'যে দিনগুলোতে সূৰ্য ওঠে তন্মধ্যে সবচেয়ে উত্তম জুমার দিন'
প্রকাশ : ২৭ অক্টোবর ২০২৩, ০৯:২১
'যে দিনগুলোতে সূৰ্য ওঠে তন্মধ্যে সবচেয়ে উত্তম জুমার দিন'
ধর্ম ডেস্ক
প্রিন্ট অ-অ+

কোরআনের ঘোষণার আলোকে জুমার দিনের নামাজ ও ইবাদতের গুরুত্ব অনেক বেশি। এ নামে আল্লাহ তাআলা একটি সুরাও নাজিল করেছেন। সুরা জুমআ। কোরআনুল কারিমের ৬২তম সুরা এটি। এ সুরায় আল্লাহ তাআলা জুমার নামাজের অসামান্য গুরুত্ব বোঝাতে এভাবে আহ্বান করেন-


یٰۤاَیُّهَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡۤا اِذَا نُوۡدِیَ لِلصَّلٰوۃِ مِنۡ یَّوۡمِ الۡجُمُعَۃِ فَاسۡعَوۡا اِلٰی ذِکۡرِ اللّٰهِ وَ ذَرُوا الۡبَیۡعَ ؕ ذٰلِکُمۡ خَیۡرٌ لَّکُمۡ اِنۡ کُنۡتُمۡ تَعۡلَمُوۡنَ


হে মুমিনগণ, যখন জুমার দিনে নামাজের জন্য আহ্বান করা হয়, তখন তোমরা আল্লাহর স্মরণের দিকে ধাবিত হও। আর বেচা-কেনা বর্জন কর। এটাই তোমাদের জন্য সর্বোত্তম, যদি তোমরা জানতে।’ (সুরা জুমা ; আয়াত ৯)


জুমার দিনটি মুসলিমদের সমাবেশের দিন। তাই দিনটিকে ‘ইয়াওমুল জুমআ’ বলা হয়। এইদিনের বিশেষ গুরুত্ব বিভিন্ন হাদিসে এসেছে। যেমন-


‘আল্লাহ তাআলা নভোমণ্ডল, ভূমণ্ডল ও সমস্ত জগৎকে ছয়দিনে সৃষ্টি করেছেন। এই ছয়দিনের শেষদিন ছিল জুমআর দিন।’ (মুসলিম)


‘যে দিনগুলোতে সূৰ্য উঠে তন্মধ্যে সবচেয়ে উত্তম দিন হচ্ছে জুমার দিন। এই দিনেই আদম আলাইহিস সালাম সৃষ্টি হন, এই দিনেই তাকে জান্নাতে প্রবেশ করানো হয় এবং এই দিনেই জন্নাত থেকে পৃথিবীতে নামানো হয়। আর কেয়ামত এই দিনেই সংঘটিত হবে।’ (মুসলিম)


‘এই দিনে এমন একটি মুহুর্ত আছে, যাতে মানুষ যে দোয়াই করে, তাই কবুল হয়।’ (বুখারি, মুসলিম)


এ বিশেষ দিনে মহান আল্লাহ মুসলিম উম্মাহকে মসজিদে একত্রিত হওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। ইমামের খুতবাহ শোনার বিধান দিয়েছেন। দিনব্যাপী ইবাদত-বন্দেগি, তাওবাহ-ইসতেগফার এবং দরূদ ও ক্ষম প্রার্থনা-দোয়া করার নির্দেশ দিয়েছেন।


জুমার দিনটি অনেক মর্যাদার। আল্লাহ তাআলা প্রতি সপ্তাহে মানবজাতির সমাবেশ ও ঈদের জন্যে এই দিন রেখেছিলেন। কিন্তু আগের উম্মতরা তা পালন করতে ব্যর্থ হয়। ইয়াহুদিরা ‘ইয়াওমুস সাবত’ তথা শনিবারকে নিজেদের সমাবেশের দিন নির্ধারিত করে নেয় এবং নাসারারা রবিবারকে।


আল্লাহ তাআলা মুসলিম জাতিকে মহান সৌভাগ্য দান করেন। এ জাতি আল্লাহর দেওয়া দিনটিকে নিজেদের বিশেষ ইবাদত-বন্দেগির দিন হিসেবে গ্রহণ করে আনুগত্যের অসামান্য অবদান দেখিয়েছেন। পেয়েছেন রহমত বরকত মাগফেরাতে ভরপুর মর্যাদার দিন জুমা।


হাদিসে পাকে এসেছে-


রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘আমরা সবশেষে এসেও কেয়ামতের দিন অগ্রণী হব। আমরাই প্রথম জান্নাতে প্ৰবেশ করব। যদিও তাদেরকে আমাদের আগে (আসমানি) কিতাব দেওয়া হয়েছিল। আর আমাদের কিতাব দেওয়া হয়েছে তাদের পরে। কিন্তু তারা এতে মতভেদে লিপ্ত হয়েছে। এরপর আল্লাহ আমাদেরকে তাদের মতভেদপূর্ণ বিষয়ে সঠিক পথ দিয়েছেন। এই যে দিনটি, তারা এতে মতভেদ করেছে। এরপর আল্লাহ আমাদেরকে এ দিনের সঠিক হেদায়াত করেছেন। তাহলো- জুমার দিন। সুতরাং আজ (জুমার মর্যাদা) আমাদের, কাল (শনিবার) ইয়াহুদীদের। আর পরশু (রোববার) নাসারাদের।’ (বুখারি, মুসলিম)


জুমার দিন কাতারবন্দি


জুমার নামাজের আজান দেওয়ার পর দুনিয়াবি সব কাজ স্থগিত করে জামাতে নামাজ পড়ার জন্য মসজিদে কাতারবন্দী হওয়ার আদেশ দিয়েছেন আল্লাহ। আর পরের আয়াতে দিয়েছেন রিজিকের সন্ধানে বেরিয়ে পড়ার নির্দেশ-


فَاِذَا قُضِیَتِ الصَّلٰوۃُ فَانۡتَشِرُوۡا فِی الۡاَرۡضِ وَ ابۡتَغُوۡا مِنۡ فَضۡلِ اللّٰهِ وَ اذۡکُرُوا اللّٰهَ کَثِیۡرًا لَّعَلَّکُمۡ تُفۡلِحُوۡنَ


এরপর যখন নামাজ শেষ হবে তখন তোমরা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড় আর আল্লাহর অনুগ্রহ থেকে অনুসন্ধান কর এবং আল্লাহকে বেশি বেশি স্মরণ কর, যাতে তোমরা সফল হতে পার।’ (সুরা জুমা, আয়াত ১০)।


প্রখমে আল্লাহর হক আদায় করার মাধ্যমে আখিরাতের সম্পদ অর্জন করার ঘোষণা এবং পরে দুনিয়াবি সম্পদ তথা স্বাভাবিক রুটিরুজির অন্বেষণে ছড়িয়ে পড়তে বলা হয়েছে কোরআনে।


জুমার দিনের করণীয়


১. আজান হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মসজিদে জুমা পড়তে আসা।


২. জুমার নামাজের জন্য আগে থেকে প্রস্তুতি নিয়ে রাখা।


৩. পায়ে হেঁটে আগে আগে মসজিদে আসা।


৪. মসজিদে এসে ইবাদত-বন্দেগিতে নিয়োজিত থাকা।


৫. ইমামের সঙ্গে যথাযথ গুরুত্বের সঙ্গে নামাজ সম্পন্ন করা্


৬. সামাজিক দায়িত্ব থাকলে তা নামাজ শেষে পালন করা।


৭. প্রয়োজন অনুযায়ী রিজিকের সন্ধানে কাজে নেমে পড়া।


৮. সপ্তাহব্যাপী জামাতে আসার মনোভাব তৈরি ও সিদ্ধান্ত নেওয়া।


৯. পরকালের বিষয়ে চিন্তাভাবনা, গবেষণা ও প্রস্তুতি গ্রহণ করা।


১০. জুমার গুরুত্ব অনুধাবনের চেষ্টা করা এবং সে মতে আমল করা।


সুতরাং মুমিন মুসলমানের উচিত, জুমার দিন কোরআনের আমলে নিজেদের রাঙিয়ে নেওয়া। কোরআন-সুন্নাহর দিকনির্দেশনা মোতাবেক জুমার দিনটিকে সাজিয়ে আমল-ইবাদতে অতিবাহিত করা। জুমার দিনের গুরুত্ব উপলব্দি করে ঘোষিত ফজিলত ও মর্যাদা পাওয়ার চেষ্টা করা।


বিবার্তা/এসবি

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com