বঙ্গবন্ধু টানেল উদ্বোধন ২৮ অক্টোবর, যোগাযোগে নতুন সমৃদ্ধি
প্রকাশ : ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১৬:৪৫
বঙ্গবন্ধু টানেল উদ্বোধন ২৮ অক্টোবর, যোগাযোগে নতুন সমৃদ্ধি
চট্টগ্রাম প্রতিনিধি
প্রিন্ট অ-অ+

চট্টগ্রাম কর্ণফুলী নদীর তলদেশে নির্মিত স্বপ্নের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল আগামী ২৮ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রীর উদ্বোধনের পর এ টানেল দিয়ে যান চলাচল শুরু হবে। এর মাধ্যমে ‘ওয়ান সিটি টু টাউনে’ পরিণত হবে বন্দরনগরী চট্টগ্রাম। সৃষ্টি হবে যোগাযোগ ও শিল্পায়নের নতুন অধ্যায়। এ যেন যোগাযোগে নতুন সমৃদ্ধি।


এ তথ্য জানান টানেলের প্রকল্প পরিচালক প্রকৌশলী মোহাম্মদ হারুনুর রশিদ। তিনি বলেন, এরই মধ্যে মূল টানেলের কাজ শতভাগ কাজ শেষ হলেও সংযোগ সড়কসহ অন্যান্য অবকাঠামোগত উন্নয়নের সার্বিক অগ্রগতি ৯৮ শতাংশ হয়ে গেছে।


চট্টগ্রাম সর্কিট হাউজে অনুষ্ঠিত হয় প্রস্তুতিমূলক সভায় সড়ক ও সেতু মন্ত্রণালয়ের সেতু বিভাগের সচিব মনজুর হোসেন বলেন, টানেলে কোন কোন গাড়ি চলবে তা সিদ্ধান্ত হয়ে গেছে। টোলও নির্ধারণ করা হয়েছে। আমাদের ডিজাইন অনুযায়ী, টানেলের ভিতর ৮০ কিলোমিটার বেগে গাড়ি চলবে। যেহেতু টানেল কনসেপ্ট আমাদের জন্য নতুন, সেজন্য কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে। টানেল অন্য যেকোনো ব্রিজ বা সড়কের চেয়ে সম্পূর্ণ আলাদা। সেক্ষেত্রে নিরাপত্তার বিষয়টি আমাদেরকে নিশ্চিত করতে হচ্ছে। সেই ধারণা থেকে এই মূহুর্তে বাইক ও থ্রি-হুইলার চালানো টানেলের জন্য নিরাপদ হবে না। এতে টানেলও নিরাপদ থাকবে এবং যারা টানেল ব্যবহার করবেন তারাও নিরাপদ থাকবেন।


প্রকল্প পরিচালক বলেন, টানেল দিয়ে যানবাহন চলাচলের রাস্তা ও অ্যাপ্রোচ রোডের যাবতীয় কাজ শেষ হয়েছে। এখন চলছে সার্ভিস এরিয়ার কাজ। যা যান চলাচলে কোনো প্রভাব ফেলবে না। সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রীর ঘোষিত তারিখ অনুযায়ী আগামী ২৮ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই টানেল উদ্বোধন করবেন।


টানেলের নির্মাণকাজকে দুইভাবে ভাগ করা হয়েছে। একভাগ হচ্ছে যান চলাচলের জন্য রাস্তা-অ্যাপ্রোচ রোড তৈরির ব্যবস্থা-যা শতভাগ শেষ হয়েছে। অর্থাৎ টানেলে ভেতর দিয়ে গাড়ি চলাচলে এখন কোনো সমস্যা নেই। এটি পুরোপুরি প্রস্তুত। তবে সার্ভিস এরিয়ায় কিছু কিছু কাজ বাকি রয়েছে। এতে অবশ্য যান চলাচলের জন্য কোনো সমস্যা নেই।


তিনি বলেন, পদ্মা সেতুর ওপর দিয়ে গাড়ি চলছে। টোলও আদায় হচ্ছে। কিন্তু প্রকল্পের কাজ এখনও পুরোপুরি শেষ হয়নি। হয়তো আরও কয়েক মাস সময় লাগবে। তেমনই টানেলের কিছু কিছু কাজও বাকি রয়েছে। আমরা দ্রুত এসব কাজ শেষ করার চেষ্টা করছি। প্রকল্প হিসেবে ধরলে এর কাজ ৯৮ শতাংশ শেষ হয়েছে বলে উল্লেখ করেন।


প্রকল্পের তথ্য মতে, বন্দরনগরী চট্টগ্রামকে চীনের সাংহাই নগরীর আদলে ‘ওয়ান সিটি, টু টাউন’ মডেলে গড়ে তোলার লক্ষ্যে কর্ণফুলীর তলদেশে টানেল নির্মাণ প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। এটি দক্ষিণ এশিয়ায় নদীর তলদেশে নির্মিত প্রথম টানেল। বহুদিন ধরে টানেলের বিষয়টি আলোচিত হলেও এটি বাস্তবায়নের পর্যায় শুরু হয় ২০১৩ সালে। ওই সময় এক সমীক্ষায় দক্ষিণ চট্টগ্রামের উন্নয়ন, অগ্রগতি এবং সমৃদ্ধির জন্য টানেল অর্থনৈতিকভাবে খুবই জরুরি ভূমিকা রাখবে বলে উল্লেখ করা হয়।


ওই সমীক্ষায় বলা হয়, টানেলের ভেতর দিয়ে বছরে ৬৩ লাখ গাড়ি চলাচল করতে পারবে। প্রতিদিন চলাচল করতে পারবে অন্তত সাড়ে ১৭ হাজার গাড়ি। ২০২৫ সাল নাগাদ টানেল দিয়ে প্রতিদিন গড়ে ২৮ হাজার ৩০৫টি যানবাহন যাতায়াত করার কথাও সমীক্ষায় উল্লেখ করা হয়।


কর্ণফুলীর তলদেশে টানেল নির্মাণ প্রকল্প অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দেওয়ার পর বিস্তারিতভাবে প্রজেক্ট প্রোফাইল তৈরি করা হয়। জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) ২০১৫ সালের নভেম্বরে ৮ হাজার ৪৪৬ কোটি ৬৪ লাখ টাকা ব্যয়ে মাল্টিলেন রোড টানেল প্রকল্পটি অনুমোদন করে। ওই সময় প্রকল্পের মেয়াদ ধরা হয় ২০২১ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত।


২০১৬ সালের ১৪ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিন পিং যৌথভাবে বঙ্গবন্ধু টানেলের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। পরবর্তী সময়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৯ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি দক্ষিণ এশিয়ার নদীর তলদেশের প্রথম টানেল হিসেবে দুটি টিউবের একটির বোরিং কাজ উদ্বোধন করেন।


চীনের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না কমিউনিকেশন্স কনস্ট্রাকশন কোম্পানি লিমিটেড (সিসিসিসি) টানেল নির্মাণকাজ পরিচালনা করছে। শুরুতে ৮ হাজার ৪৪৬ কোটি ৬৪ লাখ টাকা ব্যয় নির্ধারণ করা হলেও নির্মাণ সামগ্রীর মূল্যবৃদ্ধি, মজুরি বৃদ্ধি, ভূমি অধিগ্রহণ খরচ বৃদ্ধি এবং করোনাকালে কাজের বহুমুখী ক্ষতি হওয়ায় খরচ বেড়ে যায়। ইতোমধ্যে প্রকল্প ব্যয় ১০ হাজার ৫৩৮ কোটি ৪২ লাখ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। প্রকল্পের মেয়াদ আগামী ৩০ ডিসেম্বর ২০২৩ পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে।


বাংলাদেশ ও চীন সরকারের যৌথ অর্থায়নে টানেল প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হচ্ছে। চীনের এক্সিম ব্যাংক ৫ হাজার ৯১৩ কোটি টাকা ঋণ দিচ্ছে এবং বাকি অর্থ দিচ্ছে বাংলাদেশ সরকার। চীনের এক্সিম ব্যাংক দুই শতাংশ হার সুদে এই ঋণ দিয়েছে।


মূল টানেলের দৈর্ঘ্য হচ্ছে ৩ দশমিক ৪০ কিলোমিটার। এ ছাড়া ৫ দশমিক ৩৫ কিলোমিটারের অ্যাপ্রোচ রোডের পাশাপাশি ৭২৭ মিটারের একটি ওভারপাসও রয়েছে। এই টানেলের সাহায্যে দক্ষিণ চট্টগ্রামের চেহারা পাল্টে যাবে বলে আশা ব্যক্ত করে বলা হয়েছে-এই টানেল এশিয়ান হাইওয়েকে ঢাকা-চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের সঙ্গে যুক্ত করা হচ্ছে। এতে চট্টগ্রাম-কক্সবাজারের দূরত্ব ১৫ কিলোমিটার কমার পাশাপাশি দক্ষিণ চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত ব্যবসা-বাণিজ্য ও শিল্প সম্ভাবনা বেগবান হবে। এ ছাড়া সড়কটি চট্টগ্রাম বন্দরের সঙ্গে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের মাধ্যমে মাতারবাড়ী পাওয়ার হাব, মহেশখালী গভীর সমুদ্রবন্দর ও টেকনাফ স্থলবন্দরের সঙ্গে যুক্ত হবে। এর ফলে কর্ণফুলী টানেল ও ছয় লেনের সংযোগ সড়কের সঙ্গে কক্সবাজারের সরাসরি সড়ক নেটওয়ার্ক তৈরি হবে।


অন্যদিকে টানেলের সম্ভাব্য উদ্বোধনকে মাথায় রেখে শিকলবাহা ওয়াই জংশন থেকে কালাবিবির দীঘি পর্যন্ত সংযোগ সড়কের কাজ শেষ করেছে সওজ কর্তৃপক্ষ। টানেলের সুফল পুরোপুরি পেতে আনোয়ারা উপজেলার চাতরী চৌমুহনীসহ সড়কের তিনটি স্পটে উড়াল সেতুর কাজ প্রস্তাবনায় এলেও তা এখনই হচ্ছে না। পরবর্তী সময়ে আলাদা প্রকল্পের মাধ্যমে তা বাস্তবায়ন হবে বলে জানা গেছে।


সওজের ছয় লেন সড়কের প্রকল্প কর্মকর্তা প্রকৌশলী সুমন সিংহ জানান, আনোয়ারা থেকে শিকলবাহা ক্রসিং পর্যন্ত ছয় লেনের সড়কের চার লেনের কাজ শেষ হয়েছে। কালাবিবির দীঘি থেকে আনোয়ারা হয়ে চন্দনাইশ কলেজ গেট পর্যন্ত বিকল্প সড়কের প্রস্তাবনা আছে। প্রস্তাবিত সড়কের নানাদিক যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে।


বিবার্তা/জাহেদ/জবা

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com