নদী গর্ভে বিলীন চিলমারীর ৭৪ লাখ টাকার স্কুল ভবন
প্রকাশ : ১৯ জুন ২০২৩, ১১:২৪
নদী গর্ভে বিলীন চিলমারীর ৭৪ লাখ টাকার স্কুল ভবন
চিলমারী (কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধি
প্রিন্ট অ-অ+

কুড়িগ্রামের চিলমারী উপজেলার নয়ারহাট ইউনিয়নের দক্ষিণ খাউরিয়া স্কুল অ্যান্ড কলেজের পাকা ভবনের একাংশ ব্রহ্মপুত্র নদের ভাঙ্গনে বিলীন হয়েছে। মাত্র চার বছরের মাথায় প্রায় পৌনে এক কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত ভবনটি নদের গর্ভে চলে গেল।


রবিবার (১৮ জুন) ভোরে ভবনটির একাংশ ব্রহ্মপুত্র নদের ভাঙ্গনে ধ্বসে পড়ে। চলমান ভাঙনের তীব্রতায় পুরো ভবনটি যেকোন সময় নদের গর্ভে চলে যেতে পারে বলে জানান স্থানীয়রা।


দুই বছর ধরে ভাঙনের কবলে থাকা ভবনটি রক্ষায় বালু ভর্তি জিও ব্যাগ ফেলা হলেও শেষ রক্ষা হয়নি। তবে কর্তৃপক্ষ বছরের শুরুতে বিদ্যালয়টি অন্যত্র স্থানান্তর করেছে। সদ্য বিলীন হওয়া ভবনটি পরিত্যাক্ত ছিল। এতে পাঠ কার্যক্রমও ছিল বন্ধ । প্রায় দেড় কিলোমিটার দূরে বিদ্যালয়ের নতুন স্থানে শিক্ষা কার্যক্রম চলমান রয়েছে।


জানাগেছে, ২০১৭-২০১৮ অর্থবছরে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদফতর চারতলা ভিত্তি বিশিষ্ট একতলা এই ভবনটি নির্মাণ করে। প্রায় ৭৪ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মিত ভবনটি ২০২০ সালে আনুষ্ঠানিক ভাবে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করা হয়। ২০২২ সালে ব্রহ্মপুত্র নদের ভাঙনে বিদ্যালয়টির একাংশ বিলীন হয়। তখন পাকা ভবনটি রক্ষায় বালু ভর্তি জিও ব্যাগ ফেলা হয়। তবে ভাঙনের ভয়াবহতায় বিদ্যালয়টি ভাঙন কবলিত স্থান থেকে দূরবর্তী স্থানে সরিয়ে নেয় কর্তৃপক্ষ। চলতি বছরের শুরু থেকে সেখানেই একাডেমিক কার্যক্রম চালু রয়েছে। ফলে পাকা ভবনটি একরকম পরিত্যাক্ত অবস্থায় ছিল।


প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি মো. দেলোয়ার হোসেন বলেন, ভাঙনের তীব্রতায় আগের স্থান থেকে সরিয়ে নতুন স্থানে বিদ্যালয়ের কার্যক্রম চলছিল। পাকা ভবনটিতে কিছু আসবাবপত্র রাখা ছিল। গত বছর ভাঙনের পর নদী অনেকটা দূরে সরে যাওয়ায় ভেবেছিলাম ভবনটি হয়তো রক্ষা হবে। কিন্তু দুইদিন থেকে পানি বেড়ে যাওয়ায় আবারও ভাঙন শুরু হয়েছে। রবিবার ভোরে ভবনটির একাংশ নদে ধ্বসে পড়ে। বাকিটাও হয়তো চলে যাবে।


ভবন নিলামের প্রশ্নে সভাপতি বলেন, ‘নদী ভাঙন বন্ধ ছিল। আমরা ভেবেছিলাম হয়তো এদিকে আর ভাঙবে না। কিন্তু হঠাৎ করে রবিবার ভোরে ভেঙে পড়েছে।’ নতুন স্থানে ভবন নির্মাণের জন্য শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরে আবারও আবেদন করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।
কলেজ অধ্যক্ষ জহিরুল ইসলাম মন্ডল বলেন, এই প্রতিষ্ঠানটি নয়ারহাট ইউপির একমাত্র মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পাঁচ শতাধিক শিক্ষার্থী রয়েছে। ভবনটি পাওয়ার পর আমরা অত্যন্ত আনন্দিত হয়েছিলাম। কিন্তু ব্রহ্মপুত্রের ভাঙনে সে আনন্দ মাত্র কয়েক বছরেই বেদনায় পরিণত হলো। শেষ রক্ষা হলো না। এখন নতুন স্থানে শিক্ষা কার্যক্রম চললেও শ্রেণিকক্ষ সংকট রয়েছে। নতুন ভবন পেলে শিক্ষার্থীদের পাঠদানে সুবিধা হবে।


নয়ারহাট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আসাদুজ্জামান বলেন, ‘পাকা ভবনটি ব্রহ্মপুত্রের ভাঙনে ধ্বসে পড়েছে। এর দরজা জানালা ও অন্যান্য আসবাবপত্র সরিয়ে নতুন স্থানে নেওয়া হয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘ভাঙনের কারণে পাকা ভবনটি গতবছর পরিত্যাক্ত ঘোষণা করা হয়। পরে ওই স্থান থেকে প্রায় দেড় কিলোমিটার দূরে বিদ্যালয়টি স্থানান্তর করা হয়। সেখানেই বিদ্যালয়ের কার্যক্রম চলমান রয়েছে। তবে ভবন সংকটে অনেক শিক্ষার্থীকে খোলা আকাশের নিচে ক্লাস করতে হয়। এই চরে পাকা ভবন না দিয়ে চর ডিজাইনের ভবন দেওয়া প্রয়োজন। যাতে ভাঙনের কবলে পড়লে ভবন ভেঙে সরিয়ে নেওয়া যায়। আমরা সেভাবেই স্থানীয় প্রশাসনকে জানিয়েছি।’ ভাঙনে নয়ারহাট বাজারের বিভিন্ন স্থাপনা সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে বলেও জানান চেয়ারম্যান।


বিবার্তা/রাফি/মাসুম

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com