শিরোনাম
গৌরীপুরে মুক্ত দিবস পালিত
প্রকাশ : ০৮ ডিসেম্বর ২০২১, ১৬:৪০
গৌরীপুরে মুক্ত দিবস পালিত
গৌরীপুর (ময়মনসিংহ) প্রতিনিধি
প্রিন্ট অ-অ+

ময়মনসিংহের গৌরীপুর ১৯৭১ সালের ৮ই ডিসেম্বর পাক হানাদার বাহিনীর হাত থেকে মুক্ত হয়। বুধবার (৮ ডিসেম্বর) মুক্ত দিবস উপলক্ষে বঙ্গবন্ধু প্রতিকৃতিতে পুষ্পমাল্য অর্পণ, বর্ণাঢ্য শুভযাত্রা ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।


জানা যায়, ১৯৭১ সালের ডিসেম্বরের প্রথম দিকে গৌরীপুর শহর ছাড়া সমস্ত এলাকা মুক্তিযোদ্ধাদের দখলে চলে আসে। মুক্তিযোদ্ধাদের হামলায় পাক হানাদার বাহিনী (৭ ডিসেম্বর) রাতে শহর ছেড়ে রেলযোগে গৌরীপুর থেকে পালিয়ে যায়। ওইদিন রাতেই মুক্তিযোদ্ধা কোম্পানী কমান্ডার রফিকুল ইসলামের নেতৃত্বে একদল মুক্তিযোদ্ধার নিকট গৌরীপুর থানায় অবস্থানরত পুলিশ ও রাজাকাররা আত্মসমর্পন করে।


উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. আব্দুর রহিম জানান, ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চের পর এপ্রিলের প্রথম দিকে গৌরীপুরে শুরু হয় পাক হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে প্রথম পর্যায়ের সংগ্রাম। তৎকালীন আওয়ামী লীগ নেতা ও এমসিএ মরহুম হাতেম আলী ও গৌরীপুর মহাবিদ্যালয়ের অধ্যাপক সৈয়দ আলী হাসানের তত্ত্বাবধানে ১৭টি রাইফেল দিয়ে শুরু হয় স্থানীয়ভাবে প্রশিক্ষণ। তাদেরকে সহযোগিতা করেন সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত সৈনিক মো. মমতাজ উদ্দিন।


পাক বাহিনীর হামলা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ১৯৭১ সালের ২৩ এপ্রিল কিশোরগঞ্জ থেকে রেল পথে পাক হানাদার বাহিনী গৌরীপুরে প্রবেশ করে। হানাদার বাহিনী গৌরীপুরে প্রবেশ করেই শুরু করে হত্যা, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ। ওই দিন সকাল থেকেই পাকিস্তানী জঙ্গি বিমান গৌরীপুরের আকাশে টহল দিয়ে থেমে থেমে আকাশ থেকে রেলস্টেশন, কলেজসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ন স্থাপনা লক্ষ করে গুলি বর্ষণ করে। হানাদার বাহিনী গৌরীপুর শহরে প্রবেশ করে কালীপুর মোড়ে গুলি করে হত্যা করে স্কুল শিক্ষক ব্রজেন বিশ্বাসকে।


হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতিরোধ প্রসঙ্গে মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রহিম বলেন, আগস্ট মাসে গৌরীপুরে অবস্থানরত পাক বাহিনীর উপর হামলা শুরু করে প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধারা। এসময় তারা হানাদারদের চলাফেরা ও যোগাযোগ ব্যর্থ করে দিতে বিস্ফোরক দিয়ে উড়িয়ে দেন যোগাযোগের মাধ্যম টেলিফোন এক্সচেঞ্জ ও রেল সেতু। অগ্নিসংযোগ করে ধ্বংস করেন রেলস্টেশন ও পাটগুদাম।


এদিকে মুক্তিযোদ্ধাদের চোরাগোপ্তা হামলায় পাক বাহিনী ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে এবং শালীহর গ্রামে প্রবেশ করে গণহত্যা শুরু করে। সেখানে ১৪ জনকে গুলি করে হত্যা করে এবং ধরে নিয়ে যায় মুক্তিযোদ্ধা মরহুম আবুল হাসেমের পিতা ছাবেদ হোসেনকে। মুক্তিযুদ্ধের শেষের দিকে ৩০ নভেম্বর পলাশ কান্দায় পাক হানাদার বাহিনীর সাথে সম্মুখ যুদ্ধে শহীদ হন জসিম উদ্দিন, সিরাজুল ইসলাম, আনোয়ারুল ইসলাম মনজু ও মতিউর রহমান। শ্যামগঞ্জে শহীদ হন সুধীর বড়ুয়া।


উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক ডেপুটি কমান্ডার মো. নাজিম উদ্দিন বলেন, মুক্তিযুদ্ধে গৌরীপুরে যাদের উল্লেখযোগ্য অবদান রয়েছে তাদের মাঝে মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক মরহুম হাতেম আলী মিয়া (এমসিএ), মরহুম ডা. এম এ সোবহান, মরহুম মো. খালেদুজ্জামান, যুদ্ধকালীন ১১নং সাব-সেক্টর কমান্ডার মরহুম তোফাজ্জল হোসেন চন্নু ও মুজিব বাহিনীর কমান্ডার মরহুম মজিবুর রহমানের নাম অন্যতম।


এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা নাজিম উদ্দিন আহমেদ এমপি, গৌরীপুর উপজেলা প্রশাসন, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ও মুক্তিযোদ্ধা সন্তান কমান্ড কর্তৃক আয়োজিত অনুষ্ঠানে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মোফাজ্জল হোসেন খান, নির্বাহী কর্মকর্তা হাসান মারুফ,মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার আব্দুর রহিম, ডিপুটি কমান্ডার নাজিম উদ্দিনসহ মুত্তিযোদ্ধা, সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠন,রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ এবং বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন।


বিবার্তা/ হুমায়ন/ফরিদ


সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com