বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, যখন জনগণ জাগে, তখন তাকে আটকানো যায় না। ঝড় আসলে বাঁধ দিয়ে ঠেকিয়ে রাখা যায় না, সুনামি আসলে তাকে তো আটকানো যায় না। আজ বাংলাদেশে জনগণের প্রতিবাদের সুনামি শুরু হয়েছে। ঢাকার বাহির থেকে আসার সময় অনেক বাধা দেয়া হয়েছে যেন সমাবেশ আসতে না পারে। কিন্তু তা ঠেকানো গেছে, ঢাকার রাজপথ আজ নেতাকরমীদের পদচারণায় সয়লাব হয়ে গেছে।

১২ জুলাই, বুধবার বিকেলে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে একদফা যৌথ ঘোষণার সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন।

মির্জা ফখরুল বলেন, এই অবৈধ সরকার তার ক্ষমতা দীর্ঘস্থায়ী করতে আমাদের অনেক ভাইকে খুন, হত্যা করেছে। শতশত নেতাকর্মীকে হত্যা করেছে এরা। ছয়শ মতো নেতাকর্মীকে এরা গুম করেছে।

তিনি বলেন, তখন আমাদের ছেলেদের ধরে নিয়ে গিয়ে পুলিশ, আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা তাদের পায়ে গুলি করে পঙ্গু করে দিয়েছ। এখন আমাদের তরুণেরা ঘুরে দাঁড়িয়েছে। আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেছেন, যদি তুমি ভয় পাও তবে তুমি শেষ, যদি তুমি ঘুরে দাঁড়াও তবেই তুমি বাংলাদেশ। এখন সব দিকে খালি তরুণ আর তরুণ। তোমরাই পারবে।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, এই আওয়ামী লীগ সরকার বলেছিল, ঘরে ঘরে চাকরি দিবে, ১০ টাকা সের চাল খাওয়াবে। কিন্তু তাদের কথার সঙ্গে সেটার মিল খুঁজে পাওয়া যায় না। এরা আবার বলেছিল কৃষকদের বিনামূল্যে সার দিবে। এখন সারের দাম তিন চারগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে। আবার সার পায় না কৃষকরা।

তিনি বলেন, কোর্টকে ব্যবহার করে এ সরকার ক্ষমতায় থাকতে চায়, তারা মামলা দিয়ে মাসের পর মাস জেলে আটকে রাখে, জামিন দেয় না। যেখানে একজন ব্যাক্তি বিচার পাওয়ার শেষ ভরসা স্থল সেখানে এখন বিচার পাওয়া যায় না।

ফখরুল বলেন, এখন আর কথা বলার সময় হাতে নেই, এখন আমাদের একটাই কাজ এই ভয়াবহ ফ্যাসিস্ট সরকারের পতনের আন্দোলনে নেমে আসা। এখন একটাই দফা, আর কোন দফা নেই। দফা একটাই এই শেখ হাসিনার পদত্যাগ করতে হবে, সংসদ বিলুপ্ত করে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দিতে হবে। ভোটাধিকার ফিরে দিতে হবে। একদফার আগে ক্ষমতা ছেড়ে দেন, নইলে পালানোর পথ পাবেন না।

আওয়ামী লীগের নেতাদের উদ্দেশে করে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, হামলা করবেন মামলা করবেন। মিথ্যা ফরমায়েশি রায় দিয়ে সাজা দিবেন এটা হতে দেব না। অনেক সুযোগ দিয়েছি। আর কোন সুযোগ পাবেন না। অনেক ডলার পাচার করেছেন। গত ১৫ বছরে অনেক জেলে পুড়িয়েছেন সাজা দিয়েছেন তাতে কোন লাভ হয়েছে? বিএনপি কখনো পিছু হটে না।

আমরা সবাই রক্ত দিতে চাই জানিয়ে বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, শেখ হাসিনাকে যেতে হবে , তবে তিনি কোন দেশে যাবেন তা তিনি জানেন না। কোন দেশ তাকে পাসপোর্ট দেবে এ নিয়ে তিনি অস্থিরতায় আছেন। এখন আপনাদের গায়ে একটা আঘাত আসলে পাল্টা দুটা আঘাত করবেন।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. মঈন খান বলেন, এই সরকার দেশের সুশাসন নষ্ট করে ধ্বংস করে কুশাসন সৃষ্টি করেছে। এই সরকার মানবাধিকার লঙ্ঘন করে জুলুমের শাসন কায়েম করেছে। তারা গণতন্ত্র হত্যা করে বাকশাল কায়েম করেছে। এই অবৈধ ফ্যাসিস্ট সরকার ভোটের অধিকার হত্যা করে দিনের ভোট রাতে করেছে। এরা দেশের অর্থনীতি ধ্বংস করে দিয়ে লুটপাটের রাজত্ব কায়েম করেছে।

বিএনপি স্থায়ী কমিটির আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, জাতি আজকে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। জাতি আজ মুক্তির একটি ঘোষণা চায়। বাংলাদেশের মানুষ সিদ্ধান্ত নিয়েছে এই ফ্যাসিস্ট সরকারকে বিদায় করার জন্য। জনগণ জেগে উঠেছে যেতে হবে ওই সংবিধান দোহাই দিয়ে আর পার পাওয়া যাবে না। মানবাধিকার লঙ্ঘনকারী, বাক স্বাধীনতা হরণকারী কারো রেহাই মিলবে না। এবার যেতে হবে।

ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমান উল্লাহ আমানের সভাপতিত্বে এবং উত্তরের সদস্য সচিব আমিনুল হক ও দক্ষিণের ভারপ্রাপ্ত সদস্য সচিব তানভীর আহমেদ রবিনের সঞ্চালনায় ‌বিএন‌পির বেগম সেলিমা রহমান, ভাইস চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার শাহাজান ওমর, ডাক্তার এ জেড এম জাহিদ হোসেন, মোহাম্মদ শাহজাহান, শামসুজ্জামান দুদু, জয়নুল আবেদিন, নিতাই রায় চৌধুরী, অ্যাডভোকেট আহমদ আজম খান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আব্দুস সালাম, আবুল খায়ের ভূঁইয়া, মিজানুর রহমান মিনু, যুগ্ম মহাসচিব হাবিব উন নবী খান সোহেল, বিএনপি নেতা শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী, কামরুজ্জামান রতন, ফজলুল হক মিলন, আব্দুস সালাম আজাদ, মীর সরাফত আলী সপু, স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি এসএম জিলানী, ছাত্রদলের কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবণ ও সাইফ মাহমুদ জুয়েল প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

বিবার্তা/এমই/জবা