শিরোনাম
করোনা-অর্থনীতি ও বাংলাদেশ: উত্তরণের পথ
প্রকাশ : ৩০ এপ্রিল ২০২০, ২২:৪৮
করোনা-অর্থনীতি ও বাংলাদেশ: উত্তরণের পথ
মো: তারিকুল ইসলাম
প্রিন্ট অ-অ+

২০১৯ সালের শেষের দিকে সমগ্র বিশ্ব যখন নতুন বছরকে স্বাগত জানাতে স্বাগ্রহে অপেক্ষমান, ঠিক তখনই কোভিড-১৯ নামের এক মহামারীর আবির্ভাব। ভাইরাসটির উতপত্তিস্থল চীনের উহান শহরে হলেও চীনের সাথে বাণিজ্যিক পর্যটন সম্পর্ক থাকার দরুণ করোনাভাইরাস খুব সহজেই ছড়িয়ে পড়ল অন্যান্য দেশেও। ইতালি থেকে ইরান, ইউকে থেকে ইউএসএ, অস্ট্রেলিয়া থেকে ভারত – আজ পর্যন্ত (৩০ এপ্রিল ২০২০) ২১১টি দেশ এই ভাইরাসে আক্রান্ত।


আশ্চর্যনকভাবে, উন্নতবিশ্বে যেখানে স্বাস্থ্যব্যবস্থা প্রশ্নাতীত ভাল, সেখানেই সংক্রমণ অনুন্নত বা উন্নয়নশীল দেশগুলো থেকে ঢের বেশি। শুধু আমেরিকায় এক মিলিয়নেরও বেশি মানুষ সংক্রমিত হয়েছে আর মৃত্যু হয়েছে প্রায় বাষট্টি হাজার (৩০ এপ্রিল ২০২০ পর্যন্ত)। অতি সম্প্রতি এক গবেষণায় বসু এবং সেন (২০২০) দেখিয়েছেন, যেসকল দেশের (বেশিরভাগ উন্নত দেশেরই) মোট জনসংখ্যার একটা বড় অংশ বয়স্ক জনগোষ্ঠী, সেসকল দেশে করোনা সংক্রমণের হারও বেশি। কি করলে বা কোনো ঔষধে মিলবে প্রতিকার, এ নিয়ে বিশ্বব্যাপী গবেষকগণ করছেন চুলচেরা বিশ্লেষণ। কিন্তু মুক্তির উপায় আজ অবধি অধরা। তাহলে কি বিশ্ব এর আগে এ ধরনের মহামারি অবলকন করেনি? ঠিক এক শতাব্দী আগে, ১৯১৮ সালে সমগ্র পৃথিবী Spanish flu‘র প্রাদূর্ভাব দেখেছে, এমনকি চিকিৎসাবিজ্ঞানী আর গণস্বাস্থ্য গবেষকগণ সেই মহামারিকে পরাভূতও করেছেন। কিন্তু এখনকার সাথে সেসময়ের পার্থক্য এই যে, সেযাত্রায় বয়স্ক জনগোষ্ঠী নয় বরং কর্মক্ষম যুবশ্রেণীই বেশি আক্রান্ত হয়েছিল (বেল এবং লুইস, ২০০৪)।


চিন্তাটা আরো বেড়ে যায় যখন আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম সিএনএন রিপোর্ট করে, দক্ষিণ কোরিয়ায় যতজন করোনাক্রান্ত রোগী সুস্থ হয়েছেন তাদের মধ্যে এই পর্যন্ত (১৬ এপ্রিল ২০২০) কমপক্ষে ১৪০ জন দ্বিতীয়বার আক্রান্ত হয়েছেন।


কোভিড-১৯’র প্রাদূর্ভাব যেমন বিশ্ব স্বাস্থ্যব্যবস্থাকে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলেছে, একইসাথে সামষ্টিক অর্থনীতিকেও করছে দুর্বল থেকে দুর্বলতর। যার প্রভাব শুধু উৎপাদন-বিপনণ কিংবা আমদানি-রফতানি বাণিজ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে না, বেকারত্বের হারকেও বাড়িয়ে দিবে কয়েকগুণ। আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা অনুমান করছে, আগামী তিন মাসে সমগ্র বিশ্বে পূর্ণকালীন কর্মীদের মধ্যে প্রায় ২০০ মিলিয়ন বেকার হয়ে পড়তে পারে। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা আর অর্থনীতিবিদরাও দেশীয় ও আন্তর্জাতিক ব্যবসার চাকা সচল রাখা এবং জিডিপি পূণরুদ্ধারকল্পে প্রেসক্রিপশন দিয়ে যাচ্ছেন। আক্রান্ত দেশগুলোর সরকারও মোটা দাগে জনস্বাস্থ্য নিশ্চিতকরণ ও অর্থনীতির পড়তি রোধকল্পে বড় অংকের তহবিল গঠন করছে। বাংলাদেশও এর ব্যতিক্রম নয়। বাংলাদেশে কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত হয়েছে ৭,৬৬৭ আর মোট মৃত্যুবরণ করেছেন ১৬৮ জন (৩০ এপ্রিল ২০২০ পর্যন্ত)। অন্যান্য দেশের মত করোনা মহামারি জনসাধরণের মাঝে ছড়িয়ে পড়া রুখতে গত ২৬ মার্চ থেকে চলছে লকডাউন। এরই মধ্যে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রায় এক লক্ষ কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছেন, যা জিডিপির ৩.৩০ শতাংশ।


কি আছে ঘোষিত প্রণোদনা প্যাকেজে?


বাংলাদেশ সরকারের প্রণোদনা তহবিলটি দেশের তাৎক্ষণিক ও স্বল্পমেয়াদি চাহিদার কথা যেমন বিবেচনা করা হয়েছে, তেমনি গুরুত্ব দেয়া হয়েছে করোনা মোকাবিলায় দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা। প্যাকেজের ৫,০০০ কোটি টাকার সর্বপ্রথম ঘোষণাটি আসে ২৫ মার্চ ২০২০ তারিখে রফতানিমুখী শিল্প অর্থায়নে। বরাদ্দকৃত এই অর্থের কমপক্ষে ৮০ ভাগ রফতানিকারক প্রতিষ্ঠানসমূহকে তাদের কর্মচারীদের বেতন-ভাতা পরিশোধের জন্য বিনা সুদে দুই বছর মেয়াদি ঋণ হিসেবে দেয়া হবে। করোনাভাইরাস প্রতিরোধে সারা দেশে লকডাউনের কারণে যেহেতু প্রায় সব কল-কারখানার বন্ধ রয়েছে, এমতাবস্থায় এই প্রণোদোনার অর্থ নিশ্চিতভাবেই বিভিন্ন রফতানিমুখী প্রতিষ্ঠান বিশেষত পোশাকশিল্প যেটা ২০১৮-২০১৯ আর্থিক বছরে অবদান রেখেছে মোট জিডিপি’র ১০.৭৫ ভাগ, সেখানে কর্মরত প্রায় ৪০ লাখ শ্রমিককের নিয়মিত আয় নিশ্চিতকরণ এবং তাদের বেকার হওয়ার হাত থেকে রক্ষা করতে বড় ভূমিকা পালন করবে।


দ্বিতীয় ধাপে প্রধানমন্ত্রী এপ্রিলের ৫ তারিখে করোনাভাইরাসের সম্ভাব্য অর্থনৈতিক ক্ষতি থেকে রক্ষা পেতে আরো ৬৭ হাজার ৭৫০ কোটি টাকার প্রণোদনা ঘোষণা করেন। নতুন গঠিত তহবিল থেকে চারটি ক্ষেত্রকে প্রাধান্য দেয়া হয়েছে। প্রথমত, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের কার্যকরী মূলধনের যোগানকল্পে ২০ হাজার কোটি টাকা ৯ শতাংশ সুদে ঋণ দেয়া হবে, যার মধ্যে সরকারি ভর্তূকি হবে ৫ শতাংশ। দ্বিতীয়ত, ৩০ হাজার কোটি টাকার কার্যকারি মূলধনের ঋণসুবিধা বরাদ্দ রয়েছে বৃহৎ শিল্প ও সেবা খাতের জন্য। এই ঋণের সুদহার হবে ৯ শতাংশ, তন্মধ্যে ঋণগ্রহীতা প্রতিষ্ঠান বহন করবে ৪.৫ শতাংশ আর বাকি ৪.৫ শতাংশ বহন করবে সরকার। লকডাউনের কারণে হোটেল-রেসটুরেন্টে ভোক্তা অনুপস্থিতি আর ট্রেন, বাস, বিমানে যাত্রী পরিবহন বন্ধ থাকায় সেবাপ্রদানকারী খাতসমূহের মধ্যে পর্যটন শিল্প সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত। তাই পর্যটনখাতকে এই বরাদ্দকৃত অর্থে প্রাধান্য দেয়ার বিকল্প নেই। তৃতীয়ত, রাফতানিমুখী শিল্পকে গুরুত্ব দিয়ে ৭ শতাংশ হারে প্রাক-জাহাজীকরণ পুন:ঋণ হিসেবে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। অবশিষ্ট ১২ হাজার ৭৫০ কোটি টাকার রফতানি উন্নয়ন তহবিল গঠিত হবে যা ব্যাক-টু-ব্যাক ঋণপত্রের মাধ্যমে কাঁচামাল আমদানিতে সহায়ক হবে।


খাদ্য উৎপাদন নিরবিচ্ছিন্ন রাখতে এবং দেশের কৃষিখাতকে সচল রাখতে প্রধানমন্ত্রী সর্বেশষ গত ১১ এপ্রিল ৫ শতাংশ সুদে ৫ হাজার কোটি টাকার ঋণসুবিধার ঘোষণা দেন। এই অর্থ শুধু ধান ও সবজি উৎপাদনকারী কৃষকরাই প্রাপ্য হবেন না, মৎস্য, ডেইরী এবং পোলট্রি খাতেও বরাদ্দ দেয়া হবে। তবে যেখানে শিল্পখাতে ঋণের কিছু ক্ষেত্রে বিনাসুদে ঋণ বিতরণের কথা বলা হয়েছে, সেখানে দেশের কৃষক বিশেষত প্রান্তিক উৎপাদনকারীদের জন্য সুদযুক্ত ঋণ বোঝাস্বরূপ। একথা অনস্বীকার্য যে, গ্রামীণ অর্থনীতি এখনও কৃষিখাতের উপর নির্ভরশীল। উপরন্তু, বোরো মৌসুম সমাগত এবং সামাজিক দূরত্ব থাকার দরুণ মাঠের ফসল ঘরে তোলাটাই যেখানে বড় চ্যালেঞ্জ, সেখানে যেকোন হারের সুদই কৃষকদের ঋণ নেয়ার ইচ্ছাকে দমন করার সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে। উল্লেখিত প্রণোদনাগুলো ছাড়াও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জন্য সরকার ১০ টাকা দরে চাল বিতরণ ও নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য বিনামূল্যে খাদ্য বিতরণ কর্মসূচি চলমান রয়েছে।


প্রণোদনা প্যাকেজের অর্থ যোগান


করোনার ক্ষতি পুষিয়ে নিতে ও অর্থনীতিকে বেগবান করার লক্ষ্যে সরকার বিশাল তহবিলের ঘোষণা দিয়েছে, কিন্তু এই অর্থের যোগান কিভাবে হবে সেসম্পর্কে সুস্পষ্ট কোনো দিকনির্দেশনা এখন পর্যন্ত আমরা জানি না। তিনিটি প্রধান উৎসকে এক্ষেত্রে বিবেচনা করা যেতে পারে। প্রথমত, আন্তর্জাতিক দাতাসংস্থা যথা: বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ, আইডিবি’র মত সংস্থা স্বল্পসুদে অর্থ যোগানের একটা বড় উৎস হতে পারে। কিন্তু যেহেতু পৃথিবীর প্রায় সব দেশই এই মুহূর্তে আক্রান্ত এবং তাদেরও অর্থের প্রয়োজন, তাই এইসব উৎস থেকে অর্থ প্রাপ্তি নি:সন্দেহে বেশ প্রতিযোগিতামূলক হবে (খাতুন, ২০২০)।


উল্লেখ্য, বিশ্বব্যাংক ইতোমধ্যেই করোনা ভাইরাসের চিকিৎসায় বাংলাদেশকে ১০০ মিলিয়ন ডলারের একটা অনুদান দিয়েছে। দ্বিতীয়ত, সরকারের উন্নয়ন ও অপেক্ষাকৃত কম গুরুত্বপূর্ণ ব্যয় সংকোচন। অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক আবুল বারকাত (২০২০)’র মতে, বাংলাদেশের বাজেটে মোট উন্নয়ন ব্যয়ের যে পরিমাণ বরাদ্দ দেয়া হয় তার সর্বোচ্চ ৬০ শতাংশ খরচ হয় আর্থিক বছরের প্রথম ১০ মাসে আর পরের দুইমাস অতিবাহিত হয় ব্যয়িত অর্থের সমন্বয় তৈরিতে। সুতরাং, এই অর্থবছরের এপ্রিল পর্যন্ত অব্যয়িত অর্থ বা আগামী জুন পর্যন্ত তুলনামূলক কম গুরুত্বপূর্ণ খাতে সরকারি ব্যয় না করে প্রণোদনা তহবিলে প্রয়োজনীয় অর্থের একটা বড় উৎস হতে পারে। প্রধানমন্ত্রী অবশ্য ইতোমধ্যেই সরকারি ভ্রমণের ক্ষেত্রে অপ্রয়োজনীয় ব্যয় সংকোচনের নির্দেশ দিয়েছেন।


তৃতীয়ত, বাংলাদেশ ব্যাংক তারল্য সংকট রোধকল্পে ইতোমধ্যে কিছু পদক্ষেপ হাতে নিয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকটি ইতিমধ্যে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর উদ্দ্যেশ্যে কিছু নির্দেশনা জারি করেছে। তন্মধ্যে, চলতি বছরের মার্চ থেকে ৩১ মে পর্যন্ত ক্রেডিট কার্ড পেমেন্টের উপর সবধরণের সুদ ও চার্জ মওকুফ এবং অনুমোদিত ঋণশ্রেণী আগামী ৩০ জুন পর্যন্ত অবনমন স্থগিতকরণের সিদ্ধান্ত উল্লেখযোগ্য। এছাড়া, সকল তালিকাভুক্ত ব্যাংকের ক্যাশ রিজার্ভ রেশিও (সিআরআর) ও রিপার্চেজ এগ্রিমেন্টের (রেপো) হার কমিয়ে যথাক্রমে ৪ শতাংশ এবং ৫.২৫ শতাংশ করা হয়েছে। এই পর্যায়ে, বাংলাদেশ ব্যাংকের উদ্যোগসমূহ সাধুবাদ পাবার যোগ্য, তবে প্রায় এক লাখ কোটি টাকার তহবিলকে বেগবান করতে পর্যাপ্ত নয়। তাই অদূর ভবিষ্যতে তাদের আরো কিছু পদক্ষেপ গুরুত্ব দেয়া যেতে পারে। যেমন: বাণিজ্যিক ব্যাংকের তারল্য বাড়াতে স্ট্যাটিউটরি লিকুইডিটি রিজার্ভ (এসএলআর) কমানো যেতে পারে। ফলশ্রুতিতে, বাণিজ্যিক ব্যাংকসমূহ সরকার ঘোষিত প্রণোদনা প্যাকেজের অর্থ যোগানে বড় ভূমিকা রাখতে পারবে। তাছাড়া যেহেতু দেশের উৎপাদন ও ব্যবসা-বাণিজ্য থমকে আছে, তাই ঋণগ্রহীতার সুবিধার্তে ঋণের কিস্তি আগামী দুই থেকে তিন মাসের জন্য বকেয়া পরিশোধের সুযোগ দেয়া যেতে পারে। তবে সেক্ষেত্রে ঋণের সুদ মওকুফ করা যাবে না। তাহলে ব্যাংকের পরিচালন খরচ ও মুনাফাও ক্ষতিগ্রস্ত হবার সভাবনা থাকে না।


গৃহীত উদ্যোগ কি যথেষ্ট?


বাংলাদেশ সরকার ইতোমধ্যে বেসরকারি বিভিন্ন শিল্পপ্রতিষ্ঠানে কর্মরতদের বেতন যেন নিয়মিতভাবে প্রদান করা হয় সেজন্য আর্থিক প্রণোদোনার ঘোষণা যেমন দিয়েছে, সেসব প্রতিষ্ঠানে চাকরিচ্যুতি রোধকল্পে বিভিন্ন প্রাতিষ্ঠানিক ফোরামের সাথে আলোচনা করে যাচ্ছে। কিন্তু এটা ভুলে গেলে চলবে না যে, এদেশের ৫১.৭৩ মিলিয়ন মানুষ অপ্রাতিষ্ঠানিক কর্মকান্ডের সাথে জড়িত (লেবার ফোর্স সার্ভে, ২০১৬-‘১৭)। এদের মধ্যে রয়েছে রিকশা ও অটোচালক, দিনমজুর, ফেরিওয়ালা, হকারসহ আরো অনেকেই। আবার এদের একটা বড় অংশই নারী ও বয়স্ক। সরকার যদিও বিনামূল্যে খাদ্য বিতরণ কর্মসূচি চালু রেখেছে, কিন্তু তাদের অন্যান্য ন্যূনতম দৈনন্দিন প্রয়োজন থেকে যাচ্ছে অপূর্ণ।


নোবেল জয়ী অর্থনীতিবিদ অভিজিৎ ব্যানার্জি’র মতে, সমাজের ভারসাম্য রক্ষার্থে উন্নয়নশীল দেশের সরকারের উচিৎ খাবারের পাশাপাশি যত দ্রুত সম্ভব প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জন্য অর্থ সহযোগিতা নিশ্চিত করা। দেশে যেহেতু খাদ্য সহযোগিতা বিদ্যমান, তাই বাংলাদেশের প্রাতিষ্ঠানিক কর্মীদের ন্যূনতম মাসিক মজুরি’র (৮,০০০ টাকা) কমপক্ষে ৫০ ভাগ (৪,০০০ টাকা) নগদ সহায়তা অপ্রাতিষ্ঠানিক কাজে নিয়োজিতদের দেয়া যেতে পারে। সুনির্দিষ্ট ব্যক্তি এই নগদ অর্থ যাতে করে দ্রুত এবং সঠিকভাবে পায়, সেজন্য বিভিন্ন মোবাইল পেমেন্ট প্লাটফর্ম (নগদ, বিকাশ, রকেট) ব্যবহার করা যেতে পারে।


বাংলাদেশ যেহেতু শ্রমশক্তিপ্রধান (Labour-intensive) উন্নয়নশীল দেশ, লকডাউন কার্যক্রম খুব বেশি দিন চললে আমাদের অর্থনীতির জন্য দীর্ঘমেয়াদে সুফল বয়ে আনবে না। আবার এটাও অনস্বীকার্য, করোনা ভাইরাসের বিস্তার রোধে লকডাউন এখন পর্যন্ত সর্বোৎকৃষ্ট পন্থা। তবে অর্থনীতির চাকা সচল করতে সঠিক কৌশলের উপর গুরুত্ব দিয়ে বিশ্বব্যাংকের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক কৌশিক বসু আনন্দবাজার পত্রিকায় একটা সাক্ষাৎকারে বলেন, “যে দেশ সময়মতো – পরিকল্পনামাফিক এবং হিসেব কষে – লকডাউন থেকে বেরিয়ে আসতে পারবে না, এবং তার ফলে সার্বিক ভাবে অর্থনীতিতে এবং বিশেষ ভাবে বেসরকারি ক্ষেত্রে একটা শূন্যতা তৈরি হবে, সে দেশগুলো ঝামেলায় পড়বে। দীর্ঘমেয়াদে তাদের আর্থিক স্বাস্থ্যভঙ্গ হবে। রফতানির আন্তর্জাতিক বাজারে, এবং আউটসোর্সিং বা কাজ চালানোর বাজারের দৌড়ে তারা বিপজ্জনকভাবে পিছিয়ে পড়বে।“ দেবরাজ রে এবং সুব্রামানিয়ান ভারতের অর্থনীতির চাকা সচল করতে ২০-৪০ বছর বয়সীদের করোনা এন্টিবডি টেস্টে উত্তীর্ণ হওয়া সাপেক্ষে কাজে যোগ দেয়ার পক্ষে মত দিয়েছেন। তাদের মতে, এ টেস্টে অনুত্তির্ণরা ও পরিবারের অন্য সদস্যগণ নিজেদের রক্ষার্থে কোয়ারেন্টিন বা অন্য কোন উত্তম পদ্ধতি অবলম্বন করবেন। তবে এই প্রক্রিয়া অনুসরণে উনারা সঠিক অবেক্ষণের (inspection) ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন। অতি সম্প্রতি বাংলাদেশেও গার্মেন্ট সেক্টর খুলে দেবার খবর আমরা দেখতে পাচ্ছি। কিন্তু যোগদানকৃত শ্রমিকদের শুধু দূরত্ব মেনে কাজ করালেই চলবে না, করোনা টেস্ট না করে তাদের কাজে যোগ দেবার অনুমতি দেয়ার সিদ্ধান্ত আমাদের জন্য হিতে বিপরীত হতে পারে। ফলশ্রুতিতে, আক্রান্তের হার বেড়ে যেতে পারে বহুগুণ। সুতরাং, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও মালিক পক্ষের সজাগ দৃষ্টিই পারে আশু-প্রলয় থেকে আমাদের বাঁচাতে।


মো: তারিকুল ইসলাম, পিএইচডি, কমনওয়েলথ স্কলার, সহকারী অধ্যাপক, ফিন্যান্স এন্ড ব্যাংকিং বিভাগ, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয় ত্রিশাল, ময়মনসিংহ


বিবার্তা/জাহিদ

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com