প্রতি মৌসুমে জেলা পর্যায়ে খাদ্য বিভাগের মাধ্যমে ধান এবং চাল সংগ্রহ করে থাকে সরকার। এবার বোরো মৌসুমে ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে প্রায় সাড়ে ৫৯ হাজার টন চাল এবং ৯ হাজার ১০০ টন ধান সংগ্রহের জন্য লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে জেলা খাদ্য বিভাগ। তবে হঠাৎ করেই ধান কেনা বন্ধের সিদ্ধান্তে লক্ষ্যমাত্রা অর্জন নিয়ে যেমন শঙ্কা তৈরি হয়েছে, তেমনি বিপাকে পড়েছেন কৃষি বিভাগের নির্বাচিত কৃষকরা। যদিও খাদ্য বিভাগের দাবি, ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা পুরোপুরি অর্জিত না হলেও চালের কোনো সংকট হবে না।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এবার বোরো মৌসুমে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ১ লক্ষ ১১ হাজার ৪০৫ হেক্টর জমিতে বিভিন্ন জাতের ধানের আবাদ হয়। ফলনও হয়েছে ভাল। বাজারে বিক্রির পাশাপাশি অ্যাপে নিবন্ধিত কৃষকরা যাচাই-বাছাই শেষে সরকারি খাদ্য গুদামে ধান দিতে পারেন।
গত ৭ই মে থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ধান এবং চাল সংগ্রহ অভিযান শুরু করে জেলা খাদ্য বিভাগ। এবার কৃষকের কাছ থেকে প্রতি মণ ১২০০ টাকা দরে ধান সংগ্রহ শুরু হয়। যা আগামী ৩১ আগস্ট পর্যন্ত চলার কথা।
একেকজন কৃষক ৭৫ মণ করে ধান দিতে পারবেন গুদামে। ধানের জাত নির্ধারিত না থাকলেও কৃষকরা মূলত মোটা ধানই সবচেয়ে বেশি দিয়ে থাকেন খাদ্য গুদামে। এক্ষেত্রে বাজারের তুলনায় গুদামে ধান দিতে পারলেই কৃষকের বেশি মুনাফা হয়।
দেশের পূর্বাঞ্চলের সবচেয়ে বড় ধানের মোকাম ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জের ভিওসি ঘাটে বর্তমানে প্রতি মণ মোটা ধান কেনাবেচা হচ্ছে ১১০০ টাকায়। আর বিআর-২৮ জাতের ধান ১৩০০ টাকা এবং বিআর-২৯ জাতের ধান প্রতি মণ বিক্রি হচ্ছে ১২০০ টাকায়।
এবারের মৌসুমে প্রায় ৫৯ হাজার টন চাল এবং ৯ হাজার ১০০ টন ধান সংগ্রহের জন্য লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। এর বিপরীতে গত ১লা আগস্ট পর্যন্ত চাল সংগ্রহ হয় ৫২ হাজার ৮৯১ টন। এছাড়া লক্ষ্যমাত্রার বাইরে নতুন করে আরও ২০ হাজার টন চাল কেনার জন্য প্রয়োজনীয় বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে খাদ্য বিভাগ থেকে।
চাল সংগ্রহ স্বাভাবিক থাকলেও বিপত্তি বেধেছে ধান সংগ্রহ কার্যক্রমে। কোনো ধরনের পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই গত ২৩ জুলাই থেকে কৃষকের কাছ থেকে ধান কেনা বন্ধ করে দেয় ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা খাদ্য বিভাগ। ফলে ২২ জুলাই পর্যন্ত সংগ্রহ হয় ৫ হাজার ১১২ টন ধান।
ধান কেনা বন্ধের কারণ স্পষ্ট না করলেও ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনার কথা জানানো হয় কৃষকদের। তবে এ সিদ্ধান্তে বিপাকে পড়েছেন কৃষকরা। বাজারে কাঙ্খিত দাম না পাওয়ায় সরকারের কাছে ধান বিক্রি করতে চান তারা। ধান বিক্রির আশায় প্রতিদিনই জেলার খাদ্য গুদামগুলোতে ভিড় করছেন কৃষকরা।
মো. আল মামুনা নামে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলার এক কৃষক বলেন, লটারির মাধ্যমে খাদ্য বিভাগে ধান দেয়ার জন্য নির্বাচিত হয়েছি। গুদামে ধান দেয়ার জন্য শুকিয়ে বস্তায় ভরে রেখেছি। কিন্তু সাতদিন ধরে ঘুরেও গুদামে ধান দিতে পারছি না। বাজারে বেচতে গেলে প্রতি মণে আমার অন্তত ১০০ টাকা করে লোকসান হবে।
জামাল উদ্দিন নামে জেলা শহরের গোকর্ণ এলাকার আরেক কৃষক বলেন, প্রতিবছরই ধান দিয়ে থাকি গুদামে। এবারও লটারিতে আমার নাম এসেছে। আমরা কৃষকরা উৎপাদিত ধান বিক্রি করেই পরিবার চালাই। এখন সরকার ধান না নেয়ার কারণে আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি। এবার সবকিছুর মূল্যবৃদ্ধির কারণে ধান উৎপাদনে খরচ হয়েছে বেশি। ফলে বাজারেও সেই দামে ধান বিক্রি করতে পারছি না। এ অবস্থায় আমাদের ধানগুলো সরকার না নিলে আমরা মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হব।
খাদ্য বিভাগ ধান কেনা বন্ধের কারণ স্পষ্ট করা না হলেও সূত্র বলছে, জেলার মোট ১০টি খাদ্য গুদামের স্বাভাবিক ধারণ ক্ষমতা সাড়ে ২১ হাজার টন। তবে অতিরিক্ত হিসেবে সংরক্ষণ করা যায় আরো সাড়ে ৪ হাজার টন। বর্তমানে গুদামগুলোতে মজুত আছে ২১ হাজার ৫৫৩ টন। ফলে গুদামে পর্যাপ্ত জায়গারও সংকট আছে। এছাড়া ভারত সরকার চাল রফতানিতে নিষেধাজ্ঞা দেয়ার ফলে ধানের বদলে চাল সংগ্রহের দিকেই বেশি নজর দিচ্ছে সরকার। মূলত কৃষকের কাছ থেকে ধান সংগ্রহের পর সেগুলো আবার চালকল মালিকদের দেয়া হয় চাল তৈরি করে দেয়ার জন্য। এতে সময় এবং খরচ বাড়ে।
ধান-চাল সংগ্রহ অভিযানের তদারক কর্মকর্তা কাউছার সজীব বলেন, জেলার সাত উপজেলায় অ্যাপের মাধ্যমে নিবন্ধিত কৃষকদের মধ্যে কৃষি বিভাগের নির্বাচিত কৃষক এবং দুই উপজেলায় উন্মুক্ত লটারির মাধ্যমে কৃষক নির্বাচন করা হয় ধান সংগ্রহের জন্য। এবার ধানের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত না হলেও চাল পুরোপুরি সংগ্রহ হবে। এছাড়া চালকল মালিকরা অতিরিক্ত আরও ২০ হাজান টন চাল দেয়ার জন্য আমাদের কাছে আবেদন করেছেন। আমরা সেই আবেদন ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠিয়েছি। ফলে চালের কোনো সংকট তৈরি হবে না।
এ ব্যপারে জানতে চাইলে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক আলমগীর কবীর বলেন, গুদামে জায়গার সংকট আছে ঠিক সেটি বলা যাবে না। আমরা একদিকে সংগ্রহ করছি, অন্যদিকে আবার গুদাম থেকে সেগুলো বিভিন্ন জায়গায় পাঠিয়ে দিচ্ছি। তাছাড়া আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনায় ধান কেনা বন্ধ রেখেছি। নির্দেশনা পেলেই আবার কৃষকের কাছ থেকে ধান কেনা শুরু করব। যেহেতু ধান কেনা বন্ধ তাই কৃষকরা যেন গুদামে এসে ভিড় না করেন, সেজন্য আমরা মাইকিং করেছি।
বিবার্তা/আকন্ঞ্জি/লিমন
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]