শিরোনাম
ইনফো্ডেমিকঃ করোনাকালের আরেক চ্যালেঞ্জ ও আমাদের করণীয় (প্রথম পর্ব)
প্রকাশ : ১২ জুলাই ২০২০, ১৫:৪১
ইনফো্ডেমিকঃ করোনাকালের আরেক চ্যালেঞ্জ ও আমাদের করণীয় (প্রথম পর্ব)
বিবার্তা ডেস্ক
প্রিন্ট অ-অ+

‘প্যান্ডেমিক’ তথা বৈশ্বিক মহামারি শব্দটির সঙ্গে আমরা সবাই পরিচিত। যারা অপরিচিত ছিলাম তারাও চলমান কোভিড-১৯ মহামারির কারণে এখন কেবল পরিচিতই নই, বলা যায় প্রতি মুহূর্তে এ শব্দটির সঙ্গেই আমাদের বসবাস। গত বছরের শেষভাগে শুরু হওয়া এই বৈশ্বিক মহামারি এ পর্যন্ত (১২ জুলাই ২০২০) সংক্রমিত করেছে ১ কোটি ২৭ লাখ ২৫ হাজার এরও বেশি মানুষকে, মৃত্যু ঘটিয়েছে ৫ লক্ষ ৬৮ হাজারেরও বেশি মানুষের। ১০০ বছর পর পর সৃষ্ট প্যান্ডেমিক তিনটি সমান্তরাল ঝুঁকি নিয়ে বিশ্ববাসীর সামনে হাজির হয়। কোভিড-১৯ও তার ব্যতিক্রম করেনি। প্যান্ডেমিক থেকে ইনফোডেমিক অতঃপর ইকোডেমিক।


বিশ্ব ইতিহাসে মহামারি নতুন কোনো বিষয় নয়। প্রাগৈতিহাসিক সময় থেকে বর্তমানকাল পর্যন্ত একের পর এক মহামারি হানা দিয়েছে পৃথিবীতে। চতুর্দশ শতকের ব্লাক ডেথ, সতের শতকের প্লেগ, আঠার শতকের কলেরা এবং উনিশ শতকের স্প্যানিশ ফ্লু ভয়াবহতার জন্য অবিস্মরণীয় হয়ে আছে। চলমান কোভিড-১৯ মহামারির সামগ্রিক অভিঘাত শেষ পর্যন্ত কী হবে সেটি প্রশ্নসাপেক্ষ। তবে এরই মধ্যে বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে যে প্রভাব এটি রেখেছে তার সঙ্গে তুলনীয় কিছু বিগত একশো বছরের মধ্যে আমরা দেখিনি। কেবল আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যার কারণে নয়। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কর্মসংস্থান ইত্যাদি সকল সেক্টরসহ সামগ্রিকভাবে বিশ্ব অর্থনীতিতে এর প্রভাবকে সুদূরপ্রসারী বললে কম হবে। বিশাল এক সুনামির মতোই এটি বিশ্বের সাতশো কোটি মানুষের জীবন ও জীবিকাকে বিপর্যস্ত করে চলেছে। আইএমএফ-এর মতে, কোভিড-১৯ সৃষ্ট অর্থনৈতিক মন্দায় মারা যাবে আরো ৫০ কোটি মানুষ।


কোভিড-১৯ তথা নভেল করোনাভাইরাসের এই মহামারির মধ্যেই আমাদের জন্য নতুন মহাসংকট হয়ে দেখা দিয়েছে ‘ইনফোডেমিক’। শব্দটা নতুন নয়। সেই ২০০৩ সালে ডেভিড রথকফ (David Rothkopf) নামে এক মার্কিন সাংবাদিক এ শব্দটি চয়ন করেছিলেন। তথ্যবিজ্ঞানে এটি বহুল আলোচিত একটি বিষয় হলেও করোনাভাইরাস মহামারির কারণে শব্দটি এখন সাধারণ মানুষের মধ্যেও ব্যাপকভাবে আলোচিত হচ্ছে।


প্যান্ডেমিকের এই মহাবিপদকালে এর থেকে সৃষ্ট হাজারো গুজব, ভূল তথ্যের ছড়াছড়ি কিংবা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চটকদার ভিডিওসহ নানান ফতোয়া ফিকিরকে এক কথায় আমরা ইনফোডেমিক বলি। আর এই প্যান্ডেমিক ও ইনফোডেমিক-এর অর্থনৈতিক প্রভাবকে বলি ইকোডেমিক। তিনটি-ই মহাসংকট। মোদ্দা কথা হলো, মহাসংকট তিনটি পরস্পর নির্ভরশীল ও সমান্তরাল। তাই একসাথে এগুলো মোকাবিলাও অসম্ভব। তারপরও যদি একসাথে সবগুলোর মোকাবেলা করা যায়তো খুব ভালো। এজন্য দরকার জনসাধারণের সচেতনতা, সরকারের উত্তম পলিসি, পর্যাপ্ত বরাদ্দ, সঠিক সময়ে সঠিক পদক্ষেপ ও সঙ্কট মোকাবেলায় সর্বসাধারণের আন্তরিক প্রচেষ্টা। করোনাভাইরাস প্রথমে পশু থেকে পশুতে অতঃপর মানবদেহে ছড়িয়ে মহামারী আকার ধারণ করেছে। অথচ ইনফোডেমিকের উৎস কোন পশু-পাখি নয়। এর উৎস মানুষ। মানুষই সরাসরি একজন থেকে আরেক জনের সঙ্গে শেয়ার করার মাধ্যমে এটি ছড়িয়ে দিচ্ছে সর্বত্র।


ইনফোডেমিকের সংজ্ঞা দিতে গিয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলেছে, ‘এটি হচ্ছে তথ্যের অতিমাত্রায় বাহুল্য (যার কিছু ঠিক আর কিছু ত্রুটিপূর্ণ), যার কারণে প্রয়োজনের সময় তথ্যের বিশ্বাসযোগ্য উৎস এবং সঠিক নির্দেশনা পেতে মানুষ ব্যর্থ হয়।’ কোনো বিষয়ে গুগল সার্চ করলে আমরা কী দেখি? লক্ষ লক্ষ অনুসন্ধান ফল আমাদের সামনে পরিবেশন করা হয়, যার সবগুলো পরখ করে দেখা আমাদের পক্ষে কিছুতেই সম্ভব নয়। তথ্যের এই ব্যাপক বাহুল্য বা অতিমাত্রায় প্রাপ্যতা তখন আমাদের সামনে নতুন বিপদ হয়ে দেখা দেয়। কারণ কোন তথ্যটি প্রয়োজন আর কোনটি প্রয়োজন নয় সেটি যেমন আমরা বুঝি না তেমনি কোন তথ্যটি নির্ভরযোগ্য আর কোনটির ওপর নির্ভর করা যাবে না সে ব্যাপারেও আমাদের অনেকের ধারণা স্পষ্ট নয়। এ কারণেই একসময় যেমন তথ্য চেয়েও না পাওয়াটা একটা বিপদের কারণ ছিল। এখন তথ্য চাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তথ্যের এক বিশাল বোঝা ঘাড়ে চেপে বসা তথা ইনফোডেমিক এখন আমাদের জন্য আরেক বিপদের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।


এই বোঝাটা আসলে কত বড়? প্রাসঙ্গিক কিছু তথ্য দিলে আমাদের ধারণা স্পষ্ট হতে পারে। ইউনেস্কোর তথ্যমতে, প্রতি বছর পৃথিবীতে প্রায় ২২ লক্ষ বই প্রকাশিত হয়। গুগল জানাচ্ছে, ১৪৪০ সালে মুদ্রণযন্ত্র উদ্ভাবনের পর থেকে এ পর্যন্ত প্রায় ১৩ কোটি বই (book-title) প্রকাশিত হয়েছে। এ তো গেল কাগজভিত্তিক তথা মুদ্রিত বইয়ের কথা। ডিজিটাল বিশ্বে যা ঘটে চলেছে তার কাছে মুদ্রিত বইয়ের এ হিসাবকে নেহাতই তুচ্ছ মনে হবে। সাম্প্রতিক কিছু হিসাব দেয়া যাক। একেবারে সাম্প্রতিক (মে ২০২০) হিসাবমতে, বিশ্বে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ৪৬০ কোটি। সার্চ জায়ান্ট গুগল প্রতি সেকেন্ডে ৭০ হাজার সার্চ-এর উত্তর দেয়। ইউটিউবে প্রতিদিন ৫০০ কোটির মতো ভিডিও দেখা হয়। টুইটারে টুইট পাঠানো হয় প্রতি মিনিটে সাড়ে তিন লাখ। প্রতিদিন ফেসবুকের সক্রিয় ব্যবহারকারীর সংখ্যা ১৭৩ কোটি। প্রতিদিন ইমেইল আদানপ্রদান হয় ৩০ হাজার কোটির বেশি! আরেক হিসাব বলছে, ইন্টারনেটে এ মুহূর্তে যত তথ্য আছে তার সবগুলো যদি কেউ ডাউনলোড করতে বসে তাহলে তার সময় লাগবে ১৮ কোটি বছরের বেশি! সব মিলিয়ে হিসাবগুলো যে কারো মাথা ঘুরিয়ে দেয়ার জন্য যথেষ্ট! এসব পরিসংখ্যানই বলছে, ইনফোডেমিক বা তথ্য-মহামারির মাত্রাটা আসলে কেমন।


নভেল করোনাভাইরাসের কারণে সৃষ্ট কোভিড-১৯ মহামারি ইনফোডেমিকের ভয়াবহতাকেও স্পষ্ট করে তুলেছে আমাদের কাছে। ফলে কেবল তথ্যবিজ্ঞানীরাই নন, সকলেই মুখ খুলতে শুরু করেছেন এ ব্যাপারে। জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস-এর কথাই ধরুন। এক টুইট বার্তায় সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন তিনি, ‘আমাদের সবার সাধারণ শত্রুকোভিড-১৯। তবে ভুয়া তথ্যের ইনফোডেমিকও আমাদের আরেক শত্রু। করোনাভাইরাসকে নির্মুল করতে হলে আমাদেরকে অবশ্যই হতাশা ও বিভেদের বিপক্ষে সঠিক তথ্য ও বিজ্ঞান, আশা ও সংহতিকে উর্ধ্বে তুলে ধরতে হবে।’ অন্যদিকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মহাপরিচালক ড. তেদ্রোস আধানম গেব্রেসাস বলেছেন, ‘আমরা কেবল একটি মহামারির সঙ্গেই লড়ছি না, একইসঙ্গে লড়ছি ইনফোডেমিকের মতো একটি মহা সংকটের সঙ্গেও, যেটি ভাইরাসের চেয়েও দ্রুত ও সহজে ছড়ায়।’


এখন দেখা যাক, এই ইনফোডেমিকের কারণে আমাদের কী কী সমস্যা হতে পারে? প্রয়োজনের তুলনায় তথ্যের আধিক্য আমাদের সময় ও শ্রমের ব্যাঘাত ঘটায়। এটি আমাদের সিদ্ধান্ত গ্রহণে বাঁধার সৃষ্টি করে। ফলে প্রয়োজনাতিরিক্ত তথ্য যাচাই বাছাই, সংরক্ষণ, ব্যবস্থাপনা ইত্যাদির পেছনে অর্থব্যয় বাড়বে। এসব তথ্য রক্ষণাবেক্ষণ ও ব্যবস্থাপনা করতে গিয়ে তথ্যপ্রযুক্তি অবকাঠামোর ওপর চাপ বাড়বে। বিপুল তথ্য থেকে কাঙ্ক্ষিত তথ্য বেছে নিতে গিয়ে মানুষ ভুল ও অনির্ভরযোগ্য তথ্য বেছে নেবে। ভুল তথ্যের ওপর ভিত্তি করে নেয়া সিদ্ধান্তও ভুল হতে বাধ্য। এই ভুল সিদ্ধান্তের কারণে তার জীবন ও জীবিকা দুটোই ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তাছাড়া এসব ভুল ও ভুয়া তথ্য সমাজে বিশৃঙ্খলা এবং নৈরাজ্যও সৃষ্টি করতে পারে। অতএব দেখা যাচ্ছে ইনফোডেমিক কেবল তথ্য সংক্রান্ত একটি সমস্যা নয়, বিস্তৃত পরিসরে এটি গোটা সমাজেই অচলাবস্থা ও অস্থিরতার সৃষ্টি করতে পারে। প্রয়োজনের সময় একটি সঠিক তথ্য যেমন মানুষের জীবন বাঁচাতে পারে তেমনি ভুল বা অনির্ভরযোগ্য তথ্য জীবনহানিও ঘটাতে পারে। এ কারণেই ইনফোডেমিকের বিষয়ে আমাদের আশু সচেতনতা একান্ত প্রয়োজন।


পাঠকের সুবিধার্থে দেশে চলমান একটি আলোচিত ঘটনার উদাহরণ এখানে দিতে চাই। অনেক তর্ক-বিতর্ক, পরীক্ষা-নিরীক্ষার পরও গণস্বাস্থ্যের তৈরি কিট কোভিড-১৯ রোগী সনাক্তকরণে জনসাধারণের ব্যবহারের জন্য সরকারী অনুমোদন পাচ্ছে না। যুক্তি হিসেবে সরকার বলছে, এ কিট নির্ভুল ফলাফল দিতে ব্যর্থ। টেস্টে ভুল রিডিং এলে জাতির সর্বনাশ হয়ে যাবে। করোনা পজিটিভ রোগীর ভুলক্রমে নেগেটিভ এলে সে যত্রতত্র ঘুরে বেড়াবে আর আক্রান্ত করবে সমগ্র পরিবার তথা কমিউনিটির প্রত্যেককে। ইনফোডেমিকের ক্ষেত্রে ব্যাপারটি ঠিক তাই। কোটি কোটি তথ্যের মধ্যে আপনি যদি সঠিক সময়ে সঠিক তথ্যটি সঠিক পন্থায় খুঁজে পেতে ব্যর্থ হন তাহলে সেই ভুল তথ্যের কারণে পুরো পবিবার বা কমিউনিটি শুধু নয়, ধ্বংস হবে গোটা সমাজ কিংবা রাষ্ট্র। কাজেই তথ্য ব্যবহারে ভীষণ সাবধানতা অবলম্বন না করলে যে কোনো বড় বিপদ ঘটে যেতে পারে। প্রসঙ্গক্রমে একটা কৌতুক মনে পড়ে গেলো।


উড়োজাহাজের পাইলট আকাশে বিমান উড্ডয়নের পর লক্ষ্য করলেন, বিমানটি সমস্যা দিচ্ছে। তিনি তৎক্ষণাৎ কন্ট্রোল রুমে যোগাযোগ করলেন। কন্ট্রোল রুম থেকে তাকে নির্দেশনা দেয়া হলো-‘স্টপ ইঞ্জিন নাম্বার ফোর’। পাইলট কী বুঝলেন কে জানে, তিনি বিমানের চারটি ইঞ্জিনই বন্ধ করে দিলেন। ফলে যা হবার তাই হলো। অর্থাৎ সঠিক তথ্য না জেনে ভূল বা খন্ডিত তথ্য দিয়ে কর্মসাধন করলে এ রকম জীবনধ্বংসকারী অনেক ঘটনাই ঘটতে পারে। কেন? কিছুদিন আগে নেপালে ইউএস বাংলার একটি ফ্লাইট দুর্ঘটনার খবর আমরা সবাই জানি। ২০১৮ সালের ১২ই মার্চ নেপালের কাঠমান্ডু ত্রিভুবন বিমানবন্দরে বিধ্বস্ত হয় বাংলাদেশের ইউএস বাংলা এয়ারলাইন্সের একটি যাত্রীবাহী বিমান। নেপালের গঠিত তদন্ত কমিটি ককপিটের ভয়েস রেকর্ডার তথ্য থেকে জানতে পারে যে, রানওয়ে ০২ নাকি ২০ তে বিমানটি অবতরণ করবে, তা নিয়ে কন্ট্রোল টাওয়ার ও বিমান কর্মীদের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝির তৈরি হয়েছিল এবং এক পর্যায়ে পাইলট বিভ্রান্ত হয়ে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেললে এই দুর্ঘটনা ঘটে।


এমনিতেই প্যান্ডেমিক কিংবা স্টেট অব ইমারজেন্সি অথবা যে কোনো বিরূপ পরিস্থিতিতে মানুষ জ্ঞানশূন্য হয়ে পড়ে। তখন তারা যুক্তির চেয়ে বিশ্বাসকে বেশী প্রাধান্য দেয় । আর এসুযোগে ইনফোডেমিক ডানা মেলে। করোনাভাইরাস যেমন ক্ষণে ক্ষণে মিউটেড হয়ে তার চরিত্র বদল করে এবং নতুন করে সংক্রমণ ছড়ায়, ইনফোডেমিকও তেমনি তার অন্তর্নিহিত বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য যেমন: মিস-ইনফরমেশন, ডিস-ইনফরমেশন, রং-ইনফরমেশন ও ফেইক-ইনফরমেশন ছড়িয়ে মানুষের মনকে বিভ্রান্ত করে এবং মানবদেহের ইমিউনিটি কমিয়ে দুর্বল করে তোলে। এটাই হচ্ছে ইনফোডেমিক এর সবচেয়ে খারাপ দিক।


হুজুগে বাঙ্গালী কোনো কিছু শুনলেই তাতে হুমড়ি খেয়ে পড়ে। বিচার-বিশ্লেষণের ধার ধারে না। এই সুযোগের সদ্ব্যবহার করে প্রতারক চক্র। মিথ্যে আশ্বাসের নামে অসহায় মানুষকে জিম্মি করে কামিয়ে নেয় কোটি কোটি টাকা। শুধু আর্থিকভাবে অসহায় মানুষকে সর্বস্বান্ত করেই এ চক্র ক্ষান্ত হয় না, মুহূর্তেই ধ্বংস করে দেয় হাজার হাজার জীবন। ঠিক এখন কিন্ত তাই হচ্ছে। করোনার হাত থেকে যে কোনো মূল্যে মানুষ বাঁচতে চায়। আর এই বেঁচে থাকার জন্য সে অনেক কিছুই সহজে বিশ্বাস করে ফেলে। আমাদের দেশের উচ্চ-শিক্ষিত মানুষেরই তথ্য যাচাই-বাছাইয়ের তেমন কোনো একাডেমিক প্রশিক্ষণ বা সামর্থ্য নেই। আর থাকলেও সময় নেই বলে তারা অবচেতন মনেই অনেক গুজবকে সোশ্যাল মিডিয়ার বিভিন্ন গ্রুপে লাইক, কমেন্টস বা শেয়ার করে তা ছড়িয়ে দেন এবং নিজে ড্রপ-ডাউন করে এড়িয়ে যান। আর নিম্ন মধ্যবিত্ত, দরিদ্র বা হত-দরিদ্রের কথা তো বলার অপেক্ষাই রাখে না।


ক্ষুধা আর দারিদ্র্য তাদের বাধ্য করে বিনা পয়সায় কিংবা সবচেয়ে কম খরচে কোথায় পাওয়া যাবে খাদ্য, বস্ত্র, চিকিৎসা কিংবা কোথায় গেলে রক্ষা পাবে তার জীবন, সেই সব জায়গা খুঁজে বেড়ান তারা। অশিক্ষিত, অর্ধ-শিক্ষিত অসহায় মানুষগুলো অস্থির হয়ে কোনো প্রতিষ্ঠানে গিয়ে করোনা চিকিৎসা নিয়ে তার শেষ সহায় সম্বলটুকু হারিয়ে জানতে পারে প্রতিষ্ঠানটি ভুয়া। টাকার বিনিময়ে বাসায় গিয়ে নমুনা সংগ্রহ করে কোনো টেস্ট না করেই মিথ্যা রিপোর্ট প্রদান করা হয়েছে। এসব বিবেকহীন কর্মকাণ্ডের কারণে যাকে মিথ্যা তথ্য দিয়ে বলা হয়েছে ‘করোনা পজিটিভ’ তার এবং তার পরিবারের মানসিক অবস্থা কী রকম ছিল? কিংবা যাকে ভূয়া তথ্য দিয়ে রিপোর্ট দেয়া হয়েছে ‘করোনা নেগেটিভ’ তার দ্বারা কত হাজার লোককে সংক্রামিত করা হয়েছে? তখন সেই প্রশ্নের উত্তর আপনি কোথায় খুঁজবেন? আর এসবের জন্য কাকেই বা দোষারোপ করবেন আপনি? অনেকেই তো জড়িত এর সঙ্গে। আসলে সবই ইনফোডেমিক-এর খেলা। ইনফো্ডেমিক-এর মধ্যেই অন্তর্নিহিত রয়েছে মিস-ইনফরমেশন, ডিস-ইনফরমেশন, রং-ইনফরমেশন, ফেইক-ইনফরমেশন ও ইনফরমেশন হাইডিং-এর মতো নেগেটিভ সব উপাদান। বুঝে-শুনে পা না ফেললে যে কোনো সময় ঘটে যেতে পারে বড় রকমের বিপদ। জীবিকার পাশাপাশি হারাতে হতে পারে সাধের জীবন।


লেখকদ্বয়:
প্রফেসর ড. মো: নাসিরউদ্দিন মিতুল
ডিন, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়

প্রফেসর ড. কাজী মোস্তাক গাউসুল হক
চেয়ারম্যান, ইনফরমেশন সায়েন্স অ্যান্ড লাইব্রেরী ম্যানেজমেন্ট বিভাগ
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়


বিবার্তা/জহির

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com