আশুগঞ্জে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি স্তম্ভ দখল করে দোকান নির্মাণ!
প্রকাশ : ২৬ জানুয়ারি ২০২৩, ২০:৩০
আশুগঞ্জে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি স্তম্ভ দখল করে দোকান নির্মাণ!
ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি
প্রিন্ট অ-অ+

দেশের সীমান্তবর্তী জেলা ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ মহান মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম তীর্থভূমি। মুক্তিযুদ্ধের সূচনালগ্নে ও বিজয়ের শেষ প্রান্তে আশুগঞ্জে বীর মুক্তিযোদ্ধা ও পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর মধ্যে ব্যাপক সম্মুখ যুদ্ধ সংঘটিত হয়। এই যুদ্ধে জানমালের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। মহান মুক্তিযুদ্ধের সেই দুঃসহ স্মৃতিকে অমলিন করে রাখতে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের পাশে আশুগঞ্জ গোলচত্তর এলাকায় গড়ে তোলা হয় মুক্তিযুদ্ধের সম্মুখ সমরের স্মৃতি স্তম্ভ।


তবে সম্প্রতি মুক্তিযুদ্ধের সম্মুখ সমরের এই স্মৃতি স্তম্ভটি অবৈধ প্রভাব খাটিয়ে দখল করে নিচ্ছে প্রভাবশালী একটি চক্র। স্মৃতি স্তম্ভের দেয়াল ভেঙ্গে নির্মাণ করা হচ্ছে পাকা দোকান ঘর। স্মৃতি স্তম্ভের মূল অবকাঠামোকে পিছনে ফেলে এমন অবৈধ দখলের কারণে চরম অসন্তোষ ও ক্ষোভ বিরাজ করছে স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধাদের মাঝে।


সংক্ষুব্ধ মুক্তিযোদ্ধারা জানান, উপজেলার চরচারতলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ফাইজুর রহমান ছয়জন মেম্বারের নেতৃত্বে আশুগঞ্জ গোলচত্তরে অবস্থিত মুক্তিযুদ্ধের সম্মুখ সমরের স্মৃতি স্তম্ভ দখল করে পাকা দোকান ঘর নির্মাণ করছেন। ভেঙ্গে ফেলা হয়েছে স্মৃতি স্তম্ভের নিরাপত্তা দেয়াল। স্মৃতি স্তম্ভের মূল অবকাঠামোকে পিছনে ফেলে তৈরি করা হচ্ছে পাকা দোকানঘর। অথচ এ বিষয়ে উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ বা স্থানীয় কোন মুক্তিযোদ্ধাই ওয়াকিবহাল নন। একটি চক্র নিজেদের স্বার্থে এমন অপকর্ম করছে বলে দাবি বীর মুক্তিযোদ্ধাদের।


এ ব্যাপারে মুক্তিযোদ্ধা সেক্টর ফোরাম আশুগঞ্জ উপজেলার সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. আব্দুল করিম বলেন, মহান বিজয়ের ঊষালগ্নে ৯ ডিসেম্বর আশুগঞ্জে ভারতীয় মিত্রবাহিনী-মুক্তিযোদ্ধা এবং পাকিস্তানি বাহিনীর মধ্যে ভয়াবহ যুদ্ধ হয়। যুদ্ধে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীকে পরাজিত করার মাধ্যমে ১০ ডিসেম্বর আশুগঞ্জ মুক্ত হয়েছিল। এই যুদ্ধে বিপুলসংখ্যক মিত্রবাহিনীর সদস্য ও মুক্তিযোদ্ধা জীবন উৎসর্গ করেছিলেন। সেই ভয়াবহ যুদ্ধের দুঃসহ স্মৃতি আশুগঞ্জবাসী এখনও বয়ে বেড়াচ্ছে। সেই স্মৃতিকে স্মরণীয় করে রাখতে আমরা সংশ্লিষ্ট দফতরের অনুমতি নিয়ে সরকারি-বেসরকারি বাজেটে বহু বছর আগে সম্মুখ সমরের স্মৃতি স্তম্ভ বানিয়েছি। প্রতিবছর ১০ ডিসেম্বর বীর মুক্তিযোদ্ধাসহ উপজেলাবাসী স্মুতি স্তম্ভ চত্ত্বরে আশুগঞ্জ মুক্ত দিবস পালন করে। কিন্তু কতিপয় প্রভাবশালী মহল সেটি দখল করে বাণিজ্য করার চেষ্টা করছে। এটি মুক্তিযোদ্ধারা কখনোই মেনে নেবে না।


মুক্তিযুদ্ধকালীন কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. জাহাঙ্গীর খন্দকার বলেন, মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি স্তম্ভ কেউ দখল করবে, আর সেটা দেখব—এমনটি কখনোই ভাবিনি। এসব দেখার আগে মরে যাওয়া ভাল ছিল। এজন্য যুদ্ধ করিনি। শেষ ইজ্জতটুকুও বিলীন হয়ে যাচ্ছে। এর চেয়ে ন্যাক্কারজনক আর কোন কাজ হতে পারে না। যারা মুক্তিযুদ্ধের সম্মুখ সমরের স্মৃতি স্তম্ভ দখল করছে তাদের ধিক্কার জানাই। অতি দ্রুত দখলদারদের উচ্ছেদ করে বিচারের আওতায় আনার দাবি করছি। আমরা মুক্তিযোদ্ধারা শেষ ইজ্জতটুকু নিয়ে মরতে চাই।


সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, তি স্তম্ভের দেয়াল ভেঙ্গে সেখানে দ্রুত দোকান নির্মাণ কাজ চলছে। স্মৃতি স্তম্ভটির সামনেই রাখা হয়েছে ইট, বালু ও অন্যান্য নির্মাণ সামগ্রী। এসময় চরচারতলা ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বার আবুল কালামকে দোকান নির্মাণ কাজ তদারকি করতে দেখা যায়। তিনি বলেন, এখানে মুক্তিযোদ্ধাদের উন্নয়নে দোকান ও কফি শপ করা হবে। আমাদের সাথে দুজন মুক্তিযোদ্ধাও পার্টনার রয়েছে।


তবে বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. জাহাঙ্গীর খন্দকার ও মো. আব্দুল করিমসহ বেশ কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা বলেন, মুক্তিযোদ্ধাদের উন্নয়নের বিষয়টি একটি প্রতারণা। এ ব্যাপারে কোন মুক্তিযোদ্ধার সাথে পরামর্শ হয়নি। আমরা সরকারি জায়গায় স্মৃতি স্মম্ভের অনুমতি নিয়েছি। এখানে কাউকে ব্যবসার অনুমতি দেয়া হয়নি। দখলদাররা সম্পূর্ণ অনৈতিকভাবে জাতিকে অপমান করে তাদের স্বার্থ হাসিলের চেষ্টা করছে। এক্ষেত্রে আমাদের কোন সহযোদ্ধার কাঁধে ভর করে থাকলেও তা হবে জাতি ও শহিদদের সাথে বেইমানি।


এ ব্যাপারে আশুগঞ্জ উপজেলা চেয়াম্যান হানিফ মুন্সিকে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, মুক্তিযোদ্ধের বর্তমান ভারপ্রাপ্ত কমান্ডার আশুগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার নিজেই। উনার চোখের সামনে এই সব কি করে হচ্ছে?


আশুগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও আশুগঞ্জ উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের ভারপ্রাপ্ত কমান্ডার অরবিন্দ বিশ্বাসের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিষয়টি আমি এইমাত্র জানতে পারলাম। দ্রুতই দখলদারদের উচ্ছেদ ও কার্যকরি ব্যবস্থা নেয়া হবে।


এদিকে, চরচারতলা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ফাইজুর রহমানের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করলে জানা যায়, তিনি চিকিৎসাজনিত কারণে ভারতে রয়েছেন। তার হুয়ার্টসঅ্যাপ এ কল দিয়ে সাড়া পাওয়া যায়নি।


বিবার্তা/আকন্ঞ্জি/জামাল

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com