লক্ষ্মীপুরে বিএনপির পদযাত্রায় এসে প্রাণ হারানো কৃষকদলের সজিবের জানাযার আয়োজন করে জেলা বিএনপি। তবে পুলিশের পক্ষ থেকে বিএনপিকে মৃতদেহ দেওয়া হয়নি। ফলে গায়েবি জানাজা পড়তে হয়েছে বিএনপি নেতাকর্মীদের। এতে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে বিএনপি নেতারা।

পুলিশ সুপার মাহফুজ্জামান আশরাফ বলেন, নিহত সজিব বিএনপির পদযাত্রায় এসে মারা যায়নি। ব্যক্তিগত কাজে এসে দুর্বৃত্তের ধারাল অস্ত্রের আঘাতে তার মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় মামলার প্রস্তুতি চলছে।

বুধবার (১৯ জুলাই) দুপুরের দিকে সজিবের মৃতদেহের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন করা হয়। পরে হাসপাতাল থেকে মৃতদেহ বুঝে নেয় পুলিশ। সেখান থেকেই তার মৃতদেহ গ্রামের বাড়িতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে।

সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার (আরএমও) আনোয়ার হোসেন বিবার্তাতে বলেন, বেলা ১১টা থেকে ১২টার মধ্যে সজিবের ময়নাতদন্ত করা হয়েছে। তার বাম হাতের বাহুতে দুটি জখম আছে। ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে মৃত্যুর বিস্তারিত তথ্য জানা যাবে।

তিনি জানান, দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে সাজিবের মৃতদেহ পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।

বুধবার (১৯ জুলাই) দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে বিএনপির পক্ষ থেকে জেলা শহরের গো-হাটা সড়কের জেলা বিএনপির আহ্বায়ক শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানীর বাসভবনের সামনে সজিবের জানাজার নামাজের আয়োজন করা হয়। সেখানে সজিবের মৃতদেহ আনতে চেয়েছিল বিএনপি। কিন্তু পুলিশ সজিবের মৃতদেহ বিএনপির হাতে দেয়নি বলে অভিযোগ করেছেন নেতারা।

কেন্দ্রীয় বিএনপির প্রচার সম্পাদক ও জেলা বিএনপির আহ্বায়ক শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানী বিবার্তাকে বলেন, সজিব আমাদের কৃষকদলের একজন একনিষ্ঠ কর্মী। তার দাদা হানিফ মিয়া ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি। সে বাড়ি থেকে পরিবারকে জানিয়ে বিএনপির পদযাত্রায় এসেছে। এখানে এসে আওয়ামী সন্ত্রাসীদের হাতে তাকে খুন হতে হলো।

কিন্তু এসপি সাহেব তড়িঘড়ি করে একটি প্রেস বিফ্রিং করে মিথ্যা কথা বলেছেন। তিনি বলেছেন, সজিব আমাদের কর্মী নয়। তাতে আমাদের বুঝতে বাকী নেই, এ ঘটনার সাথে কতিপয় পুলিশ সদস্য জড়িত ছিল। আমরা এ হত্যাকাণ্ডের বিচার চাই।

তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, সজিবের লাশ আমাদের এখানে আনতে দেয়নি পুলিশ। হাসপাতাল থেকে তার লাশ বাড়িতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে।

এ্যানী বলেন, আমাদের নামে নাকি পুলিশ মামলা করবে। যতগুলো মামলা করা হোক, কোন মামলা দিয়ে আমাদের দমান যাবে না। আওয়ামী লীগ রক্তের হোলিখেলা খেলছে। তারা আমাদের আন্দোলনকে রক্তাক্ত করেছে। এ সরকারকে বিদায় নিতেই হবে।

তিনি আরো বলেন, পূর্ব নির্ধারিত কর্মসূচি অনুযায়ী আমাদের পদযাত্রায় হাজার হাজার লোক অংশ নিয়েছে। আওয়ামী সন্ত্রাসীরা শহরের বিভিন্ন পয়েন্ট দেশীয় অস্ত্র-সস্ত্র নিয়ে ওঁৎ পেতে ছিল। পদযাত্রা আসতে গিয়ে বিভিন্ন জায়গায় নেতাকর্মীরা বাঁধা ও হামলার শিকার হয়েছে। আমাদের পদযাত্রার মিছিলের একটি অংশ সামাদ মোড় এলাকায় ছাত্রলীগ এবং যুবলীগ নেতাকর্মীদের হামলার শিকার হয়েছে। সজিবসহ কয়েকজনকে ঘিরে ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা হামলা করে। সজিব শরীরে ধারাল অস্ত্র দিয়ে আঘাত করে তারা। সে পালিয়ে গিয়ে বাঁচতে পারেনি।

তিনি বলেন, যারা যারা এ ঘটনার সাথে জড়িত, প্রত্যেককে আমরা চিহ্নিত করেছি। প্রত্যেকের বিচার করা হবে।

গায়েবি জানাজার নামাজে উপস্থিত ছিল নিহত সজিবের দাদা হানিফ মিয়া। তিনি সদর উপজেলার চন্দ্রগঞ্জ ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি। তিনি বিবার্তাকে বলেন, আমার নাতি সজিব বিএনপির পদযাত্রায় অংশ নিতে লক্ষ্মীপুর শহরে আসে। আওয়ামী লীগের লোকজন তাকে কুপিয়ে হত্যা করেছে। আমি তাদের বিচার চাই।

বিবার্তা/সুমন/রোমেল/জবা