সরকারের উদ্দেশ্য করে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, আর কতদিন সহ্য করবো এদের অত্যাচার। আর কি সহ্য করা যায়? আমরা জনগণের সাথে নিয়ে এই সরকারের বিরুদ্ধে লড়বো। এই অবৈধ সরকারের হেডকোয়ার্টার্স দখল করবো। এবার নতুন সূর্য উঠবেই উঠবে ইনশাল্লাহ।

১৪ জুলাই, শুক্রবার বিকেলে নোয়াখালীতে পদযাত্রা পূর্ব সমাবেশে তিনি একথা বলেন। চট্টগ্রাম বিভাগের ৬ জেলা সহ কুমিল্লা উত্তর ও দক্ষিণ মহানগরের নেতাকর্মীরা এ পদযাত্রা অংশ নিবেন। দেশ বাঁচাতে মেহনতি মানুষের পদযাত্রা এ স্লোগান নিয়ে এই কর্মসূচির আয়োজন করেছে বিএনপির চার অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠন কৃষক দল, শ্রমিক দল, তাঁতি দল ও মৎসজীবী দল।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, হরতাল অবরোধ নয়, শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি দিয়ে সরকারের পতন নিশ্চিত করা হবে।

মির্জা ফখরুল বলেন, হামলা-মামলা দিয়ে আন্দোলন দমানো যাবে না। দেশের মানুষের অধিকার ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য ‘একদফা’ কর্মসূচি চলমান থাকবে বলেও জানান তিনি।

বর্তমান সরকারের অত্যাচারের কথা স্মরণ করিয়ে তিনি বলেন, কথা বললেও মামলা, না বললেও মামলা। সব নেতাকর্মীদের নামেই মামলা দিয়েছে এই সরকার। মারামারি করে তারা , আর মামলা দেয় আমাদের নামে। এ সময় তিনি কুমিল্লার লাকসামে বিএনপি নেতাকর্মীদের গাড়ী ভাঙচুর ও হামলার ঘটনা তুলে বলেন, এটা শুধু কুমিল্লা নয়, সারাদেশে এই আওয়ামী লীগের একই চরিত্র।

তিনি বলেন, আজকে শুক্রবার মসজিদে জুমার নামাজে খুদবা পড়া হয়। সেই খুদবায় কি পাঠ করা যাবে এবং কি পাঠ করা যাবে না সেটা প্রশাসন গিয়ে বলে দিচ্ছি। এই আওয়ামী লীগ সরকার এখন মসজিদের খুতবাও নিয়ন্ত্রণ করে।

২০০১ সালের এই নোয়াখালীতে বেগম খালেদা জিয়ার এক সমাবেশে স্লোগানে তুলে ধরে মহাসচিব বলেন, সেদিন এই নোয়াখালীর মানুষ বলেছিলেন, ‘ধর্ম মোদের আলাদা, নেত্রী মোদের খালেদা’। আজ সেই গণতন্ত্রের নেত্রী আজ জেলে রেখেছে এই আওয়ামী লীগ সরকার।

১৪ ও ১৮ সালে কোন নির্বাচন হয়নি জানিয়ে তিনি বলেন, ১৪ সালে কেউ ভোট দেয়নি। আর ১৮ সালে তো রাতে ভোট করেছ এই সরকার। আমরা ভোট আমি দিবো, যাকে খুশি তাকে দিবো, এই নির্বাচন আমরা চাই জানান তিনি।

আওয়ামী লীগের একদফা শেখ হাসিনার অধীনে নির্বাচন ওবায়দুল কাদের এমন বক্তব্যের সমালোচনা করে তিনি বলেন, কি আবদার! এরা আমাদের ভোটাদের ভোট কেন্দ্রে যাইতে দেয় না। দিতে গেলে বলে ভোট হয়ে গেছে। এখন তারাই বলে, এবার নাকি সুষ্ঠু নির্বাচন করবে।

আমাদের দরকার নেই বিদেশিদের জানিয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমাদের সাথে দেশের জনগণ আছে। শেয়ালের কাছে বরাবার কুমিরের বাচ্চা রাখা যাবে না। এবার এ দেশের মানুষ জেগে উঠেছে। কোন ভাবেই আওয়ামী লীগের অধীনে নির্বাচন হতে দেয়া হবে না।

সময় এসেছে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার জন্য নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, আর কোন সময় নাই। সরকারের আর কোন সময় নেই। পরিষ্কার ভাবে বলছি, সুবোধ বালকের মতো ক্ষমতা ছেড়ে দিয়ে পদত্যাগ করে, সংসদ বিলুপ্ত করে, নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন দিন।

ফখরুল বলেন, শেষ কথা, ভালো ভালই পদত্যাগ করুন, নইলে ফয়সালা হবে কোথায়? আগত নেতাকর্মীরা বলেন, রাজপথে। এবার তিনি বলেন, নতুন সূর্য উঠবেই উঠবে ইনশাল্লাহ।

পদযাত্রার পূর্ব সমাবেশে নোয়াখালীর গুম হওয়া বিএনপি নেতা নিজামউদ্দিন মুন্না মা এবং ২০১৮ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির প্রতীক ধানের শীষে ভোট দেয়ায় যে নারীকে গভীর রাতে ঘর থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণ করে সেই নারী বক্তব্য রাখেন। তিনি বলেন, আমি বেঁচে আছি এই সরকারের পতনের দেখার জন্য, আমি আমার ভোট দিয়ে মরতে চাই। এই সরকারের পদত্যাগ চাই।

কৃষক দলের সভাপতি কৃষিবিদ হাসান জাফির তুহিনের সভাপতিত্বে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন, বরকত উল্লাহ বুলু, মোহাম্মদ শাহজাহান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জয়নুল আবেদীন ফারুক, আবুল খায়ের ভুঁইয়া, শামসুল আলম, চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারী শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, যুগ্ম মহাসচিব ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন, প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী, কৃষক দলের সাধারণ সম্পাদক শহীদুল ইসলাম বাবুল, তাঁতী দলের সভাপতি আবুল কালাম আজাদ, জাসাসের সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন রোকন, চেয়ারপারসনের প্রেস উইংয়ের সদস্য শামসুদ্দিন দিদার, মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

বিবার্তা/এমই/সউদ