প্রধানমন্ত্রীকে তুষ্ট করতে প্রজাতন্ত্রের কর্মকর্তারা প্রতিযোগিতায় নেমেছে : রিজভী
প্রকাশ : ১৪ ডিসেম্বর ২০২৩, ২০:৪৪
প্রধানমন্ত্রীকে তুষ্ট করতে প্রজাতন্ত্রের কর্মকর্তারা প্রতিযোগিতায় নেমেছে : রিজভী
বিবার্তা প্রতিবেদক
প্রিন্ট অ-অ+

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে তুষ্ট করার প্রতিযোগিতায় নেমেছে প্রজাতন্ত্রের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব এ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী।


তিনি বলেছেন, আওয়ামী লীগের পক্ষে দালালি এবং শেখ হাসিনাকে তুষ্ট করার প্রতিযোগিতায় নেমেছে দলদাস পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও নির্বাচন কমিশনসহ প্রজাতন্ত্রের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।


১৪ ডিসেম্বর, বৃহস্পতিবার বিকেলে ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।


রিজভী বলেন, দেশ ও জনগণের প্রতি তাদের দায়বদ্ধতা-কর্তব্য-সাংবিধানিক শপথ সব ভুলে নিশিরাতের অটোপাস প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একনায়কতন্ত্রের পদলেহী হিসেবে গা ভাসিয়ে দিয়েছেন। পুরো বাংলাদেশকে আওয়ামীময় করার পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠানগুলো খঁড়গ কৃপাণ হাতে নিয়ে নেমেছেন। তাদেরকে শেখ হাসিনা যে একটা বিপজ্জনক অনিশ্চিত ফাঁদের ভেতর ফেলছে তা উপলব্ধি করার হিতাহিত জ্ঞানও লোপ পেয়েছে তাদের।


আওয়ামী কারচুপি নির্বাচন কণ্টকমুক্ত করতে মন্ত্রীরা দেশে বিদেশে নিজেদের মানসম্মান খুইয়ে অপপ্রচার চালিয়ে যাচ্ছে মন্তব্য করে বিএনপির এই শীর্ষ নেতা বলেন, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন ও প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলমের যুক্তরাষ্ট্র ‘ম্যানেজ’ হয়ে যাওয়ার বক্তব্য ডাহা মিথ্যা এবং এটি সরাসরি প্রত্যাখান করেছে যুক্তরাষ্ট্র।


দুই মন্ত্রীর কড়া সমালোচনা করে রিজভী বলেন, মন্ত্রীদ্বয় কতখানি বেহায়া হলে পরে এহেন নির্ভেজাল মিথ্যা কথা বলতে পারে তা নজিরবিহীন। যুক্তরাষ্ট্র ম্যানেজ নয় বরং তারা গণহারে বিরোধীদের গ্রেফতার ও নির্যাতনের উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। মন্ত্রীদ্বয়ের বক্তব্য কূটনৈতিক আচরণের ইতিহাসে এটি একটি বড় ধরনের কেলেঙ্কারি। অর্থবিত্ত, টাকা পাচার, অঢেল সম্পত্তির মালিক, গার্ড অব অনার, নিরাপত্তা বেষ্টনীর মায়া ভুলতে পারছেন না বলেই মিথ্যা, বানোয়াট ও নৈতিক অনাচারমূলক বক্তব্য দিতে বিবেকের অনুতাপ বোধ করেন না অবৈধ সরকারের প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে মন্ত্রীরা।


তিনি বলেন, ক্ষমতা ধরে রাখতে এক উন্মার্গগামী বেপরোয়া অবৈধ ক্ষমতাসীনরা গণতন্ত্রকামী মানুষের চামড়া দিয়ে ডুগডুগি বাজানোর আয়োজনে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। প্রধানমন্ত্রী বিরোধী দলগুলোর প্রতি ইঙ্গিত করে বলেছেন মানুষ হত্যা করে সরকার উৎখাত করা যাবেনা। দেশ ও আন্তর্জাতিকভাবে সবাই জানে যে, হত্যা, নিপীড়ন নির্যাতনের মাধ্যমে বিরোধী দল নিশ্চিহ্ন করার ধারাবাহিক কর্মকাণ্ডে প্রধানমন্ত্রীর অবৈধ সরকারের সুপ্রতিষ্ঠিত নীতি।


তিনি কিনা বিরোধী দলের উপর দোষ চাপাচ্ছেন। তাহলে পিরোজপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি স্বতন্ত্রপ্রার্থীর কর্মী নিহত হলেন নৌকার সমর্থকদের দ্বারা কীভাবে? একটা ‘চিটিং’ নির্বাচন করতে নিজেরা নিজেদের হত্যা করছে এর দায় কি আপনার নয়! এই কারসাজির নির্বাচনকে ঘিরে প্রায় প্রতিদিন হত্যার শিকার হচ্ছেন গণতান্ত্রিক সংগ্রামের কর্মীরা।


বিএনপির এই মুখপাত্র অভিযোগ করে বলেন, মানিকগঞ্জের বিপ্লব হাসান বিপুল, কক্সবাজারে ৭ নভেম্বর বিএনপি নেতা জাগির হোসেন, নওগাঁ বিএনপি নেতা কামাল, বগুড়ার আব্দুল মতিনসহ নভেম্বর মাসেই ১৯/২০ জন বিএনপি, অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা নিহত হয়েছেন। এদেরকে হত্যা করেছে আপনার তৈরি করা আইনশৃঙ্খলাবাহিনী। এর দায় কি আপনার নয় প্রধানমন্ত্রী? বিরোধী দলহীন একটি এক দলীয় ডামি নির্বাচন মঞ্চস্থ করতে ভোট ডাকাত সরকার গোটা রাষ্ট্রযন্ত্রকে অন্যায়ভাবে ব্যবহার করছে।


তিনি বলেন, পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, নির্বাচন কমিশনসহ প্রজাতন্ত্রের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অনুধাবন করা কর্তব্য যে, তারা সাধারণ জনগণের কষ্টার্জিত টাকায় বেতন ভোগ করেন। এই দেশে এই সমাজেই তাদের পরিবার-পরিজনের বসবাস। সাধারণ মানুষ সরকারের উৎপীড়ন-দুঃশাসন-জুলুম-নিপীড়ন-বাজার সিন্ডিকেটের করাল থাবায় অশান্তিতে জীবনযাপন করছেন। তাদের মুখের দিকে তাকিয়ে, আগামী প্রজন্মের সুন্দর ভবিষ্যতের কথা চিন্তা এদের মনের মধ্যে আসেনা। এরা শুধুই ব্যক্তি স্বার্থে কাজ করছেন। কারণ শেখ হাসিনার সরকারই শেষ সরকার নয়। আজ হোক-কাল হোক বিদায় তাদের অনিবার্য পরিণতি।


বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব বলেন, পৃথিবীর প্রতিটি স্বৈরাচারে পতন হয়েছে নিদারুণ করুণভাবে। আজ রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে জনগণের শত্রুতে পরিণত করা হয়েছে। বিএনপি’র নেতাকর্মীকে জেলে পুরে, ভিটেমাটি-ঘরবাড়ি ছাড়া করে তাড়িয়ে পোড়ামাটি নীতির বাস্তবায়ন প্রকল্পে এই সকল প্রাতিষ্ঠানিক কর্তা ব্যক্তিরা সহযোগিতা করছেন। গোটা দেশই এখন বিএনপিসহ বিরোধীদলগুলোর জন্য এক শ্বাসরুদ্ধকর কারাগারে পরিণত করা হয়েছে এই রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে দিয়ে।


তিনি বলেন, শেখ হাসিনার নীতি হলো যাকে যখন যতক্ষণ প্রয়োজন ততক্ষণ নীতিভ্রষ্ট-অন্যায় অপকর্ম সাধনে ব্যবহার করে ছুঁড়ে ফেলে দেয়া। পেছনে ফিরে দেখুন এমন উদাহরণ অসংখ্য। সুতরাং পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, নির্বাচন কমিশনসহ প্রজাতন্ত্রের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা এখন শেখ হাসিনার পুতুল মাত্র।


একাত্তরের চেয়ে ভয়াবহ একটা সংকটের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে প্রিয় মাতৃভূমি। এখানে দেশের ১৮ কোটি মানুষ এবং গণতান্ত্রিক বিশ্বের বিপক্ষে দাঁড়িয়ে আওয়ামী ডামি, স্বতন্ত্র, নৌকা, মনোনীত নৌকা, অনুমতিক্রমে স্বতন্ত্র, বিদ্রোহী নৌকা জোট, আওয়ামী পার্টির এক অদ্ভুত কিম্ভূতকিমাকার নির্বাচনের আয়োজন চলছে। এক ক্লাবের খেলা! খেলোয়াড়ও একই দলের। যেটা লাউ সেটাই কদু। নিজেরাই নিজেদের বিরোধী দল! ভোটারদের কাছে আহ্বান জবরদস্তি করলেও ভোট কেন্দ্রে যাবেন না। ভোট বর্জন করুন। শেখ হাসিনার ভোটরঙ্গ রুখে দিন।


রিজভী আরও বলেন, গত দেড় মাসের বেশি সময় ধরে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয় অবরুদ্ধ করে রেখেছে পুলিশ। নয়াপল্টনের ত্রি-সীমানায় যেতে পারেন না আমাদের নেতারা। বিএনপি চেয়ারপার্সনের গুলশানের কার্যালয়েও নজরদারি করছে শেখ হাসিনার দলদাস আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। গতকাল গভীর রাতে পুলিশ গুলশানের কার্যালয়ে তাণ্ডব চালিয়েছে। একটি রাজনৈতিক দলের কার্যালয়ে প্রবেশ বা তল্লাশি করতে গেলে অনুমতি নেয়ার নিয়ম রয়েছে।


পুলিশ সেখানে হানা দিয়ে কক্ষে কক্ষে তল্লাশি চালিয়েছে। শহিদ বুদ্ধিজীবীদের শ্রদ্ধা জ্ঞাপনের জন্য সেখানে রাখা পুস্পস্তবকসহ আনুষঙ্গিক সবকিছু নিয়ে যায়। আবার হুমকিও দিয়েছে কেউ অফিসে গেলে গ্রেফতার করবে। বুদ্ধিজীবীদের শ্রদ্ধা জ্ঞাপনে বাধার সৃষ্টি এবং মহান বিজয় দিবসের বিজয় র‌্যালি করার অনুমতি দিতেও তারা টালবাহানার মাধ্যমে একাত্তরের হানাদার বাহিনীর ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে।’


তিনি বলেন, স্বাধীনতা যুদ্ধের চূড়ান্তক্ষণে জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান শহীদ বুদ্ধিজীবীদের নৃশংসভাবে হত্যা করেও মহান মুক্তিযুদ্ধের বিজয় ঠেকানো যায়নি, বর্তমান স্বৈরাচারী সরকার গুম, খুন ও শ্বেত সন্ত্রাসের মাধ্যমে পাতানো প্রহসনের নির্বাচনের পাঁয়তারা করলেও নিজেদের পতন ঠেকাতে পারবে না।


পাক হানাদারেরা যখন দেখলো তাদের পরাজয় অবধারিত তখন তারা কাপুরুষোচিত কায়দায় রাতের অন্ধকারে জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করে আমাদের মনোবল ভেঙ্গে দিতে চেয়েছিল। সেদিনকার বর্বরোচিত হত্যাকাণ্ড বাংলার মানুষকে আরও বেশী সংগ্রামে ঝাপিয়ে পড়তে উদ্বুদ্ধ করেছিল। একই পদ্ধতিতে গুম, খুন, গ্রেফতার ও ভয়-ভীতি দেখিয়ে গণতন্ত্রকামী মানুষকে দমন করতে চায় শেখ হাসিনা। তারা মনে করেছে তাদের দুর্নীতি, লুটপাট ও বৈষম্যের বিরুদ্ধে সব আওয়াজকে তারা থামিয়ে দিবে। প্রহসনের নির্বাচনও স্বৈরতন্ত্রের পতন ঠেকাতে পারবেনা, ইনশাআল্লাহ। এই বিজয়ের মাসে হানাদার শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে বিজয় হবে জনতার।


এ সময় তিনি গত ২৪ ঘণ্টায় সারাদেশে বিএনপি ও এর অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের ১২৫ জন নেতাকর্মী গ্রেফতারের তথ্য তুলে ধরেন। এছাড়াও ৬ মামলায় ৬২৫ জনকে আসামি ও বিভিন্নভাবে ৩০ জনের অধিক নেতাকর্মী আহত হয়েছেন বলেও জানান রিজভী।


বিবার্তা/এমজে

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com