ভরা মৌসুমেও আশুগঞ্জ ধান মোকামে ভাটা
প্রকাশ : ২৯ ডিসেম্বর ২০২৩, ১০:৫০
ভরা মৌসুমেও আশুগঞ্জ ধান মোকামে ভাটা
ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি
প্রিন্ট অ-অ+

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ দেশের বৃহত্তম ধানের বাজার মোকাম। সুনামগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ, সিলেট, হবিগঞ্জ ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিস্তীর্ণ হাওর অঞ্চল থেকে কৃষকেরা তাদের উৎপাদিত ধান নিয়ে আসেন আশুগঞ্জ মোকামে। প্রতি বছর এ সময় ধান ব্যাপারী ও ক্রেতাদের হাঁকডাকে মুখরিত থাকে বৃহৎ এ ধানের মোকাম। এ বছরও বাজারে নতুন ধান আসা শুরু করলে ব্যবসায়ীরা ধান তেমন কিনছেন না। কারণ ব্যবসায়ীদের কাছে গোডাউনে পর্যাপ্ত ধান মজুত রয়েছে। এতে করে ধান নিয়ে আসা ব্যবসায়ীরা ন্যায্য মূল্য পাচ্ছেন না। কম দামে ধান বিক্রয় করতে হচ্ছে ধান ব্যবসায়ীদের।


দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন মৌসুমেও সংকটে আশুগঞ্জ ধানের মোকাম, স্থবির চালের বাজারও। ন্যায মূল্যে ধান বিক্রিয় করবে বলে সুনামগঞ্জের দিরাই থেকে আবু হানিফ প্রায় ৬০০ মণ নতুন ধান নিয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ মোকামে এসেছেন। কিন্তু যে দরে কৃষকের কাছ থেকে ধান কিনেছেন, তার চেয়ে প্রায় ১০০ টাকা কমে কেনাবেচা হচ্ছে মোকামে। এর ফলে বড় অঙ্কের লোকসানের আশঙ্কা করছেন হানিফ।


মূলত এ দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে বিএনপি-জামায়াতের অবরোধ ও হরতাল কর্মসূচির কারণে চালের বাজারে মন্দাভাব বিরাজ করছে। এর ফলে আমনের ভরা মৌসুমেও আশুগঞ্জ মোকামে ধানের বেচাকেনা কমেছে প্রায় ৮০ শতাংশ।


সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায় , ব্রাহ্মণবাড়িয়ার প্রায় আড়াইশ চালকল থেকে ঢাকা, চট্টগ্রাম ও সিলেট অঞ্চলে প্রতিদিন ১০ থেকে ১২ কোটি টাকার চাল বাজারজাত করা হয়। কিন্তু নভেম্বরের শেষ দিক থেকে ক্রমান্বয়ে কমছে চালের কেনাবেচা। নির্বাচন ঘিরে রাজনৈতিক পরিবেশ আরও অস্থিতিশীল হওয়ার আশঙ্কায় পাইকারিরা চাল নিচ্ছেন না। এছাড়া সরকারিভাবে খোলাবাজারে চাল বিক্রির কারণে বাজারে চালের চাহিদা কমেছে।


নির্বাচন ঘিরে অস্থিতিশীল পরিবেশের শঙ্কায় পাইকারিরা চাল নিচ্ছেন না। দিনে ১২ কোটি টাকার চাল কেনাবেচা হলেও এখন হচ্ছে মাত্র ২ কোটি। চালকল মালিকরা ধান কম কেনায় লোকসানের আশঙ্কায় ধান ব্যবসায়ীরা।


খোঁজ নিয়ে জানা যায় , আশুগঞ্জের মেঘনা নদীর তীরে অবস্থিত ধানের হাটটি দেশের পূর্বাঞ্চলের সবচেয়ে বড় মোকাম হিসেবে পরিচিত। মৌসুমে প্রতিদিন গড়ে ১ লাখ মণ ধান কেনাবেচা হয়। বাকি সময় যা অর্ধেকে নামে। তবে সরবরাহ ঘাটতির কারণে মোকামে ধানের সংকট তৈরি হয়েছিল- যা প্রায় ৪ মাস স্থায়ী হয়।


যদিও, গত নভেম্বরের শেষ দিক থেকে এ মোকামে আমন মৌসুমের নতুন ধান উঠা শুরু করে। বর্তমানে পুরনো ধানের মধ্যে বিআর-২৯ ও হীরা ধান এবং নতুন বিআর-৩৯ ও বিআর-৪৯ জাতের ধান পাওয়া যাচ্ছে মোকামে। এর ফলে ধানের যে সংকট ছিল সেটি অনেকাংশেই কেটে গেছে। মূলত জেলার আড়াইশ চালকলে যায় মোকামের ধান।


বর্তমানে আশুগঞ্জ মোকামে বিআর-২৯ জাতের ধান প্রতিমণ ১ হাজার ২৩০ টাকা-১ হাজার ২৪০ টাকা এবং হীরা ধান ১ হাজার ১৫০ টকা-১ হাজার ১৬০ টাকা দরে কেনাবেচা হচ্ছে। এছাড়া বিআর-৩৯ জাতের ধান মানভেদে ৮০০ টাকা থেকে ৯০০ টাকা এবং বিআর-৪৯ ধান কেনাবেচা হচ্ছে ১ হাজার ৫০ টাকা দরে।তবে বাজারে চালের কেনাবেচা কম হওয়ার কারণ দেখিয়ে চালকল মালিকরা মোকাম থেকে ধান কিনছেন কম। বর্তমানে প্রতিদিন ১৫ থেকে ২০ হাজার মণ ধান কেনাবেচা হচ্ছে মোকামে। যা মৌসুমের তুলনায় প্রায় ৮০ শতাংশ কম। এর ফলে মোকামে এখন ধানের দরও কিছুটা নিম্নমুখী। এতে করে লোকসানের শঙ্কায় ধানের ব্যবসায়ীরা।


সুনামগঞ্জের দিরাই থেকে আসা ধান ব্যবসায়ী আবু হানিফ বলেন, আমার প্রতিমণ ধানে ১০০ টাকা করে লোকসান হবে। এভাবে লোকসান দিয়ে তো আর ব্যবসা করতে পারব না। পরিস্থতি এমন চলতে থাকলে কৃষকের কাছ থেকে আর ধান কিনব না। আর আমরা ব্যবসায়ীরা যদি ধান না কিনি তাহলে কৃষকরাও ক্ষতিগ্রস্ত হবেন।


সুনামগঞ্জের দিরাইয়ের আরেক ধান ব্যবসায়ী মো.কামাল জানান, কৃষকের বাড়ি বাড়ি গিয়ে ধান কিনে নৌকায় করে নিয়ে আসেন মোকামে। নৌকা ভাড়াসহ আনুষাঙ্গিক মিলিয়ে প্রতি মণ ধানে প্রায় ১০০ টাকা খরচ হয়েছে। যে ধান ৯০০ টাকা মণ দরে কিনেছেন, সে ধান মোকামে ৮০০ টাকায় কেনাবেচা হচ্ছে। চালকল মালিকরা ধান নিতে চান না। ফলে বাধ্য হয়ে লোকসান দিয়েই ধান বিক্রি করতে হচ্ছে।


তবে মোকাম বাজারের চালকল মালিকরা বলছেন, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফশিল ঘোষণার পর থেকে রাজনৈতিক পরিবেশ অস্থিতিশীল হতে শুরু করে। এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে চালের বাজারে। ঢাকা, চট্টগ্রাম ও সিলেট অঞ্চলের যেসব পাইকার ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে চাল নিতেন তারা এখন চাল নিতে চাইছেন না। ফলে অধিকাংশ চালকলে প্রচুর পরিমাণ চাল অবিক্রিত রয়ে গেছে।


এব্যাপারে জানতে চাইলে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা চালকল মালিক সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক মো. উবায়দুল্লাহ বলেন, এমনিতেই চালের বাজারের সঙ্গে ধানের বাজারের কোনো সমন্বয় নেই। এর মধ্যে চালের বিক্রি কমায় প্রতিটা মিলেই প্রচুর পরিমাণ চাল অবিক্রিত অবস্থায় রয়েছে। চলমান হরতাল-অবরোধের পাশাপাশি সরকারিভাবে খোলাবাজারে চাল বিক্রির কারণেও বাজারে চালের কেনাবেচা কমেছে।


উল্লেখ করেন মো. উবায়দুল্লাহ বলেন, নির্বাচন ঘিরে রাজনৈতিক পরিস্থিতি কী হয় না হয় সেটা নিয়ে পাইকারদের মাঝে একটা আতঙ্ক বিরাজ করছে। তাই তারা চাল নিচ্ছেন না। ফলে স্বাভাবিকভাবে চাল বিক্রি করতে না পারায় আমরাও মোকাম থেকে ধান কেনা কমিয়ে দিয়েছি। তবে আশা করছি নির্বাচনের পর যদি রাজনৈতিক পরিস্থিতি স্থিতিশীল হয়, তাহলে ধান ও চালের বাজার আবার স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরবে।


বিবার্তা/নিয়ামুল/মাসুম

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com