খানসামায় কাজের মেয়াদ শেষ হলেও নির্মাণ হয়নি ব্রিজ
প্রকাশ : ১২ জুলাই ২০২৩, ১৮:০৮
খানসামায় কাজের মেয়াদ শেষ হলেও নির্মাণ হয়নি ব্রিজ
খানসামা (দিনাজপুর) প্রতিনিধি
প্রিন্ট অ-অ+

দিনাজপুরে খানসামা উপজেলায় কাজের মেয়াদ শেষ হলেও সম্পন্ন হয়নি ব্রিজ নির্মাণ কাজ। এতে ভোগান্তি পোহাচ্ছে লাখো মানুষ।


উপজেলার গোয়ালডিহি গ্রামের ইছামতী নদীতে ৩ কোটি টাকা বরাদ্দের সেতু শুধু পাইলিং এর কাজ করেই সীমাবদ্ধ রয়েছে। এমনকি শুধু পাইলিং করেই অর্ধেক বিল উত্তলন করে লাপাত্তা সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার।


স্থানীয়দের অভিযোগ, সেতুর কাজ শেষ না করেই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান প্রায় ৫০ ভাগ টাকা তুলে নিয়েছে। সময়মতো সেতুর কাজ শেষ না হওয়াই সবচেয়ে দুর্ভোগে পড়েছে ইছামতী নদীর দুই পাড়ের মানুষ। যাতায়াতসহ অন্যান্য কাজে, বিশেষ করে বর্ষাকালে চরম ভোগান্তি পোহাতে হয় সাধারণ জনগণকে। অসুস্থ, গর্ভবতী ও স্কুলপড়ুয়া শিক্ষার্থীদের অনেক দূর ঘুরে যাতায়াত করতে হয়। সরকারের কাছে এলাকাবাসীর দাবি, সেতুর কাজটা দ্রুত শেষ করে এলাকার মানুষের মুখে হাসি ফুটুক।


খানসামা উপজেলা কৃষিনির্ভর হওয়ায় কৃষকদের তাদের কৃষিপণ্য বাজারজাত করতে প্রায় পাঁচ থেকে ছয় কিলোমিটার রাস্তা ঘুরে বাজারে যেতে হয়। এতে তাদের পরিবহন ব্যয় অনেক বেড়ে যায়। সরকারের কাছে এলাকাবাসীর দাবি, সেতুর কাজটা দ্রুত শেষ করে এলাকার মানুষের মুখে হাসি ফুটুক।


জানা যায়, ২০১৮ সালে তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও বর্তমান সাংসদ আবুল হাসান মাহামুদ আলী উপজেলার গোয়ালডিহি গ্রামের ইছামতী নদীর বটতলী সাঁকোর পাড়ের ব্রিজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। ২০২০ সালের ২৭ জানুয়ারি আনুষ্ঠানিকভাবে এর নির্মাণকাজও শুরু হয়। কিন্তু ঠিকাদার ব্রিজের পাইলিংয়ের কাজ করে নির্মাণকাজ শেষ না করেই বিল তুলে নিয়ে যান।


প্রকল্পের নীতিমালা অনুযায়ী, পল্লী অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের অধীনে ৩ কোটি ৩৬ লাখ ২৮ হাজার ৯৯৬ বরাদ্দ দেওয়া হয়। সেতুর ২০১৮ সালের জুন মাস কাজ শুরু হয়ে এর নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০২১ সালের জুন মাসে। কিন্তু এই গত পাঁচ বছর কেবল সেতুর পাইলিং ছাড়া আর কোনো কাজই করা হয়নি।


গোয়ালডিহি ইউনিয়নের সাঁকোরপাড় এলাকার বাসিন্দা মো. রফিকুল ইসলাম (৪৪) আক্ষেপ করে বলেন, পাঁচ বছর হলেও এখনও ব্রিজ হওয়ার কোনো খবর নেই। কয়েকদিন আগে সাঁকো থেকে এক মহিলা পরে বিছানায় পড়ে আছে। আমাদের দাবি যত তাড়াতাড়ি সম্ভব এই ব্রিজের কাজ শেষ করা হোক।


ওই এলাকার বড়বাড়ি গ্রামের (৮১) বছর বয়সী আফতাব উদ্দিন কান্না বিজড়িত কন্ঠে বলেন, এই দুঃখ থুবার (রাখিবার) জায়গা নাই বা (বাবা)। মন কান্দেছে (কান্না করতেছে) বা হামার (আমাদের) কি হক নাই। এই যে বর্ষাকাল আইচ্ছে (আসছে), গরীব মানুষ আমরা বন্যা সময় যে কি কষ্ট। এই দুঃখ কষ্ট থুবার (রাখার) জায়গা নাই।


দুবুলিয়া এলাকার বাসিন্দা নবিউল ইসলাম (৩৮) বলেন, বর্ষাকালে দুপারের লোকের সমস্যার শেষ নেই। এই পাড়ের লোকের ওই পাড়ে জমি, ওই পাড়ের লোকের এই পাড়ে জমি। বর্ষায় নদী পানিতে টইটম্বুর হয়। তখন আমাদের ৭-৮ কিলো রাস্তা ঘুরে যাতায়াত করতে হয়।


গোয়ালডিহি ইউপি চেয়ারম্যান সাখাওয়াত হোসেন লিটন বলেন, প্রতিবছর বর্ষাকালে ওই নদীতে সাঁকো তৈরি করে দিতে হয়। ওই এলাকার ৫০হাজার মানুষ যাতায়াত করে ওই নদীর উপর দিয়ে। সেতু নির্মান না হওয়ায় প্রতিবছর ভোগান্তি পোহাতে এলাকাবাসী।


তবে এ বিষয়ে জানতে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে একাধিকবার মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলেও সাড়া মিলেনি।


জেলা নির্বাহী প্রকৌশলী এফ.এম. খায়রুল ইসলাম বলেন, অবশিষ্ট কাজ শুরু করার জন্য সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে নির্দেশনা দিয়েছি। আশা করি দ্রুত কাজ শুরু হবে।


বিবার্তা/জামান/লিমন

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com