
কুড়িগ্রামের চিলমারী উপজেলার স্বনামধন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থানাহাট পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের গণিতের শিক্ষক জিয়াউর রহমানের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীকে যৌন হয়রানির অভিযোগ উঠেছে। এ নিয়ে সপ্তম শ্রেণির ওই শিক্ষার্থীর অভিভাবক প্রধান শিক্ষক বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। তবে শিক্ষার্থীর সহপাঠীরা বলছেন ভিন্ন কথা।
অভিযোগের প্রেক্ষিতে ওই শিক্ষককে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। জবাবে অভিযোগ অস্বীকার করেছেন শিক্ষক জিয়া।
শিক্ষার্থীর অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, গত ২২ জুন প্রাইভেট পড়তে গেলে শিক্ষক জিয়াউর রহমান যৌন হয়রানির চেষ্টা করেন। ওই দিন একই ব্যাচে তার সহপাঠী স্বপ্নিল সরকার, হামিম সরকার নীরব ও সামিম আহমেদ প্রাইভেট পড়তে গিয়েছিল।
ব্যাচের শিক্ষার্থীদের দাবি, শিক্ষক জিয়াউর রহমানের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ আনা হয়েছে তা মিথ্যা। সেদিন প্রাইভেট শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত তারা একই কক্ষে অভিযোগকারী শিক্ষার্থীসহ একসঙ্গে বসেছিলেন। তেমন কোনো ঘটনা সেদিন ঘটেনি। নির্ধারিত সময়ে প্রাইভেট পড়া শুরু হলে পাঠদান শেষে তাদেরকে ছুটি দেয়া হয়। তারা একসঙ্গে প্রাইভেট স্থল থেকে বের হয়ে বাড়ি চলে যান। ওই শিক্ষার্থী ও শিক্ষক জিয়া পৃথকভাবে কোনো আলাপচারিতা করেননি।
ওই শিক্ষার্থীর সহপাঠী এস এম হামিম সরকার নীরব, স্বপ্নিল সরকার, শামীম আহমেদের সঙ্গে কথা হয় বিবার্তার। তারা বলেন, আমরা একসাথে চারজন রুমে ঢুকেছি এবং প্রাইভেট শেষ করে একসাথে বের হয়েছি। এর মধ্যে কেউ বাইরে বের হইনি। স্যারের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ তোলা হয়েছে সেটি নিঃসন্দেহে মিথ্যা ও বানোয়াট। কারণ ওইদিন এই ধরনের কোন ঘটনাই ঘটে নাই।
লিখিত অভিযোগে প্রাইভেট পড়ার কিছু সময় পর বাড়ি চলে যাওয়ার বিষয় দাবি করলেও পরের ব্যাচের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলেও দাবির সত্যতা পাওয়া যায়নি।
ঘটনার পরে ব্যাচের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা হলে তারা জানান, সেদিন একই সঙ্গে চারজনকে বের হতে দেখেছেন।
শিক্ষার্থী নওশিনের কাছে জানতে চাইলে তিনি জানান, আমরা ওই দিন ১০ মিনিট আগে প্রাইভেটে গিয়েছিলাম। সেদিন রুমের মধ্যে ভুক্তভোগী ওই শিক্ষার্থী ও তার সহপাঠী সহ চার জন উপস্থিত ছিলেন। তাদের প্রাইভেট শেষ হওয়ার পর তারা চারজন একসাথে বেরিয়ে এসেছে এরপর আমরা রুমে ঢুকেছি। তবে অন্য কোনো ঘটনা সম্পর্কে আমার জানা নাই।
৮ম শ্রেণির সানজিদা বিনতে শোভা নামের আরেক শিক্ষার্থী জানান, আমি সেদিন প্রাইভেট এ পনেরো মিনিট আগে গিয়েছিলাম এবং ভুক্তভোগী ওই মেয়েসহ তার তিন বন্ধুকে প্রাইভেট শেষ করে বার হইতে দেখেছে। তাছাড়া ওই মেয়ের সাথে স্যার পড়াশুনা বিষয়ে কথাও বলছিলেন। আমার জানা মতে সেদিন এমন ধরনের কোন ঘটনাই ঘটে নাই।
ভুক্তভোগী ওই শিক্ষার্থী বলেন, ঘটনার দিন সকালে প্রাইভেট শুরুর কিছু সময় আগে গিয়েছিলাম। আগের ব্যাচের সঙ্গে রুমে বসেছিলাম। আগের ব্যাচের পড়া শেষ হলে তারা বের হয়ে গেলে স্যার অশালীন কথাবার্তা বলেন। এসময় বাইরে থাকা সহপাঠী শামীম ভিতরে আসলে স্যার বাইরে ডাকেন এবং সে কিছু সময় বাইরে দাঁড়িয়ে ছিল। পরে স্যার বাইরে এসে কুপ্রস্তাব দেন।
তবে তার সহপাঠীদের দেয়া মন্তব্য মিথ্যা বলে দাবি করেন ভুক্তভোগী ওই শিক্ষার্থী।
ভুক্তভোগী ওই শিক্ষার্থীর মা বলেন, ঘটনার দিন প্রাইভেটে আমার মেয়ে একাই ছিল। আর বাইরে তিন জন ছেলে ছিল। আমার মেয়ে প্রতিদিন যেখানে বসে সেদিনও ওখানে গিয়ে বসে। এসময় শিক্ষক গিয়ে অশালীন কথাবার্তা বলেন। এরমধ্যে বাইরের থেকে যখন ছেলেগুলো ভিতরে ঢুকেছে, তখন ওই শিক্ষক দরজার দিকে গিয়ে টিউবওয়েল পাড়ে যেতে বলেন আমার মেয়েকে। যাওয়ার পর তিনি কুপ্রস্তাব দেন। আমি শোনার পরই স্কুলে লিখিত অভিযোগ দিয়েছি।
তবে শিক্ষার্থীর এমন অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছেন অভিযুক্ত শিক্ষক জিয়াউর রহমান। তিনি বলেন, এই অভিযোগ তার বিরুদ্ধে পরিকল্পিত ষড়যন্ত্র এবং সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. তৈয়ব আলী জানান, ম্যানেজিং কমিটির সভাপতির সাথে কথা বলে জরুরি সভার আয়োজন করা হবে। তারপর বিধি অনুসারে অভিযোগের তার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
বিবার্তা/রাফি/রোমেল/এমজে
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]