স্বর্ণ ব্যবসায়ী অর্জুন ভাদুড়ি হত্যা মামলায় নারীসহ ৯ ডাকাতের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র
প্রকাশ : ০৮ নভেম্বর ২০২৩, ১২:৫৪
স্বর্ণ ব্যবসায়ী অর্জুন ভাদুড়ি হত্যা মামলায় নারীসহ ৯ ডাকাতের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র
ফেনী প্রতিনিধি
প্রিন্ট অ-অ+

ফেনীর সোনাগাজীতে দিন দুপুরে ডাকাতির সময় স্বর্ণ ব্যবসায়ী অর্জুন ভাদুড়ি হত্যার চাঞ্চল্যকর মামলায় অভিযোগপত্র দাখিল করেছেন পুলিশ।


ঘটনার এক বছর পর মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পরিদর্শক আবুল কাশেম ৬ নভেম্বর, সোমবার ফেনীর সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেন।


অভিযোপত্রে নারীসহ ৯ ডাকাতের সম্পৃক্ততার তথ্য উঠে এসেছে। যারা অভিযুক্ত হয়েছেন তারা হলেন ইয়াসিন মাল, রুবেল হাওলাদার, খালেদ হোসেন মিলন ,শাওন হাওলাদার, মোহাম্মদ মনির, জাফর হাওলাদার, দুলাল চৌধুরী, রাকিব মাল ও শারমিন জাহান হ্যাপি।


এরমধ্যে দুলাল চৌধুরী ও খালেদ হোসেন মিলন ফেনীর বাসিন্দা। অন্যরা পিরোজপুর জেলার বাসিন্দা এবং তারা পরস্পরের আত্মীয়।


অভিযোগপত্রে ঘটনার মূল পরিকল্পনাকারী হিসেবে সোনাগাজীর স্থানীয় বাসিন্দা ঢাকার স্বর্ণ ব্যবসায়ী দুলাল চৌধুরীর নাম উঠে এসছে। ঢাকা কেরানীগঞ্জের স্বর্ণ ডাকাতি মামলায় একত্রে কেন্দ্রীয় কারাগারে থাকার সময় দুলাল চৌধুরী ও ফেনী সদর উপজেলার ধর্মপুর ইউনিয়নের খালেদ হোসেন মিলন পরিকল্পনা করেন । পরে তারা জামিনে মুক্তি পেয়ে বাকি আসামিদের সাথে একত্রিত হয়ে ডাকাতি সংগঠিত করেন।


অভিযোগপত্রে উঠে এসেছে, পরিকল্পনাকারী দুলাল চৌধুরী বাড়ি নিহত অর্জুন ভাদুড়ি পাশ্ববর্তী এলাকায়। স্থানীয় কারামতিয়া বাজারে দুলাল চৌধুরীর দুই ভাইয়ের স্বর্ণের দোকান রয়েছে।


ব্যবসায়িক সততার কারনে অর্জুন ভাদুড়ি এলাকায় সুনাম থাকায় দুলাল চৌধুরীর ভাইদের ব্যবসায় মন্দাভাব চলতে থাকে। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে দুলাল চৌধুরী ডাকাতির পরিকল্পনা ও বাস্তবায়ন করেন।


তদন্তদকারী কর্মকর্তা পরিদর্শক আবুল কাশেম বলেন, কেরানীগঞ্জের স্বর্ণ দোকানে ডাকাতি মামলার আসামি ইয়াসিন মাল, শাওন হাওলাদার, রাকিব মাল বরিশাল কারাগারে বন্দি ছিলেন। পরে তারা জামিনে মুক্তি পেয়ে ঢাকা আসেন। মূল পরিকল্পনাকারী দুলাল চৌধুরী তার সহযোগী খালেদ হোসেন মিলনের মাধ্যমে ডাকাত ইয়াসিন মালের সাথে যোগাযোগ করে ডাকাতির পরিকল্পনা চূড়ান্ত করেন। পরিকল্পনার অংশ হিসেবে ঘটনার দুই মাস আগে দুলাল চৌধুরী ও খালেদ হোসেন ঢাকা থেকে সোনাগাজীতে এসে নিহত অর্জুন ভাদুড়ির দোকান সহ জমাদারবাজার রেকি করেন। পরে ডাকাতিতে অংশ নিতে পিরোপুর থেকে মোটরসাইকেল সহ লঞ্চযোগে চাঁদপুর হয়ে ফেনীতে পৌঁছান জাফর হাওলাদার ও শাওন হাওলাদার। অপর ডাকাতদের সাথে খালেদ হোসেন মিলনের বাড়িতে অবস্থান নেন। ঘটনা দিন দুইটি মোটরসাইকেলে ছয় জন ফেনীর লালপোল হয়ে সোনাগাজীতে পৌঁছে প্রথমে জমাদারবাজারে এলোপাতাড়ি বোমা ফাটিয়ে আতংক তৈরি করেন। পরে তারা অর্জুর ভাদুড়ির স্বর্ণ দোকানে গিয়ে মালামাল লুট করে।


এসময় অর্জুন ভাদুড়ি বাধা দিলে তাকে কুপিয়ে গুরতর জখম করে ফের বোমা ফাটিয়ে মোটররসাইকেরে করে ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন। তারা কুঠিরহাট বাজার হয়ে ফেনীর মহিপাালের সার্কিট হাউজ রোড়ে একত্রিত হয়ে খালেদ হোসেন মিলনের বাড়িতে অবস্থান নিয়ে একই দিন রাতে ঢাকায় চলে আসে। ডাকাতি করা স্বর্ণলংকার ডাকাত ইয়াসিন মালের স্ত্রী শারমিন জাহান হ্যাপির কাছে গচ্ছিত রাখেন। পরে শারমিন স্বর্ণালংকার বিক্রি করে সবার মাঝে ভাগভাটোয়ারা করে দেন।


তিনি আরো বলেন, এ মামলায় অভিযোপত্রে অন্তভুক্ত চার আসামি জাফর হাওলাদার, মোহাম্মাদ মনির, দুলাল চৌধুরী, রাকিব মাল আদালতে নিজেদের দায় স্বীকার করে জবানবন্দি দেন।


তদন্তকালে পুলিশ ডাকাতির কাজে ব্যবহৃত দুইটি মোটর সাইকেল ও শারমিন আক্তারের মুন্সিগঞ্জের বাসা থেকে ২৫ হাজার টাকা উদ্ধার করেন। অভিযুক্ত ৫ জন কারাগারে আটক রয়েছে, বাকি ৪ আসামি পলাতক রয়েছে।


প্রসঙ্গত গত বছরের ৩০ অক্টোবর সোনাগাজী উপজেলার চরছান্দিয়া ইউনিয়নের জমাদারবাজারের অর্জুন ভাদুড়ির স্বর্ণ দোকানে দিন দুপুরে ডাকাতি সংগঠিত হয়। ওই দিন ডাকাতের হামলায় গুরুতর আহত অর্জুন ভাদুড়িকে চিকিৎসার জন্য চট্টগ্রামের একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরদিন তার মেয়ের জামাই রনি বনিক বাদি হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে সোনাগাজী মডেল থানায় মামলা দায়ের করেন। চিকিৎসাধীন থাকার ১০ দিনের মাথায় অর্জুন ভাদুড়ির মৃত্যু হয়।


বিবার্তা/রিপন/জবা

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com