লোকসান নিয়ে ফের চালু হলো ঠাকুরগাঁও চিনিকল
প্রকাশ : ২৩ ডিসেম্বর ২০২৩, ১৪:৫০
লোকসান নিয়ে ফের চালু হলো ঠাকুরগাঁও চিনিকল
ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি
প্রিন্ট অ-অ+

শতকোটি টাকা লোকসান ও আড়াইশ কোটি টাকার ঋণের বোঝা মাথায় নিয়ে আবারো চালু হলো ঠাকুরগাঁও চিনিকলের ৬৬তম আখ মাড়াই কার্যক্রম।


শুক্রবার, ২২ ডিসেম্বর বিকেলে মিলটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক শাহজাহান কবির এর সভাপতিত্বে ডোঙ্গায় আখ নিক্ষেপ করে চলতি মাড়াই মৌসুমের উদ্বোধন করেন ঠাকুরগাঁও জেলা প্রশাসক (ডিসি) মাহাবুবর রহমান।


চিনিকল সূত্র জানায়, ২০২৩-২০২৪ মাড়াই মৌসুমে চিনিকলে আখ মাড়াইয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৭০হাজার মে. টন। চিনি আহরণের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৬.৫০%। চিনি উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৪ হাজার ৫৫০মে. টন। আর রোপণ মৌসুমে দন্ডায়মান আখের পরিমান ৪ হাজার ৬১০ একর।


রংপুর অঞ্চলের একমাত্র সচল ও বৃহত্তর চিনিকল ঠাকুরগাঁও সুগার মিল’স। ১৯৫৮-৫৯ মৌসুমে মিলটি আখ মাড়াই কার্যক্রমের মধ্য দিয়ে যাত্রার পর থেকেই লোকসানের বোঝা টানছে। ফলে মিলটি অন্যান্য বছরের মতো চলতি মৌসুমেও কাঙ্ক্ষিত আখ মাড়াই কার্যক্রম ব্যাহত হওয়ার শঙ্কায় রয়েছে। বেশ কয়েক বছর ধরে সরবরাহ করা আখের মূল্য পরিশোধ করতে না পারায় ভোগান্তির শিকার হন চাষিরা। এতে তাদের আখ চাষে আগ্রহ কমে যাচ্ছে।


ঠাকুরগাঁও সুগার মিলের ২ হাজার ৮০০ একর নিজস্ব জমি রয়েছে। এর মধ্যে ২ হাজার ৪০০ একর জমি ব্যবহার করা হয় আখ উৎপাদনে। এ ছাড়াও বাইরের চাষিদের কাছ থেকে প্রায় ৫ হাজার ৮০০ একর জমির ফসল আসে মিলটিতে। এখানে ১ হাজার ১৭৫ জন সেটআপ শ্রমিকের বিপরীতে বর্তমানে কর্মরত রয়েছে ৮৪৪ জন। এদের মধ্যে স্থায়ী শ্রমিক রয়েছে ৪৮০ জন এবং মৌসুমি শ্রমিক ৩৬৩ জন।


আখ চাষিদের অভিযোগ, আখের আবাদ বাদ দিয়ে সুগারমিল কর্তৃপক্ষ তাদের জমিগুলোতে আলু, মিস্টি কুমড়াসহ বিভিন্ন চাষাবাদ করছে অথচ আখ চাষ করতে চাপ দিচ্ছেন চাষিদের। অন্যদিকে আখ সররাহের সময় সময়মত অর্থ পরিশোধ না করায় বিপাকে পড়েন চাষিরা। ফলে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন তারা। মিল কর্মকর্তাদের গাফিলতিতেই লোকসান আর ঋনের পাল্লা ভাড়ি হচ্ছে বলে দাবি কৃষকের।


কৃষক আলতাফ হোসেন বলেন, আমি প্রতি বছর দুই থেকে চার একর জমিতে আখ চাষ করি। ডিসেম্বরে মিল চালু হয়, তারপর রসিদ পাই। প্রতিদিন দিনমজুর নিয়ে আখ ঝুড়তে হয়, তাদের নিজের পকেট থেকে মজুরি দিতে হয়। আখ মিলে দিলে আমরা টাকা পাই দুই বা তিন মাস পর। এতে আমাদের চলতে কষ্ট হয়। যদি আখ দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে টাকা পাওয়া যায়, তাহলে অনেকে আখ চাষে ফিরে আসবেন।


আখচাষি জব্বার বলেন, বাজারে যেমন চিনির দাম কিন্তু আমাদের আখের দাম বাড়েনি। আখের দাম বাড়াতে হবে। সময়মতো আখের টাকা পরিশোধ পাইলে যেসব কৃষক আখ চাষ বাদ দিয়েছেন। মলিন নামে আরেক আখচাষি বলেন, প্রতি বছর মিল থেকে আমরা সার-বীজ পাই। তবে কয়েক বছর ধরে সার পাচ্ছি অনেক কম। তা দিয়ে আখের আবাদ ভালো হচ্ছে না। দিন দিন আখের আবাদ কমে যাচ্ছে। কর্তৃপক্ষ যদি একটু কৃষকদের প্রতি সু-নজর দেয়, তাহলে আমরা উপকৃত হতাম।


২০২০ সালে ২৯ সেপ্টেম্বর রাষ্ট্রায়ত্ত চিনিশিল্প বাঁচাতে সাত দফা দাবি জানিয়ে আন্দোলনে নেমেছিল জেলাবাসী। আন্দোলনের দাবিগুলো ছিলো: ঠাকুরগাঁও চিনিকল লাভজনক করতে আধুনিকায়ন ও ডিস্টিলারি ইউনিট স্থাপন, বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র স্থাপন, সুগার বিট প্রকল্প দ্রুত বাস্তবায়ন, শ্রমিকদের বকেয়া বেতন ও অবসরপ্রাপ্ত শ্রমিকদের গ্র্যাচুইটির টাকা পরিশোধ, আখ চাষিদের টাকা সময়মতো পরিশোধসহ সারা বছর চিনিকল চালু রাখতে সেগুলোকে অশোধিত চিনি আমদানির অনুমতি দিয়ে পরিশোধন কারখানা স্থাপন।


এ বিষয়ে মিলটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক শাহজাহান কবির লোকসান ও ঋণের কথা স্বীকার করে জানান, বর্তমানে চিনির দাম ভাল থাকায় ঋণ ও লোকসানের বোঝা কমছে। চাষিরা আখ উৎপাদন বাড়ালে মিলটি ভালভাবে চালিয়ে নেয়া সম্ভব। তাদের দাবি পূরণে সব সময় আন্তরিকতা থাকে বলে জানান তিনি।


এ সময় শিল্প মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব শামিমা সুলতানা, জেলা পুলিশ সুপার উত্তম প্রসাদ পাঠকসহ আরো অনেকেই উপস্থিত ছিলেন।


বিবার্তা/মিলন/জবা

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com