টাঙ্গাইলে সরিষার বাম্পার ফলন; কৃষকের চোখে-মুখে আনন্দ
প্রকাশ : ১৭ জানুয়ারি ২০২৩, ১৯:৩০
টাঙ্গাইলে সরিষার বাম্পার ফলন; কৃষকের চোখে-মুখে আনন্দ
ইমরুল হাসান বাবু, টাঙ্গাইল
প্রিন্ট অ-অ+

দিগন্ত জোড়া ফসলের মাঠ সরিষার হলুদ ফুলে ছেয়ে গেছে। যতদূর চোখ যায় দু-একটি বাড়ি বাদে হলুদ আর হলুদ- এ যেন হলুদের রাজ্য। সরিষা ক্ষেতে মাঘের কনকনে হিমেল হাওয়ায় দোল খাচ্ছে কৃষকের স্বপ্ন। হলুদের রাজ্যে মৌ-মাছির গুনগুন শব্দে মুখরিত ফসলের মাঠ, পেশাদার মধু সংগ্রহকারীরাও ব্যস্ত সময় পার করছেন। ভোজ্য তেলের দাম বৃদ্ধির কারণে এবার লক্ষমাত্রার চেয়ে বেশি জমিতে সরিষার আবাদ করা হয়েছে। বাম্পার ফলনের আশায় কৃষকের চোখে-মুখে ফুটে উঠেছে আনন্দের হাসি। সরিষার হলুদ চাদরে মৌ ঘ্রাণে মুগ্ধ হচ্ছেন প্রকৃতিপ্রেমীরা। অধিক জমিতে সরিষা আবাদে ভোজ্য তেলের অপার সম্ভাবনাও দেখছেন টাঙ্গাইল কৃষি বিভাগ ও সংশ্লিষ্টরা।


জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, চলতি মৌসুমে ৫২ হাজার ১২০ হেক্টর জমিতে সরিষা আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। এরমধ্যে- সদর উপজেলায় ৭ হাজার ২৫৮ হেক্টর জমিতে প্রণোদনা পেয়েছেন ২ হাজার ৫০০ জন কৃষক, বাসাইলে ৬ হাজার ৫০ হেক্টর জমিতে প্রণোদনা পেয়েছেন ২ হাজার ৬০০ জন, কালিহাতীতে ৪ হাজার ১৪০ হেক্টর জমিতে প্রণোদনা পেয়েছেন ২ হাজার ৫০০ জন, ঘাটাইলে ৩ হাজার ৪৬৬ হেক্টর জমিতে প্রণোদনা পেয়েছেন ২ হাজার ৪০০ জন ও নাগরপুরে ১১ হাজার ৫৮৬ হেক্টর জমিতে প্রণোদনা পেয়েছন ২ হাজার ৫০০ জন কৃষক।


মির্জাপুর উপজেলায় ১১ হাজার ৬১১ হেক্টর জমিতে প্রণোদনা পেয়েছেন ২ হাজার ৬০০ জন কৃষক, মধুপুরে ৭১২ হেক্টর জমিতে প্রণোদনা পেয়েছেন ২ হাজার ৪০০ জন, ভূঞাপুরে ২ হাজার ৪৫০ হেক্টর জমিতে প্রণোদনা পেয়েছেন ২ হাজার ৪০০ জন, গোপালপুরে ৪ হাজার ৬১০ হেক্টর জমিতে প্রণোদনা পেয়েছেন ২ হাজার ৪০০ জন, সখীপুরে ২ হাজার ৪৯০ হেক্টর জমিতে প্রণোদনা পেয়েছেন ২ হাজার ৪০০ জন, দেলদুয়ারে ৩ হাজার ১৮৭ হেক্টর জমিতে প্রণোদনা পেয়েছেন ২ হাজার ৪০০ জন এবং ধনবাড়ীতে ৫৬০ হেক্টর জমিতে প্রণোদনা পেয়েছেন ২ হাজার ৪০০ জন কৃষক।


এদিকে, ভোজ্য তেলের দাম বৃদ্ধির কারণে কৃষকরা স্বপ্রণোদিত হয়ে অতিরিক্ত আরও ৬ হাজার হেক্টর জমিতে সরিষা আবাদ করেছেন। ফলে জেলায় সরিষা আবাদের লক্ষমাত্রা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫৮ হাজার ১২০ হেক্টর জমি। সরকারিভাবে উপজেলা ও পৌরসভায় ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক পর্যায়ের ৩০ হাজার কৃষকের মাঝে বিনামূল্যে সরিষার বীজসহ সার বিতরণ করা হয়েছে। সরিষা চাষে বিভিন্ন ধরণের রোগ-বালাই ও ফসলের প্রাকৃতিক দুর্যোগরোধে মাঠ পর্যায়ে কৃষকদের সাথে সার্বক্ষণিক যোগযোগ রেখে সব ধরণের সহযোগিতা করছে কৃষি অধিদপ্তর।


কৃষি বিভাগ সূত্র জানায়, এ অঞ্চলের কৃষকরা উচ্চ ফলনশীল ও স্থানীয় উভয় জাতের সরিষা চাষ করেন। দুই জাতের সরিষা নভেম্বরের মধ্যে আবাদ করতে হয়। ফসল ঘরে উঠতে সময় লাগে জাত ভেদে ৭০ থেকে ৯০ দিন। বর্তমানে টাঙ্গাইল জেলার বিস্তীর্ণ মাঠজুড়ে এখন সরিষা ফুলের সমারোহ।


টাঙ্গাইল সদর, মধুপুর, ধনবাড়ী, গোপালপুর, কালিহাতী, ভূঞাপুর ও গোপালপুর উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, বন্যার ক্ষতি পুষিয়ে নিতে আবাদি, অনাবাদি এবং আনাচে-কানাচের পরিত্যক্ত জমিগুলোকেও সরিষা আবাদের আওতায় আনা হয়েছে। গত বছরের তুলনায় চলতি মৌসুমে প্রায় দ্বিগুণ সরিষা চাষাবাদ করেছে কৃষকরা। এসব জমিতে সরিষায় গাছে ফুল ও ফল এসেছে। হলুদ ফুলের জমির পাশে পেশাদার মৌ-চাষিরা মৌ-বক্স বসিয়ে মধু সংগ্রহ করছেন। পাশাপাশি প্রকৃতিপ্রেমিরা ছবি তুলে, ভিডিও করে এর সৌন্দর্য্য উপভোগ করছে।


টাঙ্গাইল সদর উপজেলার ছোটবাসালিয়া গ্রামের ফজলুল হক, নাজমুল ইসলাম, মগড়া গ্রামের রফিকুল, হাসমত আলী, ভূঞাপুর উপজেলার ফলদা গ্রামের আব্দুল করিম, কামরুল ইসলাম, কালিহাতীর রুস্তম আলী, ধলা সাহা, রজব আলী, ধনবাড়ীর আব্দুল বারিক, রহিম মোল্লা, ফয়সাল হোসেনসহ অনেকেই বিবার্তাকে জানান, বর্ষা মৌসুমে যেসব জমি পানির নিচে থাকে সেগুলোর পাশাপাশি এবার বাড়ির আনাচে-কানাচে থাকা জমিতেও সরিষা আবাদ করা হয়েছে। অনেকে বন্যার পানিতে ফসলের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে বেশি জমিতে সরিষা আবাদ করেছেন। এ মৌসুমে কৃষি বিভাগ থেকে বিনামূল্যে সরিষার বীজ ও সার পাওয়ায় তারা উৎসাহিত হয়েছেন।



তারা জানান, সরিষায় এখন ফুল ফুটেছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে চলতি মৌসুমে সরিষার বাম্পার ফলনের সম্ভবনা আছে।


ঝনঝনিয়া গ্রামের কৃষক আব্দুর রহীম মিঞা বিবার্তাকে বলেন, এবার সরিষার আবাদ বেশ ভালো হয়েছে। তিনি ৩ বিঘা জমিতে সরিষা আবাদ করেছেন। হাল-চাষের খরচ ও অন্যান্য খরচ বেশি হওয়ায় কাঙ্খিত দাম নিয়ে তারা শঙ্কায় রয়েছেন। কৃষি বিভাগের সহযোগিতা অব্যাহত থাকলে এবং সরিষার ভালো দাম পেলে এই অঞ্চলে সরিষা চাষের পরিধি আগামিতে আরও বাড়বে বলে জানান তিনি।


পেশাদার মধু সংগ্রহকারী কালাম, রাজিব, আব্দুল হকসহ অনেকেই বিবার্তাকে জানান, তারা দেশের অন্য এলাকা থেকে এ জেলায় মধু সংগ্রহ করতে এসেছেন। এখানকার কোনো কোনো কৃষক তাদেরকে সহযোগিতা করলেও অধিকাংশ কৃষক ক্ষেতে মৌ-বাক্স বসাতে দেন না। অথচ সরিষা ক্ষেতে মৌমাছির কলরব থাকলে ফলন বেশি হয়। এটা অনেকেই বুঝতে চান না।


টাঙ্গাইল জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর (খামার বাড়ী)-এর উপ পরিচালক কৃষিবিদ মো. আহসানুল বাসার বিবার্তাকে বলেন, দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম জেলা হচ্ছে টাঙ্গাইল। এ জেলায় চলতি মৌসুমে ৫২ হাজার ১২০ হেক্টর জমিতে সরিষা আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর দিক-নির্দেশনায় ও কৃষিমন্ত্রীর আহ্বানে ভোজ্য তেলের ঘাটতি মেটাতে শতকরা ১৫ ভাগ সরিষা উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে আরও ৬ হাজার হেক্টর জমিতে অতিরিক্ত সরিষা আবাদ করা হয়েছে। জেলায় ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক পর্যায়ে প্রায় ৩০ হাজার কৃষকের মাঝে উচ্চ ফলনশীল জাতের সরিষা বীজ ও সার বিনামূল্যে বিতরণ করা হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে চলতি মৌসুমে কৃষকরা কাঙ্খিত ফলন পাবে।


বিবার্ত/রোমেল/জেএইচ


সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com