
আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আবু বকর ও ওমরের (রা.) যুগে অন্যান্য নামাজের মতো জুমার জন্যও একটি আজান ও ইকমত প্রচলিত ছিল। নবিজি (সা.) যখন খুতবার জন্য মিম্বরে বসতেন, তখন তার সামনে মসজিদের দরজায় দাঁড়িয়ে জুমার প্রথম ও একমাত্র আজান দেওয়া হতো। তারপর নামাজ শুরু করার আগে যথা নিয়মে ইকামত দেওয়া হতো। আবু বকর (রা.) ও ওমরের (রা.) খেলাফতকালেও এই নিয়মই প্রচলিত ছিল।
ওসমানের (রা.) খেলাফতকালে মুসলমানদের সংখ্যা বেড়ে গেলে তিনি দুটি আজানের প্রচলন করেন। জুমার প্রথম আজানটি দেওয়া হতো মদিনার অদূরে ‘জাওরা’ নামক স্থানে, সেটা ছিল মদিনার বাজার। দ্বিতীয় আজান দেওয়া হতো খুতবার আগে ইমামের মিম্বরের সামনে দাঁড়িয়ে।
সুনানে আবু দাউদের বর্ণনায় এসেছে, সায়েব ইবনে ইয়াজিদ (রা.) বলেন, আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জুমার দিন যখন মিম্বরে বসতেন তখন তার সামনে মাসজিদের দরজায় দাঁড়িয়ে আজান দেওয়া হতো। আবু বকর ও ওমরের (রা.) সামনেও এভাবেই আজান দেওয়া হতো। (সুনানে আবু দাউদ: ১০৮৮)
সহিহ বুখারির বর্ণনায় এসেছে, সায়েব ইবনে ইয়াজিদ (রা.) বলেন, নবিজি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আবু বকর (রা.) এবং ওমরের (রা.) সময় জুমার দিন ইমাম যখন মিম্বরের ওপর বসতেন, তখন প্রথম আজান দেয়া হত। পরে যখন ওসমান (রা.) খলিফা হলেন এবং লোকসংখ্যা বৃদ্ধি পেল, তখন তিনি ‘যাওরাহ’ থেকে তৃতীয় আজান (ইকামতকেও আজান গণ্য করে তৃতীয় আজান বলা হয়েছে) দেওয়ার প্রচলন করেন। আবু আবদুল্লাহ (ইমাম বুখারি রহ.) বলেন, ‘যাওরাহ’ হলো মাদিনার অদূরে অবস্থিত একটি বাজার। (সহিহ বুখারি: ৮৬৬)
এ দুটি বর্ণনা থেকে, বোঝা যায় নবিজি (সা.) আবু বকর (রা.) ও ওমরের (রা.) আমলে জুমার জন্য একটি আজান দেওয়া হতো। ওসমান (রা.) জুমার নামাজের ব্যাপারে সবাইকে সচেতন করার জন্য জুমার মূল আজানের আগে একটি আজান দেওয়ার নিয়ম করেন যা বাজারে দেওয়া হতো যেন বাজারের মানুষজন জুমায় যাওয়ার জন্য প্রস্তুত হতে পারে। হজরত ওসমানের (রা.) সময় আজানের পদ্ধতিতে আরেকটি পরিবর্তন আসে। সেটি হলো, নবিজি (সা.) ও আবু বকর (রা.) ও ওমরের (রা.) যুগে যখন জুমার একটি আজানের প্রচলন ছিল, তখন জুমার আজান দেওয়া হতো খুতবার আগে ইমামের সামনে মসজিদের দরজায় দাঁড়িয়ে। কিন্তু ওসমানের (রা.) যুগে যখন জুমার দ্বিতীয় আজান চালু হয়, তখন থেকে জুমার দ্বিতীয় আজান ইমামের সামনে মিম্বরের কাছে দাঁড়িয়ে দেওয়া শুরু হয়।
তাই জুমায় দুটি আজান দেওয়া হলে দ্বিতীয় আজান ইমামের সামনে মিম্বরের কাছে দাঁড়িয়ে দেওয়াই সুন্নত।
তবে জুমার দ্বিতীয় আজান মসজিদের দরজার কাছে, মসজিদের ভেতর ও বারান্দাসহ মসজিদের যে কোনো জায়গায় দাঁড়িয়ে দেওয়াও জায়েজ। কোনো মসজিদে যদি জুমার দ্বিতীয় আজান মিম্বরের সামনে দাঁড়িয়ে না দিয়ে মসজিদের দরজায় দাঁড়িয়ে দেওয়া হয় বা মসজিদের অন্য কোনো জায়গায় দাঁড়িয়ে দেওয়া হয়, তাতেও কোনো সমস্যা নেই। এ নিয়ে কোনো রকম বিবাদে জড়ানো বা বাড়াবাড়ি করা উচিত নয়।
বিবার্তা/এমবি
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]