শিরোনাম
বঙ্গবন্ধু, বিজয় দিবস ও মুক্তিযুদ্ধ
প্রকাশ : ১০ ডিসেম্বর ২০২০, ১০:৫২
বঙ্গবন্ধু, বিজয় দিবস ও মুক্তিযুদ্ধ
মো. শফিকুল ইসলাম
প্রিন্ট অ-অ+

বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধ সমার্থক শব্দ। মুক্তিযুদ্ধ ছাড়া যেমন স্বাধীন দেশ বাংলাদেশ হয়নি। তেমনি জাতির জনক শেখ মুজিবুর রহমান ছাড়া মুক্তিযুদ্ধ সংগঠিত হয়নি। আমরা আজ স্বাধীন দেশ হিসেবে বিশ্ব দরবারে মাথা উঁচু করে কথা বলছি, এসব সবকিছু সম্ভব হয়েছে বঙ্গবন্ধুর কারণে। কিন্তু আমরা এত অকৃতজ্ঞ জাতি যে তাকে নির্মম ভাবে হত্যা করছি। এটা এখনো মেনে নিতে পারছি না। এটা ভাবতে পারছি না কিভাবে মানুষ এই লোকটাকে হত্যা করলো। ঐ হত্যার কথা মনে করলে শরীর শিউরে উঠে। যে লোকটা দেশ স্বাধীনের জন্য তার মূল্যবান জীবনের অনেক গুরুত্বপূর্ণ দিন কারাগারে ছিলেন। তার ছেলে মেয়ে ভালোবাসা, আদর ও স্নেহ থেকেও বি ত হয়েছেন। এটা কি আমরা চিন্তা করছি? যদি চিন্তা করতাম তাহলেই তো আমরা তাকে হত্যা করতে পারতাম না। এই হত্যাকাণ্ডের কারণে আমাদেরকে বিশ্বের অন্যান্য দেশের লোকও গালমন্দ ও ঘৃণা করেন।


জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তার রাজনৈতিক জীবনে ৪ হাজার ৬৮২ দিন কারাভোগ করেছেন। শুধু ৭ দিন কারা ভোগ করেন বিদ্যালয়ের ছাত্র অবস্থায় ব্রিটিশ আমলে। বাকি ৪ হাজার ৬৭৫ দিন তিনি কারাভোগ করেন পাকিস্তান সরকারের আমলে। কেন এতদিন কারাভোগ করলেন? উত্তর সহজ কারণ বাংলাদেশের মানচিত্র এবং একটি স্বাধীন ভূখণ্ড পাওয়ার জন্য। যে যুদ্ধের পটভূমি তৈরি হয় ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের মাধ্যমে। কোটি মানুষের স্বপ্নে ও মনে, ত্যাগে রচিত হয়েছে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের ইতিহাস। এই ইতিহাস আমাদের জীবনে অনেক গুরুত্বপূর্ণ তাৎপর্য বহন করে।


মহামারি করোনাভাইরাসের মধ্যে এই বছরের বিজয় মাস শুরু হয়ে গিয়েছে। যদিও করোনার মধ্যে সীমিত আকারে উদযাপন হবে আমারের বিজয় দিবস। তারপরও আমাদের বিজয় দিনে আমাদের জাতির পিতাকে স্মরণ করতে হবে, তার জন্য দোয়া করতে হবে যেন তার আত্মার শান্তিতে থাকে চিরকাল। কারণ তার ঋণ আমরা কোনভাবেই শোধ করতে পারবো না। এই মহান নেতা আমাদের জন্য যা কিছু করে গিয়েছেন, তা চির অমলিন এবং দেশের মানুষের হৃদয়ে থাকবে চিরদিন। কিন্তু আমরা বাস্তব জীবনে তার চেতনা ও আদর্শ থেকে বিচলিত হয় মাঝে মাঝে। যা যেকোনো পর্যায়ে তা কাম্য নয়। দেশের নীতি,কার্যক্রম ও পরিকল্পনা তার আদর্শে পরিচালিত হওয়া উচিত। কিছু কিছু লোক ভণ্ডামি করে বেড়াচ্ছেন, যাদের মুখে মুখে বঙ্গবন্ধু। অন্তরে রয়েছে দুর্নীতি এবং অন্যান্য যত সব অপকর্ম সংগঠিত করবে। আমি মনে করি এদেরকে চরম শাস্তির আওতায় আনা উচিত।


আরেক প্রকারের ধান্দাবাজ লোক রয়েছে, যারা অন্যদেরকে আদর্শগত সনদপত্র দিয়ে থাকে। কারণ কৌশলে এবং বুদ্ধিতে যখন প্রতিযোগীর সঙ্গে পারে না, তখন তাদেরকে এই ধরণের ভণ্ডামি কাজটা করতে দেখা যায়। যারা আওয়ামী লীগ করে পরিচয় দিচ্ছে, এদের মধ্যে যদি কারো রাজনীতি নিয়ে সন্দেহ থাকে এবং হাইব্রিড আওয়ামী লীগ বলে সন্দেহ হয়। তার জন্য সরকারি গোয়েন্দা সংস্থা আছে। তারা চাইলেই খুব অল্প সময়ে হাইব্রিডদের নারী নক্ষত্র খুঁজে বের করতে পারে। আমাদের উচিত হবে কথায় নয় কাজে প্রমাণ করে দেখাতে যে আমরা প্রকৃত বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ধারণ করে, চেতনা বহন করে দেশ বা যে যেখানে আছে সেখানে জাতির জনকের আদর্শ বাস্তবায়ন করতে হবে। আমাদেরকে আরো সতর্ক হতে হবে ঐসব লোকদের বিরুদ্ধে যারা মিছিল দিয়ে গলা ফাটায় কিন্তু চাঁদা, ঘুষ এবং অবৈধ টাকা ছাড়া কিছু বুঝে না। তাদের বিষয়ে খুবই দ্রুত পদক্ষেপ নেয়ার জন্য সরকার প্রধান মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে বিনিত অনুরোধ জানাচ্ছি। অন্যথায় এই শ্রেণীর মানুষের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে, ফলে সমাজের আসল চরিত্র বিনষ্ট হতে পারে।


সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শতবর্ষ উদযাপনে আজো তিনি আমাদের জাতির নিকট চির ভাস্বর। এই বছর বিজয় দিবস অন্যভাবে পালন হতো, করোনাভাইরাস না আসতো। আমরা আন্তরিকভাবে তা পালন করতে পারতাম। কিন্তু করোনা ভাইরাসের কারণে আমরা সেইভাবে উদযাপন করতে পারিনি। আমাদের মনে অনেক অতৃপ্তি রয়ে থাকল। করোনা না থাকলে কি যে রঙিনভাবে উদযাপন হতো বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন এবং বিজয় দিবস। একটি আরেকটির সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। শেখ মুজিবুর রহমান এক শুদ্ধতম বাঙালি, জাতির অবিসংবাদিত নেতা, যার কণ্ঠ এখনো আমাদের কানে শুনতে পাই, শুনতে পাই সেই ৭ মার্চের ভাষণ। এই নামকে প্রেসার দিয়ে পরিচয় করিয়ে দেয়ার দরকার হয় না, অর্থাৎ বঙ্গবন্ধুর নাম আমার অন্তরে। এই নাম কেউ কোনদিন মানুষের হ্রদয় থেকে মুছে ফেলতে পারবে না। তারপরও নানা অপশক্তি বিভিন্নভাবে ষড়যন্ত্র করে চলছে। যে নামের সাথে মিশে রয়েছে আমাদের সবকিছু, মিশে আছে বাংলাদেশ, মিশে রয়েছে এক অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ এবং সকল মানুষের কল্যাণের রাজনীতি।


১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী আত্মসমর্পণ করেন এবং পরাজয়বরণ করেন এবং ঐ দিন থেকে ১০ জানুয়ারি ১৯৭২ পর্যন্ত দেশের মানুষ শুধু অপেক্ষায় ছিল কবে বঙ্গবন্ধু দেশে ফিরে আসবেন। সেই স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবসে আমাদের চূড়ান্ত বিজয় হয়েছিল আমি মনে করি। কারণ ১৬ ডিসেম্বর ১৯৭১ আমাদের বিজয় হয়েছিল, কিন্তু তখনকার মানুষ এবং মুক্তিযোদ্ধারা শান্তি পাচ্ছিলেন না মনে হয় আমার। কারণ তাদের প্রিয় নেতা তাদের নিকট বলতে বাংলাদেশে ছিলেন না।


তাই এক ধরণের আক্ষেপ ছিল যে যুদ্ধের মূল নায়ক ছিলেন, সেই ছিল না তখনকার স্মরণীয় মুহূর্তে। এমনকি মুক্তিযুদ্ধের সময় বঙ্গবন্ধুকে ফাঁসির আদেশ দেয়, কিন্তু ১৬ ডিসেম্বর ১৯৭১ আমরা পাকিস্তানী সামরিক বাহিনীকে পরাজিত করতে সক্ষম হওয়ার কারণে ইয়াহিয়া খান সেই আদেশ আর বাস্তবায়ন করতে পারেনি। তখনকার সময় ভুট্টো বঙ্গবন্ধুর সাথে দেখা করে অনুরোধের সহিত বলেছিল পাকিস্তানের সাথে সম্পর্ক রক্ষা করার জন্য, কিন্তু জাতির জনক সেই বিষয়টি ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করেন। পরে ৮ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধুকে মুক্তি দিতে বাধ্য হয় এবং পিআইএ এর বিশেষ বিমান করে জাতির জনক লন্ডনের হিথ্রো বিমান বন্দরে পোঁছায় এবং ১০ জানুয়ারি দেশে ফিরে আসেন। তবে বঙ্গবন্ধুর সাথে তারই সুযোগ্য কন্যার কি যে এক মিল রয়েছে। তার এক প্রতিচ্ছবি তার কন্যার সকল কাজে কর্মের মধ্যে লক্ষ্য করা যায়। যেমন সেই বিজয় মাসে সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করেন ঢাকায় নিযুক্ত পাকিস্তানের হাইকমিশনার এবং পাকিস্তানকে ক্ষমা করতে অনুরোধ করেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, পাকিস্তান ১৯৭১ সালে যে নৃশংসতা চালিয়েছিল তা অমার্জনীয়। বাংলাদেশ কখনো তা ভুলতে এবং ক্ষমা করতে পারবে না। একাত্তরের ঘটনা ভুলে যাওয়া বা ক্ষমা করা যায় না। জাতির জনকের কন্যা তা প্রত্যাখ্যান করেন কারণ মুক্তিযুদ্ধে বাঙালিদের ওপর ভয়াবহ বর্বরতা চালায়। তা কোনভাবেই ক্ষমা করা যায় না। তাই আমি মনে করি জাতির জনককে দেখার সৌভাগ্য হয়নি, কিন্তু শেখ হাসিনার কাজকর্ম ও চিন্তার মাধ্যমে শেখ মুজিবুর রহমানকে দেখতে পাই। এই হল বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনা।


জাতির জনক ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি তার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবসে শহীদ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে যে ভাষণ দিয়েছিলেন, সেই ভাষণে যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশ পুননির্মাণের জন্য প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিয়ে থাকেন। মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত লক্ষ্য অর্জনে একটি শূন্য দেশ, ভাঙা অর্থনীতি এবং জিরো বৈদেশিক মুজদ সম্পন্ন দেশ নির্মাণে, সমাজে শান্তি এবং সাম্য প্রতিষ্ঠা এবং বিভিন্ন দেশের সঙ্গে কূটনৈতিক রিলেশন তৈরিতে তার ঐদিনের বক্তব্য ছিল সময়োপযোগী ও প্রশংসনীয়। ঐ ভাষণে তিনি বলেন বাংলার মানুষ আজ মুক্ত, স্বাধীন।


সম্প্রতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্য ভাঙ্গা হয় এক জেলায়। এটা কোনভাবেই মেনে নেয়া যায় না। যে জাতির সাথে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ওতপ্রোতভাবে জড়িত। যাকে ছাড়া বাংলাদেশ কল্পনা করা যায় না। সেই লোকের প্রতি এতটুকু সম্মান আমরা দেখাতে পারছি না। এর চেয়ে খারাপ কিছু হতে পারে না। আমরা খুবই এক অকৃতজ্ঞ জাতি। ফলে যারা এর সাথে জড়িত তাদেরকে দ্রুত গ্রেফতার করে বিচারের ব্যবস্থা করা হোক।


বঙ্গবন্ধু ব্যতিত বাংলাদেশ ও বাংলাদেশের স্বাধীনতা, ত্রিশ লাখ মানুষের আতত্মহুতি এবং চার লাখ মা বোনের সম্ভ্রম হারানোর এক দুঃখে ভারাক্রান্ত দিন – কোনটাই পূর্ণতা পাই না যতক্ষণ না পর্যন্ত জাতির জনক ১০ জানুয়ারি ১৯৭২ দেশে ফিরে আসে। ঐ দিন আমি মনে করি দেশ, বাঙালি জাতি সকল মানুষ মনে প্রাণে সুখ শান্তি ফিরে পেয়েছিল এবং বাংলাদেশ না ভূখণ্ডটি তখন পরিপূর্ণতা স্বাধীন রুপে মহীয়ান হয় এবং আমরা ফিরে পায় আমাদের প্রিয় নেতা এবং জাতির জনক বঙ্গবন্ধ শেখ মুজিবুর রহমানকে। জয় বাংলা জয় বঙ্গবন্ধু।


লেখক: সাবেক সভাপতি-শিক্ষক সমিতি, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়, ত্রিশাল, ময়মনসিংহ।


বিবার্তা/জহির

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com