নোয়াখালীর ২৯৮ কমিউনিটি ক্লিনিকের মধ্যে ২৭টিতে নেই স্বাস্থ্যকর্মী
প্রকাশ : ১৭ জানুয়ারি ২০২৩, ১৭:৩৩
নোয়াখালীর ২৯৮ কমিউনিটি ক্লিনিকের মধ্যে ২৭টিতে নেই স্বাস্থ্যকর্মী
নোয়াখালী প্রতিনিধি
প্রিন্ট অ-অ+

মানুষের আয় ও আয়ুস্কাল বৃদ্ধির ফলে বার্ধক্যে পৌঁছা লোকের সংখ্যা বেড়েছে এবং এর সাথে যুক্ত হয়েছে জটিল রোগের ক্রমবর্ধমান বোঝা, ফলে দীর্ঘমেয়াদী এবং ব্যয়বহুল স্বাস্থ্য সেবার চাহিদা ক্রমেই বাড়ছে। নোয়াখালী জেলা প্রবাসী অধ্যুষিত জেলা, সরকারি ব্যবস্থায় স্বাস্থ্যখাতে তৃণমূলে কমিউনিটি ক্লিনিকসহ সুযোগ সুবিধায় ব্যাপক প্রসার ঘটলেও এখনও শক্তিশালী চিকিৎসা ব্যবস্থা গড়ে ওঠেনি । এর অন্যতম কারণ পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠির শিক্ষা ও সচেতনতার অভাব অন্যদিকে সরকারি হাসপাতালগুলোয় দালাল চক্রের দৌরাত্ম।


নোয়াখালীতে ৯টি উপজেলার ২৯৮টি কমিউনিটি ক্লিনিকের মধ্যে ২৭টিতে নেই স্বাস্থ্যকর্মী। যার ফলে একই ইউনিয়নের অন্য ক্লিনিকের কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডার দিয়ে জোড়া তালিতে চলছে ওই ক্লিনিকগুলোর কার্যক্রম। যার ফলে ৫৪টি ক্লিনিকে চাহিদা মোতাবেক সেবা পাচ্ছেন না স্থানীয় লোকজন। বেশির ভাগ ক্লিনিক ভবনের অবস্থা জরাজীর্ণ, এতে করে বর্ষার সময় পানি ঢুকে অনেক সময় ওষুধ নষ্ট হয়ে যায়। কর্তৃপক্ষ বলছে শূন্য পদ থাকা ওই ২৭টি ক্লিনিকের জন্য ইতোমধ্যে জনবল নিয়োগ প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে, সহসা ওই ক্লিনিকগুলোতে তাদের নিয়োগ দেওয়া হবে।


সোমবার সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত জেলার বিভিন্ন কমিউনিটি ক্লিনিকে সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায় এমন চিত্র।


সরজমিনে ঘুরে দেখা যায়, কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোতে প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত প্রায় অর্ধশত সেবা প্রত্যাশী রোগি সেবার জন্য আসে। বেশির ভাগ রোগিই হাঁচি, কাশি, শরীর ব্যাথা, জ্বর ও পেটে সমস্যা নিয়ে আসে এবং ক্লিনিক থেকে প্রাথমিক চিকিৎসা নেন। ক্লিনিক থেকে প্যারাসিটামল, ভিটামিন এ, বি, জিংক, এমোক্সিলিন ক্যাপসুল ও সেলাইনসহ ২৭ধরনের ওষুধ রোগিদের সরবরাহ করা হয়। তবে চাহিদার তুলনায় ওষুধ সরবরাহ কিছুটা কম বলে জানা গেছে।


২৯৮টি ক্লিনিকের মধ্যে ১০টি ভবন পুনঃনির্মাণ করা হয়েছে, কয়েকটিতে সংস্কারের কাজ করা হলেও বেশির ভাগ ভবনের অবস্থা জরাজীর্ণ। নতুন নির্মিত কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো ৫কক্ষ বিশিষ্ট হলেও আগের গুলোতে রয়েছে দুটি কক্ষ। যার মধ্যে একটি স্টোর ও একটি রোগিদের সেবা দেওয়ার জন্য ব্যবহার করা হয়। বেশির ভাগ ক্লিনিক ভবন প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে স্থানীয় কোন ব্যক্তির দানকৃত জমিতে ১৯৯৬ সাল থেকে।


নোয়ান্নই কমিউনিটি ক্লিনিকের সেবা নিতে আসা ফেরদৌসি বেগম (৩০) নামের এক রোগির সাথে কথা বললে তিনি বলেন, গত ২-৩দিন ধরে শরীরের বিভিন্ন অংশে ব্যাথা অনুভব করেন তিনি। বাড়ি থেকে জেলা সদর হাসপাতাল দূর হওয়ায় বাড়ির পার্শ্ববর্তী কমিউনিটি ক্লিনিকে এসেছেন প্রাথমিক সেবা নিতে। এখানে আসার পর ৫দিনের জন্য প্যারাসিটামল ও গ্যাসটিকের জন্য এন্টাসিড টেবলেট দেওয়া হয়েছে। ঘরের কাছে প্রাথমিক সেবা পাওয়ায় খুশি তিনি।


নোয়ান্নই কমিউনিটি ক্লিনিকের কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডার কামরুন নাহার বেগম জানান, মঙ্গলবার সকাল থেকে বেলা সাড়ে ১১টা পর্যন্ত ২৩জন রোগি সেবা নিয়েছেন। গত পহেলা জানুয়ারি এখান থেকে সেবা নিয়েছেন ৩৭জন, দুই তারিখে ১০, তিন তারিখে ৪০, চার তারিখে ৫৮, পাঁচ তারিখে ১০, সাত তারিখে ১০, আট জানুয়ারি ৩০ এবং ৯ জানুয়ারি চিকিৎসা নিয়েছেন ২৮জন রোগি। গত ডিসেম্বরের ৬তারিখে আগামি ৭মাসের জন্য ওষুধ আনা হয়েছে। বর্তমানে পর্যাপ্ত পরিমান ওষুধ মজুদ রয়েছে, ওষুধ বেশি থাকলে রোগিদের চাপও বেশি থাকে। রোগি থাকা পর্যন্ত আমরা সেবা দেওয়ার চেষ্টা করি।


এদিকে দুপুর ১২টার দিকে রতনপুর কমিউনিটি ক্লিনিকে গিয়ে সেটি বন্ধ পাওয়া যায়। সকাল থেকে এখান থেকে সেবা নিতে এসে ফিরে গেছেন অনেক রোগি। আবুল কাশেম নামের একজন অভিযোগ করে বলেন, এখানে যিনি দায়িত্বে আছেন তিনি নিয়মিত আসেন না। খবর নিয়ে জানা গেছে পার্শ্ববর্তী একটি ক্লিনিকে কোন স্বাস্থ্যকর্মী না থাকায় সপ্তাহে দুদিন তিনি ওখানে সার্ভিস দিয়ে থাকেন। পরে পার্শ্ববর্তী রামকৃষ্ণপুর কমিউনিটি ক্লিনিকে গিয়ে ওই কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডারকে পাওয়া যায়।


নূর নাহার নামের ওই কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডার বলেন, তিনি মুলত রতনপুরের দায়িত্বে রয়েছেন। গত বছরের এপ্রিলে রামকৃষ্ণপুরে দায়িত্বরত কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডার চাকরি ছেড়ে দেওয়ার পর এখানে পদটি শূন্য হয়ে যায়। ওই বছরের জুলাই পর্যন্ত এটি বন্ধ ছিলো। সেপ্টেম্বর থেকে সপ্তাহে সোমবার ও বৃহস্পতিবার আমি রামকৃষ্ণপুর ও বাকি ৪দিন রতনপুর ক্লিনিকে সেবা প্রদান করি।


তিনি আরও বলেন, রামকৃষ্ণপুর ক্লিনিক ভবনের অবস্থা খুবই জরাজীর্ণ। ভবনটির একটি কক্ষে সেবা দেওয়া হলেও সেটির নেই কোনো জানালা। স্টোর কক্ষেরও একই অবস্থায়। বর্ষাকালে কক্ষগুলোতে পানি ঢুকে ওষুধ নষ্ট হয়ে যায়। ভবনটি পুনঃনির্মাণ বা দ্রুত সংষ্কার করা না হলে এটি সেবা দেওয়ার অনুপোযোগী হয়ে পড়বে।


জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্যমতে, জেলার ৯টি উপজেলায় ইউনিয়ন ভিত্তিক মানুষের স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করতে ২৯৮টি কমিউনিটি ক্লিনিক স্থাপন করা হয়েছে। যার মধ্যে বর্তমানে ২৭টি ক্লিনিকে জনবল শূন্য রয়েছে। তবে সেগুলোতে রুটিন করে অন্য ক্লিনিকের স্বাস্থ্যকর্মী দিয়ে স্বাস্থ্যসেবা চালানো হচ্ছে। এরমধ্যে চাটখিলে ৫টি, হাতিয়ায় ৫টি, কবিরহাটে ১টি, সদরে ৭টি, সোনাইমুড়ীতে ৪টি ও সুবর্ণচরে ৫টি ক্লিনিক রয়েছে। এগুলোতে জনবল নিয়োগ প্রক্রিয়া প্রায় শেষ পর্যায়ে। আগামি ১-২মাসের মধ্যে তাদের ওই ক্লিনিকগুলোতে পদায়ন করা হবে।


আরও জানা যায়, প্রতিটি ক্লিনিকে একজন কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডার সপ্তাহে ৬দিন, একজন ফ্যামিলি ওয়েলফেয়ার এ্যাসিসটেন্ট (এফডব্লিউএ) সপ্তাহে দুদিন এবং একজন স্বাস্থ্য সহকারি দুদিন সেবা প্রদান করেন।


জেলা সিভিল সার্জন ডা. মাসুম ইফতেখার বলেন, গত ডিসেম্বর মাসে প্রতিটি ক্লিনিকে ২৭ ধরনের ওষুধ সরবরাহ করা হয়েছে। মানুষের চাহিদা মোতাবেক সকল ধরনের ওষুধ ক্লিনিকগুলোতে মজুদ রয়েছে। মানুষকে সর্বোচ্চ সেবা দেওয়ার জন্য আমরা প্রতিনিয়িত কাজ করে যাচ্ছি।


বিবার্তা/সবুজ/জেএইচ

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com