কোরাম সংকটে বিএনপির স্থায়ী কমিটি
প্রকাশ : ০৯ আগস্ট ২০২৩, ১৭:৪০
কোরাম সংকটে বিএনপির স্থায়ী কমিটি
মোহাম্মদ ইলিয়াস
প্রিন্ট অ-অ+


দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বাকি মাত্র চার মাস। দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে ক্ষমতার বাইরে থাকা দল বিএনপি আন্দোলনের মাধ্যমে সরকারকে হটিয়ে ক্ষমতায় আসতে চায় দলটি। তবে রাজপথের আন্দোলন সংগ্রামের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে গিয়ে সভায় কোরাম সংকটে ভুগছে বিএনপি।


সাধারণত মাঠ পর্যায়ে যেসকল আন্দোলন কর্মসূচি পালন করা হয়, তার সিদ্ধান্ত আসে দলের সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটির সভা থেকে। তবে মৃত্যু, অসুস্থতা ও মামলাজনিত কারণে ফোরাম সদস্য সংকটে ভুগছে।


বিএনপি সূত্রে জানা গেছে, দলের স্থায়ী কমিটির যেসব বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়- বৈঠকে দুই-তৃতীয়াংশ সদস্য উপস্থিত থাকার শর্ত থাকলেও অর্ধেকের কম সদস্য নিয়ে বৈঠক করতে হচ্ছে দলটিকে। ফলে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিতে বেগ পেতে হচ্ছে দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে।


সূত্র জানায়, গত সোমবার ৭ আগস্ট বিএনপির স্থায়ী কমিটির সর্বশেষ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে মাত্র ৮ জন সদস্য নিয়ে বৈঠক করে বিএনপির হাইকমান্ড। যদিও উপস্থিত থাকার কথা ছিল ১৩ জন সদস্যের।


ওইদিন বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন যথাক্রমে- ১. মির্জা আব্বাস ২. গয়েশ্বর চন্দ্র রায় ৩. নজরুল ইসলাম খান ৪. মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ৫. আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ৬. সালাহ উদ্দিন আহমেদ ৭. বেগম সেলিমা রহমান ও ৮. ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু।


এর আগে ২০১৬ সালে বিএনপির সর্বশেষ জাতীয় কাউন্সিলে ১৯ সদস্যর স্থায়ী কমিটির মধ্যে ১৭ সদস্যের নাম ঘোষণা করা হয়।


যদিও মৃত্যু এবং রাজনীতি থেকে অবসরজনিত কারণে ১৯ সদস্যের স্থায়ী কমিটিতে বর্তমান সদস্য রয়েছেন ১৪ জন। এর মধ্যে সক্রিয় আছেন মাত্র ৮ থেকে ৯ জন। ফলে কোরাম সংকটে ভুগছে বিএনপি স্থায়ী কমিটি।


যদিও শূণ্য পদগুলো পূরণের এখনই কোন পরিকল্পনা নেই, তবে যখন সময় হবে তখনই পূরণ করা হবে বলে জানান বিএনপির হাইকমান্ড।


শূন্য পদগুলো পুরণের বিষয়ে কোনো পরিকল্পনা আছে কিনা জানতে চাইলে স্থায়ী কমিটির সদস্য জমির উদ্দিন সরকার বিবার্তাকে বলেন, যদি প্রয়োজন হয় তাহলে আমরা নেব। প্রয়োজন না হলে বাড়িয়ে তো লাভ নেই। এখন যে মেম্বারগুলো রয়েছে এদের মধ্যে সকলে স্ট্যান্ডিং কমিটিতে আসার উপযুক্ত নয়, তবুও নেওয়া হয়েছে। সেটাকে আরো সংখ্যা বাড়ালে রিলাক্স (শিথিল করা) হবে, কিন্তু কোয়ালিটি ডিসকাশন (মানের আলোচনা) হবে না।


বিএনপি সূত্রে জানা গেছে, ২০১৬ সালের ১৯ মার্চ ষষ্ঠ জাতীয় কাউন্সিল করে দলটি। কাউন্সিল শেষে ৬ আগস্ট ১৯ সদস্যের স্থায়ী কমিটির মধ্যে ১৭ জনের নাম ঘোষণা করা হয়। তারা হলেন- বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া (পদাধিকার বলে), তারেক রহমান (পদাধিকার বলে), মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর (পদাধিকার বলে), ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মাহবুবুর রহমান, ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার, তরিকুল ইসলাম, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আ স ম হান্নান শাহ, এম কে আনোয়ার, ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া, ড. আব্দুল মঈন খান, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, মির্জা আব্বাস, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও সালাহউদ্দিন আহমেদ।


১৭ সদস্যের কমিটির মধ্যে মৃত্যু হয়েছে চারজনের। তারা হলেন- ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, তরিকুল ইসলাম, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আ স ম হান্নান শাহ ও এম কে আনোয়ার। এছাড়া রাজনীতি থেকে অবসর নিয়েছেন লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মাহবুবুর রহমান।


এরপর ২০১৯ সালের ১৯ জুন বিএনপির দুইজন ভাইস চেয়ারম্যান বেগম সেলিমা রহমান ও ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকুকে স্থায়ী কমিটিতে পদায়ন করা হয়েছে।


বিএনপির ১৯ সদস্যের সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারণী ফোরামে ১৪টি পদে লোক থাকলেও কার্যত উপস্থিত থাকতে পারছেন না অন্তত সাত জন। কারাবন্দি ও সাজাপ্রাপ্ত হওয়ায় বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া সাড়ে পাঁচ বছর ধরে রাজনীতির বাইরে রয়েছেন। সরকারের নির্বাহী আদেশে মুক্তি পেলেও দলীয় কর্মকাণ্ডে যুক্ত হতে পারছেন না তিনি।


স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য ও দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দীর্ঘদিন ধরে লন্ডনে রয়েছেন। সশরীরে উপস্থিত থাকতে না পারায় ভার্চুয়াল যুক্ত হন তিনি। স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া এবং ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ। দলীয় কোনো কর্মকাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত থাকতে পারছেন না তারা।


এদিকে স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন আহমেদ ২০১৫ সালের ১০ মার্চ ঢাকা থেকে নিখোঁজ হন। পরবর্তীতে ভারতের মেঘালয় রাজ্যের শিলংয়ে 'উদ্দেশ্যহীনভাবে ঘোরাফেরা' করার সময় ওই বছরের ১১ মে তাকে আটক করে শিলং পুলিশ। তার নামে অবৈধ অনুপ্রবেশের মামলা করা হয়। অনুপ্রবেশ মামলায় খালাস পওয়ার পর বাংলাদেশে ফেরার অনুমতি অর্থাৎ ‘ট্রাভেল পারমিশন (টিপি)’ পেয়েছেন। বর্তমানে রাজধানী দিল্লির বেদান্ত হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন তিনি।


বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি হাসপাতাল, সিঙ্গাপুরে চিকিৎসাধীন। এই হাসপাতালের নিউরোলজি বিভাগের সিনিয়র কনসালটেন্ট অধ্যাপক ইউ শেন শাই বলেছেন, খন্দকার মোশাররফ হোসেনের ব্রেনের বর্হিভাগে একটি 'স্ফেনয়েড উইং মেনিনজিওমা' টিউমার রয়েছে। তার স্বাস্থ্যগত অবস্থার সঙ্গে সম্পর্কিত উচ্চতর অস্ত্রোপচার ও জেনারেল এনেসথিসিয়ার ঝুঁকি থাকার কারণে তাকে আপফ্রন্ট রেডিওথেরাপির মাধ্যমে চিকিৎসা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। আপাতত দলের স্থায়ী কমিটির বৈঠকে উপস্থিত কিংবা সিদ্ধান্ত দিতে পারছেন না তিনি।


এদিকে স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু চিকিৎসার জন্য ব্যাংককে অবস্থান করছেন। তবে সূত্র জানায়, মামলার রায়ে সাজাপ্রাপ্ত হওয়ায় কারণে অত্মগোপনে রয়েছেন তিনি। একারণে আপাতত সশরীরে উপস্থিত থাকতে পারছেন না তিনি।


সরকার পতনের এক দফা আন্দোলনের কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে স্থায়ী কমিটির বৈঠকগুলোতে সদস্য বেশি থাকলে সুবিধা হতো কিনা জানতে চাইলে দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বিবার্তাকে বলেন, সেই উত্তর তো আর আমি দিতে পারব না। কি হইতো না হইতো সেগুলোর উত্তর আমি কিভাবে দেব। তোমাদের লেখার বিষয় তোমরা লিখতে পারো। সুবিধা অসুবিধা আমি কি করে বলবো, এটা দলের সিদ্ধান্ত। ওসব বিতর্কিত বিষয়ে আমি যেতে চাই না। এগুলো নিয়ে অনেক পলিটিক্স রয়েছে, এসবের আমি মন্তব্য করতে চাই না।


দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য বেগম সেলিমা রহমান বিবার্তাকে বলেন, স্থায়ী কমিটিতে নতুন সদস্য যোগ হবে কি হবে না এ সকল কিছু নির্ভর করে সময় এবং পরিবেশের উপর।


তিনি আরো বলেন, যদি সদস্য পদ খালি থাকে পূরণ তো হবেই। এটা আজ হোক বা কাল হোক পূরণ হবেই। এখন তো সকলে মাঠেই রয়েছে।


বিবার্তা/রোমেল/জবা

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com