কক্সবাজার-৩ আসন
জমে উঠেছে নির্বাচন, প্রার্থীদের প্রচারণায় সরগম নির্বাচনি এলাকা
প্রকাশ : ০২ জানুয়ারি ২০২৪, ২২:২৭
জমে উঠেছে নির্বাচন, প্রার্থীদের প্রচারণায় সরগম নির্বাচনি এলাকা
কক্সবাজার প্রতনিধি
প্রিন্ট অ-অ+

নানা নাটকীয়তার মধ্য দিয়ে এগিয়ে চলছে কক্সবাজার ৩ আসনে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোটযুদ্ধ। গণসংযোগ, উঠান বৈঠক, প্রচারপত্র বিতরণ, পথসভা করে ব্যস্ত সময় পার করছেন প্রার্থীরা। কক্সবাজার সদর, রামু এবং ঈদগাঁও উপজেলা নিয়ে গঠিত পর্যটন, বঙ্গোপসাগরের সুনীল অর্থনীতির অমিত সম্ভাবনা, লবণশিল্প, চিংড়ি ও বিপুল মৎস্য সম্পদনির্ভর কক্সবাজারের এই আসনটির পরিচিতি, গুরুত্ব ও মর্যাদা বাংলাদেশ ও বহির্বিশ্বে অত্যন্ত বেশি। যে কারণে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আসনটির উপর স্পটলাইটের ফোকাসও বেশ শক্তিশালী।


দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এই আসনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী বর্তমান সাংসদ সাইমুম সরওয়ার কমল (নৌকা), জাতীয় পার্টি'র এড. মোহাম্মদ তারেক (লাঙল), বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির আবদুল আউয়াল মামুন (হাতঘড়ি) এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ব্যারিস্টার মিজান সাঈদ (ঈগল) নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। ভোটের মাঠে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীরা ভোটারদের দুয়ারে দুয়ারে সরব ভোট প্রার্থনা করে উত্তাপ ছড়ানোর চেষ্টা করলেও নৌকা ও ঈগল প্রতীকের মধ্যে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতার আভাস পাওয়া যাচ্ছে।


নৌকা ও ঈগল প্রতীকের উভয় প্রার্থীই মূলত আওয়ামী লীগ আদর্শের প্রার্থী হওয়ার কারণে তৃণমূল পর্যায়ে দলের অভ্যন্তরে নেতাকর্মীদের মাঝে দ্বিধাবিভক্তি ও বিভাজন প্রকট আকার ধারণ করেছে। ২০১৮ সালের নির্বাচনে নৌকার পক্ষে যেভাবে আওয়ামী লীগ ঐক্যবদ্ধভাবে মাঠে নেমেছিল এবার সেই ঐক্য ও সংহতি অনেকটা অনুপস্থিত।


সরেজমিনে দেখা যায়, নৌকার ভোট দুর্গে প্রচণ্ড শক্তি ও সমর্থন নিয়ে বাগড়া দিয়েছে ঈগল প্রতীকের অপেক্ষাকৃত নবীন ও তরুণ প্রার্থী ব্যারিস্টার মীজান সাঈদ। তিনি মনোয়নপত্র দাখিল থেকে শুরু করে নানা বাধা বিপত্তিকে লড়াকু মানসিকতায় সাহস ও ধৈর্যের সাথে মোকাবেলা করে ইতোমধ্যেই সাধারণ ভোটারদের মন জয় করে আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে। তৃণমূল আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মধ্যেও বড় একটি অংশ সরাসরি ঈগল প্রতীকের পক্ষে জনমনে ভোট প্রার্থনায় মাঠ চষে বেড়াতে দেখা যাচ্ছে। যা অনেকে নৌকার পালে ঈগলের ছোবল বলে মনে করছেন।


অন্যদিক রাজনীতির মাঠে ঝানু ও কৌশলী প্রার্থী হিসেবে বিগত দুই মেয়াদের সাংসদ সাইমুম সওয়ার কমল ক্ষমতাসীন দলের মনোনয়ন নিয়ে বেশ সুবিধাজনক অবস্থায় থাকলেও দিনদিন নৌকার সেই অবস্থা বদলাতে শুরু করেছে। সাইমুম সওয়ার কমল ২০০৮ সালে অনুষ্ঠিত ৯ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নবীন প্রার্থী হিসেবে নৌকা প্রতীকে নির্বাচন করে নির্বাচনী বৈতরণি পার হতে না পারলেও সুবক্তা ও কৌশলী প্রার্থী হিসেবে বেশ চমক দেখিয়েছিলেন।


পরবর্তীতে ২০১৪ সালে দশম ও ২০১৮ সালে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী হিসেবে নৌকা প্রতীকে নিয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।


রামু'র ঐতিহ্যবাহী চৌধুরী বংশের তৃতীয় প্রজন্মের উত্তারাধিকারী সাইমুম সওয়ার কমল পাকিস্তান আমলের গণপরিষদ সদস্য, বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও রাষ্ট্রদূত উসমান সরওয়ার আলম চৌধুরীর সন্তান হিসেবে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও মূল্যবোধে উদ্বুদ্ধ এবং জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের লালিত আদর্শের আওয়ামী ঘরানা এবং সাধারণ মানুষের অকুণ্ঠ সমর্থন আদায়ে সমর্থ হন। পরবর্তীতে রাজনৈতিক মাঠে তিনি ক্রমশ অভিজ্ঞ হয়ে উঠেন এবং নৌকার অপ্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী হিসেবে পরপর দু'বার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।


সেই ধারাবাহিকতায় ২০২৪ সালে অনুষ্ঠাতব্য জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও দলীয় মনোয়ন দৌড়ে সকল শঙ্কা ও অনিশ্চয়তাকে তুড়ি মেরে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী ১১প্রার্থীকে পিছনে ফেলে নৌকার বৈঠা হাতে তুলেছেন।


ভোটের মাঠে বিগত দুই মেয়াদে ১০ বছর সংসদ সদস্য থাকা অবস্থায় রামু, কক্সবাজার ও ঈদগাঁও উপজেলায় কি করেছেন কিংবা কি করেনি, তাঁর সফলতা ব্যর্থতার বিস্তৃত ফিরিস্তি নিয়ে বিরোধী পক্ষ সরব সমালোচনায় মুখর। যা ভোটারদের মাঝে নেতিবাচক এবং মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করার পাশাপাশি নৌকার ভোট দুর্গে বিভক্তি ও মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।


জাতীয় নির্বাচনকে উৎসবমুখর, প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক, অবাধ, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশ নিশ্চিতকরণে জাতীয় নির্বাচন কমিশনের অঙ্গীকার এবং মনোনয়ন বঞ্চিত দলের ক্লিন ইমেজের তরুণ ও যোগ্যপ্রার্থীদেরকে স্বতন্ত্রপ্রার্থী হিসেবে নির্বাচন যুদ্ধে অবতীর্ণ হতে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার ঘোষণা একতরফা নির্বাচনের পূর্বাভাষ ও আশঙ্কাকে সম্পূর্ণ রূপে বদলে দিয়েছে।


সেই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে নৌকা প্রার্থীর ভোট দুর্গকে দুমড়েমুচড়ে দিতে মাঠ-ঘাট-হাট, গ্রাম-গঞ্জ চষে বেড়াচ্ছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী সুপ্রীমকোর্টের সিনিয়র আইনজীবী ও বঙ্গবন্ধু আইনজীবী পরিষদের কেন্দ্রীয় নেতা ব্যারিস্টার মিজান সাঈদ। তিনি ভোটের মাঠে নবীন ও অনভিজ্ঞ হলেও আঞ্চলিকতার বিশাল একটি প্রভাব তাঁর পক্ষে নিয়ামক ভূমিকা পালন করছে।


বিশেষ করে ঈদগাঁও উপজেলা সংক্রান্ত মামলা পরিচালনায় চৌকস নৈপুণ্য প্রদর্শন করে স্বপক্ষে রায় নিয়ে আসা, একই এলাকায় তাঁর জন্ম, বেড়ে উঠা, প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষাগ্রহণ, শৈশব-কৈশোর কাটানো, মামাবাড়ির অবস্থান ইত্যাদি কারণে বৃহত্তর ঈদগাঁও'র সাধারণ মানুষ নিজেদের ভূমিপুত্র হিসেবে ঈগল প্রতীকের মীজান সাঈদকে বেশ ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে সাদরে গ্রহণ করেছে এবং নির্বাচনি লড়াইয়ে অকুণ্ঠ সমর্থন, সাহস, শক্তি ও প্রেরণা যুগিয়ে যাচ্ছে। একইভাবে কক্সবাজার সদর উপজেলার ভারুয়াখালী ইউনিয়নে তাঁর পৈত্রিক নিবাস। সেই অঞ্চলের প্রভাবশালী সিকদার গোষ্ঠীর সন্তান হিসেবে ওই ইউনিয়নের একক ও নিরঙ্কুশ সমর্থনও তাঁর থলিতে বেশ শক্তপোক্ত অবস্থান নিয়েছে।


নৌকা ও ঈগলের প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ভোটযুদ্ধে হার জিত যে পক্ষেই যাক না কেন, ভোটের ফলাফলে দল হিসেবে আওয়ামী লীগের বিজয় শতভাগ নিশ্চিত, একথা নির্দ্বিধায় বলা যায়।


ভোটবিমুখ সাধারণ মানুষকে ভোটকেন্দ্রে আনার চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে ভোটযুদ্ধের এই লড়াই প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক, শান্তিপূর্ণ, অবাধ ও উৎসবমুখর পরিবেশে শেষ হলেই জিতে যাবে সাধারণ মানুষ। বিজয়ের বরমাল্য যিনিই জিতুক, অন্তত সাধারণ জনগণ যেন কভু না হারে, এটাই এখন সবার প্রত্যাশা।


বিবার্তা/ফরহাদ/এমজে

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2024 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com