ধর্ষণ ধামাচাপা দিতে আয়নীকে হত্যা : পিবিআই
প্রকাশ : ২৯ মার্চ ২০২৩, ১২:১৩
ধর্ষণ ধামাচাপা দিতে আয়নীকে হত্যা : পিবিআই
চট্টগ্রাম প্রতিবেদক
প্রিন্ট অ-অ+

চট্টগ্রাম নগরের পাহাড়তলী থেকে 'অপহৃত' শিশু আবিদা সুলতানা আয়নীর (১০) গলিত মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। বুধবার (২৯ মার্চ) ভোরে নগরের পাহাড়তলী থানাধীন মুরগী ফার্ম আলম তারারপুকুর পাড় থেকে আবিদা সুলতানা আয়নীর (১০) মরদেহ চট্টগ্রাম মেট্টো পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) উদ্ধার করেন।


গত ২১ মার্চ শিশুটি নিখোঁজ হয়। শিশুটিকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে বলে ধারণা পুলিশের। এ ঘটনায় মোহাম্মদ রুবেল নামের স্থানীয় ওই তরকারি বিক্রেতাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।


পিবিআই এর কয়েকজন কর্মকর্তা জানান, গত ২১ মার্চ বিড়াল ছানা দেবে বলে আয়নীকে দেখা করতে বলেন রুবেল। এরপর তাকে নিয়ে একটি ভবনের চতুর্থ তলায় রুবেল তার ফুফুর বাসায় নিয়ে যান। বিকেল আনুমানিক ৫টার দিকে শিশুটিকে ধর্ষণ করা হয়। পরে রুবেলের বীর্যপাত হয়ে গেলে প্যান্ট খোলা অবস্থায় দরজা খুলে পালানোর চেষ্টা করে শিশুটি। একপর্যায়ে দরজা খুলে বেরও হয়ে যায় সে। তবে বাথরুম থেকে বের হয়ে রুবেল দ্রুত আয়নীকে টেনে আবার ভবনের ভেতরে নিয়ে যান। ঘটনা জানাজানি হবে এ আশংকায় শিশু আয়নীকে গলা টিপে হত্যা করেন রুবেল। যদিও আয়নী ওই সময় তাকে বলেছিল ধর্ষণের বিষয়টি কাউকে বলবে না সে।


পিবিআইয়ের একজন কর্মকর্তা বলেন, কয়েকদিন আগে ওই এলাকায় অন্য একটি ধর্ষণের ঘটনা জানাজানি হয়। এটিও এরকমভাবেই জানাজানি হয়ে যাবে এ আশংকায় রুবেল শিশু আয়নীকে হত্যা করেন। বিকেলে হত্যার পর ওইদিন রাতে শিশুর মরদেহ বস্তায় ভরে পার্শ্ববর্তী একটি ডোবায় ফেলে দেওয়া হয়। পরে অভিযুক্তের দেওয়া স্বীকারোক্তি মোতাবেক বুধবার (২৯ মার্চ) ভোরে আয়নীর মরদেহ উদ্ধার করা হয়।


পিবিআই চট্টগ্রাম মেট্রো ইউনিটের বিশেষ পুলিশ সুপার (এসপি) নাইমা সুলতানা বলেন, শিশু আয়নীকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। অভিযুক্ত রুবেলকে আটক করা হয়েছে। নিহতের মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। অভিযুক্তের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।


এর আগে ভুক্তভোগী শিশুর মা বিবি ফাতেমা তার সন্তানকে উদ্ধারে একাধিকবার পাহাড়তলী থানা পুলিশের শরণাপন্ন হয়েছিলেন। এদিকে আসামি মো. রুবেল (৩৫) তার সন্তানকে নিয়ে গেছেন বলে পুলিশকে জানিয়েছিলেন। কিন্তু মায়ের এমন অভিযোগ কানে না নিয়ে একটি মামলাও নেয়নি পাহাড়তলী থানা পুলিশ। নিরুপায় হয়ে শিশুর মা আদালতে একটি মামলা করেন। আদালত অভিযোগ শুনে নিয়মিত মামলা দায়েরের জন্য থানার ওসিকে নির্দেশ দেন। আদালতের আদেশ এখনো থানায় এসে পৌঁছেনি। এরইমধ্যে পুলিশের বিশেষায়িত সংস্থা পিবিআই শিশু আয়নীর মরদেহ উদ্ধার করে।


সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, থানা পুলিশের কাছে কোনো প্রতিকার না পেয়ে একপর্যায়ে ভুক্তভোগী শিশুর মা চট্টগ্রাম পিবিআই কার্যালয়ে যোগাযোগ করেন। পিবিআই কর্মকর্তারা অভিযোগ শুনার পর যাচাই-বাছাই করে মঙ্গলবার অভিযুক্ত রুবেলকে হেফাজতে নেয়। এরপর তাকে রাতভর জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। কিন্তু কোনোভাবে মুখ খুলছিলেন না রুবেল। পিবিআই কর্মকর্তাদের টানা জিজ্ঞাসাবাদে একপর্যায়ে ভোর রাতে মুখ খুলেন তিনি। জানান শিশু আয়নীকে তিনিই হত্যা করেছেন। বস্তায় ভরে তার মরদেহ ফেলে দেন পার্শ্ববর্তী ডোবায়। তৎক্ষণাৎ তাকে নিয়ে অভিযানে গিয়ে পিবিআই কর্মকর্তারা আয়নীর মরদেহ উদ্ধার করে।


সরেজমিনে দেখা যায়, মরদেহ উদ্ধারের সময় বুধবার ভোরে পাহাড়তলী থানার আব্দুর কাজীর দিঘীরপাড়া এলাকায় বিপুল সংখ্যক লোক জড়ো হন। ঘটনাস্থলে ভুক্তভোগীর শিশুর মা এবং তার নিকটাত্মীয়রাও আসেন। তারা সবাই অভিযুক্ত রুবেলের ফাঁসি দাবি করেন।


এসময় ভুক্তভোগী শিশুর মা বিলাপ করতে করতে বলেন, ‘আমি পুলিশকে বলেছিলাম রুবেল আমার শিশুকে নিয়ে গেছে। কিন্তু তারা উল্টো আমাকে বলে রুবেল নাকি ভালো ছেলে। রুবেল এ কাজ করতে পারেন না। তোমার মেয়ে প্রেম করে! আমার ১০ বছরের মেয়ে কীভাবে প্রেম করে? আপনারা বলেন? এখন আমার বুক খালি হয়ে গেল। আমার মেয়ের কাপড় পড়বে কে? বেতন পেলে আমার মেয়েকে মিষ্টি-সন্দেশ কিনে দিতাম। এখন কাকে কিনে দেবো? আমার একমাত্র মেয়েকে রুবেল এভাবে হত্যা করল!’


তিনি আরও বলেন, ‘আমার মেয়ে ওর বাবাকে বলত, আব্বু আমি কুরআন নিয়েছি। আমার জন্য দোয়া করিও যেন তাড়াতাড়ি শেষ করতে পারি। কুরআন পড়তে বেশি আগ্রহ ছিল মেয়েটির। রুবেল আমার মেয়েকে কুরআন পড়তে দেয়নি।’


আদালত সূত্র জানায়, শিশু আয়নীকে অপহরণের অভিযোগে মঙ্গলবার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন বিশেষ ট্রাইব্যুনাল-২ শরমিন জাহানের আদালতে মামলা দায়ের করেন ভুক্তভোগীর মা। এতে একমাত্র আসামি করা হয়- মো. রুবেল (৩৫) নামের একজনকে। তার বাড়ি নগরের পাহাড়তলী থানার কাজীর দিঘি এলাকায়।


মামলার অভিযোগে উল্লেখ করা হয়- ভুক্তভোগী শিশু নগরের একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ে। তার মা এবং বাবা দুজনই পোশাক কারখানায় চাকরি করেন। কয়েকদিন আগে ভুক্তভোগী শিশু তার মাকে জানায়, স্কুলে তার এক বান্ধবী বিড়াল ছানা কিনেছে। ওই সময় সে তার মাকে অনুরোধ করে, তাকেও একটি বিড়াল ছানা কিনে দেওয়ার। তার মা তাকে বেতন পেলে কিনে দেবে বলে আশ্বাস দেয়। এরপর সে তার মাকে বলে, রাস্তায় একজন তরকারি বিক্রেতা তাকে বিড়াল ছানা এনে দেবে।


এরপর মা আয়নীকে তার কাছে যেতে বারণ করেন। এ ঘটনার কয়েকদিন পর গত ২১ মার্চ স্কুলে গিয়ে সে আর ফিরে আসেনি। পরবর্তীতে সিসিটিভি ফুটেজ পর্যালোচনা করে ঘটনার দিন এবং তার আগের দিন আয়নীকে মামলার অভিযুক্ত ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলতে দেখা যায়।


এদিন আদালত অভিযোগ শুনে মামলাটি সরাসরি এফআইআর হিসেবে গণ্য করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য পাহাড়তলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) আদেশ দেন।


বিবার্তা/জাহেদ/মাসুম

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com