‘মানবিক করিডর’-এর মতো হঠকারী ও আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসার আহ্বান
প্রকাশ : ০৭ মে ২০২৫, ১৭:৫০
‘মানবিক করিডর’-এর মতো হঠকারী ও আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসার আহ্বান
বিবার্তা প্রতিবেদক
প্রিন্ট অ-অ+

'মায়ানমার এর রাখাইনে ‘মানবিক করিডর’ বাংলাদেশের ভৌগোলিক স্থিতিশীলতা এবং অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার জন্য চরম ঝুঁকিপূর্ণ'— একথা জানিয়ে দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বকে হুমকির মুখে ফেলে দেয়ার হটকারী এই মানবিক করিডরের সিদ্ধান্তের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ।


সেই সাথে বুধবার (৭ মে) গণমাধ্যমে মাহবুবউল আলম হানিফের প্রেস সচিব মোহা. তারিক-উল-ইসলাম টুটুলের পাঠানো এক বিবৃতিতে মানবিক করিডরের `আত্মঘাতী’ সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসার আহ্বান জানানো হয়।


বিবৃতিতে মাহবুবউল আলম হানিফ বলেন, রাষ্ট্রের নিরাপত্তার সাথে সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ একটি ইস্যুতে অন্তর্বর্তী সরকার কিসের ভিত্তিতে এবং কোন প্রক্রিয়ায় 'মানবিক করিডর' প্রদানের সিদ্ধান্ত নিচ্ছে ? মায়ানমারে সমুদ্র বন্দর থাকার পরেও কেন সেখানে ত্রাণসামগ্রী পাঠাতে বাংলাদেশের ভূমি ব্যবহারের অনুমতি দেয়া হচ্ছে? ইতিহাস বলে, আর্মেনিয়া, আজারবাইজান, বসনিয়া-হার্জেগোভিনা, কঙ্গো এবং সিরিয়া, কোথাও মানবিক করিডরের উদ্দেশ্য সফল হয়নি। ইউক্রেন-রাশিয়াতে জাতিসংঘ প্রস্তাবিত মানবিক করিডরের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যাত হয়েছে।


বিবৃতিতে তিনি বলেন, মায়ানমার সরকারের সঙ্গে আরাকান আর্মির দীর্ঘদিনের সংঘাত চলছে, সেই উত্তপ্ত অঞ্চলে করিডর স্থাপনের সিদ্ধান্ত বাংলাদেশের নিরাপত্তার জন্য মারাত্মক হুমকি হতে পারে। এই এলাকায় ভারত, চীনসহ বিভিন্ন আঞ্চলিক ও পরাশক্তির স্বার্থ জড়িত থাকায়, মানবিক করিডোরের সিদ্ধান্ত বাংলাদেশকে একটি সম্ভাব্য প্রক্সি যুদ্ধের কেন্দ্রে পরিণত করবে।


তিনি আরো বলেন, বস্তুত তথাকথিত এই মানবিক করিডর এর নামে আঞ্চলিক ও ভূ-রাজনীতিগতভাবে এই অঞ্চলকে নিরাপদ ‘বাফার স্টেট’ হিসেবে তৈরি করে বৈশ্বিক সাম্রাজ্যবাদী শক্তিকে ব্যবহারের সুযোগ করে দিতে চায় এই অন্তর্বর্তী সরকার। এর ফলে বাংলাদেশ নিশ্চিতভাবে আঞ্চলিক ও ভূ-রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতার যে জটিলতা তাতে জড়িয়ে পড়বে। বিশ্বের খুব কম মানবিক করিডরই নিরাপত্তা ঝুঁকির বাইরে থেকেছে। এ ধরণের করিডর চালু হলে সেই অঞ্চলে থাকা বিদ্রোহী বা সন্ত্রাসী গোষ্ঠীসহ অপরাধীদের সেটাকে অপরাধের নিরাপদ পথ হিসেবে ব্যবহারের বহু নজির রয়েছে।


বিবৃতিতে আরো বলা হয়, ‘মানবিক করিডর’ বলতে আমরা সাধারণত বুঝি যেখানে শরণার্থী রয়েছে সেখানে তাদের সহায়তার জন‍্য ত্রাণসামগ্রী ও খাদ‍্যসামগ্রী প্রেরণের জন‍্য ব‍্যবহৃত প‍্যাসেজকে। মায়ানমার এর আভ‍্যন্তরীণ সমস‍্যার কারণে বাংলাদেশে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী শরণার্থী হিসেবে আছে। ত্রাণসামগ্রী দিতে হলে বাংলাদেশের কক্সবাজারে যে রোহিঙ্গা ক‍্যাম্প আছে সেখানেই তো দেওয়ার কথা। মায়ানমারের অভ‍্যন্তরে তো কোনো শরণার্থী শিবির নেই। তাহলে সেখানে ত্রাণসামগ্রী পাঠানোর কোন প্রয়োজন আছে কি? এটাকে 'মানবিক করিডর’ কোন যুক্তিতে বলা হচ্ছে?


তিনি বলেন, “মূলত মানবিক করিডরের নামে এখানে আরাকান আর্মিকে সহায়তা এবং তাদেরকে অস্ত্র-গোলাবারুদ পাঠানোর জন‍্য এ ধরনের সিদ্ধান্ত এসেছে। যেটা বাংলাদেশের জন‍্য অত‍্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ এবং দেশের মানচিত্র বিপর্যয়ের সম্মুখীন হবে। কারণ এই ভৌগোলিক অবস্থানে আরাকান আর্মির সঙ্গে যদি মিয়ানমারের সামরিক জান্তা, চীন, রাশিয়া এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সম্মিলিত একটা যুদ্ধাবস্থা তৈরি হয় তাহলে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব হুমকির মুখে পড়বে।”


দেশের স্বার্থে, জনগণের স্বার্থে সেনাবাহিনীকে এ ব্যাপারে দৃঢ় ও সময়োচিত পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানান এই আওয়ামী লীগ নেতা। তিনি বলেন, “জাতির এই ক্রান্তিকালে, দেশের মানচিত্রের ওপর আঘাত হানার পরিস্থিতিতে দেশের সেনাবাহিনীর দায়িত্বশীলতা প্রত‍্যাশিত।”


তিনি দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের ওপর আঘাত আসে এমন ‘হঠকারী আত্মঘাতী’ সিদ্ধান্ত থেকে বিরত থাকার জন্য অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে আহ্বান জানান।


বিবার্তা/এসএস

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2024 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com