এডিস নির্মূলে ‘বিটিআই’ পদ্ধতি আনছে ডিএনসিসি
প্রকাশ : ২০ জুলাই ২০২৩, ২০:১২
এডিস নির্মূলে ‘বিটিআই’ পদ্ধতি আনছে ডিএনসিসি
বিবার্তা প্রতিবেদক
প্রিন্ট অ-অ+

জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে যেকোনো পরিবেশে নিজেকে খাপ খাইয়ে নিচ্ছে এডিস মশা। বর্তমান সময়ের ডেঙ্গুর বাহক এডিস মশা নির্মূল করতে হলে প্রথমে তাদের উৎসস্থল ধ্বংস করতে না পারলে আরো ছড়িয়ে পড়বে ডেঙ্গু পরিস্থিতি। তাই এবার এডিস মশার উৎসস্থল ধ্বংসে বিশ্বে ৩০ বছরের বেশি সময় ধরে ব্যবহৃত বাসিলাস থুরিনজেনসিস ইসরায়েলেনসিস (বিটিআই) পদ্ধতির উদ্যোগ নিয়েছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি)।


সিটি করপোরেশন সূত্রে জানা যায়, বিটিআই এক ধরনের ব্যাকটেরিয়া। মশার লার্ভা ধ্বংস করে বিটিআই। এর বৈশিষ্ট্য হলো, এতে কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই মানুষের শরীরে। শুধু তাই নয়, পানিতে এটি প্রয়োগ করলে অন্য জলজ প্রাণীরও এতে ক্ষতি হয় না। বিটিআই বন্দরে এসে এখন কাস্টমসের পরীক্ষার অপেক্ষায় আছে বলে জানা গেছে। উত্তর সিটির মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম এসব বিষয় সংবাদমাধ্যমে জানিয়েছেন।


দ্রুত সময়ের মধ্যে ডিএনসিসি এলাকায় এর প্রয়োগ শুরু হবে বলে জানা গেছে।


মশার উৎপাত থেকে রাজধানীবাসীকে রক্ষা করতে এতদিন যে পদ্ধতি প্রয়োগ করা হয়েছিল তা ‘ভুল’ ছিল বলে সম্প্রতি মন্তব্য করেছিলেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম। যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডা রাজ্যের মিয়ামি শহরে গিয়ে মশা মারার যে পদ্ধতি শিখেছেন, সেই অভিজ্ঞতা ডিএনসিসিতে কাজে লাগাতে চান তিনি।


মেয়র জানান, আমরা এতদিন ভুল পদ্ধতি ব্যবহার করেছি। তাতে মশা তো ধ্বংস হয়নি বরং অর্থের অপচয় হয়েছে। তাই অতিদ্রুত ডিএনসিসিতে মশার প্রজাতি চিহ্নিত করতে একটি ল্যাব স্থাপন করতে চাই। তারই অংশ হিসেবে বাসিলাস থুরিনজেনসিস ইসরায়েলেনসিস (বিটিআই) পদ্ধতির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।


রাজধানীসহ সারাদেশে ডেঙ্গুর সংক্রমণ ব্যাপক হারে বাড়ছে। সেইসঙ্গে বাড়ছে মৃত্যু। বছরের শুরুতে লার্ভা জরিপের সময় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সাবধান করেছিল, এবার ডেঙ্গু ব্যাপক হারে বাড়তে পারে। বাস্তবেও তা ঘটছে। পরিস্থিতি নাজুক হয়ে যাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) মুশতাক হোসেন বলেছেন, ‘মহামারি নিয়ন্ত্রণে যেমন ব্যবস্থা নেওয়া হয়, এখন ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে তাই করা উচিত।


বিটিআই পাউডার আকারে নিয়ে আসছে ডিএনসিসি। এদিকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মশকনিধনে ব্যবহৃত কীটনাশক নির্বাচন কমিটির ২০২১ সালের ১১ অক্টোবর এবং চলতি বছরের ৫ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পরীক্ষামূলকভাবে বিটিআই ব্যবহার করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। তবে তারা সেটা কেনার কোনো প্রক্রিয়া শুরু করেনি। ডিএসসিসি ডেঙ্গুর লার্ভা ধ্বংসে টেমিফস নামের একটি কীটনাশক ব্যবহার করে।


দক্ষিণ সিটির প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ফজলে শামসুল কবীর বলেন, টেমিফস যথেষ্ট কার্যকর বলে প্রমাণিত হয়েছে। আমরা আপাতত এর পরিবর্তনের কথা ভাবছি না। প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব কর্মপদ্ধতি থাকে। উত্তর সিটি বিটিআই ব্যবহার করতে চায়, এটা তাদের সিদ্ধান্ত। আমাদের নিজস্ব একটি কারিগরি কমিটি আছে। ভবিষ্যতে যদি তারা বিকল্প কোনো কিছুর কথা বললে আমরা সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেব।


পাশাপাশি দুই সিটির একটিতে বিটিআইয়ের ব্যবহার হলে অন্যটিতে না হলে ঢাকার মশার নিয়ন্ত্রণ কতটুকু কার্যকর হবে? জানতে চাইলে কীটতত্ত্ববিদ কবিরুল বাশার বলেন, এক একটি প্রতিষ্ঠান, তার নিজস্ব চিন্তা-চেতনা ও পরিকল্পনামাফিক কাজ করবে, এটাই স্বাভাবিক। তবে যে কীটনাশকটি বেশি কার্যকর, পরিবেশবান্ধব ও স্বাস্থ্যঝুঁকি কম, সে ধরনের কীটনাশক ব্যবহার করাই উত্তম।


কবিরুল বাশার আরো জানান, হটস্পট তথা উৎসস্থল ধ্বংস করা গেলেই নিয়ন্ত্রণ করা যাবে ডেঙ্গু। এর জন্য লার্ভা ধ্বংস করা জরুরি। বিটিআই ব্যাকটেরিয়ার ক্রিস্টালগুলো মশার লার্ভা খাবার হিসেবে গ্রহণ করে এবং এটি মশার মধ্যে দ্রবীভূত হয়ে বিষাক্ত পদার্থ তৈরি করে। এই পদার্থ লার্ভা মেরে ফেলে। এমনকি মৃত লার্ভাকে যদি জীবিত লার্ভা খেয়ে ফেলে, তাহলে সেই লার্ভাও একপর্যায়ে মারা যাবে। এভাবে স্বয়ংক্রিয়ভাবে লার্ভার জীবনচক্র ধ্বংস হবে।


বিবার্তা/লিমন

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com