
সম্প্রতি সান্ডাময় ফেসবুক! কফিলের ছেলের জন্য সান্ডা ধরা আর রান্না করার ছবি-ভিডিওতে ছেয়ে গেছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম। অনেকে জানতে চান, এ সান্ডা খাওয়া কি হালাল নাকি হারাম।
এগুলো এক প্রজাতির তৃণভোজী গিরগিটি; আফ্রিকা, মধ্যপ্রাচ্য এবং দক্ষিণ এশিয়ার মরু ও শুষ্ক অঞ্চলে পাওয়া যায়। এদের শরীর মোটা, মাথা ফ্ল্যাট, পা শক্তিশালী হয়। সবচেয়ে স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য হলো কাঁটাযুক্ত মোটা লেজ। লেজ অস্ত্র হিসেবে ব্যবহৃত হয় হুমকির সময়। প্রজাতিভেদে দৈর্ঘ্য হতে পারে ২৫ থেকে ৭৫ সেন্টিমিটার পর্যন্ত।
সান্ডা বালুকাময় অঞ্চলে বসবাসকারী প্রজাতিগুলো সাধারণত ধূসর, বাদামি বা পীতাভ রঙের হয়। কিছু প্রজাতি রোদে গা গরম করার সময় চমৎকার রং ধারণ করতে পারে – যেমন কমলা, হলুদ বা সবুজ। এরা সাধারণত তৃণভোজী হয়ে থাকে। মূলত গাছের পাতা, ফুল, শুষ্ক ঘাস, বীজ ইত্যাদি খায়। মাঝে মাঝে কীটপতঙ্গও খেতে দেখা যায়, বিশেষ করে ছোট বয়সে।
এদের স্বভাব দিনচর। দিনে সক্রিয় থাকে, রাতে ঘুমায়। খুব বেশি ছুটে বেড়ায় না। সূর্যস্নান করে শরীর গরম রাখে। এরা ডিম পাড়ে। একটি স্ত্রী ইউরোমাস্টিকস ৬ থেকে ৩০টি ডিম দিতে পারে। ডিম ফুটে বাচ্চা বের হতে সাধারণত ৬ থেকে ১০ সপ্তাহ সময় লাগে।
অনেক দেশে পোষা প্রাণী হিসেবে জনপ্রিয়। কারণ এটি তুলনামূলক নিরীহ এবং এদের পরিচর্যা করাও সহজ। সাধারণত আক্রমণাত্মক নয়। হুমকির মুখে পড়লে লেজ নেড়ে আঘাত করে। গর্তে ঢুকে পড়ে এবং লেজ দিয়ে গর্তের মুখ আটকে দেয়। এদের কিছু কিছু প্রজাতি রং পরিবর্তন করে আশপাশের পরিবেশে মিশে যেতে পারে।
সান্ডা খাওয়া কি জায়েজ নাকি হারাম?
সান্ডাকে আরবিতে বলা হয় দাব্ব ‘الضبّ’। আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত, একবার রসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে ‘দব’ খাওয়া না খাওয়া সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হল। তিনি বললেন, আমি নিজে তা খাই না তবে তা খাওয়া হারামও বলি না। ইমাম তিরমিজি (রহ.) বলেন, আহলে ইলমের মাঝে ‘দব’ খাওয়া না-খাওয়া নিয়ে মতপার্থক্য রয়েছে। অনেক আহলে ইলম সাহাবি ও পরবর্তী ফকিহগণ তা খাওয়ার অনুমতি দিয়েছেন। অনেকে তা খাওয়া মাকরুহ বলেছেন।
হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, খালিদ ইবনু ওয়ালীদ (রা.) যাকে ‘সাইফুল্লাহ্’ বলা হতো তার কাছে বর্ণনা করেছেন যে, তিনি রসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সঙ্গে মাইমুনাহ (রা.)-এর গৃহে প্রবেশ করলেন। মাইমুনাহ (তার ও ইবনু ‘আব্বাসের খালা ছিলেন। তিনি তার কাছে একটি ভুনা দাব্ব দেখতে পেলেন, যা নজদ থেকে তার (মাইমুনাহর) বোন হুফাইদা বিনতে হারিস নিয়ে এসেছিলেন। মাইমুনাহ (রা.) দাব্বটি রসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সামনে হাজির করলেন। রসুলের অভ্যাস ছিল, কোনো খাদ্যের নাম ও তার বর্ণনা বলে না দেয়া পর্যন্ত তিনি খুব কমই তার প্রতি হাত বাড়াতেন।
তিনি দাব্বের দিকে হাত বাড়ালে উপস্থিত নারীদের মধ্যে একজন বললেন, তোমরা রসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সামনে যা পেশ করছ সে সম্বন্ধে তাকে অবহিত কর। বলা হল- হে আল্লাহর রসুল! ওটা দাব্ব। এ কথা শুনে রসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার হাত উঠিয়ে নিলেন। খালিদ ইবনু ওয়ালীদ (রা.) জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রসুল! দাব্ব খাওয়া কি হারাম? তিনি বললেন, না। কিন্তু যেহেতু এটি আমাদের এলাকায় নেই। তাই এটি খাওয়া আমি পছন্দ করি না। খালিদ (রা.) বলেন, আমি সেটি টেনে নিয়ে খেতে থাকলাম। আর রসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার দিকে তাকিয়ে থাকলেন। (বুখারি: ৫৪০০, ৫৫৩৭; মুসলিম ৩৪/৭, হাঃ ১৯৪৫, ১৭৪৬, আহমাদ ১৬৮১৫; আধুনিক প্রকাশনী- ৪৯৯০, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৪৮৮৬)
এ হাদিস থেকে বুঝা যায়, নবীজি সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজে দাব্ব খাননি, কিন্তু সাহাবিগণকে খেতে নিষেধও করেননি। ফলে এটা স্পষ্ট যে, এটা হারাম নয়। অধিকাংশ মাজহাব মতে দাব্ব খাওয়া জায়েজ। হানাফি মাজহাবে এটি খাওয়াকে নিরুৎসাহিত করা হয়।
বিবার্তা/এমবি
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]