিশিয়ে একাধিক ছাত্রীকে ধর্ষণ
প্রকাশ : ১২ জুলাই ২০২৪, ১৭:০১
খাবারে চেতনানাশক ওষুধ মিশিয়ে একাধিক ছাত্রীকে ধর্ষণ
ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি
প্রিন্ট অ-অ+

ঠাকুরগাঁওয়ের জুসের সঙ্গে চেতনানাশক ওষুধ খাইয়ে একাধিক ছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে এক মাদরাসা সভাপতির বিরুদ্ধে। এ নিয়ে চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে এলাকাবাসীর মধ্যে।


সোমবার (৮ জুলাই) রাতে জেলার রাণীশংকৈল উপজেলার ধর্মগড় ইউনিয়নের ভরনিয়া গ্রামে ‘ভরনিয়া দারুল হাদীস ওয়াদ দাওয়াহ্ আস্-সালাফিয়্যা মাদরাসায় এ ঘটনা ঘটেছে।


ঘটনার পর থেকে প্রতিষ্ঠানটির সভাপতির আব্দুল করিম মুঠোফোন বন্ধ করে এলাকা ছেড়ে পালিয়েছেন। দীর্ঘদিন থেকেই প্রতিষ্ঠানটির সভাপতির দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন তিনি।


জানা গেছে, ২০১১ সালে স্থানীয়দের আর্থিক সহযোগিতায় রাণীশংকৈল উপজেলার ভরনিয়া গ্রামে ‘ভরনিয়া দারুল হাদীস ওয়াদ দাওয়াহ্ আস্-সালাফিয়্যা মাদরাসাটি গড়ে উঠে। মাদরাসাটির দুইটি শাখা রয়েছে। একটি ছাত্রীদের জন্য আবাসিক এবং অপরটি ছাত্রদের জন্য অনাবাসিক। আবাসিকে ১৫-১৬ জন কিশোরী রাত্রিযাপন করে। মাদরাসার সভাপতি আব্দুল করিম রাতের বেলা প্রায় সময় আবাসিকে যাতায়াত করতেন এবং মেয়েদের জুস খাওয়াতেন। জুসে মেশানো থাকতো চেতনানাশক ওষুধ। আর সেই ওষুধ খাইয়ে ছাত্রীদের ধর্ষণ করতেন তিনি।


গত ৪ জুলাই সব ছাত্রীদের ছুটি দেয়া হলেও তিনজন ছাত্রীকে সভাপতির নির্দেশে ছুটি দেয়া হয়নি। মাদরাসার সভাপতি আব্দুল করিম ওই রাতে গিয়ে ওই তিন কিশোরীকে ঘুমের ওষুধ মেশানো জুস খাওয়ান। কিশোরীরা ঘুমিয়ে গেলে গভীর রাতে মাদরাসার ভেতরে প্রবেশ করে এক কিশোরীকে ধর্ষণ করেন। বিষয়টি পরদিন জানাজানি হলে স্থানীয় লোকজন প্রতিবাদ জানান এবং আব্দুল করিমের বাড়ি ঘেরাও করেন।


ওই মাদরাসার শিক্ষার্থীরা জানায়, প্রতি বৃহস্পতিবার অনেক ছাত্রী বাড়ি চলে গেলেও ৪/৫ জন ছাত্রী মাদরাসায় রাত্রিযাপন করেন। আর এই সুযোগে ছাত্রীদের জন্য ফল, জুসসহ অন্যান্য খাবার নিয়ে আসতেন সভাপতি। কৌশলে তাদের খাওয়াতেন তিনি। খাবারে চেতনানাশক ঔষুধ মেশানো থাকায় থাকায় শিক্ষার্থীরা গভীর ঘুমে পড়েন। এ সুযোগে একরুম থেকে অন্যরুমে মই দিয়ে চলে যেতেন ছাত্রীদের রুমে। এরপর অচেতন ছাত্রীদের সঙ্গে অনৈতিক কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হন তিনি।


পরিচয় গোপন রাখার শর্তে এক ছাত্রী বলেন, সেদিন রাতে আমার গলায় ব্যথা থাকায় জুস খাইনি। আমি স্বাভাবিকভাবে ঘুমিয়ে গিয়েছিলাম। কিন্তু গভীর রাতে ওয়াশরুমে যাওয়ার জন্য লাইট জ্বালাতেই দেখি সভাপতি আব্দুল করিম বিবস্ত্র অবস্থায় রুমে ভিতরে অবস্থান করছেন। এরপরে তিনি আমাকে বিভিন্নভাবে ভয়ভীতি দেখিয়ে বলে এ কথা কাউকে যেন না বলি।


স্থানীয় ইউপি সদস্য মইন উদ্দীন কাবুল বলেন, বিষয়টি জানাজানি হলে আমরা এক শিক্ষককে ঘটনাটি তদন্তে ছাত্রী ও অভিভাবকদের সঙ্গে কথা বলতে বলি। তাদের সঙ্গে কথা বললে অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যায়। তারা সভাপতির বিচার চেয়েছেন।


অভিযোগের বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে মাদরাসার সভাপতি আব্দুল করিমের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।


এ বিষয়ে ধর্মগড় ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবুল কাশেম জানান, খবর পেয়ে আমি মাদরাসা পরিদর্শন করি। সেখানে গিয়ে জানতে পারি মাদ্রাসার সভাপতি আব্দুর করিম ফলের রসের সঙ্গে ঘুমের ওষুধ খাইয়ে একজন ছাত্রীকে ধর্ষণ করেছেন। তিনি এর আগেও এ রকম ঘটনা ঘটিয়েছেন বলে জানা গেছে। ওই ঘটনার পর বিক্ষুব্ধ লোকজন মাদরাসায় তালা ঝুলিয়ে দিয়েছেন।


মাদরাসার ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ আব্দুল মানান বলেন, তাৎক্ষণিক গিয়ে ঘটনার সত্যতা পাই। এ ঘটনার পর থেকে সভাপতি উধাও হয়ে গেছেন।


রাণীশংকৈল উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) রকিবুল হাসান বলেন, মাদরাসার সভাপতি আব্দুল করিমের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য ওসিকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।


রাণীশংকৈল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জয়ন্ত কুমার সাহা বলেন, এ ঘটনায় এক ছাত্রীর অভিভাবক থানায় একটি অভিযোগ দিয়েছে। আসামিকে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।


বিবার্তা/মিলন/লিমন

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2024 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com