পবিপ্রবিতে নিয়োগ বাণিজ্যের প্রতিবাদ করায় অধ্যাপক বরখাস্ত, নেপথ্যে কী?
প্রকাশ : ২৭ জুন ২০২৪, ২১:০৩
পবিপ্রবিতে নিয়োগ বাণিজ্যের প্রতিবাদ করায় অধ্যাপক বরখাস্ত, নেপথ্যে কী?
সামিনা বিপাশা
প্রিন্ট অ-অ+

'আমরা জমিজমা বিক্রি করে টাকাটা রেডি করেছিলাম, প্রথমে দশ লক্ষ টাকা চেয়েছিল, পরে বলল পনেরো লক্ষ টাকা লাগবে। মেজ ভাই ভেঙে পড়ল, আত্মহত্যা করল। ভাইয়ের মৃত্যুর পর সেই শোকে মা মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে গেলেন আর বাবা স্ট্রোক করে প্যারালাইজড। আমি যতটুকু জানি, মেহেদী হাসান স্যার আমার মেজ ভাইয়ের মৃত্যুর বিষয়টি নিয়ে সোচ্চার ছিলেন, প্রতিবাদ করেছেন- বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন হয়তো চায়নি বিষয়টা নিয়ে কেউ কথা বলুক। এটা নিয়ে কথা হলে প্রশাসনের কেউ হয়তোবা জড়িয়ে যাবেন বলে তারা চাচ্ছেন না এটা নিয়ে কথা হোক।' কথাগুলো বিবার্তাকে বলছিলেন দেবাশীষ মণ্ডলের ছোটো ভাই আশীষ মণ্ডল। নিরুত্তাপ গলায় সহজ-সরল স্বীকারোক্তি, ভাইয়ের অকালমৃত্যুর শোক যার প্রতিটি কথায় লুকিয়ে ছিল। এই বক্তব্যে প্রেক্ষিতে প্রশ্ন দাঁড়িয়ে যায়, কে দেবাশীষ মণ্ডল? কে আশীষ মণ্ডল? আর কেই বা মেহেদী হাসান? কেন আত্মহত্যা? কীসের বাণিজ্য। আসুন, ঘটনার ভেতরে ঢোকা যাক।


পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (পবিপ্রবি)-এর ল্যাঙ্গুয়েজ অ্যান্ড কমিউনিকেশন বিভাগের অধ্যাপক মেহেদী হাসান, যাকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ২০২৩ সালের ২৮ মে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়টিতে ২০১৮ সালের শিক্ষক নিয়োগে বাণিজ্যের কবলে পড়ে পরিবারের শেষ সম্বলটুকু বিক্রি করে তা দিয়ে চাকরি প্রাপ্তির চেষ্টা করে বিশ্ববিদ্যালয়ের নোংরা নিয়োগবাণিজ্যের কাছে হেরে যান মেধাবী তরুণ দেবাশীষ মণ্ডল। পবিপ্রবি’র প্রভাষক পদে চাকরিপ্রার্থী ছিলেন কুষ্টিয়ার দেবাশীষ মণ্ডল। পনেরো লক্ষ টাকা দিয়ে তারচেয়ে কম মেধাবী প্রার্থী ছিনিয়ে নেয় কাঙ্ক্ষিত পদটি। এরপর আত্মহত্যা করেন মেধাবী দেবাশীষ মণ্ডল।



পরবর্তীতে ২০২৩ সালে দেবাশীষ মণ্ডলের মৃত্যুর বিষয় নিয়ে প্রতিবাদ করলে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের রোষানলে পড়েন অধ্যাপক মেহেদী হাসান। এমনটাই জানা যায় অনুসন্ধানে। মেহেদী হাসানের অভিযোগও এমনটাই। এদিকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের দাবি, মেহেদী হাসানের বিরুদ্ধে অভিযোগের সত্যতা আছে। এ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের তদন্ত কমিটি তদন্ত রিপোর্ট জমা দিয়েছে।



২০১৮ সালের ২৪ এপ্রিল পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে। নিয়োগ প্রক্রিয়ায় দুর্নীতি, অনিয়ম ও ঘুষ লেনদেনের ফলে নিয়োগ বঞ্চিত হয়ে মেধাবী শিক্ষার্থী দেবাশীষ মণ্ডল একই বছরের ১৪ মে আত্মহত্যা করে। বিষয়টি নিয়ে সেসময়ে পত্রপত্রিকায় সংবাদ প্রকাশিত হয়। দেবাশীষ মণ্ডল আত্মহত্যার ৫ম বর্ষপূর্তিতে অর্থাৎ ২০২৩ সালের ১৪ মে আত্মহত্যার ঘটনায় জড়িতদের বিচারের দাবিতে ক্যাম্পাসে পোস্টার বিতরণ করা হয়। ওই পোস্টারে দেবাশীষ মণ্ডলের মৃত্যুর ঘটনায় জড়িতদের পৃষ্ঠপোষকতার কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য (যিনি ২০১৮ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার ছিলেন) ও রেজিস্ট্রারের পদত্যাগের দাবি করা হয়। পোস্টার লাগানোর ঘটনায় অধ্যাপক মেহেদী হাসানকে অভিযুক্ত করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।


বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা কর্মকর্তা মুকিত মিয়া বাদী হয়ে প্রশাসনের নির্দেশে দুমকি থানায় ২০ মে ২০২৩ সালে একটি জিডি করেন। অধ্যাপক মেহেদী হাসানসহ কিছু ব্যক্তি এই কাজের সঙ্গে সম্পৃক্ত রয়েছে বলে এই মর্মে উক্ত জিডি করা হয়। কিন্তু পটুয়াখালী জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত ওই বছরের ১৮মে তদন্তের অনুমতি না-মঞ্জুর করে। এমনকি অভিযোগ ও অপরাধের সত্যতা না পেয়ে দায়রা জজ আদালতও রিভিশন মামলাটিও ২৩ মে ২০২৩ সালে না-মঞ্জুর করে। জিডির পর ২০২৩ সালের ২৮ মে অধ্যাপক মেহেদী হাসানের বিরুদ্ধে ‘অসদাচরণ’ এর অভিযোগ এনে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।


এদিকে এ ঘটনায় ২০২৩ সালের ৭ আগস্ট বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তিন সদস্যবিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে, যার প্রধান করা হয় মৃত্তিকা বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. ফজলুল হককে। কমিটিকে ১০ কার্য দিবসের মধ্যে তদন্ত পরিচালনা শেষে পরবর্তী ৭ কার্য দিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়। কিন্তু তদন্ত কমিটি সাত মাস পর ৭ মার্চ ২০২৪ তারিখে অভিযুক্তের প্রথম সাক্ষাৎকার গ্রহণ করে। এরপর ৭ কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত রিপোর্ট প্রদানের কথা বলা হলেও দীর্ঘ নয় মাস পর চলতি বছরের ৮ মে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করা হয়। দ্বিতীয় দফায় চলতি বছরের ২৯ মে অধ্যাপক মেহেদী হাসানকে ২য় কারণ দর্শানো নোটিশ দেওয়া হয়। ২য় কারণ দর্শানো নোটিশে বিভাগীয় মামলার তদন্তকারী বোর্ডের দাখিলকৃত প্রতিবেদনে মেহেদী হাসানকে ৩টি বিষয় দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে। ১) আপত্তিকর পোস্টার ছাপিয়ে বিতরণ করা ২) পর্যায়োন্নয়নের শর্ত পূরণ না করা এবং ৩) সাময়িক বরখাস্ত আদেশকে জুলুম, নির্যাতন ও হঠকারী হিসাবে উল্লেখ করা।



ভুক্তভোগী অধ্যাপক মেহেদী হাসান বিবার্তাকে বলেন, সুনির্দিষ্ট কারণ উল্লেখ না করেই ‘অসদাচরণ’ এর অভিযোগ তুলে আমাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছিল। এখন ফরমায়েশির প্রতিবেদনের আলোকে আমাকে কেন চাকরি থেকে অপসারণ করা হবে না, সে বিষয়ে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছে। উল্লেখ্য, এই মুহূর্তে চাকরি হারানোর আশঙ্কা করছেন তিনি।



অধ্যাপক মেহেদী হাসান পবিপ্রবি প্রশাসন কর্তৃক নিয়ম বহির্ভূত সাময়িক বরখাস্ত আদেশ প্রত্যাহারে কার্যকরী উদ্যোগ গ্রহণের অনুরোধ জানিয়ে ভিসি বরাবর চিঠি দেন ২০২৪ সালের ৪ জুন। সেখানে তিনি নিজের বর্তমান অবস্থার বিবরণে জানান, একজন শিক্ষক হিসাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা কার্যক্রম হতে দীর্ঘদিন বিচ্ছিন্ন থাকায় আমি ব্যক্তিগত, পারিবারিক ও সামাজিকভাবে অবর্ণনীয় ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছি। উল্লেখ্য, আমি 'ফল-২০২৩ সেশনে' যুক্তরাষ্ট্রের বিখ্যাত University of Massachusetts এ ' Education এর উপর PhD করার সুযোগ পেয়েও উক্ত সাময়িক বরখাস্তের কারণে মূল্যবান এই ডক্টরাল প্রোগ্রামে যোগদান করতে পারিনি। কিন্তু সে বিষয়টি আমলে নেয়নি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।


চলতি বছরের ২ জুন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক বরাবর চিঠি দেন মেহেদী হাসান। চিঠিতে তিনি বলেন, তদন্ত কমিটি তাকে তিনটি বিষয়ে দোষী সাব্যস্ত করেছে। তা হলো আপত্তিকর পোস্টার ছাপিয়ে বিতরণ, পদোন্নতির (পর্যায়োন্নয়ন) শর্ত পূরণ না করা ও সাময়িক বরখাস্তের আদেশকে জুলুম-নির্যাতন-হঠকারী হিসেবে উল্লেখ করা। তদন্ত কমিটি ও তদন্তপ্রক্রিয়া ত্রুটিপূর্ণ, প্রশ্নবিদ্ধ। তার লিখিত ও মৌখিক বক্তব্য, নথিপত্র, এমনকি আদালতের আদেশকেও আমলে নেওয়া হয়নি। বিচারিক ও নৈতিকতার মানদণ্ডে এই তদন্ত প্রতিবেদন পক্ষপাতদুষ্ট, ফরমায়েশি। এদিকে, তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়ার পরে ৬ জুন শিক্ষক সমিতি ইতোমধ্যে একটি আস্থাজনক ও প্রশ্নাতীত রিপোর্ট পাওয়ার জন্য রেজিস্ট্রার বরাবর আবেদন করেছে।



তদন্ত প্রতিবেদনের অভিযোগের সত্যতা সম্পর্কে জানতে চাইলে তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক প্রফেসর ফজলুল হক কিছুটা উত্তেজিত হয়ে বিষয়টি এড়িয়ে যান। তিনি বিবার্তাকে বলেন, আমি তো একা না, সব সদস্য মিলে একটা রিপোর্ট দিয়েছি। আমার কাছে কোনো ব্যাখ্যা নাই। প্রশাসনকে জিজ্ঞেস করেন।



অধ্যাপক মেহেদী হাসানের সাময়িক বরখাস্ত ও তদন্ত প্রতিবেদন নিয়ে জানতে চাইলে শিক্ষক সমিতির সেক্রেটারি আসাদুজ্জামান মুন্না বিবার্তাকে বলেন, প্রফেসর মেহেদী হাসান যে অভিযোগে অভিযুক্ত সেই অভিযোগে একজন শিক্ষক চাকরিচ্যুত হবে এটা মোটেও ঠিক না এবং সম্পূর্ণ অমানবিক। তার বিরুদ্ধে পোস্টার বিষয়ে যে অভিযোগ সেই পোস্টার আসলে কোথাও ছাপানো অবস্থায় পাওয়া যায় নাই। এসবের কোনো অস্তিত্ব ছিল না। আমরা এই কারণে প্রশাসনকে বলছি একজনকে চাকরিচ্যুত করতে গেলে যে তদন্ত করতে হবে, তদন্তে অবশ্যই তার একজন মনোনীত শিক্ষক রাখতে হবে। কিন্তু প্রশাসন তদন্তে তার মনোনীত কোনো শিক্ষক রাখেনি। ফলে, তদন্তটা অনেকটা একতরফা হয়েছে। তদন্ত রিপোর্ট পুরোটাই তার বিপক্ষে গেছে বলে শিক্ষক সমিতি মনে করে। যদি তার পক্ষের কেউ থাকত তাহলে তদন্ত নিয়ে কোনো প্রশ্নই থাকত না বলে আমরা মনে করি।


মেহেদী হাসানের চাকরিচ্যুতি প্রসঙ্গে আসাদুজ্জামান আরো বলেন, এরকমভাবে চাকরি গেলে বিশ্ববিদ্যালয়ে আসলে অনেকেরই চাকরি থাকত না। দিনশেষে এসব বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ খারাপ করবে।


সার্বিক বিষয় নিয়ে শিক্ষক সমিতির সভাপতি প্রফেসর জেহাদ পারভেজ বিবার্তাকে বলেন, এই ব্যাপারে যখন যা করার সেটা আমরা করছি। সর্বশেষ যে তদন্ত কমিটি হয়েছে সেটা একতরফা রিপোর্ট দিয়েছে, এই বিষয়ে আমরা লিখিতভাবে প্রশাসনকে জানিয়েছি। এরপরও যদি কোনো পদক্ষেপ না নেওয়া হয়, তাহলে আমরা এর বিরুদ্ধে অবস্থান নিবো।


মেহেদী নিজেও শিক্ষক সমিতির একজন নির্বাচিত সদস্য। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকার-সমর্থিত শিক্ষকদের একাংশের প্যানেল থেকে নির্বাচিত হয়েছেন।



সাময়িক বরখাস্তের কারণ হিসেবে মেহেদী হাসানের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ সত্য কি না জানতে চাইলে পবিপ্রবি'র রেজিস্ট্রার সন্তোষ কুমার বসু বিবার্তাকে বলেন, অভিযোগের সত্যতা নেই কীভাবে বলছেন, আমি জানি না। উনি (মেহেদী হাসান) যে ঘটনা ঘটিয়েছে সেটার প্রাথমিক সত্যতা পাওয়ার পর জিডি করা হয়। দুমকি থানা থেকে আদালতের কাছে এই বিষয়ে তদন্ত করার অনুমতি চেয়েছিল। আদালত শুধু সেই তদন্ত করার অনুমতি দেয়নি। এখানে আদালত কিন্তু তদন্ত করেনি, সত্য-মিথ্যা যাচাই করেনি। দুমকি থানাকে তারা শুধু তদন্ত করার অনুমতিটা না-মঞ্জুর করেছিল। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এটা তদন্ত করা হয়েছে। তিন সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি করা হয়েছিল। তারা তদন্ত করেছে এবং অভিযোগের সত্যতা পেয়েছে। তারই প্রেক্ষাপটে তাকে ২য় কারণ দর্শানো নোটিশ দেওয়া হয়েছে।



মেহেদী হাসানের বিরুদ্ধে আনা প্রথম অভিযোগের আলামত পোস্টার প্রসঙ্গে সন্তোষ কুমার বসু বিবার্তাকে বলেন, পোস্টার এখনো আমাদের কাছে আছে। নিরাপত্তা কর্মকর্তাকে দিয়ে যখন পোস্টার লাগাতে বলা হয়েছে, তখন তাকে পোস্টারসহ ধরা হয়েছে। নিরাপত্তা কর্মকর্তা স্বীকার করেছে যে, এই পোস্টারগুলো মেহেদী স্যার তাকে দিয়েছে। যেই গাড়িতে করে বরিশাল থেকে পোস্টারগুলো পাঠিয়েছে সেই গাড়ির ড্রাইভারও বলেছে, এই পোস্টারের বান্ডিলটা মেহেদী স্যার আমাকে দিয়েছে এবং নিরাপত্তা কর্মকর্তাকে দিতে বলেছে। মুকিত সাহেব আমাকে বলেছেন যে, মেহেদী স্যার নাসিরের গাড়িতে পোস্টারগুলো দিয়ে আমাকে বলেছে পোস্টারটা কালেকশন করে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন ওয়ালে লাগানোর জন্য।


মেহেদী হাসানের বিরুদ্ধে আনা ২য় অভিযোগ প্রসঙ্গে পবিপ্রবির রেজিস্ট্রার সন্তোষ কুমার বসু বিবার্তাকে বলেন, মেহেদী হাসানের পর্যান্নোয়নের শর্ত অনুযায়ী অধ্যাপক পদে পর্যান্নোয়ন দিতে গিয়ে যে বাছাই বোর্ড তিনটা শর্ত দিয়েছিল। সহযোগী অধ্যাপক হতে অধ্যাপক পদে পদোন্নতি দিতে তারা তিনটা শর্ত দিয়েছিল। তার মধ্যে একটা শর্ত ছিল, তার প্রবেশন পিরিয়ড এক বছরের জায়গায় দুই বছর হবে। আরেকটা শর্ত ছিল, এই প্রবেশন পিরিয়ডের মধ্যে তাকে পিএইচডি তে ভর্তি হতে হবে। আরেকটা শর্ত ছিল তার দুইটা পাবলিকেশন করতে হবে। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের একটা নিয়ম আছে যে তারিখ থেকে ডিও হয়, সেই তারিখ থেকে নিয়োগ কার্যকর হয়। পর্যান্নোয়ন বোর্ড যখনই হোক না কেন, এটা কার্যকর হয় তার ডিও ডেট থেকে। সেই হিসাবে মেহেদী হাসানের দুই বছর হয়ে গেছে। উনি যেদিন থেকে অধ্যাপক পদে যোগদান করেছেন সেদিন থেকে ধরেন, কিন্তু এটা ভূতাপেক্ষভাবে তার ডিও ডেট থেকে কার্যকর করা হয়েছে।


প্রসঙ্গত, অধ্যাপক পদে পর্যায়োন্নয়নের শর্তানুযায়ী শিক্ষানবিশ সময়ে অর্থাৎ যোগদানের পর থেকে পরবর্তী ২ বছরের মধ্যে প্রফেসর মেহেদী হাসানকে M.Phil or PhD প্রোগ্রামে ভর্তি হতে হবে এবং কমপক্ষে ২টি একাডেমিক আর্টিকেল প্রকাশ করতে হবে। মেহেদী হাসানের দাবি নির্ধারিত সময়ের প্রায় ৯ মাস পূর্বেই তাকে অভিযুক্ত করে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।



মেহেদী হাসান বিবার্তাকে বলেন, তারা শর্ত দিয়েছে কার্যকর হওয়া অনুসারে নয়, যোগদানের তারিখ হতে। তারা বলেননি আপনাকে ভূতাপেক্ষভাবে যোগদানের কার্যকরের তারিখ হতে, তারা বলেছেন যোগদানের তারিখ হতে, আমি অধ্যাপক হিসেবে যোগ দিয়েছি ২০২২ সাল। সে অনুযায়ী নির্ধারিত সময়ের আগেই আমাকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। তার ভাষ্য, পর্যায়োন্নয়নের একাডেমিক শর্ত পূরণ না হওয়ার উপর ভিত্তি করে চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্তের বিষয়টি সম্পূর্ণ সাংঘর্ষিক ও দুরভিসন্ধিমূলক।



এদিকে, আত্মাহুতি দেওয়া দেবাশীষ মণ্ডলের ভাই আশীষ মণ্ডল বিবার্তাকে জানিয়েছেন, আমার মেজ ভাইয়ের মৃত্যুর পর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কিছু শিক্ষক এসেছিলেন। তৎকালীন প্রশাসনে যারা ছিল তারাও আমাদের আশ্বস্ত করেছিল যে, মামলা করলে তো আসলে তাকে ফিরে পাওয়া যাবে না, আমরা চেষ্টা করবো আশীষের (মানে আমার কথা বলেছিল) যাতে একটা চাকরির ব্যবস্থা করা যায়। আমি ল্যাব অ্যাসিস্ট্যান্ট পদে অ্যাপ্লাইও করেছিলাম, কিন্তু সেটা পরবর্তীতে আর হয় নাই। পরবর্তীতে তাদের সাথে যোগাযোগেরও চেষ্টা করিনি, আমরা চিন্তায় আছি আইনি প্রক্রিয়ায় যাওয়ার।


পবিপ্রবি'র ভিসি প্রফেসর স্বদেশ চন্দ্র সামন্ত (যিনি ২০১৮ সালে রেজিস্ট্রার ছিলেন)-কে বিবার্তার পক্ষ থেকে একাধিকবার মোবাইলে কল করে ও ক্ষুদে বার্তায় যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি প্রতিউত্তর না করে প্রতিবেদকের কল কেটে দিয়েছেন।


বিবার্তা/এসবি/রোমেল/এমজে

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2024 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com