
রাজনৈতিক দল হিসেবে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করতে এক ঘণ্টা সময় বেঁধে দিয়েছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির মুখ্য সংগঠক হাসনাত আব্দুল্লাহ।
৯ মে, শনিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় রাজধানীর শাহবাগ মোড়ে গণ জমায়েতে তিনি বলেন, "ইন্টেরিম, আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করেন। আগামী এক ঘণ্টা সময় দিলাম। যদি এই এক ঘণ্টায় ঘোষণা না আসে, তাহলে আমরা ইন্টারকন্টিনেন্টালকে কেন্দ্র ধরে বাংলামোটর অবধি দখল করে নেব।”
তিনি বলেন, “আমরা আর পিছু হটছি না। আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করেই তারপর মাঠ ছাড়ব। আরও কঠোর কর্মসূচি আমরা ঘোষণা করব।”
এদিকে রাত সাড়ে ৮টার কিছু পরে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের জরুরি বৈঠক শুরু হয়েছে। বৈঠক শেষে যমুনার বাইরে সংবাদ সম্মেলনের সূচি রয়েছে, সেখানে এ বিষয়ে সরকারের অবস্থান জানানো হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ করাসহ তিন দফা দাবিতে বিকাল ৩টার পর শাহবাগ মোড়ে গণজমায়েত কর্মসূচি শুরু হয়। জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) পাশাপাশি ইসলামী ছাত্রশিবির, প্ল্যাটফর্ম ইউনাইটেড পিপলস বাংলাদেশ (আপ) ও জুলাই অভ্যুত্থানে যুক্ত বিভিন্ন সংগঠনের নেতা-কর্মীরা যোগ দেন এ কর্মসূচিতে।
আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করা না পর্যন্ত রাজপথ না ছাড়ার হুঁশিয়ারি দিয়ে হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, “আমাকে যদি কোনো ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে কোনো শক্তি আমার কণ্ঠরোধ করতে চায়, তবুও আপনারা আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ না হওয়া পর্যন্ত রাজপথ ছাড়বেন না।
"২০১৩ সালে শাহবাগের মাধ্যমে ফ্যাসিবাদ শুরু হয়েছে। আর এই শাহবাগ থেকে ফ্যাসিবাদের পতন হবে। আমাদের মত, পথ আলাদা হতে পারে; তবে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধে আমাদের মত, পথ এক। নমরুদের যেভাবে পতন হয়, ফেরাউনের যেভাবে পতন হয়, হাসিনারও পতন হয়।"
তিনি বলেন, "বাংলাদেশ আজ দুই ভাগে বিভক্ত। একটি ফ্যাসিবাদী শক্তি, আরেকটি বাংলাদেশি শক্তি। যারা আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ চায় না তারা ফ্যাসিবাদী শক্তি, আর যারা আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ চায়, তারা বাংলাদেশি শক্তি।”
এনসিপির উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম, আপ বাংলাদেশের আহ্বায়ক আলী আহসান জুনায়েদও সেখানে আছেন ।
অবরোধ কর্মসূচিতে ‘আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ, করতে হবে করতে হবে’, ‘লীগ ধর, জেলে ভর’, ‘ব্যান ব্যান, আওয়ামী লীগ’, ‘দফা এক দাবি এক, লীগ নট কাম ব্যাক’, ‘এক দুই তিন চার, চুপ্পু তুই গদি ছাড়’, ‘আওয়ামী লীগের নিবন্ধন, বাতিল কর করতে হবে’, ‘দিল্লি না ঢাকা, ঢাকা ঢাকা’ স্লোগান দিতে দেখা যায় তাদের।
সাবেক রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের দেশত্যাগের খবর নিয়ে আলোচনার মধ্যে বৃহস্পতিবার রাতে সরকারপ্রধানের বাসভবন যমুনার সামনে অবস্থান নেন এনসিপি নেতা হাসনাত আবদুল্লাহ নেতৃত্বাধীন একদল বিক্ষোভকারী।
তাতে সংহতি প্রকাশ করেন জামায়াতে ইসলামী, এবি পার্টি, ইসলামী ছাত্রশিবির, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, হেফাজতে ইসলাম এবং বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে অংশগ্রহণকারীসহ বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মীরা।
শুক্রবার জুমার পর তারা মিন্টো রোডের প্রবেশ মুখে মঞ্চ বানিয়ে সেখানে সমাবেশ করেন। আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার দাবি সম্বলিত প্ল্যাকার্ড ও ফেস্টুন হাতে তাতে অংশ নেন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরা।
সেখান থেকে এনসিপির দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহ শাহবাগ অবরোধের ঘোষণা দেন। তখন থেকেই শাহবাগ হয়ে যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে।
শাহবাগে অবরোধ কর্মসূচি চলার মধ্যে শুক্রবার রাতে সংবাদ সম্মেলন করে গণজমায়েতের কর্মসূচি ঘোষণা করেন এনসিপি নেতা হাসনাত আব্দুল্লাহ।
আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবির পাশাপাশি জুলাই ঘোষণাপত্র দেওয়া এবং আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে দলটির বিচারের জন্য আইনে প্রয়োজনীয় বিধান যোগ দাবি জানিয়েছেন তারা। জুলাই অভ্যুত্থানের সময় দমন-পীড়নকে মানবতাবিরোধী অপরাধ বিবেচনা করে ট্রাইব্যুনালে আওয়ামী লীগের বিচার চাইছেন আন্দোলনকারীরা।
বিবার্তা/এসএস
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]