মইজ্জ্যারটেক টোল প্লাজায় বন বিভাগের প্রকাশ্যে চাঁদাবাজি
প্রকাশ : ১৩ জুন ২০২৩, ২০:০১
মইজ্জ্যারটেক টোল প্লাজায় বন বিভাগের প্রকাশ্যে চাঁদাবাজি
জে. জাহেদ, চট্টগ্রাম
প্রিন্ট অ-অ+

চট্টগ্রাম বন বিভাগের অধীন শহর রেঞ্জের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে কাঠ, বাঁশ ও ফার্নিচারের ট্রাক হতে দৈনিক লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। কর্ণফুলী উপজেলার মইজ্জ্যারটেক টোল প্লাজা এলাকায় চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কে শহর রেঞ্জের বন কর্মকর্তারা প্রকাশ্যে চাঁদাবাজি করছেন। শহর রেঞ্জ থেকে চাঁদা নেয়ার সময় ব্যবহৃত গাড়ির নম্বর চট্ট মেট্টো হ-২৭৭৮৮৭ বলে জানা যায়। একই সময়ে মাঝেমধ্যে বন বিভাগের একটি মোটর সাইকেলকেও অভিযানে অংশ নিতে দেখা যায়।


জানা যায়, প্রতিদিন সন্ধ্যা থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত কাঠ বহনকারী লরি ও ট্রাকগুলোকে টোলপ্লাজার সামনে দাঁড় করিয়ে বন বিভাগকে চাঁদা আদায় করতে দেখা গেছে। এতে হয়রানি ও ভোগান্তির শিকার হচ্ছে কাঠ ব্যবসায়ীরা। দীর্ঘ কয়েক মাসের অনুসন্ধানে তথ্যে দেখা যায়, কর্ণফুলীর মইজ্জ্যারটেক টোল প্লাজা এলাকা দিয়ে প্রতিদিন কাঠ বহনকারী ৩০ থেকে ৪০টির মতো গাড়ি চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের ওপর দিয়ে যাতায়াত করে।


এ সময় শহর রেঞ্জ বিভাগের বন কর্মকর্তারা কাগজপত্র পরীক্ষার নামে প্রতিটি গাড়িকে মইজ্জ্যারটেক টোলপ্লাজার সামনে দাঁড় করিয়ে গাড়ি থেকে ২ হাজার, দেড় হাজার ও মিনি ট্রাক থেকে ১ হাজার টাকা করে নিতে দেখা যায়।


গত কয়েক মাসের অনুসন্ধানে তথ্য মিলে, প্রায় সময় এ সড়কে কাঠ ও বাঁশ বহন করে একই পরিবহন। এরমধ্যে বেশির ভাগ ট্রাক। মাস জুড়ে কাঠ পরিবহনে দেখা যায়- ট্রাক নম্বর চট্ট মেট্টো ট ১১০৮৬৫, চট্ট মেট্টো ট ১১১১২৩, চট্ট মেট্টো ঝ ৮০৭২২, শেরপুর ঠ ১১০০০৬, চট্ট মেট্টো-ঠ ২২০০৭১, চট্ট মেট্টো ঠ ১১১০২২, চট্টমেট্টো ঠ ১২০৬৭৯, চট্ট মেট্টো ঠ ১৪১৪১২, চট্ট মেট্টো ঠ ১১০১০১, চট্ট মেট্টো ঠ ৬২০২৪৬, চট্ট মেট্টো ঠ ১১৪১৩৭ ও ঢাকা মেট্টো ঠ ১৪১২৪১।


অভিযোগ এসব গাড়ি প্রতিনিয়ত কাঠ, ফার্নিচার ও বাঁশসহ বিভিন্ন বনজ মালামাল চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কে পরিবহন করে আসছেন। চট্টগ্রাম পার্বত্য এলাকার তিন জেলা ও চট্টগ্রামের বিভাগের অন্য জেলা থেকে আসা কাঠ, ফার্নিচার ও বাঁশ বিভিন্ন জেলায় পরিবহনে সংশ্লিষ্ট জেলার বন বিভাগ হতে ট্রানজিট পাশের মাধ্যমে সরবরাহ করা হয়। কিন্তু পণ্য নিয়ে গন্তব্যস্থলে যাওয়া পর্যন্ত সড়কের প্রতিটি বিটে দিতে হয় চাঁদা। প্রয়োজনীয় কাগজপত্র থাকা সত্বেও সংশ্লিস্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীদের চাহিদা পূরণে বাধ্য হচ্ছেন তারা।


খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চট্টগ্রাম দক্ষিণ বিভাগের অধীনে রাঙ্গুনিয়া, পদুয়া, পটিয়া কালীপুর জলদি, বারবাকিয়া, চুনতি, মাদারসা, কুরশিয়া, দোহাজারি, পোমরা পরীক্ষণ ফাঁড়ি, পটিয়া এসএফএনটিসির আওতাধীন ৩৬টি বিট রয়েছে। রয়েছে কোস্টাল উপকুল, বোটানিক্যাল গার্ডেন, কক্সবাজার উত্তর- দক্ষিণ, লামা, বান্দরবান, পালবোর্ড বান্দরবান, বন ব্যাবহারিক বিভাগ নিয়ন্ত্রণ করেন বন বিভাগ চট্টগ্রাম অঞ্চল।


চট্টগ্রামের কাঠ ব্যবসায়ী আব্দুর রহমান বলেন, ‘কাঠ পরিবহনে ট্রানজিট পারমিশন থাকার পরও প্রতিটি বিটে টাকা দিতে হয়। না দিলে গাড়ি ঘন্টার পর ঘন্টা বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে দাঁড় করিয়ে রাখে। কাঠ সিজ বা মামলা দেওয়ার হুমকি দেয়। এজন্য বাধ্য হয়ে তাদের চাঁদা দিতে হয়।’ নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মইজ্জ্যারটেক টোলপ্লাজায় কর্মরত এক কর্মচারী বলেন, ‘আমাদের টোল প্লাজার সিসিটিভিগুলো পরীক্ষা করলে দেখা যাবে বনবিভাগের লোকজন প্রতিদিন এসে কিভাবে চাঁদাবাজি করে। শহর থেকে বনবিভাগের গাড়িতে করে এসে টোলে বসেন। এরপর চারজন দু’পাশে দাঁড়িয়ে চাঁদা আদায় করে।’


অথচ কোন অবৈধ কাঠ ধরা পড়লে ১৯৮৭ সালের ৬৮ ধারা মতে মামলা করে দেওয়া হয়। কোন বনজ দ্রব্য অবৈধ ভাবে পরিবহনে ধরা পড়লে ১৯২৭ সালের বন আইন পরবতির্তে ১৯৯০ সাল ও ২০০০ সালের সংশোধিত বন আইনের বিধান অনুযায়ী মামলা বা জরিমানা করা হয়। পটিয়া রেঞ্জ কর্মকর্তা নূরে আলম হাফিজ বিবার্তাকে বলেন, ‘আমাদের জনবল কম। কর্ণফুলীতে এসে ডিউটি করার মত লোক নেই। আর মইজ্জ্যারটেকে যারা বসে ডিউটি করেন তাঁরা শহর রেঞ্জের লোকজন।’


চট্টগ্রাম শহর রেঞ্জের বন কর্মকর্তা মো. আরিফুল আলম বিবার্তাকে বলেন, ‘মইজ্জ্যারটেকে যে গাড়িটি দাঁড়িয়ে প্রতিদিন সন্ধ্যার পর থেকে চাঁদাবাজি করে বলছেন, সেটি আমাদের গাড়ি নম্বর নয়। তবুও মিতসুবিশি ওই গাড়ির নম্বর মিলিয়ে দেখব। আমি নোট করে রাখলাম। আমি এখন ট্রেনিং এ আছি। পরে কথা বলব।’


চট্টগ্রাম দক্ষিণ বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল মামুন বিবার্তাকে বলেন, ‘আমি নতুন যোগদান করেছি। শহর রেঞ্জের অভিক্ষেত্র কতটুকু তাও দেখে জানাব। সম্ভব হলে অভিযুক্তের ছবি, ভিডিও ও গাড়ির নম্বর আমার হোয়াটসঅ্যাপে পাঠাতে পারেন। বিষয়টি খোঁজ খবর নিয়ে ব্যবস্থা নেব।’ চট্টগ্রাম অঞ্চলের বন সংরক্ষক বিপুল কৃষ্ণ দাস বিবার্তাকে বলেন, ‘টোলপ্লাজায় বসে চেকপোস্টের নামে টাকা নেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। তারপরও অভিযোগের বিষয়টি খতিয়ে দেখবেন বলে তিনি জানিয়েছেন।’


কিন্তু অবাক করা বিষয় গতকাল ১২ জুন বনবিভাগের সংশ্লিষ্ট সকলের বক্তব্য নেওয়ার পর ওই গাড়ির আর দেখা মিলেনি টোলপ্লাজায়।


বিবার্তা/রোমেল/জবা

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com