চট্টগ্রামে মিলছে না বিদ্যুতের সুফল, পিডিবির দাবি লোডশেডিং নেই!
প্রকাশ : ০৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১৫:৪৮
চট্টগ্রামে মিলছে না বিদ্যুতের সুফল, পিডিবির দাবি লোডশেডিং নেই!
চট্টগ্রাম প্রতিনিধি
প্রিন্ট অ-অ+

চাহিদার চেয়ে বেশি উৎপাদন হলেও চট্টগ্রামে বিদ্যুতের সুফল মিলছে না। পিডিবি চট্টগ্রামের উৎপাদন ও সরবরাহের তালিকায় লোডশেডিং না থাকলেও সাধারণ মানুষের অভিযোগ, দিনে–রাতে সমানতালে চলছে লোডশেডিং। বিদ্যুতের আসা–যাওয়ার সাথে সাথে ভোল্টেজের ওঠানামার কারণে বাসা–বাড়ির টিভি, ফ্যান, ফ্রিজ, বাল্ব, মোটরসহ ইলেকট্রনিক্স সামগ্রী নষ্ট হচ্ছে।


ঝাউতলা এলাকার বাসিন্দা নজরুল ইসলাম বলেন, শনিবার সন্ধ্যার পর হঠাৎ বিদ্যুৎ আসার সাথে সাথে বাসার টিউব লাইটটি ফেটে যায়। একই অভিযোগ করেছেন লাভলেইন এলাকার বাসিন্দা নোবেল সিকদার তাপস।


তিনি বলেন, শুক্রবার আধ ঘণ্টার মতো বিদ্যুৎ ছিল না। বিদ্যুৎ আসার সাথে সাথে ফ্যানটি জোরে ঘুরতে ঘুরতে নষ্ট হয়ে গেছে। নষ্ট হয়ে গেছে ঘরের বাল্বও।’


নগরের জামালখাল এলাকার বাসিন্দা ব্যবসায়ী মো. আইয়ুব ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘বৃষ্টির সময়ও বিদ্যুৎ থাকে না। গরমের সময়ও থাকে না। অথচ পিডিবি বলছে চট্টগ্রামে লোডশেডিং নেই। দিনের বেলায় বাইরে থাকি। কিন্তু রাতে বাসায় এলে লোডশেডিংয়ের যন্ত্রণায় ভুগতে হয়। রাতে একবার বিদ্যুৎ গেলে এক দেড় ঘণ্টায়ও আসে না। এর মধ্যে মশার উৎপাত তো আছে। ডেঙ্গুর ভয়ে মশারির বাইরেও যেতে ইচ্ছা করে না।’


পাঠানটুলী এলাকার নারী উদ্যোক্তা রোজী চৌধুরী বলেন, ‘বিদ্যুৎ নিয়ে খুব যন্ত্রণায় আছি। কখন যায়, কখন আসে, তার কোনো ঠিক–ঠিকানা নেই। মাঝখানে কয়েকদিন বিদ্যুৎ বেশি সমস্যা করেনি। গত কয়েকদিন ধরে আবার দিনে–রাতে সাত থেকে আটবার যাচ্ছে। দীর্ঘক্ষণ পর বিদ্যুৎ আসার সাথে সাথে হাই ভোল্টেজের কারণে আমার বাসার টিভি নষ্ট হয়ে গেছে।’


বৃহত্তর চট্টগ্রামে সরকারি (পিডিবির নিজস্ব) এবং বেসরকারি মিলে ২৯টি বিদ্যুৎ কেন্দ্র রয়েছে। এই কেন্দ্রগুলোর উৎপাদন ক্ষমতা ৪ হাজার ৬১২ মেগাওয়াট। এর মধ্যে ৬টি বিদ্যুৎ কেন্দ্র দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ রয়েছে। অবশিষ্ট ২৩টি বিদ্যুৎ কেন্দ্রে এখন গড়ে ১৬৯৪ থেকে ২ হাজার মেগাওয়াট পর্যন্ত বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে। এর মধ্যে ১৪টি কেন্দ্র চলছে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে। এসব বিদ্যুৎ কেন্দ্র বছরের প্রায় সময় বন্ধ থাকে।


সাম্প্রতিক সময়ে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার জন্য চালু করা হলেও উৎপাদন হচ্ছে অর্ধেকের কম। ওই ১৪টি কেন্দ্রের উৎপাদন ক্ষমতা ১ হাজার ৫৩২ মেগাওয়াট। কিন্তু উৎপাদন হচ্ছে মাত্র ৬৬৭ মেগাওয়াট। যার কারণে লোডশেডিংয়ের কবল থেকে মুক্তি পাচ্ছে না চট্টগ্রামবাসী। বিশেষ করে সঞ্চালন লাইনের ত্রুটির কারণে বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থা বাধাগ্রস্ত হচ্ছে বলে অভিযোগ সাধারণ গ্রাহকের। লোডশেডিংয়ের পাশাপাশি বিশেষ করে ভোল্টেজ ওঠানামার কারণে বিদ্যুতের সুফল মিলছে না চট্টগ্রামে।


পিডিবি চট্টগ্রামের সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলীর দপ্তর থেকে জানা গেছে, চট্টগ্রামে উৎপাদিত সকল বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ হয়। জাতীয় গ্রিড থেকে চট্টগ্রামের চাহিদা মতো বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়। পিডিবি চট্টগ্রামের সরবরাহের তালিকায় লোডশেডিং না থাকলেও সাধারণ মানুষ লোডশেডিংয়ের ব্যাপারে অভিযোগ রয়েছে। সাধারণ মানুষের অভিযোগ, দিনে এবং রাতে লোডশেডিং হচ্ছে।


চট্টগ্রামে বেশিরভাগই গ্যাস ও জ্বালানি তেলনির্ভর বিদ্যুৎ কেন্দ্র। গ্যাস এবং জ্বালানি তেলের অভাবে বছরের প্রায় সাত–আট মাস বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো বন্ধ থাকে। ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে গত ১ মাসে কাপ্তাই লেকের পানির স্তর একটু বেড়েছে। এর ফলে দীর্ঘদিন বন্ধ থাকা ৪টি ইউনিটসহ মোট ৫টি ইউনিট এখন সচল হয়েছে। এদিকে ভাদ্র মাসের শুরুতেই গরমের তীব্রতা বেড়েছে। এর সাথে লোডশেডিংও বেড়েছে। রাতে খাবারের সময় এবং ঘুমানোর সময় লোডশেডিংয়ের মাত্রা বেড়ে যায়।


এ ব্যাপারে পিডিবি চট্টগ্রাম অঞ্চলের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী অশোক কুমার চৌধুরী বলেন, চট্টগ্রামে এখন বিদ্যুতের উৎপাদন মোটামুটি ভালো হচ্ছে। গত শুক্রবার (১ সেপ্টেম্বর) ১৬৯৪ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়েছে। চট্টগ্রামে দিনে সাড়ে ১২শ মেগাওয়াট এবং রাতে সাড়ে ১৩শ মেগাওয়াট পর্যন্ত চাহিদা থাকে। চট্টগ্রামে বিদ্যুতের লোডশেডিং নেই উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমাদের বিদ্যুতের খুঁটির মাধ্যমে ডিশ এবং ইন্টারনেট ব্যবসায়ীরা তাদের তারগুলো নিয়ে যাচ্ছে। বিদ্যুতের খুঁটিগুলো তারের জঞ্জাল হয়ে উঠছে। প্রায় জায়গায় ডিশ ও ইন্টারনেটের তারে আগুন লেগে যাচ্ছে। এ সময় লাইন বন্ধ রাখতে হয়। আগুন নিভানোর পরে বিদ্যুৎ সরবরাহ দেওয়া হয়। এই কারণে ওই এলাকায় সাময়িক বিদ্যুৎ বন্ধ থাকে।


নগরীতে বহুতল ভবন নির্মাণকারী ডেভেলপার কোম্পানিগুলো হাইরাইজ বিল্ডিং করলেও বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য ট্রান্সফরমার বসানোর জায়গা রাখেন না উল্লেখ করে প্রকৌশলী অশোক কুমার চৌধুরী বলেন, তারা বড় বড় বিল্ডিং করছেন, কিন্তু ট্রান্সফরমার বসানোর জন্য কেউ জায়গা রাখেন না। অনেক দূর থেকে সংযোগ দেওয়া হয়। দূর থেকে সংযোগের কারণে ভোল্টেজ আসা–যাওয়া করে। অনেক সময় পোলের কানেকশন আয়রন পুড়ে লুজ হয়ে যায়। এজন্য ভোল্টেজ সমস্যার সৃষ্টি হয়। আবার নগরীর এমন অনেক এলাকায় ঘনবসতি গড়ে উঠেছে এবং অনেক এলাকায় ঘিঞ্জিভাবে বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে, যেখানে ট্রান্সফরমার বসানোর সুযোগ নেই। হাঁটা–চলারও জায়গা নেই। অনেক দূর থেকে সংযোগ দিতে হয়। যার কারণে ভোল্টেজ ওঠানামা করে। অনেক সময় ভারী বৃষ্টি ও বাতাসে গাছ ভেঙে ফেইজের উপর পড়লে ফিডার ফল্ট করে। এমনিতে সঞ্চালন লাইনে কোনো সমস্যা নেই বলে জানান তিনি।


পিডিবির কেন্দ্রভিত্তিক উৎপাদন তালিকা এবং জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ এবং জাতীয় গ্রিড থেকে চট্টগ্রামে সরবরাহের তালিকার সাথে বাস্তবতার মিল খুঁজে পাওয়া যায় না। এর ফলে পিডিবির উৎপাদন এবং বিতরণ ব্যবস্থার প্রতিদিনের তালিকায় চট্টগ্রামে লোডশেডিং নেই বলে উল্লেখ করা হয়েছে। বাস্তবে চট্টগ্রামে কিন্তু প্রতিদিন ৩০ মিনিট থেকে ১ ঘণ্টা পর্যন্ত লোডশেডিং চলছে।


বিবার্তা/জাহেদ/সউদ

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com