ভাগ্য বদলাতে সৌদি আরবে গিয়ে গৃহকর্মীর রহস্যজনক মৃত্যু
প্রকাশ : ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ২০:১৮
ভাগ্য বদলাতে সৌদি আরবে গিয়ে গৃহকর্মীর রহস্যজনক মৃত্যু
ঝিনাইদহ প্রতিনিধি
প্রিন্ট অ-অ+

পরিবারের দৈন্যতা কাটাতে গৃহকর্মী হিসাবে সৌদি আরবের মক্কায় যান সাবিনা খাতুন (২৭) । গত শুক্রবার ( ২২ সেপ্টেম্বর) বাংলাদেশ থেকে সৌদি আরবে যান তিনি । মাত্র ৩ দিন পর গত বুধবার (২৫ সেপ্টেম্বর) রাতে পরিবারের কাছে খবর আসে তার মৃত্যু হয়েছে । দালালের মাধ্যমে খবরটি নিশ্চিত করেন স্বামী রুবেল মিয়া। তিনি সৌদি আরবের মক্কাতে যাবার ৩ দিনের মাথায় সে মারা যায়। এব্যপারে এখনো পর্যন্ত ওই পরিবারের পক্ষ থেকে কোথাও অভিযোগ করা হয়নি।


মৃত সাবিনা খাতুন ঝিনাইদহ সদর উপজেলার ৩নং সাগান্না ইউনিয়নের বাদপুকুরিয়া গ্রামের মোঃ রুবেল মিয়ার স্ত্রী ও চুয়াডাঙ্গা জেলার কুতুবপুর ইউনিয়নের চন্ডিপুর গ্রামের মৃত সামেদ মন্ডলের মেয়ে।


সাবিনার খালা জানান, বিদেশ যাবার আগে সাবিনাকে নিষেধ করা হয়েছিল। দালালকেও নিষেধ করেছিলাম যেন সাবিনাকে বিদেশ না পাঠায়। এই দেশ থেকে একজন মেয়েকে সৌদি পাঠাতে পারলে একজন দালাল দুই লাখ করে টাকা পাই। এজন্য সাবিনাকে দারিদ্রতার সুযোগ কাজে লাগিয়ে ফুসলিয়ে বিদেশ পাঠিয়েছিল। ওই দালাল রফিকুল তাকেও বিদেশ নিয়ে গেছিল। ওখানে যাবার পর ওখানকার বাড়ির মালিক তার উপরে অনেক নির্যাতন করত। তিনিও সইতে না পেরে পালিয়ে দেশে চলে এসেছে। কিন্তু সাবিনা যাবার পরেই ওর উপরে শারীরিক নির্যাতন শুরু হয়। পরে সে মারা যায়।


নিহত সাবিনার শ্বাশুড়ি জানান, সাবিনা সৌদি যাবার পর থেকে দুই তিন বার তার সাথে কথা হয়েছে। ওখান থেকে সাবিনা জানায় এয়ারপোর্ট থেকে দুইজন ব্যক্তি তাকে রিসিভ করে নিয়ে যায়। যে বাড়িতে কাজের জন্য দেওয়ার কথা সেখানে তাকে ঠিক মতো খেতে দিত না। ফোন ব্যবহার করতে দিতো না। ও্ই বাড়িতে দু্ইদিন থাকার পর সে অসুস্থ হয়ে পড়ে। এরপর বাড়ির ড্রাইভারকে দিয়ে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যায়। তখন ওই ড্রাইভারের মোবাইল ফোন দিয়ে শ্বাশড়ির সাথে কথা বলে। তখন সাবিনা জানায়, তাকে খুব নির্যাতন করা হয়েছে। সে অসুস্থ হয়ে হাসপতালে এসেছে। তার দুইটা বাচ্চার কথা বলে ড্রাইভারের মোবাইল দিয়ে কথা বলছে।


সাবিনা আরো বলে, আমি হয়তো আর বাঁচবো না। আমার দুই মেয়েকে দেখ রেখো। এরা আমাকে বাঁচতে দিবে না।


তিনি জানান, সাবিনাকে নির্যাতন করে হত্যা করা হয়েছে। দুইটি বাচ্চা রেখে সাবিনা মারা গেছে। এর বিচার চাই।


নিহতের স্বামী রুবেল মিয়া বলেন, আমি শারীরিকভাবে অসুস্থ। আমাদের পরিবারে দুইটা মেয়ে। বড় মেয়ে রুবিনার বয়স ৭ বছর, ছোট মেয়ের বয়স ৩ বছর। সংসারে অভাবের কারণে মেয়েদের কথা ভেবে সাবিনা বিদেশ যাওয়ার চিন্তা করে। তখন একই গ্রামের রফিকুল দালালের মাধ্যমে গত ২২ সেপ্টম্বর সৌদি আরবে যায়। বিদেশ যাবার আগে তার মেডিকেল রিপোর্ট সবঠিক ছিলো। বিদেশে যাবার তিন দিনের মাথায় তার এমন মৃত্যু রহস্যজনক।


তিনি বলেন, বিদেশ যাবার আগে দালাল রফিকুলের কাছে ভিসা এবং কাজের বিষয়ে জানতে চাওয়া হয়। দালাল জানাই ভিসা অফিসে আছে। যাবার দিন তার হাতে দেওয়া হবে। আমাদের হাতে কোন ভিসার কপিও দেয়নি। দালাল ভালো বেতনের কথা বলে পাঠিয়ে দিয়েছে। তাকে শারীরিক ভাবে নির্যাতন করে মারা হয়েছে। এর সাথে দালালসহ যারা জড়িত তাদের প্রত্যকের বিচার চাই। আর কোন সন্তানের মা যেন এমন ভাবে মারা না যায়।


এ ব্যাপারে দালাল রফিকুল ইসলাম বলেন, সাবিনাকে সৌদি আরবের বাসাবাড়িতে গৃহকর্মী হিসেবে কাজে পাঠানো হয়। বিদেশে যাবার আগে তার শারীরিক অবস্থা ভালো ছিল। কিন্তু হঠাৎ তিন দিন পর ওই দেশ থেকে ফোন আসে সাবিনা অসুস্থ হয়ে মারা গেছে। আমরা অফিসের মাধ্যমে সৌদি থেকে তার মরাদেহ আনার জন্য চেষ্টা করছি।


তিনি বলেন, আমি গ্রামের মেম্বার আকবরের সাথে কথা বলেছি। তিনি ওই পরিবারের সাথে কথা বলেছে। ওই মহিলার অভিভাবকের সাথেও কথা হয়েছে। সাবিনার দুইটা বাচ্চার কথা ভেবে আমাদের অফিস থেকে দুই লাখ টাকার ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও ওই দেশ থেকে সরকারি ভাবে কিছু টাকা দিবে। আমি ঢাকাতে ব্যক্তিগত ভাবে লাশটা দেশে আনার চেষ্টা করছি। এখন যদি আপনারা নিউজ করেন তাহলে হয়তো অফিস থেকে সাবিনাকে যে টাকা দেওয়ার কথা বলছে সেই টাকা আর দেবেনা। এতে সাবিনার পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হবে।


বাদপুকুরিয়া ওয়ার্ডের মেম্বার আকবার জানান, সাবিনা সৌদি আরব যাবার তিন দিনের মাথায় মারা গেছে। তার লাশ দেশে আনার জন্য দালারের সাথে যোগাযোগ করা হচ্ছে। তারা লাশ এনে দেওয়াসহ তাদের অফিস থেকে বাচ্চাদের জন্য বেশকিছু টাকাও দিতে চেয়েছে।


বিবার্তা/রায়হান/এমজে

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com