ভারী গোলাগুলির শব্দে আবার কেঁপে উঠল তুমব্রু-ঘুমধুম সীমান্ত
প্রকাশ : ১৩ নভেম্বর ২০২৩, ২১:৫০
ভারী গোলাগুলির শব্দে আবার কেঁপে উঠল তুমব্রু-ঘুমধুম সীমান্ত
বান্দরবান প্রতিনিধি
প্রিন্ট অ-অ+

বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তের ঘুমধুম-তুমব্রু সীমান্ত আবারও কেঁপে উঠেছে। সোমবার (১৩ নভেম্বর) দুপুর ২টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত থেমে থেমে অন্তত ৭ বার বিকট শব্দে পুরো এলাকা কেঁপে ওঠে। বাংলাদেশ সীমান্তের তুমব্রু লাগোয়া রাইট ক্যাম্প এলাকা থেকে এ বিস্ফোরণের শব্দ ভেসে আসে।


এদিকে বিস্ফোরণের এই ঘটনার পর তুমব্রু, বাইশফাড়ি, ঘুমধুম সীমান্ত এলাকায় ভারী গোলাগুলির শব্দে স্থানীয়দের মধ্যে আবারও আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। সীমান্ত এলাকায় বসবাস করা ২০ পরিবারকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে আনা হয়েছে।


আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নির্ভরযোগ্য একটি সূত্র জানিয়েছে, গোলাগুলি মিয়ানমারের অভ্যন্তরে হচ্ছে। তারপরও বাংলাদেশের এপারে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে।


স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা জানান, তুমব্রু খাল দুই দেশের সীমানা ভাগ করেছে। বাংলাদেশের এপারে তুমব্রু গ্রাম, ওপারে মিয়ানমারের তুমব্রু রাইট ক্যাম্প এলাকা। ওই এলাকাটি গত এক বছরের বেশি সময় ধরে মিয়ানমারের স্বাধীনতাকামী আরাকান আর্মির নিয়ন্ত্রিত এলাকা হিসেবে পরিচিতি।


গত বছর এই এলাকায় মিয়ানমার সীমান্তরক্ষী বাহিনীর সঙ্গে ব্যাপক সংঘর্ষ হয়। প্রায় এক বছর থেমে থাকার পর সোমবার দুপুর থেকে ভারী অস্ত্র বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায়। এই ঘটনায় তুমব্রু, বাইশফাড়ি ও ঘুমধুম সীমান্ত এলাকায় বাংলাদেশ বর্ডার গার্ডের নিয়মিত টহলগুলো আরও জোরদার করা হয়েছে।


নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা নির্বাহী অফিসার রোমেন শর্মা জানান, মিয়ানমারের অভ্যন্তরে গুলির শব্দ শোনা গেছে বলে জনপ্রতিনিধিরা জানিয়েছেন। তবে বাংলাদেশের এপারে কোন ধরনের প্রভাব পড়েনি।


ঘুমধুম ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মো. জাহাঙ্গীর আজিজ বলেন, আজ দুপুরে গোলাগুলির শব্দ শুনতে পেয়েছি। এতদিন সীমান্ত এলাকা শান্ত ছিল। ৩৪ ও ৩৫ নম্বর সীমান্ত পিলারের মাঝামাঝি এলাকায় এই গোলাগুলির শব্দ শোনা গেছে। হঠাৎ বিস্ফোরণ হলে স্বাভাবিকভাবে সীমান্তের মানুষ আতঙ্কিত হয়।


এসব তথ্য স্বীকার করে নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম ইউনিয়ন পরিষদের ১ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য শফিকুল ইসলাম বলেন, দীর্ঘদিন পর তুমব্রু সীমান্তে আবারও মিয়ানমারের ভারী গুলির শব্দ পাওয়া যাচ্ছে। এ কারণে সীমান্তের এপারে বসবাসকারীরা ভয়ভীতির মধ্যে রয়েছেন। গুলি ছোড়ার পর জনসাধারণের মনে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। তবে আমার এলাকার সীমান্তের খুব কাছাকাছি বসবাস করা ২০ পরিবারকে সরিয়ে এনে নিরাপদে রাখা হয়েছে।


সীমান্তে বসবাসকারী মানুষদের ভাষ্য, সোমবার বিকাল থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত তুমব্রু সীমান্তে থেমে থেমে ভারী গুলির বিকট শব্দ শুনতে পেয়েছেন তারা। তুমব্রু সীমান্তের ঘুমধুমের বাজারপাড়ায়, বাইশ ফাঁড়িসহ তুমব্রু রাইট এলাকায় মিয়ানমারের ভারী গুলির শব্দ পাওয়া যাচ্ছে। এই ঘটনায় আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন তারা।


এ বিষয়ে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রোমেন শর্মা বলেন, তুমব্রু সীমান্তে রাখাইনে গোলাগুলির খবর স্থানীয় জনপ্রতিনিধির কাছ থেকে জেনেছি। এ বিষয়ে আমাদের সীমান্তবাহিনী কাজ করছে। তবে সীমান্তে বসবাসকারীদের আতঙ্কিত না হতে বলা হচ্ছে।


তুমব্রু সীমান্তের বাসিন্দা শহিদুল মিয়া বলেন, বিকাল থেকে বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তে আবারও ভারী গুলিবর্ষণ হচ্ছে। গুলির শব্দ অনেক বেশি। মর্টারশেলের আওয়াজের মতো মনে হচ্ছে। এ ঘটনায় সীমান্তের বসবাসকারীরা ভয়ভীতির মধ্যে রয়েছে।


এদিকে, সীমান্তরক্ষী বাহিনী বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ-বিজিবির সঙ্গে যোগাযোগে করে এ বিষয়ে কোনও বক্তব্য পাওয়া যায়নি।


প্রসঙ্গত, গত বছরের ২৮ আগস্ট বান্দরবানের এই তুমব্রু সীমান্তে মিয়ানমার থেকে দুটি অবিস্ফোরিত মর্টার শেল এসে পড়েছিল। এরপর ৩ সেপ্টেম্বর মিয়ানমারের দুটি যুদ্ধবিমান ও ফাইটিং হেলিকপ্টার থেকে ছোড়া দুটি গোলা ঘুমধুম ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ড এলাকায় পড়ে। সেগুলো অবিস্ফোরিত থাকায় হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। এরপর থেকে থেমে থেমে মিয়ানমার সীমান্ত এলাকায় উত্তেজনা বাড়তে থাকে।


ওই সময় তুমব্রু ও ঘুমধুম নো ম্যান্স এলাকা ঘেষে বসবাস করা মানুষকে নিরাপদে রাখা হয়েছিল। এমন পরিস্থিতিতে তুমব্রু কোণার পাড়ায় আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের মাঝে মিশে যায় রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মির (আরসা) সন্ত্রাসীরা। পরবর্তীতে আরসার দেওয়া আগুনে তুমব্রু ক্যাম্পটিতে ৬৩০টি পরিবারে সাড়ে চার হাজারের বেশি রোহিঙ্গা বাস্তুচ্যুত হয়। পরে তাদের সীমান্তের শূন্যরেখা থেকে সরিয়ে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে স্থানান্তরিত করা হয়। বর্তমানে পুরো এলাকা বাংলাদেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিবি কর্তৃক কড়া নজরদারি ও পাহারায় রয়েছে।


এদিকে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের জন্য বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার তুমব্রু এলাকায় নির্মিত হচ্ছে প্রি-ট্রানজিট ক্যাম্প ও রিপেট্রিয়েশন ক্যাম্প। ইতোমধ্যে ক্যাম্পের জন্য ঘুমধুম ইউনিয়নে তিন একর ৫০ শতক জায়গায় কাজ চলছে। এই ক্যাম্প থেকেই রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে প্রত্যাবাসন করার কথা রয়েছে। এমন সময় হঠাৎ করে গোলাগুলির শব্দে নানা আলোচনা জম্ম দিয়েছে সীমান্ত এলাকায়।


বিবার্তা/লিমন

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com