কক্সবাজারে বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে। মঙ্গলবার (৮ আগস্ট) সন্ধ্যার পর থেকে বুধবার (৯ আগস্ট) ভোর পর্যন্ত বৃষ্টি হয়নি। বুধবার ভোর হালকা বৃষ্টি হলে তা বেশিক্ষণ স্থায়ী ছিল না। এ পরিস্থিতিতে নামতে শুরু করেছে বন্যা কবলিত এলাকার পানি। এখন পর্যন্ত বন্ধ আছে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের সরাসরি যান চলাচল। তবে আনোয়ারা-বাঁশখালী-পেকুয়া আঞ্চলিক মহাসড়ক দিয়ে চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার যান চলাচল করছে।
পানি নেমে যাওয়ার সাথে সাথে ভেসে উঠছে ক্ষত চিহ্ন। কোথাও মহাসড়ক, সড়ক, কাঁচা রাস্তা, আবার কোথাও কালভার্ট, ভেঙ্গে ক্ষত-বিক্ষত হয়ে গেছে। বীজ তলা, ফসলের মাঠ, মাছের ঘের, বেড়িবাঁধ, ঘর ও ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান যেন লণ্ডভণ্ড হওয়ার দৃশ্য দেখা যাচ্ছে।
পানি নামতে শুরু করলেও ঘরে ফিরে নতুন শঙ্কায় কবলিত এলাকার মানুষ। যে রান্না করে খাবার কোন পরিবেশ নেই। তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে বিশুদ্ধ পানির।
বুধবার সকালে চকরিয়া উপজেলার পানিতে ডুবে থাকা কিছু সড়কের দৃশ্য দেখা মিলে ভাঙনের তীব্রতা। কাকড়া-মিনাবাজার সড়কটির ৩ কিলোমিটার এলাকায় কমপক্ষে ৫০টি ভাঙন সড়কটিকে চলাচল অনুপযোগী করে দিয়েছে।
ওই এলাকার বৃদ্ধ রহিম উদ্দিন জানিয়েছেন, ৪ দিন ধরে কমপক্ষে ৪-৫ ফুট পানিবন্দি ছিলেন তারা। পানি ক্রমাগত নেমে যাচ্ছে। সাথে সাথে সড়কের ভাঙন, ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত, ফসলী জমি ও মাছের ঘেরের ক্ষতি দেখা যাচ্ছে। যাদের বাড়িঘর এখনও রয়েছে তারাও বাড়িতে গিয়ে রান্না করার সুযোগ নেই। বাড়ির ভেতরে পানি বের করার চেষ্টা করছেন। খাবার পানিও পাওয়া যাচ্ছে না।
এলাকার জনপ্রতিনিধি, স্থানীয় লোকজন ও সরেজমিনে দেখা যায়, জিদ্দাবাজার-কাকারা-মানিকপুর সড়কের কয়েকটি অংশে ভাঙন রয়েছে। মাতামুহুরী নদী নিকটবর্তী গ্রামের বসতঘরগুলো বিধ্বস্ত হয়েছে নানাভাবে। চকরিয়া ও পেকুয়ায় বেশ কয়েকটি বেঁড়িবাধ ভেঙ্গে লোকালয়ে মিশে আছে পানি। চকরিয়ার পৌর শহরের শপিং কমপ্লেক্স, বিভিন্ন ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানের পানি বের করার চেষ্টা করছেন ব্যবসায়ীরা। তাদের ক্ষতির পরিমাণ কোটি টাকার ক্ষতির আশঙ্কা করছেন।
চকরিয়ার লক্ষ্যারচর, কৈয়ারবিল, বরইতলী, হারবাং, সাহারবিল, চিরিঙ্গা, পূর্ব বড় ভেওলা, বিএমচর, পশ্চিম বড় ভেওলা, ঢেমুশিয়া, কোনাখালী, ফাঁসিয়াখালী, বদরখালী, ডুলাহাজারা, খুটাখালী এবং পেকুয়া উপজেলার পেকুয়া সদর ইউনিয়ন, উজানটিয়া, মগনামা, রাজাখালী, টৈটং, শিলখালী, বারবাকিয়া ইউনিয়নের পরিস্থিতিও একই।
এছাড়াও মহেশখালী, কুতুবদিয়া, উখিয়া ও রামুতে নানা ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া যাচ্ছে।
উপজেলা প্রশাসনের পক্ষে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণে কাজ করছে বলে জানিয়েছেন, কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) বিভীষণ কান্তি দাশ।
তিনি জানিয়েছেন, প্রাথমিক যে তথ্য হাতে এসেছে তাতে ক্ষতির পরিমাণ ২ কোটি টাকার বেশি। এটা অনেক বেশি হতে পারে। এ পর্যন্ত যে তথ্য মিলেছে, তাতে বন্যা কবলিত এলাকার মধ্যে চকরিয়া-বদরখালী আঞ্চলিক মহাসড়কের ৬ কিলোমিটার, ইয়াংগা-মানিকপুর-শান্তিবাজার সড়কের ১১ কিলোমিটার, লক্ষ্যারচর-বেথুয়াবাজার-বাগগুজারা সড়কের ১১ কিলোমিটার, একতাবাজার-বনৌজা শেখ হাসিনা সড়কের আধা কিলোমিটার, বরইতলী- মগনামা সড়কের ৭ কিলোমিটার, চট্টগ্রাম-কক্সবাজার-টেকনাফ মহাসড়কের আড়াই কিলোমিটার, ৩ কিলোমিটার কাঁচা রাস্তা, ৩ টি কালভার্ট বিধ্বস্ত হয়েছে। এর সাথে ঘর, মাছের ঘের, বেড়িবাঁধ, ফসল, বীজতলা সহ অন্যান্য ক্ষতি রয়েছে। যা এখনও নির্ধারণ করতে কাজ চলছে।
এদিকে আশঙ্কার কথা হচ্ছে, চকরিয়া-পেকুয়া এলাকা এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত (দুপুর ১টা) বৃষ্টি হচ্ছে না। তবে কক্সবাজার শহর ও আশেপাশের এলাকায় দুপুর ১২টার পর থেকে থেমে থেমে মাঝারি মানের বৃষ্টি হচ্ছে। এতে আশেপাশে এলাকায় বন্যা পরিস্থিতির অবনতির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
বিবার্তা/ফরহাদ/লিমন
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]