কুড়িগ্রামের অস্থায়ী স্কুল সরকারিকরণের দাবি
প্রকাশ : ১০ জুন ২০২৩, ১৬:৪২
কুড়িগ্রামের অস্থায়ী স্কুল সরকারিকরণের দাবি
চিলমারী (কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধি
প্রিন্ট অ-অ+

কুড়িগ্রামের চিলমারীর চরাঞ্চলে শিক্ষা থেকে ঝড়ে পড়া অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থীদের আলোর পথ দেখাতে এগিয়ে এসেছেন উপজেলা প্রশাসন। নিয়েছেন ব্যতিক্রমী এক উদ্যোগ। গড়ে তুলেছেন ভিন্ন এক স্কুল। স্থানীয়রা ও ইউএনও’র প্রচেষ্টায় প্রায় চারশতাধিক পরিবারের সন্তানদের লেখাপড়া নিশ্চিত করতে আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরে চালু হয়েছে ভ্রাম্যমাণ বা অস্থায়ী একটি স্কুল। বর্তমানে স্কুলটিতে অর্ধশত শিক্ষার্থীরা লেখাপড়া করছেন। স্কুলটি সরকারিকরণের দাবি জানিয়েছেন ওই এলাকার বসবাসরত মানুষজন। তাঁরা বলছেন, স্কুলটিতে সরকারি পৃষ্টপোষকতা বা সরকারিকরণে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ দরকার।


উপজেলার চিলমারী ইউনিয়নের আমতলার চরে আশ্রয়ণ প্রকল্পের একটি ঘরে গড়ে তোলা হয়েছে প্রাথমিক বিদ্যালয়। বিদ্যালয়টির নাম দেয়া হয়েছে আমতলা শহিদ মুক্তিযোদ্ধা প্রাথমিক বিদ্যালয়।


খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ব্রহ্মপুত্র নদের বুকে কয়েক বছর আগে জেগে ওঠে আমতলা নামের চরটি। দীর্ঘ একটি সময় নদী ভাঙন না থাকায় স্থায়িত্ব হয়েছে। বর্তমানে চরটিতে প্রায় চারশতাধিক পরিবার বসবাস করছেন। চরটি স্থায়িত্ব হওয়ায় ২০১৭ সালে একটি আশ্রয়ণ কেন্দ্র নির্মাণ করা হয়েছে। বর্তমানে ওই আশ্রয়ণ প্রকল্পের একটি ঘরে অস্থায়ী ভাবে পাঠদান পরিচালনা করা হচ্ছে।


শিক্ষা থেকে বঞ্চিত শিশুদের কথা জানতে পেরে গত বছরের শেষের দিকে আমতলার চর পরিদর্শন করেন চিলমারী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. মাহবুবুর রহমান। এরপর ওই চরের একটি আশ্রয়ণ কেন্দ্রের ঘরে স্থানীয়দের নিয়ে পরামর্শ করে গড়ে তোলেন ভ্রাম্যমাণ বা অস্থায়ী একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়। পরবর্তীতে বিদ্যালয়টির নামকরণ করেন আমতলা শহিদ মুক্তিযোদ্ধা প্রাথমিক বিদ্যালয়।


সরেজমিনে আমতলা শহিদ মুক্তিযোদ্ধা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, একটি ঘরে অস্থায়ীভাবে পাঠদান কার্যক্রম চলছে। ৫০জন শিক্ষার্থীর বিপরীতে নেয়া হয়েছে ওই এলাকার ২ জন নারী শিক্ষক। চলতি বছরের জানুয়ারি মাস থেকে প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণির পাঠদান কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে।


সপ্তাহে শুক্রবার ও শনিবার বন্ধ থাকে স্কুলটি। এছাড়া প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত পাঠদান কার্যক্রম চলে। সামান্য পারিশ্রমিকে শিক্ষার্থীদের পড়াচ্ছেন নাজমা আক্তার ও আঁখি আক্তার। বর্তমানে উপজেলা প্রশাসন ও স্থানীয়দের সহযোগিতায় বিদ্যালয়টির কার্যক্রম চলছে।


নামজা আক্তার বলেন, সামান্য সম্মানী নিয়ে তিনি শিক্ষার্থীদের পড়াচ্ছেন। মূলত ওই চরের শিশুদের শিক্ষার প্রতি আগ্রহ গড়ে তুলতে তিনি মেধা ও শ্রম দিয়ে যাচ্ছেন। তিনি বলেন, ইউএনও স্যারের উদ্যোগে এলাকাবাসীর সহযোগিতায় আমরা চেষ্টা করছি পাঠদানের মাধ্যমে শিশুদের শিক্ষা গ্রহণের। দ্রুত স্কুলটি সরকারিকরণের দাবি তার।


ওই স্কুলের কয়েকেজন শিক্ষার্থী বলেন, জানুয়ারি মাস থেকে স্কুলে আসছি। আগে তো স্কুল ছিল না পড়ালেখাও করি নাই। আর এখন এই চরের সবাই স্কুলে আসে। প্রতিদিন সকালে আসি দুপুর পর্যন্ত ক্লাস করি।


আমতলার চর এলাকার বীরমুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রশিদ বলেন, এই চরে প্রায় চারশত পরিবারের বসবাস, শতশত শিশু রয়েছে কিন্তু কোন বিদ্যালয় নাই, যার কারণে শিশুরা শিক্ষা থেকে বঞ্চিত। বর্তমানে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের উদ্যোগে আপাতত শিশুদের ঝরে পড়া রোধে ভ্রাম্যমাণ হিসাবে একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় চালু করা হয়েছে, এখানে সরকারি ভাবে বিদ্যালয় খুবই প্রয়োজন বলে তিনি দাবি জানান।


উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মো. মাহবুবুর রহমান জানান, কোনো শিশু যেন শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত না হয় তাই আমরা চেষ্টা করছি এবং ওই এলাকায় বিদ্যালয় নেই তাই সেখানে স্থানীয়দের সহযোগিতায় শিক্ষার্থী ঝরে পড়া রোধে বিভিন্ন কার্যক্রম হাতে নেয়া হয়েছে।


বিবার্তা/রাফি/সউদ

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com