শিরোনাম
পদ্মা সেতু- সততা, সাহস, স্পর্ধার নাম
প্রকাশ : ২২ ডিসেম্বর ২০২০, ২১:৫১
পদ্মা সেতু- সততা, সাহস, স্পর্ধার নাম
শেখ স্বাধীন মো. শাহেদ
প্রিন্ট অ-অ+

পদ্মা নিয়ে বাংলা সাহিত্যে যথেষ্ট লেখা হয়েছে। এ পদ্মায় কুবের সব হারানোর পরও স্বপ্ন বুনে, নজরুল এ পদ্মার শূণ্য হৃদয়ে পদ্ম খোঁজেন।


বুদ্ধদেব বসু বলেছেন, "আগে চলো পদ্মায়, দুপুরের রোদে রুপো ঝলমল সাদা জল উছলায়। শুয়ে শুয়ে মোরা দেখিব আকাশ-আকাশ মস্ত বড়, পৃথিবীর যত নীল রং সব সেখানে করেছে জড়"।


তবে প্রমত্তা পদ্মার প্রকৃত রুপ অন্যদের চেয়ে হয়তো বিশ্বকবিই ভাল দেখেছেন। ছিন্নপত্রে তিনি পদ্মাকে উদ্দেশ্যে করে বলেছেন " তাকে (পদ্মাকে) মনে করলে আমার কালীর মূর্তির কথা মনে হয়। নৃত্য করছে, ভাঙছে, চুল এলিয়ে দিয়ে ছুটে চলছে।" তবে পদ্মা ও যমুনা ত্রিভাগে বিভক্ত এ বাংলায় পদ্মা সেই ছুটে চলা মাঝে বাধাহীন, নিয়ন্ত্রণহীন, সর্বনাশা। আর তার এই নিয়ন্ত্রণহীন, সর্বনাশা ছুটে চলাকে কেউ যদি সম্ভাবনার বেনীতে বাঁধতে পারে তবে সেই কবির নাম শেখ হাসিনা।


৭ মার্চ ১৯৭১ এবং ৩১ জানুয়ারি ২০১৩ এই দীর্ঘ সময়ে বাংলাদেশের ভাগ্যাকাশে অনেক পালাবদল হলেও এই দিন দুটিকে বাধা যায় একটি বাক্য দিয়ে।"দাবায়ে রাখতে পারবা না"।সারা বিশ্বে বাংলাকে মাথা উচু করে দাঁড়ানোর সাহস এক করে করেছে এই দিন দুটিকে। প্রথমটিতে জাতির জনক বলেছিলেন, যার যা কিছু আছে তাই নিয়ে শত্রুর মোকাবেলা করতে হবে। দ্বিতীয় দিনটিতে তার উত্তরাধিকার বলেছিলেন, পদ্মা সেতু আমরাই করব, আমাদের টাকাই করব।


সেই থেকে শুরু। ২০১৭ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর প্রথম স্প্যান বসানোর পর কেটে গেছে ১১৬৫ দিন,পদ্মা দেখেছে কয়েকটি বর্ষার তীব্র স্রোত, জমেছে পলি। শুধু ব্যত্যয় ঘটেনি শেখ হাসিনার প্রত্যয়ের, পদ্মা সেতু করবই, নিজেদের অর্থেই করবই।


এ বিশ্ব মূলত তিন শ্রেণির মানুষের বসবাস। ধনী শ্রেণী, দরিদ্র শ্রেণী আর মধ্যস্বত্বভোগী শ্রেণী। এই ৩য় শ্রেণীর লোক বর্গ হচ্ছে সবচেয়ে মারাত্মক, সুকৌশলীও বটে। ধনীরা দরিদ্রদের শোষণ করে বাঁচে, আর দরিদ্ররা বাঁচে জীবনের সাথে যুদ্ধ করে। কিন্তু মধ্যস্বত্বভোগীরা বাঁচে এই দুই শ্রেণীর ঘাম ও বিষ্ঠা খেয়ে। তাই এদেরকে পরগাছা বললেও ভুল হবেনা, আবার আগাছা বললেও না।


বাংলাদেশ তখন দরিদ্র দেশের শ্রেণীতে, আর বিশ্বব্যাংক ও অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থা মনিব শ্রেণির ভূমিকায়। আর বিভিন্ন ঠিকাদারি ও পরামর্শক প্রতিষ্ঠান খুলে যারা এই দুই শ্রেণীর মধ্যে তথাকথিত সমন্বয়ের দায়িত্ব পালন করতো, তারা ছিল মূলত কমিশন খোর শ্রেণী। মনিবকে তেল মারা, আর দরিদ্র দেশ গুলিকে শাসিয়ে নিজের সুবিধা লাভই ছিল এই কমিশন খোর শ্রেণীর কাজ। তাদের বক্তব্যের শুরুই হতো " এদেশের নেতৃত্ব, প্রশাসন এবং প্রতিষ্ঠান সব অদক্ষ। এদের দক্ষ করে গড়ে তুলতে কনস্যালট্যান্ট প্রয়োজন। "পদ্মা সেতুতেও প্রথম বাধার সৃষ্টি করেছিল এই কমিশন খোর শ্রেণী কনস্যালট্যান্ট নিয়োগ নিয়েই। শ্রদ্ধেয় অজয় দাশ গুপ্ত তার একটি প্রবন্ধে ৭০ এর দশকের একটি ঋণ চুক্তির কথা উল্লেখ করেছেন। আমেরিকা বাংলাদেশকে একটি কৃষি ঋণ দেয়, যার উদ্দেশ্যে ছিল ৩৬% হারে কৃষি ঋণ দেয়া যায় কিনা সেই অদ্ভূত অসঙ্গতি খতিয়ে দেখা। বলাই বাহুল্য, উক্ত ঋণের অধিকাংশ অর্থই ব্যয় হয়েছিল ঐ যে খতিয়ে দেখতে এসেছিলেন সেই সমস্ত কনসালট্যান্টদের পেছনে।


একই ভাবে ২০১১ সালের ২৮ এপ্রিল বিশ্ব ব্যাংকের আগ্রহ দেখিয়ে পদ্মা সেতুতে আগমন, অতঃপর ২০১২ সালের মাঝামাঝিতে নানা নাটকের মাধ্যমে বিদায় গ্রহণের সময়ও এই কমিশন খোর শ্রেণী ভূমিকা রাখে। আমাদের দুর্ভাগ্য, বাংলাদেশের বিরুদ্ধে এই হীন কাজটি করেছিল এদেশেরই একজন নোবেল বিজয়ী।


সেই লোকটা সম্পর্কে একটা কথাই বলা যায়, ঘুঁটে পোড়ে গোবর হাসে। সজাতির দুঃখে এমন আনন্দিত হওয়া লোক দুনিয়ায় খুব কম। তবে সাধারণ মানুষের প্রশ্ন বিশ্বব্যাংকের দিকে। তাদের গোয়েন্দা বিভাগ তো এতটা দুর্বল হবার কথা না যে এনএসসি লাভালিনের কর্মকর্তা রমেশ বাবু তার নোটে যা লিখে রাখবে এবং "Padma bridge" নামে যে বেনামী ইমেইল যাবে তার ভিত্তিতেই তারা স্বাক্ষরিত চুক্তি থেকে সড়ে আসবে!


বিশ্ব ব্যাংক আসলেই অন্ধের হাতি দেখেছিল। তাই তারা আন্দাজই করতে পারেনি, আসলে তাদের সড়ে আসায় হিতে বিপরীত হবে।যেটা আন্দাজ করেছিলেন উপমহাদেশের বিখ্যাত ইঞ্জিনিয়ার জামিলুর রেজা স্যার।


তিনি সেতু প্রকল্পের পরামর্শক ছিলেন। এই পুরোধা পুরুষ ২০১৩ সালে একটি প্রবন্ধে স্পষ্ট ভাষায় জানান, পদ্মা সেতুতে কোনো দুর্নীতি হয়নি।


২৭ জন "কি পারসোনাল " পদ্মা সেতুর কনস্যালট্যান্ট হিসেবে নিয়োগের সুপারিশ ছিল বিশ্ব ব্যাংকের। যাদের অধিকাংশই স্ব স্ব ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞ ছিলেন না, অনেকের ছিল না সনদও। ইস্পাতের পাইলিং করা হয়েছে এমন যে সেতুর ছবি বিশ্ব ব্যাংকের আজ্ঞাবহ এক প্রতিষ্ঠান চীনের বলে সরবরাহ করে, সেটাও ছিল আদৌতে ক্যালিফোর্নিয়ায়! তাদের মত আন্তর্জাতিক লেভেলের ধান্দাবাজদের যখন সেতুতে নিয়োগ দেয়া হল না, তখনই বলে উঠলো, পদ্মা সেতুতে দুর্নীতি হয়েছে! সাথে তাল মেলালো ভেড়াকান্ত, নির্বোধ বিএনপি। সুর মেলালো কিছু মিডিয়া। এক শেয়াল ডাক দিলে, সব শেয়াল ডাকে!


বিএনপির কথা বলতে চাইনা আর।বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, ভিক্ষুক জাতির সম্মান থাকে না। তার কন্যা শেখ হাসিনা বলেছেন, আর কতকাল অন্যের কাছে হাত পাতবো?


সেখানে বিএনপি এবং সুশীল সমাজের ঐ সময়ের আক্ষেপ ছিল, আর এদেশে বিশ্বব্যাংক ঋণ দিবেনা! এরা ঋণ নিয়ে মগ্ন, আত্মনির্ভরশীল হতে চায় না। বিএনপির মির্জা ফখরুল, এমাজদ্দিন আহমেদ, হান্নান শাহ, খন্দকার মোশাররফ তো বটেই। বেগম জিয়া যা বলেছিলেন তা আর উল্লেখ করে প্রাক্তন একজন প্রধানমন্ত্রীর নির্বুদ্ধিতাকে সবার সামনে আনতে চাইনা।


সুজনের সম্পাদক বদিউল আলম, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা এম হাফিজদ্দীন, আকবর আলী খান, টি আই বির পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান, আলী ইমাম মজুমদার, পি আর আইয়ের পরিচালক আহসান এইচ মন্সুর সাহেবরা যা বলেছিলেন তা এদেশ এখনো ভুলেনি। প্রত্যেকেই এক গোয়ালের গরু। এমাজউদ্দীন সাহেব মরে বেঁচেছেন, কিন্তু বাকিরা পদ্মা সেতুর ৪১টা স্প্যান বসে যাওয়ার পর এখন কিভাবে মুখ দেখাবে তা ভাবতেই হাসি পায়।


তাই এদের কথা আর বলতে চাইনা। এরা নিজের দেশকে দরিদ্র প্রচার করে অন্য দেশের কাছ থেকে করুনা ভিক্ষা করা পার্টি। আওয়ামী লীগকে খাটো করতে নিজের দেশকে নোংরা ভাবে ছোট করতে বাধেনা এদের। মুখে শুধু নীতিবাক্যের ফুলঝুরি। আসলে মুষল নাই, ঢেকি ঘরে চাদোয়া দেয়া দল বিএনপি এখন। তাই এদেশের কোটি তরুণ শুধু একজনের কথাই বলতে চায়, শেখ হাসিনা। চিত্রগুপ্তের যে খাতা বঙ্গবন্ধু খুলেছিলেন, শেখ হাসিনা তাতে রোজ রোজ নতুন পালক যুক্ত করছেন। সব গুলি স্প্যান বসানোর পর দৃশ্যমান আজ স্বপ্নের, আত্মনির্ভরশীলতার প্রতিক পদ্মা সেতু। তিন ভাগে বিভক্ত বাংলা আজ একাকার। আর এই একত্রীকরণের মহান কারিগরের নাম শেখ হাসিনা। কীর্তিনাশা, সর্বনাশা পদ্মার বুকচিরে নির্মিত পদ্মা সেতু তার রচিত সততা, সাহস আর স্পর্ধার এক অনন্য কবিতা।


লেখক : সমাজসেবা সম্পাদক, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ, কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদ।


বিবার্তা/জাই

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com