শিরোনাম
দান, ত্রাণ ও আমাদের চর্চা
প্রকাশ : ০৩ এপ্রিল ২০২০, ১৯:৪৬
দান, ত্রাণ ও আমাদের চর্চা
ড. সিদ্ধার্থ দে
প্রিন্ট অ-অ+

করোনা মোকাবেলায় খাদ্য সামগ্রী বা নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি যেভাবে বিতরণ করা হচ্ছে তাতে করোনা ঝুঁকি আরও বাড়ছে বৈ কমছে না। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত সময়োপযোগী সকল পদক্ষেপগুলোকে ম্লান করে দিতে পারে এ ধরণের ভুল কার্যক্রমগুলো। যেন এ বিষয়ে নজর দেবার কেউ নেই! গতকাল ফেসবুকে একটা ছবিতে দেখলাম সাবান বিতরণ করা হচ্ছে, যেখানে একটি সাবান চার জন মিলে ধরে গ্রহীতার হাতে তুলে দিচ্ছেন! এ ধরণের লোকদেখানো ত্রাণ বিতরণে পিছিয়ে নেই জনগণের সেবায় নিয়োজিত ও উচ্চ পদে আসীন রাষ্ট্রীয় কাঠামোর সম্মানিত ব্যক্তিবর্গও।


যার অন্যতম উদাহরণ ঢাকা দক্ষিণের সাবেক মেয়র জনাব সাঈদ খোকন। জনগণের নিরাপত্তাকে আমলে না নিয়ে উনি নিজের নিরাপত্তা নিয়ে জনসমাগম করে যেভাবে ত্রাণ বিতরণ করলেন তা সত্যিই বিস্ময়কর! তার মত ব্যক্তি জনগণকে এভাবে করোনার হুমকির মুখে ফেলে দেয়াটা কতটা যৌক্তিক তা আমার বোধগম্য নয়। যেখানে সরকার থেকে বলা হচ্ছে ন্যূনতম ছয় ফুট দূরত্ব বজায় রেখে চলাফেরা করতে সেখানে এ ধরণের কার্যক্রম কি আদৌ স্বাস্থ্যবিধি সন্মত? জনপ্রতিনিধিদের কার্যক্রম দেখেইতো সাধারন মানুষ শিখবে, উদ্বুদ্ধ হবে এবং সেভাবে কার্যক্রম পরিচালনা করবে। তাই নয় কি?


সরকারিভাবে ত্রাণ বিতরণ ও গ্রহণের নিয়মাবলী লিখিতভাবে প্রকাশ করে গণমাধ্যমে প্রচার করে সকল এমপি, বাংলাদেশের সকল রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনসহ সাধারণ মানুষের কাছে সঠিক বার্তা পৌঁছে দেয়া এখন সময়ের দাবি। কেননা প্রাকৃতিক দুর্যোগ বা অন্যান্য সংকট মোকাবেলায় আমরা যেভাবে ত্রাণ বিতরণ করে থাকি এবারের কার্যক্রমকেও ঠিক একইভাবে নেওয়া মোটেও যুক্তিসঙ্গত নয়। কারণ করোনা একটি সংক্রামক ব্যাধি যা এখনও সাধারণ মানুষ বুঝে উঠতে পারছে না।


আরেকটি বিষয় উল্লেখ না করে পারছি না, সেটি হচ্ছে ফটোসেশনের প্রবণতা। রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ থেকে শুরু করে অনেকের মাঝেই এই প্রবণতা বিদ্যমান। ফটোসেশন প্রক্রিয়াটিও করোনা বান্ধব, তাই এই বিপর্যয়ে আমরা নিজেকে যেন ফটোসেশন করা থেকেও সংযত রাখি।


এবার তুলে ধরছি ত্রাণের বিপরীত চিত্র। কিছুদিন আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীদের সাথে শিক্ষা সফরে যাই সেন্টমার্টিনে। ফেরার পথে টেকনাফ নদী বন্দরে এবং আশেপাশের দোকানগুলোতে দেখলাম ওখানকার রোহিঙ্গারা তাদের মাঝে বিতরণকৃত সকল ধরণেরর ত্রাণসামগ্রীর পসরা নিয়ে বসে আছে রাস্তায় রাস্তায় বিক্রির উদ্দেশ্যে‌। অতিরিক্ত পেলে যা হয় তার এই চিত্রও আমাকে ব্যথিত করেছে।


অপরিকল্পিত ত্রাণ বিতরণে এমনটি যেন আমাদের মাঝেও না হয়ে যায় সেই বিষয়টির দিকেও লক্ষ্য রাখতে হবে। একই ব্যক্তি বা পরিবার বারবার পাবেন আর কেউ কেউ একবারও পাবেন না এমনটি যেন না হয়। ত্রাণের টাকা, ত্রাণ সামগ্রী চুরি করা এমনকি প্রয়োজনের অতিরিক্ত বারবার ত্রাণ গ্রহণ করা একটি সামাজিক অপরাধ। এই প্রবণতা আমাদের অনেকের মধ্যে রয়েছে। তাই সকলে মিলে এই প্রতিবন্ধকতাগুলো দূর করে সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত গ্রহণের মাধ্যমে দেশকে করোনা মুক্ত করার চ্যালেঞ্জ গ্রহণে সামনে এগিয়ে যাওয়াই বাঞ্ছনীয়।


লেখক: সহযোগী অধ্যাপক, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়


বিবার্তা/আবদাল

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com