খুনি মোশতাককে শ্রদ্ধা, ঢাবি শিক্ষক রহমতকে এবার নীল দলের সভায় প্রত্যাখান!
প্রকাশ : ১৪ জুন ২০২৩, ২৩:২৩
খুনি মোশতাককে শ্রদ্ধা, ঢাবি শিক্ষক রহমতকে এবার নীল দলের সভায় প্রত্যাখান!
ঢাবি প্রতিনিধি
প্রিন্ট অ-অ+

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের খুনি খন্দকার মোশতাক আহমেদকে শ্রদ্ধা জানিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অব্যাহতি পেয়েছিলেন আইন বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক ড. রহমত উল্লাহ। এদিকে এই ঘটনা এখন হাইকোর্টে বিচারাধীন এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তদন্ত কমিটির মাধ্যমে প্রক্রিয়াধীন থাকলেও অভিযুক্ত এই শিক্ষককে আওয়ামীপন্থী শিক্ষকদের সংগঠন নীল দলের অন্তর্ভুক্ত করার চেষ্টা করা হয়েছে। তবে সভায় তার নাম প্রস্তাবিত হলেও সেটিকে প্রত্যাখান করা হয়।


বুধবার (১৪ জুন) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিতে নীল দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সভায় আইন অনুষদের সিনিয়র প্রতিনিধি হিসেবে তার নাম প্রস্তাব করলে প্রত্যাখান করা হয়।


সূত্র জানায়, এদিন সভায় ড. রহমত উল্লাহর নাম প্রস্তাব করলে নীল দলের সাবেক কো-কনভেনর ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক প্রক্টর অধ্যাপক ড. এ কে এম গোলাম রব্বানী তাৎক্ষণিক এই প্রস্তাবের প্রতিবাদ জানান।


এই বিষয়ে জানতে চাইলে এ কে এম গোলাম রব্বানী বিবার্তাকে বলেন, বঙ্গবন্ধুর খুনি মোশতাকের প্রেতাত্মা ড. রহমত উল্লাহকে নীল দলের আনার চেষ্টার মাধ্যমে এক নতুন ষড়যন্ত্র চলছে। এটি সভায় প্রস্তাবিত হলে সেটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য এক কলঙ্কজনক ইতিহাস হয়ে থাকবে। তাই ড. রহমতের নাম কনভেনিংয়ে অন্তর্ভুক্ত না করার প্রস্তাব করেছি এবং একইসাথে তার অন্তর্ভুক্তির বিষয়টি প্রত্যাখান করেছি।


তিনি বলেন, তার এই বক্তব্যের পরে ড. রহমতের পক্ষে অবস্থান নিয়ে কেউ প্রতিবাদ করেনি। অর্থাৎ সবাই মৌন সম্মতিতে প্রত্যাখানের প্রস্তাবের পক্ষে অবস্থান নেন।


বিতর্কিত শিক্ষক ড. রহমত উল্লাহর নাম নীল দলের সভায় প্রস্তাব করার বিষয়ে জানতে চাইলে নীল দলের আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. সীতেশ চন্দ্র বাছার বিবার্তাকে বলেন, যে বিষয়টি নিয়ে কথা বলছেন- সেই বিষয়টি তো আইনি প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে তিনি এখন কাজ করছেন। ক্লাস নিচ্ছেন, পরীক্ষা নিচ্ছেন।


এখনো উনার বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত প্রক্রিয়াধীন, প্রতিবেদকের এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, অনেকটাই রেজুলেশন হয়ে গেছে অর্থাৎ বেশিরভাগই ঠিক হয়ে গেছে। উনি অনুষদে কাজ করছেন, সিলেকশন কমিটিতে কাজ করছেন। তাহলে তো উনি আগের জায়গায় চলে গেছেন। আর উনি যেহেতু ডিন ছিলেন সেহেতু সেই জায়গাটা তিনি চাচ্ছেন, সেই প্রক্রিয়ায় উনি চলছেন। এক্ষেত্রে বেশিরভাগই তো আইন প্রক্রিয়ার মধ্যে সমাধান হয়ে গেছে।


বিতর্কিত শিক্ষক ড. রহমত উল্লাহর নাম নীল দলের সভায় প্রস্তাবের বিষয়ে অবগত করে মন্তব্য জানতে চাইলে ঢাবির সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের সাবেক ডিন ও আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য অধ্যাপক ড. সাদেকা হালিম বিবার্তাকে বলেন, তিনি একজন বিতর্কিত শিক্ষক। আমাদের জাতির পিতার খুনের সাথে সম্পৃক্ত খন্দকার মোশতাকের তিনি প্রশংসা করেছেন। তার এই বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের জন্য ঢাবির প্রশাসনিক কার্যক্রম থেকে অব্যাহতি দেওয়ার পর পরবর্তী সময়ে তিনি আদালতের নির্দেশে ক্লাসে ফেরত এসেছেন। কিন্তু রাজনৈতিকভাবে তিনি বিতর্কিত। যে খন্দকার মোশতাক চিহ্নিত খুনি, আওয়ামী লীগের এ বিষয়ে সুষ্পষ্ট অবস্থান রয়েছে। নীল দল আওয়ামী লীগ সমর্থিত দল। সেজন্য নীল দলের আহ্বায়ক কমিটিতে বিষয়টির সুরাহা প্রয়োজন।


ঘটনার বিষয়ে অবগত করে মন্তব্য জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার অধ্যাপক মমতাজ উদ্দিন আহমেদ বিবার্তাকে বলেন, যাদের স্বচ্ছ ইমেজ রয়েছে, তারা এই জায়গাগুলোতে আসলে ভালো।


এই বিষয়ে মন্তব্য জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ সামাদ বিবার্তাকে বলেন, জা‌তির পিতা বঙ্গবন্ধুর সমমর্যাদায় খু‌নি মোশতা‌কের প্রতি শ্রদ্ধা নি‌বেদন করার অপরা‌ধে ঢাকা বিশ্ব‌বিদ‌্যাল‌য়ের স‌র্বোচ্চ ফোরাম সি‌ন্ডি‌কেট কর্তৃক ড. রহমত শা‌স্তিপ্রাপ্ত, বিষয়‌টি বিশ্ব‌বিদ‌্যাল‌য়ে তদন্তাধীন এবং তার মামলা হাই‌কো‌র্টে বিচারাধীন। এমন একজন ব‌্যক্তি‌কে বঙ্গবন্ধু ও মু‌ক্তিযু‌দ্ধের আদ‌র্শে প‌রিচা‌লিত নীল দ‌লের কেন্দ্রীয় ক‌মি‌টি‌তে অন্তর্ভুক্ত করা অগ্রহণ‌যোগ‌্য ও জা‌তির পিতার র‌ক্তের স‌ঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করা। এছাড়া মামলা-মকদ্দমার বাই‌রেও নৈ‌তিকতা ও আদ‌র্শের বিষয় হওয়ায় ড. রহমত উল্লাহর এই অন্তর্ভু‌ক্তি কো‌নোভা‌বেই কাম‌্য হ‌তে পা‌রে না।


উল্লেখ্য, ২০২২ সালের ১৭ এপ্রিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি মিলনায়তনে ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবসের আলোচনা সভায় অধ্যাপক রহমত উল্লাহ বঙ্গবন্ধুর খুনি খন্দকার মোশতাক আহমদের প্রতি ‘শ্রদ্ধা’ জানিয়ে বক্তব্য দেন। এসময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ সামাদ তাৎক্ষণিক এই বক্তব্যের প্রতিবাদ জানিয়ে সভার সভাপতি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামানকে এই বক্তব্য এক্সপাঞ্জ করতে বলেন। পরে উপাচার্য এই বক্তব্য এক্সপাঞ্জ করেন।


মোশতাককে শ্রদ্ধা জানানোর এই ঘটনার বিষয়ে মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের মহল থেকে প্রতিবাদের ঝড় ওঠে। পরে ঘটনার দায়ে ড. রহমত ক্ষমাও চান। এদিকে এই ঘটনার দায়ে তাকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। যেটি নিয়ে তিনি কোর্টে রিট করলে সেটিও এখন প্রক্রিয়াধীন আছে। অভিযুক্ত এই শিক্ষকের বিরুদ্ধে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষও তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। সেই কমিটির কাজও এখন চলমান। ফলে চূড়ান্ত নিষ্পত্তি না হওয়ার আগে ড. রহমতকে বিশ্ববিদ্যালয়ের আওয়ামীপন্থী শিক্ষকদের সংগঠন নীল দলে প্রবেশের চেষ্টার ঘটনায় সংশ্লিষ্ট মহলে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া শুরু হয়েছে।


বিবার্তা/রাসেল/এসএ

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com